জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করে ১১টি ব্যাংক আগ্রাসী মাত্রায় ঋণ দিয়েছে। ব্যাংকগুলোর মধ্যে ছয়টি শরিয়াভিত্তিক, আর বাকি পাঁচটি প্রচলিত ধারার। শরিয়াহ ব্যাংকগুলোর অ্যাডভান্স ডিপোজিট রেশিও (এডিআর) বা ঋণ-আমানত অনুপাত সীমা ৯২ শতাংশ। তবে এই ধারার ব্যাংকগুলোর মধ্যে ১০৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ ঋণ বিতরণ করে রেকর্ড গড়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এফএসআইবিএল)। অন্যদিকে প্রচলিত ধারার ব্যাংকের এডিআর সীমা ৮৭ শতাংশ হলেও ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড (এনবিএল) ঋণ বিতরণ করেছে ৯৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ এক অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
ব্যাংকার ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে সীমার বেশি ঋণ দেওয়ায় ব্যাংকগুলোর গ্রাহকদের জন্য বাড়তি ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ মিশনের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এডিআর সীমা অতিক্রম করলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের তারল্য সংকট হওয়ার কথা। তবে দু-একটি ব্যাংকের পরিবর্তে একই সঙ্গে বেশি ব্যাংকের ক্ষেত্রে এ রকম ঘটলে ব্যাংক খাতে সমস্যা দেখা দেবে। আর যদি কোনো ব্যাংক বারবার সীমা অতিক্রম করে, তার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থা নিতে পারে। তা না হলে প্রভাব পড়বে আমানতকারীদের ওপর।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমানতের বিপরীতে কত টাকা ঋণ দিতে পারবে এর একটি সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। তবে ব্যাংকগুলোর এ অনুপাত বিভিন্ন সময় ওঠানামা করে। কারণ কোনো ব্যাংকের যদি বড় একটি আমানত আসে, তাহলে তাদের ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা বেড়ে যায়; একইভাবে হঠাৎ করে কোনো গ্রাহক আমানত তুলে নিলে ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। তখন ব্যাংক তার এডিআর সীমার বাইরে চলে যায়। এটা সাময়িক হতে পারে। তবে দীর্ঘদিন ধরে কোনো ব্যাংক এডিআর সীমার বাইরে থাকলে সে ব্যাংককে অবশ্যই চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হবে। অস্বাভাবিক কিছু ঘটলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’
শরিয়াহ ধারায় মাত্রাছাড়া ঋণ
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ (ডিসেম্বর ২০২২) তথ্যমতে, শরিয়াহ ধারার ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড সীমার চেয়ে ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি ঋণ দিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলীকে গত দুই দিন দফায় দফায় ফোন করে এবং শেষে এসএমএস পাঠিয়েও জবাব পাওয়া যায়নি। ব্যাংকটির গণসংযোগ ও ব্র্যান্ডিং বিভাগের এফএভিপি মনিরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘ব্যাংক নীতিমালা অনুযায়ী চলে। চাইলেই নির্দিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া হঠাৎ কিছু বলা যায় না।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৯৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ এডিআর নিয়ে শরিয়াহ ধারার ব্যাংকগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক লি.। ব্যাংকটি সীমার চেয়ে ৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেশি ঋণ দিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের এমডি সৈয়দ হাবিব হাসনাতকে ফোন করা হলেও ধরেননি। এসএমএস পাঠানো হলেও জবাব দেননি। ব্যাংকটির জনসংযোগ কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম পরে কথা বলবেন বলে সংযোগ কেটে দেন।
৯৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ এডিআর তৃতীয় অবস্থানে আছে ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড। ব্যাংকটি সীমার চেয়ে ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি ঋণ দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ বি এম মোকাম্মেল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক নিঃসন্দেহে অনেক হিসাব-নিকাশ করে ঋণ দেওয়ার সীমা বেঁধে দিয়েছে এবং তা যথেষ্ট বৈশ্বিক মানের। সে সীমা অতিক্রম করা ব্যাংক খাতে আমানতকারীদের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করবে।’
সীমার বেশি ঋণ দিয়ে চতুর্থ অবস্থানে থাকা এক্সিম ব্যাংকের এডিআর ৯৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
পঞ্চম অবস্থানে থাকা সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের এডিআর ৯৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও জাফর আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এডিআর নিত্যদিনই পরিবর্তন হয়। বিশেষ করে নিত্যপণ্য আমদানিতে বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় এডিআর সীমা অতিক্রম হয়েছে। এটার সঙ্গে লেনদেন ও ঋণের সম্পর্ক রয়েছে। এডিআর সীমা অতিক্রম করার নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে।’
এডিআর হিসাবে ৯৩ দশমিক ৭১ শতাংশ ঋণ বিতরণ করে ষষ্ঠ অবস্থানে আছে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড।
ব্যাংকটির তখনকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার রাশেদ মাকসুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি দুই সপ্তাহ আগে বিদায় নিয়েছি। ব্যাংকটি বর্তমানে কী অবস্থায় রয়েছে তা নিয়ে কিছু বলতে চাই না।
তবে ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলাম। তখনকার এডিআর নিয়ে এখন কথা বলে কিছু হবে না। এখন চাপমুক্ত অবসর সময় পার করছি।’
প্রচলিত ধারার ৫ ব্যাংক
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন মতে, প্রচলিত ধারার ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড (এনবিএল) ৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি ঋণ বিতরণ করেছে। এ বিষয়ে জানতে ব্যাংকের চলতি দায়িত্বে থাকা এমডি সৈয়দ রইস উদ্দিনকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি।
৯২ দশমিক ২৬ শতাংশ এডিআর নিয়ে এই ধারায় দ্বিতীয় অবস্থানে এবি ব্যাংক লিমিটেড। এবি ব্যাংকের গণসংযোগ বিভাগের প্রধান ও এসএভিপি তানিয়া সাত্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ব্যাংকের এডিআর নিয়ে কিছু বলার নেই। এটা প্রধান নির্বাহী ভালো বলতে পারবেন।’
বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের এডিআর ৮৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
এডিআর বিষয়ে মন্তব্য জানতে বেসিক ব্যাংকের এমডি আনিসুর রহমানকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। এসএমএস পাঠানো হলে তারও জবাব দেননি। তবে ব্যাংকটির গণসংযোগ বিভাগের প্রধান ইসতিয়াক আজাদ বলেন, এ বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য জানা নেই। এটি প্রধান নির্বাহী ভালো জানেন।
চতুর্থ অবস্থানে থাকা আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেডের এডিআর ৮৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
এ ছাড়া বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড প্রচলিত ধারায় এডিআর সীমা ঠিক রাখতে পারলেও শরিয়াহ উইন্ডোতে সীমা লঙ্ঘন করে ঋণ বিতরণ করেছে ৯৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এডিআর নিয়ে কিছু হয়নি। সব ঠিক হয়ে যাবে।’
এডিআর সীমা বাড়িয়েও থামানো যাচ্ছে না
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ব্যাংকগুলোকে নির্ধারিত আইনে বিনিয়োগ বা ঋণ নিশ্চিত করতে টানা পাঁচবার এডিআর সমন্বয়ের সময়সীমা বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরও অনেক ব্যাংক এটি সমন্বয় করতে পারেনি। এমন পরিস্থিতিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহে গতিশীলতা আনা, ব্যাংকিং খাতের সার্বিক তারল্য পরিস্থিতির উন্নয়নে এডিআর ২ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপরও সীমা লঙ্ঘন করে ঋণ দেওয়ায় আমানতকারীদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করেছে।
বাড়ছে খেলাপি ঋণ
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। ওই পর্যন্ত অবলোপনসহ খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা। গত জুন পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। ২০২১ সালের একই সময়ে ছিল ৯৯ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। ওই এক বছরে খেলাপি ঋণ বাড়ে ২৬ হাজার ৫২ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সহায়তার সুযোগে ঋণ নিয়মিত দেখানোর পথ পেয়ে যাচ্ছেন খেলাপিরা। কখনো বিশেষ ব্যবস্থায় পুনঃ তফসিল, কখনো পুনর্গঠনের মাধ্যমে খেলাপি ঋণের আসল তথ্য থেকে যাচ্ছে আড়ালে। ঋণ পরিশোধে শিথিলতার মধ্যেই ২০২২ সালের প্রথম ৯ মাসে ১১ হাজার ৫১২ কোটি টাকা পুনঃ তফসিল হয়েছে। গত ১০ বছরে পুনঃ তফসিল করা হয়েছে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ কামনা
এডিআর সীমা লঙ্ঘন প্রসঙ্গে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমানতের বিপরীতে সীমার বাইরে ঋণ দিলে ঋণ-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয়। তা ছাড়া ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায়ের চিত্রও এখন খুব একটা সন্তোষজনক নয়। এ অবস্থায় অতিরিক্ত ঋণ দিয়ে যদি খেলাপি ঋণ আরও বেড়ে যায় তাহলে ব্যাংকের পাশাপাশি আমানতকারীদেরও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ দরকার।’
৪ খেলাপির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
চট্টগ্রাম থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, বেসিক ব্যাংকের ৩০০ কোটি টাকার ঋণখেলাপি মামলায় জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি মাহজাবীন মোরশেদ, তাঁর স্বামী মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিমসহ চারজনের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান গতকাল রোববার এই আদেশ দিয়েছেন। অপর দুই বিবাদী হলেন হুমাইরা করিম ও সৈয়দ মোজাফফর হোসেন।
ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম জানান, ওই চার বিবাদীর দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি পাসপোর্ট আদালতে জমা দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করে ১১টি ব্যাংক আগ্রাসী মাত্রায় ঋণ দিয়েছে। ব্যাংকগুলোর মধ্যে ছয়টি শরিয়াভিত্তিক, আর বাকি পাঁচটি প্রচলিত ধারার। শরিয়াহ ব্যাংকগুলোর অ্যাডভান্স ডিপোজিট রেশিও (এডিআর) বা ঋণ-আমানত অনুপাত সীমা ৯২ শতাংশ। তবে এই ধারার ব্যাংকগুলোর মধ্যে ১০৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ ঋণ বিতরণ করে রেকর্ড গড়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এফএসআইবিএল)। অন্যদিকে প্রচলিত ধারার ব্যাংকের এডিআর সীমা ৮৭ শতাংশ হলেও ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড (এনবিএল) ঋণ বিতরণ করেছে ৯৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ এক অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
ব্যাংকার ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে সীমার বেশি ঋণ দেওয়ায় ব্যাংকগুলোর গ্রাহকদের জন্য বাড়তি ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ মিশনের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এডিআর সীমা অতিক্রম করলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের তারল্য সংকট হওয়ার কথা। তবে দু-একটি ব্যাংকের পরিবর্তে একই সঙ্গে বেশি ব্যাংকের ক্ষেত্রে এ রকম ঘটলে ব্যাংক খাতে সমস্যা দেখা দেবে। আর যদি কোনো ব্যাংক বারবার সীমা অতিক্রম করে, তার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থা নিতে পারে। তা না হলে প্রভাব পড়বে আমানতকারীদের ওপর।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমানতের বিপরীতে কত টাকা ঋণ দিতে পারবে এর একটি সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। তবে ব্যাংকগুলোর এ অনুপাত বিভিন্ন সময় ওঠানামা করে। কারণ কোনো ব্যাংকের যদি বড় একটি আমানত আসে, তাহলে তাদের ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা বেড়ে যায়; একইভাবে হঠাৎ করে কোনো গ্রাহক আমানত তুলে নিলে ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। তখন ব্যাংক তার এডিআর সীমার বাইরে চলে যায়। এটা সাময়িক হতে পারে। তবে দীর্ঘদিন ধরে কোনো ব্যাংক এডিআর সীমার বাইরে থাকলে সে ব্যাংককে অবশ্যই চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হবে। অস্বাভাবিক কিছু ঘটলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’
শরিয়াহ ধারায় মাত্রাছাড়া ঋণ
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ (ডিসেম্বর ২০২২) তথ্যমতে, শরিয়াহ ধারার ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড সীমার চেয়ে ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি ঋণ দিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলীকে গত দুই দিন দফায় দফায় ফোন করে এবং শেষে এসএমএস পাঠিয়েও জবাব পাওয়া যায়নি। ব্যাংকটির গণসংযোগ ও ব্র্যান্ডিং বিভাগের এফএভিপি মনিরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘ব্যাংক নীতিমালা অনুযায়ী চলে। চাইলেই নির্দিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া হঠাৎ কিছু বলা যায় না।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৯৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ এডিআর নিয়ে শরিয়াহ ধারার ব্যাংকগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক লি.। ব্যাংকটি সীমার চেয়ে ৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেশি ঋণ দিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের এমডি সৈয়দ হাবিব হাসনাতকে ফোন করা হলেও ধরেননি। এসএমএস পাঠানো হলেও জবাব দেননি। ব্যাংকটির জনসংযোগ কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম পরে কথা বলবেন বলে সংযোগ কেটে দেন।
৯৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ এডিআর তৃতীয় অবস্থানে আছে ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড। ব্যাংকটি সীমার চেয়ে ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি ঋণ দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ বি এম মোকাম্মেল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক নিঃসন্দেহে অনেক হিসাব-নিকাশ করে ঋণ দেওয়ার সীমা বেঁধে দিয়েছে এবং তা যথেষ্ট বৈশ্বিক মানের। সে সীমা অতিক্রম করা ব্যাংক খাতে আমানতকারীদের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করবে।’
সীমার বেশি ঋণ দিয়ে চতুর্থ অবস্থানে থাকা এক্সিম ব্যাংকের এডিআর ৯৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
পঞ্চম অবস্থানে থাকা সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের এডিআর ৯৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও জাফর আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এডিআর নিত্যদিনই পরিবর্তন হয়। বিশেষ করে নিত্যপণ্য আমদানিতে বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় এডিআর সীমা অতিক্রম হয়েছে। এটার সঙ্গে লেনদেন ও ঋণের সম্পর্ক রয়েছে। এডিআর সীমা অতিক্রম করার নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে।’
এডিআর হিসাবে ৯৩ দশমিক ৭১ শতাংশ ঋণ বিতরণ করে ষষ্ঠ অবস্থানে আছে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড।
ব্যাংকটির তখনকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার রাশেদ মাকসুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি দুই সপ্তাহ আগে বিদায় নিয়েছি। ব্যাংকটি বর্তমানে কী অবস্থায় রয়েছে তা নিয়ে কিছু বলতে চাই না।
তবে ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলাম। তখনকার এডিআর নিয়ে এখন কথা বলে কিছু হবে না। এখন চাপমুক্ত অবসর সময় পার করছি।’
প্রচলিত ধারার ৫ ব্যাংক
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন মতে, প্রচলিত ধারার ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড (এনবিএল) ৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি ঋণ বিতরণ করেছে। এ বিষয়ে জানতে ব্যাংকের চলতি দায়িত্বে থাকা এমডি সৈয়দ রইস উদ্দিনকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি।
৯২ দশমিক ২৬ শতাংশ এডিআর নিয়ে এই ধারায় দ্বিতীয় অবস্থানে এবি ব্যাংক লিমিটেড। এবি ব্যাংকের গণসংযোগ বিভাগের প্রধান ও এসএভিপি তানিয়া সাত্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ব্যাংকের এডিআর নিয়ে কিছু বলার নেই। এটা প্রধান নির্বাহী ভালো বলতে পারবেন।’
বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের এডিআর ৮৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
এডিআর বিষয়ে মন্তব্য জানতে বেসিক ব্যাংকের এমডি আনিসুর রহমানকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। এসএমএস পাঠানো হলে তারও জবাব দেননি। তবে ব্যাংকটির গণসংযোগ বিভাগের প্রধান ইসতিয়াক আজাদ বলেন, এ বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য জানা নেই। এটি প্রধান নির্বাহী ভালো জানেন।
চতুর্থ অবস্থানে থাকা আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেডের এডিআর ৮৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
এ ছাড়া বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড প্রচলিত ধারায় এডিআর সীমা ঠিক রাখতে পারলেও শরিয়াহ উইন্ডোতে সীমা লঙ্ঘন করে ঋণ বিতরণ করেছে ৯৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এডিআর নিয়ে কিছু হয়নি। সব ঠিক হয়ে যাবে।’
এডিআর সীমা বাড়িয়েও থামানো যাচ্ছে না
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ব্যাংকগুলোকে নির্ধারিত আইনে বিনিয়োগ বা ঋণ নিশ্চিত করতে টানা পাঁচবার এডিআর সমন্বয়ের সময়সীমা বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরও অনেক ব্যাংক এটি সমন্বয় করতে পারেনি। এমন পরিস্থিতিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহে গতিশীলতা আনা, ব্যাংকিং খাতের সার্বিক তারল্য পরিস্থিতির উন্নয়নে এডিআর ২ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপরও সীমা লঙ্ঘন করে ঋণ দেওয়ায় আমানতকারীদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করেছে।
বাড়ছে খেলাপি ঋণ
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। ওই পর্যন্ত অবলোপনসহ খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা। গত জুন পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। ২০২১ সালের একই সময়ে ছিল ৯৯ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। ওই এক বছরে খেলাপি ঋণ বাড়ে ২৬ হাজার ৫২ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সহায়তার সুযোগে ঋণ নিয়মিত দেখানোর পথ পেয়ে যাচ্ছেন খেলাপিরা। কখনো বিশেষ ব্যবস্থায় পুনঃ তফসিল, কখনো পুনর্গঠনের মাধ্যমে খেলাপি ঋণের আসল তথ্য থেকে যাচ্ছে আড়ালে। ঋণ পরিশোধে শিথিলতার মধ্যেই ২০২২ সালের প্রথম ৯ মাসে ১১ হাজার ৫১২ কোটি টাকা পুনঃ তফসিল হয়েছে। গত ১০ বছরে পুনঃ তফসিল করা হয়েছে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ কামনা
এডিআর সীমা লঙ্ঘন প্রসঙ্গে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমানতের বিপরীতে সীমার বাইরে ঋণ দিলে ঋণ-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয়। তা ছাড়া ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায়ের চিত্রও এখন খুব একটা সন্তোষজনক নয়। এ অবস্থায় অতিরিক্ত ঋণ দিয়ে যদি খেলাপি ঋণ আরও বেড়ে যায় তাহলে ব্যাংকের পাশাপাশি আমানতকারীদেরও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ দরকার।’
৪ খেলাপির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
চট্টগ্রাম থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, বেসিক ব্যাংকের ৩০০ কোটি টাকার ঋণখেলাপি মামলায় জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি মাহজাবীন মোরশেদ, তাঁর স্বামী মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিমসহ চারজনের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান গতকাল রোববার এই আদেশ দিয়েছেন। অপর দুই বিবাদী হলেন হুমাইরা করিম ও সৈয়দ মোজাফফর হোসেন।
ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম জানান, ওই চার বিবাদীর দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি পাসপোর্ট আদালতে জমা দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৫ দিন আগে