বছরে কোটি টাকা গিলছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট

জাহিদ হাসান, যশোর
প্রকাশ : ১১ মার্চ ২০২৩, ১৪: ২১

যশোর পৌরসভায় চার বছর আগে দেশের প্রথম আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্টের যাত্রা শুরু হয়। সদর উপজেলার হামিদপুরে স্থাপিত প্ল্যান্টটি স্থাপনে খরচ হয় প্রায় ৫০ কোটি টাকা। আর এটি চালু রাখতে বছরে প্রায় কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়। বিপুল অর্থ বিনিয়োগের পর এ পর্যন্ত পৌরসভা আয় করছে সাকল্যে ১০ লাখ টাকা। বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট। শুধু সীমিত পরিসরে জৈব সার উৎপাদনের মধ্য দিয়ে অস্তিত্ব টিকে রয়েছে প্ল্যান্টটির। এমন বাস্তবতায় দেশের প্রথম আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্টটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দিতে যাচ্ছে পৌর কর্তৃপক্ষ।

যশোর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (পানি ও পয়োনিষ্কাশন) বি এম কামাল আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নির্মাণের পর প্ল্যান্টটি তৃতীয় পক্ষকে ইজারা দিয়ে পরিচালনার কথা ছিল। সেই অনুযায়ী শুরুতে মাহবুব ব্রাদার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়া হয়েছিল। কিছুদিন পর প্রতিষ্ঠানটি কেটে পড়ায় বাধ্য হয়ে প্ল্যান্টটি স্বল্প পরিসরে চালু রাখা হয়। বাস্তবে তা চালানোর সক্ষমতা নেই পৌরসভার। গত চার বছরে এটি সচল রেখে ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৪ লাখ টাকা। বিপরীতে ১৪৫ টন সার উৎপাদন করে আয় হয়েছে ১০ লাখ ১৫ হাজার টাকা। দাতা সংস্থার শর্তানুযায়ী প্ল্যান্টটি তৃতীয় পক্ষের কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী মাসে হস্তান্তর করা হবে।’

যশোর পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে যশোর শহরতলির হামিদপুরে ময়লার ভাগাড়ে নির্মাণ করা হয় দেশের প্রথম বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট। ২০১৬ সালের শেষদিকে প্রকল্পটি হাতে নেয় যশোর পৌরসভা। এটি বাস্তবায়নে সরকারের পাশাপাশি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, জার্মান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন এজেন্সি অর্থসহায়তা দিয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৫০ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, শহরের ৯টি ওয়ার্ডে বর্জ্য সংগ্রহের জন্য ১৩০টি কনটেইনার দেওয়া আছে। প্রতিদিন ৬৫ থেকে ৭০ টন ময়লা সংগ্রহ করা হয়। এরপর প্রতিদিন সকালে বর্জ্যভর্তি কনটেইনারগুলো ইয়ার্ডে আনা হয়। এরপর কর্মীরা সেগুলো বাছাই করে কেবল পচনশীল দ্রব্যগুলো সংগ্রহ করেন। ১৫ জন কর্মী দিয়ে সাত-আট টন বর্জ্য বাছাই করা সম্ভব হয়। তা দিয়েই কম্পোস্ট সার ও বায়োগ্যাস উৎপাদন করা হয়। অথচ এ ময়লা বাছাই করতে শতাধিক কর্মী দরকার। যেখানে ১৫ জন দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। কম্পোস্ট বিভাগ, বায়োগ্যাস বিভাগে কোনো কর্মী নেই। ময়লা বাছাই করা ১৫ জনকে দিয়েই ওই দুই বিভাগের কাজ করা হয়।

প্ল্যান্টের ম্যানেজার অমিত কুমার বলেন, ‘বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করতে প্ল্যান্টটি নির্মাণ করা হয়েছে। আমরা প্রতিদিন যে পরিমাণ ময়লা সংগ্রহ করি, সেই পরিমাণ সম্পদে পরিণত করতে পারি না। শতাধিক কর্মীর জায়গায় ১৫ জন দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। কম্পোস্ট বিভাগ, বায়োগ্যাস বিভাগে কোনো কর্মী নেই। এখানে উৎপাদিত কম্পোস্ট সারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রতি মাসে প্রায় ১০০ টন সার এখনই বিক্রি করা সম্ভব। অথচ আমরা মাসে উৎপাদন করছি মাত্র ৭ টন।’

যশোর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোকসিমুল বারী অপু বলেন, ‘প্ল্যান্টটি পরিচালনায় যে পরিমাণ জনবল, গাড়ি ও ময়লা প্রয়োজন, তার কোনোটাই সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। নীতিমালা অনুযায়ী তৃতীয় পক্ষকে ইজারার মাধ্যমে এটি চালু রাখতে হবে। আমরা ভালো কোনো ইজারাদার পাইনি। প্ল্যান্টটি যাতে অকেজো না হয়ে যায়, সে জন্য স্বল্প পরিসরে চালু রাখা হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত