৫০ বছরেও তালিকা হয়নি শহীদ আইনজীবীদের

এস এম নূর মোহাম্মদ, ঢাকা
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯: ০১
Thumbnail image

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন করছে বাংলাদেশ। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ ঝরেছে ৩০ লাখ মানুষের। স্বাধীনতার পর অনেক প্রতিষ্ঠানই তাদের শহীদের তালিকা করেছে। তৈরি করেছে নামফলকও। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও শহীদ আইনজীবীদের তালিকা তৈরি করতে পারেনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। অথচ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট উদ্বোধন করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ওই দিন তিনি বলেছিলেন, ‘আমি সুখী হতাম বারের সদস্য ভাইয়েরা, যাঁরা শহীদ হয়েছেন—এই সুপ্রিম কোর্টের গেটে এসে যদি দেখতে পেতাম যে শহীদের নাম সেখানে লেখা রয়েছে।’ বঙ্গবন্ধুর ওই বক্তব্যের পর দীর্ঘদিনেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুজনের বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত আছে। আগের কমিটি যা করেছে, সেটাই আছে। আমরা এটি নিয়ে কোনো কাজ করিনি।’

শহীদের তালিকার বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, এত দিন পরও শহীদের তালিকা না থাকা লজ্জার ব্যাপার। এটা থাকা উচিত ছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, ২০০৪ সালের ২ ডিসেম্বর বারের কার্যনির্বাহী কমিটিতে শহীদের নামফলক স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। সেই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে জাতীয় ও সমিতির পতাকা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হিসেবে আইনজীবী এ কে এম ছিদ্দিক ও আব্দুল আহাদের নামফলক স্থাপন করা হয় বার ভবনের প্রধান ফটকের পাশে। সেই সঙ্গে প্রথমবারের মতো উত্তোলন করা হয় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ও সুপ্রিম কোর্ট বারের পতাকা। শহীদের নামফলকের পরিকল্পনা, অর্থায়ন ও বাস্তবায়নে ড. বশির আহমেদের নাম লেখা রয়েছে। ওই দুই শহীদের নামে আইনজীবীদের দুটি হলরুমেরও নামকরণ করে সমিতি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত সুপ্রিম কোর্ট বারের আইনজীবীদের তালিকায় নাম রয়েছে এ কে এম ছিদ্দিকের। তবে শহীদ হিসেবে নামফলকে থাকা আব্দুল আহাদের বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারেনি আজকের পত্রিকা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ২০০৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট বারে সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকারী ড. বশির আহমেদ আজকের পত্রিকাকে

বলেন, তাঁরা দুজনেই শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। সম্মুখযোদ্ধা ব্যারিস্টার শওকত আলী খান ও আমিনুল হকের কাছ থেকে ওই সময় এই দুজনের নাম পাওয়া যায়। আর তাঁরা মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েই বারের কমিটিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্ট বারের প্রশাসনিক কর্মকর্তা রবিউল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি নতুন দায়িত্ব পেয়েছি। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা পেলেও শহীদের তালিকা পাইনি। আর তালিকা কেন নেই বা নামফলকে থাকা দুজনের বিষয়েও কিছু জানি না।’

এদিকে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের মধ্যে জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করতে ২০১৭ সালে উদ্যোগ নেয় তৎকালীন কমিটি। নির্বাহী কমিটির ২০১৭ সালের ১৫ জানুয়ারির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে আইনজীবী শফিউদ্দিন ভূঁইয়াকে আহ্বায়ক করে একটি সাব-কমিটি করা হয়। ওই সাব-কমিটি অনুসন্ধান করে পরে একটি মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রকাশ করে। শফিউদ্দিন ভূঁইয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এত দিনেও শহীদের তালিকা না থাকাটা দুঃখজনক। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করার পর আমি শহীদের তালিকা করার চেষ্টা করেছি। যে দুজনের নামফলক রয়েছে সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার জন্য বারের কাছে তাঁদের পরিবারের ঠিকানা চেয়েও পাইনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি সম্প্রতি বারে শহীদের বিষয়ে তথ্য চেয়ে আবেদন দিয়েছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত