ওমার তাসনিপার
তুর্কি সমাজের ধর্মনিরপেক্ষ ও পশ্চিমা মনোভাবাপন্ন অংশকে হতাশ করে দিয়ে রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান আবারও তুরস্কে তাঁর জনপ্রিয়তা প্রমাণ করলেন। চলতি মাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম দফায় (১৪ মে) ৪৯ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পেয়ে তিনি জয়ের খুব কাছাকাছি এসেছেন। ২৮ মে দ্বিতীয় দফায় ভোট গ্রহণ করা হবে এবং এরদোয়ান এখন স্পষ্ট এগিয়ে। এমনটা যে হবে তা প্রত্যাশিত ছিল না।
২০ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ভোট-পূর্ব ও ভোট-পরবর্তী বেশির ভাগ জনমত জরিপে দেখা গেছে, এরদোয়ান পিছিয়ে আছেন। এ থেকে মনে হয়েছিল তিনি অপরাজেয়। এই ধারণা অবশেষে শেষ হয়ে আসছে।
তিন অঙ্কের প্রকৃত মুদ্রাস্ফীতির পাশাপাশি গত ফেব্রুয়ারি মাসে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু এরদোয়ান সরকারের অযোগ্যতাকেই প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক বিরোধীরা দৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিও পরিবর্তনের কথা বলছে।
অনেক পণ্ডিত আশা করেছিলেন, বিরোধীদলীয় জোটের প্রার্থী কেমাল কিলিচদারোলু হেসেখেলে বড় ব্যবধানে জয়ী হবেন। কেমাল পরিচিত রাজনীতিক না হয়েও মানুষের জীবনযাপনের বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিয়ে একটি পরিচ্ছন্ন প্রচারাভিযান চালিয়েছিলেন। কিন্তু বিরোধী দলের উচ্ছ্বাস এখন হতাশায় পরিণত হয়েছে।
তবে সব আশা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। কিলিচদারোলু প্রথম দফায় ৪৪ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। দ্বিতীয় দফার ভোটে তিনি এরদোয়ানের চেয়ে বেশি ভোট পেলেও পেতে পারেন।
এরদোয়ানের ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী জোট ইতিমধ্যেই পার্লামেন্টে ক্ষমতাসীন সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। বিরোধীদের হতাশা তাই আরও তীব্র। আসলে এরদোয়ানের এই দীর্ঘস্থায়ী জনপ্রিয়তার ব্যাখ্যা কী? এর সংক্ষিপ্ত উত্তর হলো—গোটা দেশকে মেরুকরণের ক্ষমতা। তিনি জানতেন যে তাঁর জেতার একমাত্র সুযোগ হচ্ছে জাতীয়তাবাদের তাসটি খেলা। তিনি একটি নেতিবাচক প্রচার চালিয়ে এটি করেছিলেন, যা ভয়ভীতিকে নতুন স্তরে নিয়ে গিয়েছিল।
এরদোয়ানের কাজ আরও সহজ হয়ে যায় যখন কুর্দিস পার্টি তার নিজের প্রার্থীর পরিবর্তে কিলিচদারোলুকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নেয়। পিপলস ডেমোক্রেসি পার্টি (এইচডিপি) একটি বৈধ রাজনৈতিক দল, যারা সহিংসতার বিরোধী। তবুও তুর্কি জাতীয়তাবাদীদের দৃষ্টিতে কুর্দি সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে দলটির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
এরদোয়ানের বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা ক্রমাগত দেখিয়েছে যে কুর্দি জঙ্গিরা আনাতোলিয়ার কেন্দ্রস্থলে তাঁর রাজনৈতিক সমাবেশের সময় বড় পর্দায় কিলিচদারোলুর প্রার্থিতাকে সমর্থন করছে। এ ধরনের মেরুকরণ জাতীয়তাবাদের পাশাপাশি এরদোয়ান নিপুণভাবে ধর্মের তাসটিও খেলেছেন। তিনি ধারাবাহিকভাবে বিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ গোষ্ঠীকে এলজিবিটি-পন্থী এবং ঐতিহ্যগত পারিবারিক মূল্যবোধের বিরোধী হিসেবে তুলে ধরেছেন।
তুরস্কে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয় না। একটি দমনমূলক শাসন এবং গণমাধ্যমের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে এরদোয়ান তাঁর প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করার সুবিধা পেয়েছিলেন। তাঁকে ভোট চুরি করতে হয়নি। তিনি কেবল তাঁর প্রচারযন্ত্র এবং রক্ষণশীল জনগণের সঙ্গে তাঁর দৃঢ় বন্ধনের ওপর নির্ভর করেছিলেন। কিলিচদারোলুও সম্ভবত তাঁর নির্বাচনী প্রচারে অর্থনৈতিক মন্দার ওপর খুব বেশি জোর দিয়ে ভুল করেছেন। হ্যাঁ, তুরস্কের অর্থনীতি খারাপ অবস্থায় রয়েছে, ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতিসহ। কিন্তু ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস, জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি এবং পরিচয়ের রাজনীতির বাধা পেরিয়ে যাবে—এই অনুমান করাটা তাঁর ভুল ছিল।
প্রথমত, বিরোধীরা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে যে কুর্দিদের কারণে সৃষ্ট জাতীয় নিরাপত্তার হুমকির ছবিটা এরদোয়ানের জাতীয়তাবাদী ধর্মীয় ভিত্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।
কুর্দি ইস্যু সম্ভবত তুরস্কের রাজনীতিতে সবচেয়ে মেরুকরণ সমস্যা। সিরিয়া ও তুরস্কে কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করায় বেশির ভাগ তুর্কি উদ্বিগ্ন। তাই তুরস্কে কুর্দি জাতীয়তাবাদের সমর্থন চাওয়ার ক্ষেত্রে কিলিচদারোলু একটি ঝুঁকি নিয়েছিলেন।
এটা আমার মতো তুর্কি উদারপন্থীদের চোখে রাজনৈতিক সাহস ও গণতান্ত্রিক পরিপক্বতার লক্ষণ। কিন্তু উদারপন্থীরা তুরস্কে তুর্কি জাতীয়তাবাদের আধিপত্যের তুলনায় অতি ক্ষুদ্র একটি জনগোষ্ঠী।
অন্য সব বিষয় বাদ দিয়ে অর্থনীতির ওপর জোর দেওয়ার বিষয়টি জনগণ খুব গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি। কেননা তুরস্কে বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকট নেই। ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি এমন একটি বিষয়, যা তুর্কিরা সহ্য করতে পারে। যতক্ষণ ব্যাপক বেকারত্ব এবং বড় আর্থিক সংকটে না পড়ে, ততক্ষণ তারা তা মেনে নেয়। তুরস্কের অর্থনীতিতে মন্দার কোনো লক্ষণ নেই।এরদোয়ানের অর্থনৈতিক মডেল সব সময় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর ভিত্তি করে গঠিত। তিনি উচ্চ সুদের হার এড়াতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। কারণ সুদের উচ্চ হারের কারণে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিত, যার কারণে তাঁর পুনরায় নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা শেষ হয়ে যেত। তার বদলে এরদোয়ান একটি উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং উচ্চ বৃদ্ধির মডেল তৈরির চেষ্টা করেছেন, যেখানে তিনি মজুরি বৃদ্ধি করে, অবসরের বয়স কমিয়ে এবং বন্ধুদের মাঝে আর্থিক ঋণ বিতরণের মাধ্যমে এখনো অর্থনৈতিক জনতুষ্টির সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন।
এরদোয়ান জিতলে আগামী পাঁচ বছর তুরস্কে আরও বেশি রাজনৈতিক দমনের ঘটনা ঘটবে এবং ডানপন্থী জাতীয়তাবাদের দেখা মিলবে। পশ্চিমের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না, যদি না ব্যাপক অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয় এবং এরদোয়ানকে আইএমএফ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্যাকেজ গ্রহণ করতে হয়।
সামনে সব চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও বিরোধীদের লড়াই ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। এরদোয়ান সম্ভবত আরও একটি মেয়াদের জন্য লড়বেন না। তিনি ক্লান্ত এবং স্বাস্থ্যের অবস্থা ভালো নয় বলে জানা গেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচনে বিজয়ী ও পরাজিত নির্ধারণ না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তুর্কি গণতন্ত্রের স্পন্দন বজায় থাকবে।
এরদোয়ান আবারও নির্বাচনে জিতে খুব ভালো প্রমাণিত হচ্ছেন, যখন অনেক কিছুই তাঁর প্রতিকূলে। দমনমূলক রাজনৈতিক ব্যবস্থা, তাঁর সস্তা জনপ্রিয়তার জাতীয়তাবাদ এবং রক্ষণশীল জনগণ তাঁর পক্ষে কাজ করছে। এমনকি তাঁর অব্যবস্থাপনার কারণে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তারা তা আমলে নেয়নি।
লেখক: অধ্যাপক, ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটি, ওয়াশিংটন
এশিয়া টাইমসে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন সাংবাদিক ও কলাম লেখক: রোকেয়া রহমান
তুরস্ক নির্বাচন সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
তুর্কি সমাজের ধর্মনিরপেক্ষ ও পশ্চিমা মনোভাবাপন্ন অংশকে হতাশ করে দিয়ে রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান আবারও তুরস্কে তাঁর জনপ্রিয়তা প্রমাণ করলেন। চলতি মাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম দফায় (১৪ মে) ৪৯ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পেয়ে তিনি জয়ের খুব কাছাকাছি এসেছেন। ২৮ মে দ্বিতীয় দফায় ভোট গ্রহণ করা হবে এবং এরদোয়ান এখন স্পষ্ট এগিয়ে। এমনটা যে হবে তা প্রত্যাশিত ছিল না।
২০ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ভোট-পূর্ব ও ভোট-পরবর্তী বেশির ভাগ জনমত জরিপে দেখা গেছে, এরদোয়ান পিছিয়ে আছেন। এ থেকে মনে হয়েছিল তিনি অপরাজেয়। এই ধারণা অবশেষে শেষ হয়ে আসছে।
তিন অঙ্কের প্রকৃত মুদ্রাস্ফীতির পাশাপাশি গত ফেব্রুয়ারি মাসে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু এরদোয়ান সরকারের অযোগ্যতাকেই প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক বিরোধীরা দৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিও পরিবর্তনের কথা বলছে।
অনেক পণ্ডিত আশা করেছিলেন, বিরোধীদলীয় জোটের প্রার্থী কেমাল কিলিচদারোলু হেসেখেলে বড় ব্যবধানে জয়ী হবেন। কেমাল পরিচিত রাজনীতিক না হয়েও মানুষের জীবনযাপনের বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিয়ে একটি পরিচ্ছন্ন প্রচারাভিযান চালিয়েছিলেন। কিন্তু বিরোধী দলের উচ্ছ্বাস এখন হতাশায় পরিণত হয়েছে।
তবে সব আশা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। কিলিচদারোলু প্রথম দফায় ৪৪ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। দ্বিতীয় দফার ভোটে তিনি এরদোয়ানের চেয়ে বেশি ভোট পেলেও পেতে পারেন।
এরদোয়ানের ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী জোট ইতিমধ্যেই পার্লামেন্টে ক্ষমতাসীন সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। বিরোধীদের হতাশা তাই আরও তীব্র। আসলে এরদোয়ানের এই দীর্ঘস্থায়ী জনপ্রিয়তার ব্যাখ্যা কী? এর সংক্ষিপ্ত উত্তর হলো—গোটা দেশকে মেরুকরণের ক্ষমতা। তিনি জানতেন যে তাঁর জেতার একমাত্র সুযোগ হচ্ছে জাতীয়তাবাদের তাসটি খেলা। তিনি একটি নেতিবাচক প্রচার চালিয়ে এটি করেছিলেন, যা ভয়ভীতিকে নতুন স্তরে নিয়ে গিয়েছিল।
এরদোয়ানের কাজ আরও সহজ হয়ে যায় যখন কুর্দিস পার্টি তার নিজের প্রার্থীর পরিবর্তে কিলিচদারোলুকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নেয়। পিপলস ডেমোক্রেসি পার্টি (এইচডিপি) একটি বৈধ রাজনৈতিক দল, যারা সহিংসতার বিরোধী। তবুও তুর্কি জাতীয়তাবাদীদের দৃষ্টিতে কুর্দি সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে দলটির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
এরদোয়ানের বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা ক্রমাগত দেখিয়েছে যে কুর্দি জঙ্গিরা আনাতোলিয়ার কেন্দ্রস্থলে তাঁর রাজনৈতিক সমাবেশের সময় বড় পর্দায় কিলিচদারোলুর প্রার্থিতাকে সমর্থন করছে। এ ধরনের মেরুকরণ জাতীয়তাবাদের পাশাপাশি এরদোয়ান নিপুণভাবে ধর্মের তাসটিও খেলেছেন। তিনি ধারাবাহিকভাবে বিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ গোষ্ঠীকে এলজিবিটি-পন্থী এবং ঐতিহ্যগত পারিবারিক মূল্যবোধের বিরোধী হিসেবে তুলে ধরেছেন।
তুরস্কে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয় না। একটি দমনমূলক শাসন এবং গণমাধ্যমের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে এরদোয়ান তাঁর প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করার সুবিধা পেয়েছিলেন। তাঁকে ভোট চুরি করতে হয়নি। তিনি কেবল তাঁর প্রচারযন্ত্র এবং রক্ষণশীল জনগণের সঙ্গে তাঁর দৃঢ় বন্ধনের ওপর নির্ভর করেছিলেন। কিলিচদারোলুও সম্ভবত তাঁর নির্বাচনী প্রচারে অর্থনৈতিক মন্দার ওপর খুব বেশি জোর দিয়ে ভুল করেছেন। হ্যাঁ, তুরস্কের অর্থনীতি খারাপ অবস্থায় রয়েছে, ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতিসহ। কিন্তু ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস, জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি এবং পরিচয়ের রাজনীতির বাধা পেরিয়ে যাবে—এই অনুমান করাটা তাঁর ভুল ছিল।
প্রথমত, বিরোধীরা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে যে কুর্দিদের কারণে সৃষ্ট জাতীয় নিরাপত্তার হুমকির ছবিটা এরদোয়ানের জাতীয়তাবাদী ধর্মীয় ভিত্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।
কুর্দি ইস্যু সম্ভবত তুরস্কের রাজনীতিতে সবচেয়ে মেরুকরণ সমস্যা। সিরিয়া ও তুরস্কে কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করায় বেশির ভাগ তুর্কি উদ্বিগ্ন। তাই তুরস্কে কুর্দি জাতীয়তাবাদের সমর্থন চাওয়ার ক্ষেত্রে কিলিচদারোলু একটি ঝুঁকি নিয়েছিলেন।
এটা আমার মতো তুর্কি উদারপন্থীদের চোখে রাজনৈতিক সাহস ও গণতান্ত্রিক পরিপক্বতার লক্ষণ। কিন্তু উদারপন্থীরা তুরস্কে তুর্কি জাতীয়তাবাদের আধিপত্যের তুলনায় অতি ক্ষুদ্র একটি জনগোষ্ঠী।
অন্য সব বিষয় বাদ দিয়ে অর্থনীতির ওপর জোর দেওয়ার বিষয়টি জনগণ খুব গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি। কেননা তুরস্কে বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকট নেই। ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি এমন একটি বিষয়, যা তুর্কিরা সহ্য করতে পারে। যতক্ষণ ব্যাপক বেকারত্ব এবং বড় আর্থিক সংকটে না পড়ে, ততক্ষণ তারা তা মেনে নেয়। তুরস্কের অর্থনীতিতে মন্দার কোনো লক্ষণ নেই।এরদোয়ানের অর্থনৈতিক মডেল সব সময় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর ভিত্তি করে গঠিত। তিনি উচ্চ সুদের হার এড়াতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। কারণ সুদের উচ্চ হারের কারণে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিত, যার কারণে তাঁর পুনরায় নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা শেষ হয়ে যেত। তার বদলে এরদোয়ান একটি উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং উচ্চ বৃদ্ধির মডেল তৈরির চেষ্টা করেছেন, যেখানে তিনি মজুরি বৃদ্ধি করে, অবসরের বয়স কমিয়ে এবং বন্ধুদের মাঝে আর্থিক ঋণ বিতরণের মাধ্যমে এখনো অর্থনৈতিক জনতুষ্টির সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন।
এরদোয়ান জিতলে আগামী পাঁচ বছর তুরস্কে আরও বেশি রাজনৈতিক দমনের ঘটনা ঘটবে এবং ডানপন্থী জাতীয়তাবাদের দেখা মিলবে। পশ্চিমের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না, যদি না ব্যাপক অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয় এবং এরদোয়ানকে আইএমএফ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্যাকেজ গ্রহণ করতে হয়।
সামনে সব চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও বিরোধীদের লড়াই ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। এরদোয়ান সম্ভবত আরও একটি মেয়াদের জন্য লড়বেন না। তিনি ক্লান্ত এবং স্বাস্থ্যের অবস্থা ভালো নয় বলে জানা গেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচনে বিজয়ী ও পরাজিত নির্ধারণ না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তুর্কি গণতন্ত্রের স্পন্দন বজায় থাকবে।
এরদোয়ান আবারও নির্বাচনে জিতে খুব ভালো প্রমাণিত হচ্ছেন, যখন অনেক কিছুই তাঁর প্রতিকূলে। দমনমূলক রাজনৈতিক ব্যবস্থা, তাঁর সস্তা জনপ্রিয়তার জাতীয়তাবাদ এবং রক্ষণশীল জনগণ তাঁর পক্ষে কাজ করছে। এমনকি তাঁর অব্যবস্থাপনার কারণে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তারা তা আমলে নেয়নি।
লেখক: অধ্যাপক, ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটি, ওয়াশিংটন
এশিয়া টাইমসে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন সাংবাদিক ও কলাম লেখক: রোকেয়া রহমান
তুরস্ক নির্বাচন সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে