নারীদের হাতে সংসারের হাল

কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০: ০৪
আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২: ৫১

তাঁদের অভাব অনটনের সংসার। কারও স্বামী নেই। কারও স্বামী অসুস্থ। তাই তাঁরা রোজগারে নেমেছেন। হিমাগারে আলু বাছাইয়ের কাজ করেন। সকাল ৯টায় শুরু হয়ে চলে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। এতে তাঁদের আয় হয় ২০০ টাকা। আর এই টাকায়ই চলে তাঁদের সংসার। জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার ১১টি হিমাগারে কাজ করেন, এমন নারীর সংখ্যা প্রায় ৫০০।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার হিমাগারগুলোতে স্তূপ করে রাখা হয়েছে আলু। নানা বয়সের নারীরা সারিবদ্ধ হয়ে সেগুলো বাছাইয়ের কাজ করছেন। পচে যাওয়া, খারাপ আলু বাছাই করে তাঁরা সরিয়ে রাখছেন। তাঁদের সকাল ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। প্রতিদিন এই কাজের জন্য তাঁদের হাজিরা বা বেতন দেওয়া হয় ২০০ টাকা।

আঁওড়ার কালিমোড় গ্রামের শেফালি বেগম (৫০)। সংসারের হাল ধরতে তিনি নিজেই আলু বাছাইয়ের কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের অভাব-অনটনের সংসার। আবার আমার স্বামী অসুস্থ। আমার কাজ করা ছাড়া উপায় নাই। যা কামাই করি, তা দিয়ে খেয়ে না-খেয়ে কষ্ট করে দিন চলে যায়। আমাদের পারিশ্রমিক একটু বাড়িয়ে দিলে আরও ভালোভাবে সংসার চালাতে পারতাম।’

আরেক নারীশ্রমিক হাসিনা বেওয়া (৬৫)। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী অনেক আগে মারা গেছে। পেট তো ভাত দেওয়া লাগে। আমি কাজ না করলে ভাত দিবে কে? তাই প্রায় ৪ কিলোমিটার দূর থেকে এসে আলু বাছাইয়ের এই কাজ করি।’

নারীশ্রমিক গীতা রানী বলেন, ‘আমার স্বামী বয়স্ক। কোনো কামাই-রোজগার করতে পারে না। ছেলেমেয়েদের আছে। তাদের লেখাপড়ার খরচ আছে। খাওয়া খরচা আছে। এই কারণে আমি এই কাজ করছি।’

নারীশ্রমিক হালিমা বেগম ও মাহমুদা বেগম বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। সংসারে আয়-রোজগারের আর কেউ নাই। আমার ছেলেমেয়েরা ছোট। সংসারের হাল ধরারও কেউ নাই। কাজ নাই, খাওয়াও নাই। এই কারণে আমি আলু বাছার এই কাজ করি। কাজ ভালোই। বছরে প্রায় ৮ মাস করা যায়। কাজই করে ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে আছি। আমার আর কোনো অবলম্বন নাই।’

হিমাগারে আলু কিনতে আসা ব্যবসায়ী এনামুল হক বলেন, হিমাগারগুলোতে এলাকার এসব দুস্থ, অসহায়, বিধবা নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ বছর আলুর দাম কম। সে জন্য আলু ব্যবসায়ীদের ক্ষতি গুনতে হচ্ছে।

উপজেলার পুনট হিমাগার লিমিটেডের হিসাবরক্ষক এনামুল হক বলেন, উপজেলায় মোট ১১টি আলুর হিমাগার আছে। এসব হিমাগারে প্রায় ৫০০ নারী কাজ করেন।

আর বি স্পেশালাইজড হিমাগার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ বাবু বলেন, এখানে যেসব নারী কাজ করছেন, তাঁরা বেশির ভাগই আশপাশের এলাকায় থাকেন। সে জন্য নির্ধারিত সময়েই তাঁরা কাজে আসতে পারছেন। তবে বাজারে আলুর দাম কম। দাম ভালো থাকলে নারীদের পারিশ্রমিক বেড়ে যেত। ব্যবসায়ীরা লাভের মুখ দেখলে, শ্রমিকদের হাজিরাও বাড়বে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত