মায়ের কিডনিতে নতুন জীবন পেলেন নজরুল

তাসনীম হাসান, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০৮ মে ২০২২, ০৭: ০২
আপডেট : ০৮ মে ২০২২, ১১: ১৪

প্রায় ৩০ বছর আগে নজরুল ইসলামকে জন্ম দিয়েছিলেন রোকেয়া বেগম। এর তিন মাস পর স্বামীহারা হন তিনি। পরে বিয়ে করে নতুন সংসার পাতেন রোকেয়া। এদিকে এত দিনে নজরুলও বড় হয়ে ওঠেন। তাঁরও সংসার হয়। এক সন্তানের জনক হন। মসজিদে ইমামতি করে সংসার ভালোই চলছিল তাঁর। কিন্তু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে জানতে পারেন, তাঁর দুটো কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন মা। মায়ের দেওয়া একটি কিডনিতে নতুন জীবন ফিরে পেলেন নজরুল।

এলাকাবাসী ও স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, নজরুল ইসলামের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের হরিশপুরে। তিনি মসজিদে ইমামতি করেন। সামান্য আয়ে স্ত্রী আর পাঁচ বছরের মেয়েকে নিয়ে কেটে যাচ্ছিল দিন। কিন্তু একপর্যায়ে অসুস্থ হলে ধরা পড়ে তাঁর দুটি কিডনিই বিকল হয়ে গেছে। ডায়ালাইসিস করে চলছিলেন। তাঁকে চিকিৎসকেরা পরামর্শ দেন কিডনি প্রতিস্থাপনের। নিজের জীবন ঝুঁকি জেনেও নজরুলকে নিজের কিডনি দিতে এগিয়ে আসেন মা।

তবে কিডনি প্রতিস্থাপনে একের পর এক বাধায় পড়তে হয় নজরুলকে। শুরুতেই বিপত্তি বাঁধে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) নাম সংশোধন নিয়ে। কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হলে সব তথ্য জমা দিতে হয়। কিন্তু নজরুলেরই এনআইডিতে বাবা–মায়ের নাম ভুল হওয়ায় সেটি ঠিক করতেই পেরিয়ে যায় চার মাস। সেই সমস্যা মিটতেই শুরু করোনার হানা। 

বাধার সব পাহাড় পেরিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ৯ মার্চ রাজধানীর মিরপুরে কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে শুরু হয় অস্ত্রোপচার। সফল অস্ত্রোপচার হলেও মা-ছেলেকে ১৯ দিন থাকতে হয় হাসপাতালে। ২৮ মার্চ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান তাঁরা। ব্যথায় কাতরালেও মায়ের মুখ তখন ভরা ছিল হাসিতে। ওই তৃপ্তি ছেলেকে নতুন জীবন দিতে পেরে। তবে এখনো নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ঢাকায় অবস্থান করছেন নজরুল। তাঁর ছায়াসঙ্গী হয়ে আছেন মা।

মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মায়ের জন্য নতুন জীবন ফিরে পেয়েছি। তাঁর এই ঋণ আমি কোনো কিছু দিয়েই শোধ করতে পারব না।’

নজরুল কথা শেষ হতেই ফোন ধরিয়ে দেন মাকে। রোকেয়া বেগম বললেন, ‘ছোটকালেই আমার ছেলেটা তার বাবাকে হারায়। এরপর অতি কষ্টে বড় হয়েছে। তাঁর কণ্ঠে মা ডাক শুনব না, এটা কখনো মানতে পারতাম না। ছেলেকে কিডনি দিতে তাই আমার জীবনের ঝুঁকির কথা ভাবিনি।’

অবশ্য ছেলের প্রতি মায়ের এই ভালোবাসাও বিফলে যেত যদি না সন্দ্বীপের কিছু তরুণ এগিয়ে না আসতেন। তাঁরা ফেসবুক কাজে লাগিয়ে প্রায় ১৫ লাখ টাকা সংগ্রহ করে তুলে দেন নজরুলের হাতে।

তরুণদের একজন হান্নান তারেক। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ছেলের প্রতি মায়ের এমন ভালোবাসা আমাদেরও কাঁদিয়েছে।’

চিকিৎসককে দেখিয়ে আগামী সপ্তাহেই গ্রামের বাড়ি সন্দ্বীপে ফেরার কথা নজরুলের। এবার আর অসুস্থ শরীর নিয়ে নয়। এখন যে নজরুলের সঙ্গে আছে মায়ের কিডনিতে পাওয়া নতুন জীবন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত