ছেলে-বউকে হারিয়ে সাজানো সংসার তছনছ জেসমিনের

কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১০: ৪২
আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১০: ৪৬

‘মা, তুমি আমারে এত বুঝাও কেন? সবাই বের হয়েছে, আমি ঘরে থাকতে পারব না। আমি গুলি খেয়ে মারা গেলে তুমি শহীদের মা হবা। এত চিন্তা কইরো না।’ মায়ের সঙ্গে এই শেষ কথাগুলোই ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত আব্দুর রহমান জিসানের। 

জিসান কুমিল্লার লাকসাম পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাবুল মিয়ার ছেলে। ওয়ার্কশপ শ্রমিক বাবুল মিয়া দক্ষিণ আফ্রিকাপ্রবাসী। মা জেসমিন আক্তার ও স্ত্রী মিষ্টিকে নিয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার রায়েরবাগ এলাকায় ভাড়াবাড়িতে থাকতেন জিসান। আশপাশের বিভিন্ন দোকানে ফিল্টারের পানিভর্তি জার সরবরাহ করতেন তিনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে রায়েরবাগ এলাকায় আন্দোলনে যোগ দেন জিসান। আন্দোলনকারীদের তৃষ্ণা নিবারণের দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি। 

গত ২০ জুলাই তৃষ্ণার্ত আন্দোলনকারীদের পানি পান করাচ্ছিলেন জিসান। হঠাৎ একটি গুলি তাঁর চোখ দিয়ে ঢুকে মাথা ভেদ করে বেরিয়ে যায়। সেখানেই মৃত্যু হয় জিসানের। 

খবর পেয়ে ২২ জুলাই দেশে ফেরেন জিসানের বাবা বাবুল মিয়া। সেদিনই জিসানের লাশ দাফন করা হয় গ্রামে। ৩০ জুলাই বাবুল মিয়া বাদী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৭ জনের নামে যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করেন। 

বাবুল মিয়া বলেন, ‘আমার ছেলে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গিয়েছিল। সে আন্দোলনকারীদের পানি খাওয়াচ্ছিল। পুলিশ আমার একমাত্র ছেলেকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। এ বিষয়ে আমি থানায় মামলা করেছি।’ 

জিসানের মা জেসমিন আক্তার বলেন, ‘ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে জিসানের বাবা ২২ জুলাই দেশে আসেন। ছেলের শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। জিসানের মৃত্যুর শোক সইতে না পেরে ৯ দিনের মাথায় আত্মহত্যা করে তার স্ত্রী মিষ্টি। মাত্র ১৪ মাস আগে তারা ভালোবেসে বিয়ে করেছিল।’ 

অসহায়ত্বের চোখে জেসমিন বলেন, ‘স্বামী অসুস্থ, ছেলে ও ছেলের বউ নাই। আমার সাজানো ও সুন্দর সংসার তছনছ হয়ে গেল। পরিবারের উপার্জন করার কেউ নাই। আমি অসহায় হয়ে পড়েছি। শোক সইবার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত