চালে শুল্ক ছাড়ের সুফল নিয়ে প্রশ্ন

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২২, ০৮: ২৮
আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০২২, ০৯: ৫৩

মৌসুমেও অব্যাহতভাবে বেড়ে চলেছে চালের দাম। তাই দাম সহনীয় রাখতে চালের শুল্ক কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব পাঠানোর কথা খোদ খাদ্যমন্ত্রীই সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। তবে শুল্ক কমানোর দায়িত্বে থাকা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর শুল্ক বিভাগ এখনো এ-সংক্রান্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এমনকি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও তাদের কাছে কোনো প্রস্তাব আসেনি। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

চালের এখন ভরা মৌসুম। এ সময়ে সাধারণত চালের দাম বাড়ে না। তবে মৌসুমের শুরু থেকেই দেখা যায়, চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। গত বুধবার ডিসি সম্মেলন শেষে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সাংবাদিকদের জানান, সরকারের কাছে চালের এখন যে পরিমাণ মজুত আছে, তা সর্বকালের সর্ববৃহৎ মজুত। তারপরও কেন দাম বাড়ছে-এর সদুত্তর না দিলেও তিনি চালের দাম সহনীয় রাখতে আবারও শুল্ক কমিয়ে আমদানির সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানান। এ জন্য শুল্ক কমাতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন খাদ্যমন্ত্রী।

তবে শুল্ক কমানোর পুরো কর্তৃত্ব এনবিআরের শুল্ক বিভাগের। খাদ্য মন্ত্রণালয় যদি চাল আমদানিতে শুল্ক কমিয়ে ব্যবসায়ীদের বিশেষ সুবিধা দিতে চায়, তবে তা এনবিআরের মাধ্যমে হতে হয়। এ ব্যাপারে এনবিআরের শুল্ক বিভাগে যোগাযোগ করে জানা যায়, চালের শুল্ক কমানোর চিন্তা তাদের দিক থেকে নেই। রাজস্বের স্বার্থেই তারা শুল্ক কমানোর পক্ষে নয়। তা ছাড়া খাদ্য বা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত তাদের কাছে কোনো চিঠি বা প্রস্তাব আসেনি। সুতরাং চালের শুল্ক কমানোর ব্যাপারে কোনো আয়োজন বা পদক্ষেপ তাদের দিক থেকে নেই। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে যদি সরকারের শীর্ষ মহল থেকে এনবিআরে প্রস্তাব আসে, সে ক্ষেত্রে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেভাবেই তাঁরা প্রস্তাব তৈরি করে তা অনুমোদনের পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান।

এ ব্যাপারে শুল্ক বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শুল্ক কমিয়ে পণ্যের দাম কমানোর রেকর্ড ভালো নয়। অসাধু ব্যবসায়ীরা এটাকে অজুহাত হিসেবে দেখিয়ে সরকারের কাছ থেকে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার জন্য শুল্ক কমানোর দাবি করেন। এতে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি ছাড়া আর কিছু নয়। বেলা শেষে সরকার রাজস্ব হারায়, আবার বাজারে দামও কমে না। এর সঙ্গে মুদ্রা পাচারের ঝুঁকিও থাকে। তাই বিষয়টির বাস্তবতা বিবেচনা করে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ ওই কর্মকর্তার।

সরকার বিভিন্ন সময়ে দাম সহনীয় রাখতে চালের আমদানি শুল্ক কমিয়েছে। সব শেষ গত বছরের আগস্ট মাসে চালের আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়। সেদ্ধ ও আতপ চালে এই শুল্ক ছাড়ের সুবিধা দেওয়া হয়। এ সুযোগ গত বছরের ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত বহাল রাখা হয়। এরপর তা অকার্যকর হয়ে যায়। এখন যাঁরা চাল আমদানি করছেন, তাঁরা সাড়ে ৬২ শতাংশ শুল্ক-কর দিয়েই চাল আনছেন।

এ প্রসঙ্গে একুশে পদকপ্রাপ্ত কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এখন যে শুল্ক আছে, সেটাকে আরও কমানোর কোনো প্রয়োজন নেই। তাতে আমাদের কৃষকেরা সুরক্ষিত থাকবে।’

ড. জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, ‘সরকারের কাছে প্রায় ১৬ লাখ টন চাল মজুত আছে। এখন ৫-৬ লাখ টন চাল আমদানির প্রয়োজন আছে। এটা সরকারি চ্যানেলের মাধ্যমেই আসতে পারে। এটার জন্য শুল্ক কমানোর কোনো প্রয়োজন নেই।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আবু সাঈদকে ৪–৫ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়—শেখ হাসিনার দাবির সত্যতা কতটুকু

মেট্রোরেল থেকে আমলাদের বিদায়, অগ্রাধিকার প্রকৌশলীদের

সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার সময় বাড়ল

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

ব্যাংক খাতে নতুন নীতিমালা: আটকে গেল ২৫৮ কর্মকর্তার জিএম পদে পদোন্নতি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত