Ajker Patrika

ছাত্রলীগ নিয়ে দুকথা

আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২২, ০৮: ৫১
ছাত্রলীগ নিয়ে দুকথা

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ৪ জানুয়ারি। ১৯৪৮ সালের এইদিন মুসলিম ছাত্রলীগ নামের একটি নতুন সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তারপর এই সংগঠন দেশ ও দেশের মানুষের প্রয়োজনে ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রাম করে এসেছে। ১৯৫২ সালের ভাষাসংগ্রাম থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত জাতির প্রতিটি সংকট ছাত্রলীগ মাঠে থেকে লড়াই করে গৌরবগাথা রচনা করেছে। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে ছাত্রলীগ পালন করেছে বিশ্বস্ত যোদ্ধার ভূমিকা।

৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের সময় ছাত্রলীগ কি শুধু অতীতের গৌরবগীতি গেয়ে খুশি থাকবে, নাকি নতুন গৌরবের ইতিহাস রচনার শপথ নেবে? অতীতে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম–তা নিশ্চয়ই মনে রাখতে হবে, তবে আরও সুন্দর ভবিষ্যৎ তৈরির পথ ছেড়ে দিয়ে নয়।

প্রায় প্রতিদিন গণমাধ্যমে ছাত্রলীগ সম্পর্কে নেতিবাচক খবর ছাপা হয়। এমন নয় যে ঘটনা ঘটছে না, তা সত্ত্বেও সংবাদমাধ্যমগুলো বানোয়াট খবর ছেপে দিচ্ছে। ছাত্রলীগ খবর তৈরি করছে এবং তা প্রকাশ পাচ্ছে। ছাত্রলীগের কাজকর্ম সরকারের জন্য বিব্রতকর হলেও তাদের নিয়ন্ত্রণ করার কোনো উদ্যোগ বা প্রচেষ্টা লক্ষ করা যায় না। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী-মাস্তানির অভিযোগ উঠলে অনেক সময় বলা হয়ে থাকে যে, যারা অপরাধ সংঘটিত করছে, তারা প্রকৃত ছাত্রলীগার নয়, তারা অনুপ্রবেশকারী। ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারীদের কেন জায়গা দেওয়া হয়, কেন তাদের অপরাধের দায় ছাত্রলীগকে বহন করতে হয়, সে প্রশ্নেরও জবাব পাওয়া যায় না।

কয়েক বছর আগে বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি চলাকালে পুরান ঢাকায় বিশ্বজিৎ নামে একজন সেলাইকর্মীকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। এই হত্যাকাণ্ডে ছাত্রলীগের কর্মীরা জড়িত বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর, প্রথমে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের রাজনৈতিক পরিচয় আড়াল করা যায়নি। সবদিক বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছাত্রলীগের ব্যাপারে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যাদের কারণে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, সব ভালো অর্জন বিফলে যায়, তাদের প্রতি সহানুভূতি ও অনুকম্পা দেখানোর কোনো মানে হয় না।

শেখ হাসিনা বেশ কয়েক বছর আগে ছাত্রলীগের হাতে বই-খাতা-কলম তুলে দিয়েছিলেন। মারামারি-হানাহানিতে লিপ্ত না হয়ে, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিষয়েই নিজেদের জড়িত রাখবে—এটাই ছিল তাঁর প্রত্যাশা। বই-খাতা দিয়ে ছাত্রলীগকে তিনি নিশ্চয়ই পেশিশক্তিতে বলীয়ান দেখতে চাননি, চেয়েছিলেন জ্ঞানের শক্তিতে সাহসী এবং শিক্ষার আলোয় আলোকিত-উদ্ভাসিত দেখতে। কিন্তু শেখ হাসিনার ইচ্ছাপূরণে ব্রতী না হয়ে ছাত্রলীগ কেন ভিন্নপথে হাঁটছে, ছাত্রলীগের হাতে কেন এবং কীভাবে অস্ত্র উঠছে, সেটা এখন তাঁকেই খতিয়ে দেখতে হবে।

একসময়ের ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনটি যেন পণ করেছে যে তারা শেখ হাসিনার সব সাফল্য ম্লান না করে ছাড়বে না। তারা নানা ধরনের অপরাধকাজের সঙ্গে নিজেদের জড়াবেই। অপরাধ এবং ছাত্রলীগ একসঙ্গে চলার প্রতিজ্ঞা করে কার্যত সরকারকে এক বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলেছে।

ছাত্রলীগের ব্যাধি নিরাময়ের জন্য হোমিও চিকিৎসায় আর কাজ হবে না। বড় অপারেশন লাগবে। সেটা করা হবে, নাকি সাময়িক উপশমের জন্য টোটকা চিকিৎসার ওপরই ভরসা করা হবে, সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে বিষয়টি নিশ্চয়ই শেখ হাসিনার নজরের বাইরে নেই। শেখ হাসিনা সবাইকে তাঁর ওপর ভরসা রাখতে বলেন। তিনি এটা বলতেই পারেন। কারণ তাঁর ওপর ভরসা রাখলে যে হতাশ হতে হয় না, সে প্রমাণ তিনি একাধিকবার দিয়েছেন। তিনি যা বলেন, তা তিনি করেন। তিনি ফাঁকা বুলিতে বিশ্বাস করেন না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়তো একটু সময় লাগে; কিন্তু তিনি কোনো প্রতিশ্রুতির কথা ভোলেন না।প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত সবাইকে শুভেচ্ছা।

বিভুরঞ্জন সরকার, সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা হলেই মেয়াদ শেষ নতুন পরিচালনা কমিটির

মুসলিম থেকে খ্রিষ্টান হওয়া ইরানি নারী এখন পানামার জঙ্গলে

ঢাবি ছাত্রীকে যৌন হেনস্তাকারীর পক্ষে নামা ‘তৌহিদী জনতার’ আড়ালে এরা কারা

এনসিপিকে চাঁদা দিচ্ছেন ধনীরা, ক্রাউডফান্ডিং করেও অর্থ সংগ্রহ করা হবে: নাহিদ ইসলাম

ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান, সন্তানসহ ছিটকে পড়তেই তরুণীর গালে ছুরিকাঘাত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত