স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিজেই অসুস্থ

শিমুল চৌধুরী, ভোলা
প্রকাশ : ১৮ অক্টোবর ২০২১, ০৭: ০৮
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪: ১২

ভোলার ইউনিয়ন পর্যায়ে কিছু কিছু সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্থানীয়রা যথাযথ সেবা পাচ্ছেন না বলে জানা গেছে। কর্মকর্তা-কর্মচারী ও চিকিৎসকরাও ঠিকমতো উপস্থিত থাকেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে সেবা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরছেন সেবাপ্রত্যাশীরা। তবে জেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহমুদুল হক আজাদের দাবি, সব স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।

ভোলা সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ ইউনিয়নে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র আছে, কিন্তু কর্মকর্তা নেই। পদ আছে চিকিৎসক নেই। এ কারণে রোগীরা সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

গত ১২ সেপ্টেম্বর সকালে উপজেলার বাপ্তা ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির দরজা জানালা খোলা থাকলেও কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পাওয়া যায়নি। ফলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবা নিতে আসা ওই এলাকার তাহেরা বেগম ও জহুর আহম্মেদ সেবা না নিয়েই বাড়ি ফিরে যান। বিষয়টি ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইয়ানুর রহমান বিপ্লব মোল্লাকে জানানো হয়। তিনি ফোন করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে নিয়ে উপস্থিত না থাকা ও রোগীর সেবা না পাওয়ার কারণ জানতে চান। কিন্তু ওই কর্মকর্তা চেয়ারম্যানকে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

তবে ভিন্ন চিত্র শিবপুর ইউনিয়নের ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে। এখানে মোটামুটি সেবা পাওয়া যায়। সেবা নিতে আসা কাঞ্চন মিয়া (৭০) জানান, এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিভিন্ন রোগ নিয়ে প্রায়ই আসেন। এখান থেকে বিনা মূল্যে ওষুধ নিয়ে খেয়ে ভালো হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সব সময় এসে ওষুধ পাই। এখানকার চিকিৎসা সেবায় খুশি এই দরিদ্র কৃষক।’ একই এলাকার পালওয়ান বাড়ির জামে মসজিদের ইমাম আল-আমীন জানান, তাঁর ২ বছরের শিশুপুত্র সোলায়মানের সর্দি-জ্বরের জন্য ওষুধ নিতে এসেছেন এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। একই এলাকার দিন মজুর মন্নানের স্ত্রী সাহিদাও আসেন সর্দি-জ্বর নিয়ে। শিবপুর ইউনিয়নের ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মাহতাব উদ্দিন তালুকদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আমরা ২৪ ঘণ্টাই রোগীদের সেবা দিয়ে থাকি। এখান থেকে বিনা মূল্যে ২১ ধরনের ওষুধ সরবরাহ করছি।’ তিনি জানান, শিবপুর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক, একজন অফিস সহায়ক ও একজন আয়া সার্বক্ষণিক কাজ করছেন। চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। শুধুমাত্র একজন ফার্মাসিস্টের একটি পদ শূন্য রয়েছ দীর্ঘদিন ধরে। তবে, এই এলাকার মানুষের চিকিৎসা সেবা দিতে তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলেও জানান এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মকর্তা।

ভোলা জেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপপরিচালক মাহমুদুল হক আজাদের কাছে বিভিন্ন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক ও কর্মচারী না থাকার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘বাপ্তা ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত চিকিৎসক কয়েক দিন ছুটিতে ছিলেন। এ কারণে কয়েক দিন প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ছিল। এখন তিনি নিয়মিত সেবা দিচ্ছেন।’ তাঁর দাবি, সব ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই যথাসাধ্য সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন চিকিৎসকেরা। শিবপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ফার্মাসিস্ট নিয়োগের চেষ্টা চলছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত