আইনজীবী নেতাদের আক্রমণের লক্ষ্য ডিসি

আদালত প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৮: ৩৮
আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২: ৪৬

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোমিনুর রহমান আইনজীবী সমিতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন বলে অভিযোগ করেছেন আইনজীবী নেতারা। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা প্রশাসক। তাঁর দাবি, সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করছেন তিনি। ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ নেই তাঁর।

গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি অডিটোরিয়ামে সমিতির সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবী নেতারা জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন। এ সময় তাঁরা বলেন, সমিতির নামে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে আইনজীবীদের সম্মান ক্ষুণ্ন করছেন জেলা প্রশাসক। তিনি আদালত অবমাননামূলক কর্মকাণ্ডেও জড়িত বলেও অভিযোগ করেন আইনজীবী নেতারা। এ বিষয়ে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে প্রকৃত সত্য তুলে ধরতে চান।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন সমিতির সভাপতি আবু মোহাম্মদ হাশেম, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল অ্যাডহক কমিটির সদস্য মো. মুজিবুল হক।

বক্তারা বলেন, জেলা প্রশাসক (ডিসি) আইনজীবী সমিতির ভবনগুলো অবৈধ উল্লেখ করে বিভিন্ন মিডিয়ায় মিথ্যা তথ্য দেন। কিন্তু এ ভবনগুলোর বৈধতার বিষয়ে যখন তাঁরা জবাব দেন, তখন ডিসি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) থেকে ওই ভবনের অনুমোদন নেওয়া হয়নি বলে দাবি করেন। এ ছাড়া পানি-বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন সেবামূলক দপ্তরের অনুমোদন নেওয়া হয়নি বলেও জেলা প্রশাসক প্রশ্ন তোলেন—এমন অভিযোগ করেন আইনজীবী নেতারা।

তাঁরা দাবি করেন, ওয়াসার পুরোনো সংযোগে সংস্কার করার সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করে ওয়াসা চেয়ারম্যানকে ফোন করে কাজ বন্ধ করতে চেয়েছিলেন জেলা প্রশাসক। সংস্কারকাজ চলার সময়ও তিনি ফোর্সও পাঠিয়েছিলেন। বৈধ কাগজপত্র থাকার পরও তিনি (ডিসি) পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।

আইনজীবী নেতারা বলেন, ‘আমাদের ভবনের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমান স্থানে নির্মিত হয়েছে অনেক পরে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছেই চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ভবন, নিউমার্কেট, জিপিও, এমনকি সম্প্রতি জেলা প্রশাসক নির্মিত কালেক্টরেট মসজিদ রয়েছে। বাকিগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক নির্মাণ হওয়ার আগের ভবন। এ থেকে বোঝা যায় জেলা প্রশাসক আইনজীবী সমিতির সঙ্গে বিদ্বেষবশত সমিতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।’

বক্তারা বলেন, ১৩০ বছরে জেলা প্রশাসন ও আইনজীবী সমিতি পাশাপাশি সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে অবস্থান করে আসছে। ইতিপূর্বে ভবন নির্মাণের সময় সাবেক জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াসসহ অন্যান্য প্রশাসকগণ সমিতির ভবন নির্মাণে সহযোগিতা করেছেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন বলেন, ‘৭৭ সালে লিজ দলিলের ভিত্তিতে আমরা ভূমি বরাদ্দ পাই। রাষ্ট্রপতি ওই লিজ দিয়েছিলেন। পরে আমরা অনুমোদন নিয়ে ভবন তৈরি করি।’

অপর প্রশ্নের জবাবে জিয়াউদ্দিন বলেন, রাষ্ট্রপতির দেওয়া লিজ ডিসির বাতিল করার এখতিয়ার নেই। তিনি বলেন, ‘১৯৯৭ সালে করা এক দেওয়ানি মামলা ২০০৪ সালে দোতরফা সূত্রে (ডিসি ও সমিতি) নিষ্পত্তি হয়। ওই মামলায় আমাদের নামে বরাদ্দ হওয়া ভূমির চৌহদ্দি (সীমানা) রয়েছে। ওই চৌহদ্দিকে চ্যালেঞ্জ করে ডিসি উচ্চ আদালতে যাননি। তাঁরা আদালতের রায় মেনে নিয়েছেন। এখন এ রায়ের বিপক্ষে কিছু বলার অর্থ দাঁড়ায় আদালত অবমাননা।’

বক্তারা বলেন, কোর্ট হিল বা আদালত ভবনকে ‘পরীর পাহাড়’ না লিখতে বা বলতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এরপরও ডিসির বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে ও বিভিন্ন সাইনবোর্ডে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোর্ট হিলকে ‘পরীর পাহাড়’ লেখা হচ্ছে।

তাঁরা বলেন, সমিতির ৫টি ভবন নির্মাণে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি করা হয়। ১৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে ডিসি এ বিষয়ে অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করেন। কিন্তু প্রধান অংশীজন আইনজীবী সমিতিকে এ ব্যাপারে জানানোও হয়নি। এতেই প্রমাণিত হয়, বর্তমান জেলা প্রশাসক আইনজীবী সমিতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

বক্তারা বলেন, ‘আমরা বর্তমান ডিসির অন্যায় ও চট্টগ্রাম বিদ্বেষী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আইনি পথে হাঁটছি। তাই বলে আমাদের দুর্বল ভাবার কারণ নেই।’

সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, সমিতির সাবেক সভাপতি ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল, এ কে এম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, এ এস এম বদরুল আনোয়ার, সৈয়দ মোক্তার হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন আখতার মোশতাক, মনতোষ বড়ুয়া, জিয়াউদ্দিন আহাম্মদ প্রমুখ।

জেলা প্রশাসকের বক্তব্য: আইনজীবী নেতাদের অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোমিনুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, আইনজীবী সমিতি বা সমিতির ভবনের বিরুদ্ধে কোনোরূপ অপপ্রচার বা মিথ্যাচারের সঙ্গে জড়িত নন তিনি। বলেন, ‘চট্টগ্রাম আদালত ভবন পরীর পাহাড় নামে পরিচিত। এ পাহাড়কে হেরিটেজ হিসেবে সংরক্ষণে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। যার কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। সরকার যেভাবে নির্দেশনা দিচ্ছে সেভাবে কাজ করছি। এখানে আমার ব্যক্তিগত কোনো ইন্টারেস্ট নেই।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত