শাইখ সিরাজ
গত শতাব্দীর আশির দশকে যখন মাছ চাষের প্রচারণা চালাই, শুরুতে কৃষকেরা মুখ ফিরিয়ে নেন। বিস্ময় নিয়ে জানতে চান, ‘মাছের আবার চাষ কী!’ যখন উদাহরণ দিয়ে বললাম, ‘ওই গ্রামের ফরিদ তো মাছ চাষ করে বেশ টাকা কামাচ্ছেন।’ তখন বলতেন, ‘মাছ চাষ এত সোজা নাকি! ভীষণ ঝামেলার কাজ। সময়মতো খাবার দিতে হবে, পানিতে নেমে কী সব করতে হয়! ধান-বনের কাজ লেগেই থাকে, এত সময় কই আমাদের!’ শেষে মাছ চাষে আগ্রহী করে তুলতে ‘হাকিম আলীর মৎস্য খামার’ শিরোনামে বিজ্ঞাপনের মতো একটা ভিডিও বানালাম। বিটিভিতে প্রচার হতে থাকল। এর প্রভাব তৈরি হলো ম্যাজিকের মতো। সারা দেশের তরুণেরা মাছ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠলেন।
শুরু হলো রুপালি বিপ্লব। আর আজ চাষের মাছ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। শুধু তা-ই নয়, কয়েক বছর ধরে অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ের মৎস্য আহরণে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
নব্বইয়ের দশকের সূচনায় যেসব তরুণ মাছ চাষ করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছেন, তাঁদের একজন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের মকবুল মোল্লা। টানা ২৫ বছরের মাছ চাষের অভিজ্ঞতা তাঁর। বলা চলে, টানা এক সাফল্যের মাঝেই আছেন তিনি। মাছ চাষের নিত্যনতুন কৌশল থেকে শুরু করে বাজার পরিস্থিতি রপ্ত করেছেন। সেই মকবুল মোল্লাও বর্তমানে বেশ ব্যস্ত রয়েছেন রঙিন মাছের চাষ নিয়ে।
বাংলাদেশে রঙিন মাছ চাষের অগ্রপথিক হিসেবে যে কয়জনের নাম আসে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সাতক্ষীরার সাইফুল্লাহ গাজী। রুপালি বিপ্লবকে যাঁরা বর্ণিল রঙে রাঙিয়ে তুলেছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন রংপুরের মৃদুল রহমানও। ক্রমেই তাঁদের হাত থেকে রঙিন মাছের চাষ ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। এখন দেশের নানা প্রান্তে পুকুরে, চৌবাচ্চায়, এমনকি বাড়ির ছাদেও চলছে রঙিন মাছের চাষ।
যা-ই হোক, এক শীতের সকালে মিষ্টি রোদের আমেজ গায়ে মেখে মকবুলের খামারের সামনের অংশে বসে শুনছিলাম তাঁর মাছ চাষের সূচনার গল্প। তাঁর কথার সূত্র ধরে মনে পড়ে গেল সেই নব্বইয়ের দশকের আরেক মাছ চাষ উদ্যোক্তা সামসুদ্দিন ছমার কথা। সে সময় তাঁর ওপর প্রতিবেদন নির্মাণ করতে গিয়েছিলাম। পাঁচদোনা হাইস্কুলের দপ্তরি ছিলেন সামসুদ্দিন ছমা। টেলিভিশনে ‘হাকিম আলীর মৎস্য খামার’ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে বর্ষাকালে স্কুলের পাশে ডোবায় মাছ চাষ করে তিনি সে সময় আয় করেছিলেন ১৫ হাজার টাকা। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। স্কুলের দপ্তরির চাকরি ছেড়ে পুকুর লিজ নিয়ে পুরোদমে শুরু করেন মাছ চাষ। তারপর গড়েন মাছের হ্যাচারি। এখন সামসুদ্দিন এলাকার সম্পদশালী একজন। সেই সামসুদ্দিন ছমার হ্যাচারি থেকেই পোনা এনে মাছ চাষ শুরু করেন মকবুল মোল্লা। এ যেন একজন আরেক জনের সঙ্গে গভীর সুতোয় বেঁধেছেন। ঠিক ২৫ বছর পর টেলিভিশনে সাতক্ষীরার সাইফুল্লাহ গাজীর রঙিন মাছের চাষ দেখে মকবুল এখন শুরু করেছেন রঙিন মাছের চাষ।
‘করোনার সময়ে রঙিন মাছের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে।’ বলছিলেন মকবুল। ‘স্কুল-কলেজ ছিল বন্ধ, ছেলে-মেয়েদের ঘরে রেখেই প্রকৃতির কাছাকাছি রাখতে বাবা-মায়েরা ঘরে অ্যাকুরিয়ামের ব্যবস্থা করেন। আর তাতেই রঙিন মাছের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়।’
খাওয়ার মাছের আকারের একেকটি আকর্ষণীয় রঙের মাতৃমাছ। এসব মাছের একেকটির দামও অনেক। মকবুল হাতে তুলে নিয়ে এলেন উজ্জ্বল রঙিন একটি মাছ। জানতে চাইলাম, কেমন দাম এই মাছের? মাছটির ওজন এক কেজির মতো হবে। তিনি বললেন, ‘কম করে হলেও দুই হাজার টাকা হবে।’ শুনে অবাক হলাম। এমন একটি কাতল মাছের দাম ২০০ টাকার বেশি হবে না। বললাম, ‘কী বলেন!’ মকবুল বললেন, ‘মা মাছটি ২৫০ গ্রামের মতো ডিম দেবে। সেই ডিম থেকে ২৫ থেকে ৩০ হাজার পোনা হবে। প্রতিটি পোনার দাম ৫ টাকা হলে মিলবে দেড় লাখ টাকা।’ মকবুল একদমে বলে গেলেন কথাগুলো। বললাম, ‘আরও ধীরে, একটু গুছিয়ে বলুন।’ তিনি তাঁর আড়াই বিঘার একটি পুকুরের সামনে নিয়ে গেলেন। বললেন, ‘আগের পুকুরটা ছিল মাতৃমাছের। এটা পোনার পুকুর। এখানে ৮০ শতাংশের এই পুকুরে ছাড়া হয়েছে দেড় লাখ পোনা। ২ মাস ১০ দিনে ৩ ইঞ্চি সাইজ পোনায় রূপান্তরিত হবে। প্রতিটি পোনা বিক্রি করছি ৪ টাকা করে; অর্থাৎ ৬ লাখ টাকা। এটা ৩ মাসের। বছরে তিনটা ফলন অনায়াসেই সম্ভব। সেই হিসাবে বছরে ১৮ লাখ টাকা এই পুকুর থেকে আয় করা অসম্ভব কিছু না। খরচ সব মিলিয়ে ২-৩ লাখ টাকা। নিট লাভ থাকছে ১৫ লাখ টাকা।’
জানতে চাইলাম, ‘যদি খাওয়ার মাছ চাষ করতেন, তাহলে কত লাভ পেতেন?’
বললেন, ‘পাবদা বা গোলসা চাষ করলেও ৮০ শতক থেকে লাভ থাকত সর্বোচ্চ ২ থেকে ৩ লাখ টাকা।’
বলতেই হবে এখনকার সময়টি একটি যুগসন্ধিকাল। মাছ চাষ নিয়ে নানা রকম ভাঙচুর চলছে। নানা প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। সত্যিকার অর্থে মানুষের চাহিদার শেষ নেই। খাদ্যের চাহিদা পূরণের পরপরই আসে চিত্তের চাহিদা পূরণের বিষয়। ঠিক সে প্রশ্নেই আসে শৌখিন মাছ চাষ। এখানে মকবুল মোল্লার দু-একটি পুকুর থেকে বহু পুকুরের মাছ চাষের সমান আর্থিক সাফল্য অর্জন করছেন রঙিন মাছ চাষ করে।
প্রশ্ন হলো, রঙিন বা শৌখিন মাছের যে উৎপাদন সম্ভাবনা, সেই বিবেচনায় আমরা বাইরের বাজার ধরার সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যেতে পারছি কি না।
মকবুল বললেন, ‘আমরা কোয়ালিটি ঠিক রাখতে পারছি না। জাপানের রঙিন মাছের কোয়ালিটি সবচেয়ে ভালো। রপ্তানি করতে হলে আমাদের কোয়ালিটিও সেই পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। এর জন্য যে টেকনিক্যাল সাপোর্ট প্রয়োজন, তা নেই। নেই প্রশিক্ষণ। এ বিষয়ে সরকারের সহযোগিতা থাকলে বহু দূর পর্যন্ত যাওয়া যাবে।’
তবে আশার কথা হলো, রঙিন মাছের বাজার বাড়ছে। দেশের চাহিদা যেমন বাড়ছে, একই হারে বাড়ছে উদ্যোক্তা। মকবুল মোল্লার রঙিন মাছের প্রকল্পের সঙ্গে বাজার বিপণনের দায়িত্ব পালন করেন রেদোয়ান উল্লাহ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি। তরুণ এক ছেলে। কথা বলে বুঝলাম, রঙিন মাছের বাজার নিয়ে তাঁর ধারণা যেমন স্বচ্ছ, তেমনি তাঁর স্বপ্নও বিশাল।
‘এই মুহূর্তে দেশের অ্যাকুরিয়াম মাছের বাজার ২০০ কোটি টাকার।’ জানালেন রেদোয়ান উল্লাহ। বললেন, ‘আমরা চাষের মাছগুলোকে তিনটা ক্যাটাগরিতে ভাগ করি। এ, বি ও সি ক্যাটাগরিতে। এ ক্যাটাগরির মাছগুলো ব্রুডিংয়ের জন্য রাখি। আর বি ও সি ক্যাটাগরির মাছগুলো বিক্রি করে দিই। আমাদের দেশের মোট চাহিদার একটা অংশ মেটাচ্ছি আমরা, এখনো থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, চীন থেকে রঙিন মাছ আমদানি হচ্ছে। কোয়ালিটি বাড়াতে পারলে আমরা রপ্তানি বাজার ধরতে পারব।’ আত্মবিশ্বাসের ধ্বনি পাওয়া গেল রেদোয়ানের কণ্ঠে।
নব্বইয়ের দশকে দেশে মাছ চাষে এক বিপ্লব ঘটে গেছে। বহু উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছেন। সে সময়ের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় আজ মাছ উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। এই মাছকে আমরা শুধু প্রাণিজ আমিষের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ক্ষেত্র ভেবেছি, কিন্তু এই রঙিন মাছ এখন সৌন্দর্য ও রুচির বাহক হিসেবে কাজ করছে। শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষের কাছেই রঙিন মাছের আবেদন রয়েছে। রকমারি ও বাহারি মাছের বিচরণ চিত্তের সুখের জন্য রাখতে পারে বড় অবদান। মাছের এই চাঞ্চল্যের প্রভাব ঘটে মানুষের মধ্যেও। দিনে দিনে এই মাছের বাজার বড় হচ্ছে, দেশের বাজারের পাশাপাশি বড় হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারও। রঙিন মাছের বৃহৎ রপ্তানি বাজার ধরার জন্য আমাদের প্রস্তুতি নেওয়ার এখনই সময়।
শাইখ সিরাজ, পরিচালক ও বার্তাপ্রধান চ্যানেল আই
গত শতাব্দীর আশির দশকে যখন মাছ চাষের প্রচারণা চালাই, শুরুতে কৃষকেরা মুখ ফিরিয়ে নেন। বিস্ময় নিয়ে জানতে চান, ‘মাছের আবার চাষ কী!’ যখন উদাহরণ দিয়ে বললাম, ‘ওই গ্রামের ফরিদ তো মাছ চাষ করে বেশ টাকা কামাচ্ছেন।’ তখন বলতেন, ‘মাছ চাষ এত সোজা নাকি! ভীষণ ঝামেলার কাজ। সময়মতো খাবার দিতে হবে, পানিতে নেমে কী সব করতে হয়! ধান-বনের কাজ লেগেই থাকে, এত সময় কই আমাদের!’ শেষে মাছ চাষে আগ্রহী করে তুলতে ‘হাকিম আলীর মৎস্য খামার’ শিরোনামে বিজ্ঞাপনের মতো একটা ভিডিও বানালাম। বিটিভিতে প্রচার হতে থাকল। এর প্রভাব তৈরি হলো ম্যাজিকের মতো। সারা দেশের তরুণেরা মাছ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠলেন।
শুরু হলো রুপালি বিপ্লব। আর আজ চাষের মাছ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। শুধু তা-ই নয়, কয়েক বছর ধরে অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ের মৎস্য আহরণে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
নব্বইয়ের দশকের সূচনায় যেসব তরুণ মাছ চাষ করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছেন, তাঁদের একজন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের মকবুল মোল্লা। টানা ২৫ বছরের মাছ চাষের অভিজ্ঞতা তাঁর। বলা চলে, টানা এক সাফল্যের মাঝেই আছেন তিনি। মাছ চাষের নিত্যনতুন কৌশল থেকে শুরু করে বাজার পরিস্থিতি রপ্ত করেছেন। সেই মকবুল মোল্লাও বর্তমানে বেশ ব্যস্ত রয়েছেন রঙিন মাছের চাষ নিয়ে।
বাংলাদেশে রঙিন মাছ চাষের অগ্রপথিক হিসেবে যে কয়জনের নাম আসে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সাতক্ষীরার সাইফুল্লাহ গাজী। রুপালি বিপ্লবকে যাঁরা বর্ণিল রঙে রাঙিয়ে তুলেছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন রংপুরের মৃদুল রহমানও। ক্রমেই তাঁদের হাত থেকে রঙিন মাছের চাষ ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। এখন দেশের নানা প্রান্তে পুকুরে, চৌবাচ্চায়, এমনকি বাড়ির ছাদেও চলছে রঙিন মাছের চাষ।
যা-ই হোক, এক শীতের সকালে মিষ্টি রোদের আমেজ গায়ে মেখে মকবুলের খামারের সামনের অংশে বসে শুনছিলাম তাঁর মাছ চাষের সূচনার গল্প। তাঁর কথার সূত্র ধরে মনে পড়ে গেল সেই নব্বইয়ের দশকের আরেক মাছ চাষ উদ্যোক্তা সামসুদ্দিন ছমার কথা। সে সময় তাঁর ওপর প্রতিবেদন নির্মাণ করতে গিয়েছিলাম। পাঁচদোনা হাইস্কুলের দপ্তরি ছিলেন সামসুদ্দিন ছমা। টেলিভিশনে ‘হাকিম আলীর মৎস্য খামার’ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে বর্ষাকালে স্কুলের পাশে ডোবায় মাছ চাষ করে তিনি সে সময় আয় করেছিলেন ১৫ হাজার টাকা। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। স্কুলের দপ্তরির চাকরি ছেড়ে পুকুর লিজ নিয়ে পুরোদমে শুরু করেন মাছ চাষ। তারপর গড়েন মাছের হ্যাচারি। এখন সামসুদ্দিন এলাকার সম্পদশালী একজন। সেই সামসুদ্দিন ছমার হ্যাচারি থেকেই পোনা এনে মাছ চাষ শুরু করেন মকবুল মোল্লা। এ যেন একজন আরেক জনের সঙ্গে গভীর সুতোয় বেঁধেছেন। ঠিক ২৫ বছর পর টেলিভিশনে সাতক্ষীরার সাইফুল্লাহ গাজীর রঙিন মাছের চাষ দেখে মকবুল এখন শুরু করেছেন রঙিন মাছের চাষ।
‘করোনার সময়ে রঙিন মাছের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে।’ বলছিলেন মকবুল। ‘স্কুল-কলেজ ছিল বন্ধ, ছেলে-মেয়েদের ঘরে রেখেই প্রকৃতির কাছাকাছি রাখতে বাবা-মায়েরা ঘরে অ্যাকুরিয়ামের ব্যবস্থা করেন। আর তাতেই রঙিন মাছের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়।’
খাওয়ার মাছের আকারের একেকটি আকর্ষণীয় রঙের মাতৃমাছ। এসব মাছের একেকটির দামও অনেক। মকবুল হাতে তুলে নিয়ে এলেন উজ্জ্বল রঙিন একটি মাছ। জানতে চাইলাম, কেমন দাম এই মাছের? মাছটির ওজন এক কেজির মতো হবে। তিনি বললেন, ‘কম করে হলেও দুই হাজার টাকা হবে।’ শুনে অবাক হলাম। এমন একটি কাতল মাছের দাম ২০০ টাকার বেশি হবে না। বললাম, ‘কী বলেন!’ মকবুল বললেন, ‘মা মাছটি ২৫০ গ্রামের মতো ডিম দেবে। সেই ডিম থেকে ২৫ থেকে ৩০ হাজার পোনা হবে। প্রতিটি পোনার দাম ৫ টাকা হলে মিলবে দেড় লাখ টাকা।’ মকবুল একদমে বলে গেলেন কথাগুলো। বললাম, ‘আরও ধীরে, একটু গুছিয়ে বলুন।’ তিনি তাঁর আড়াই বিঘার একটি পুকুরের সামনে নিয়ে গেলেন। বললেন, ‘আগের পুকুরটা ছিল মাতৃমাছের। এটা পোনার পুকুর। এখানে ৮০ শতাংশের এই পুকুরে ছাড়া হয়েছে দেড় লাখ পোনা। ২ মাস ১০ দিনে ৩ ইঞ্চি সাইজ পোনায় রূপান্তরিত হবে। প্রতিটি পোনা বিক্রি করছি ৪ টাকা করে; অর্থাৎ ৬ লাখ টাকা। এটা ৩ মাসের। বছরে তিনটা ফলন অনায়াসেই সম্ভব। সেই হিসাবে বছরে ১৮ লাখ টাকা এই পুকুর থেকে আয় করা অসম্ভব কিছু না। খরচ সব মিলিয়ে ২-৩ লাখ টাকা। নিট লাভ থাকছে ১৫ লাখ টাকা।’
জানতে চাইলাম, ‘যদি খাওয়ার মাছ চাষ করতেন, তাহলে কত লাভ পেতেন?’
বললেন, ‘পাবদা বা গোলসা চাষ করলেও ৮০ শতক থেকে লাভ থাকত সর্বোচ্চ ২ থেকে ৩ লাখ টাকা।’
বলতেই হবে এখনকার সময়টি একটি যুগসন্ধিকাল। মাছ চাষ নিয়ে নানা রকম ভাঙচুর চলছে। নানা প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। সত্যিকার অর্থে মানুষের চাহিদার শেষ নেই। খাদ্যের চাহিদা পূরণের পরপরই আসে চিত্তের চাহিদা পূরণের বিষয়। ঠিক সে প্রশ্নেই আসে শৌখিন মাছ চাষ। এখানে মকবুল মোল্লার দু-একটি পুকুর থেকে বহু পুকুরের মাছ চাষের সমান আর্থিক সাফল্য অর্জন করছেন রঙিন মাছ চাষ করে।
প্রশ্ন হলো, রঙিন বা শৌখিন মাছের যে উৎপাদন সম্ভাবনা, সেই বিবেচনায় আমরা বাইরের বাজার ধরার সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যেতে পারছি কি না।
মকবুল বললেন, ‘আমরা কোয়ালিটি ঠিক রাখতে পারছি না। জাপানের রঙিন মাছের কোয়ালিটি সবচেয়ে ভালো। রপ্তানি করতে হলে আমাদের কোয়ালিটিও সেই পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। এর জন্য যে টেকনিক্যাল সাপোর্ট প্রয়োজন, তা নেই। নেই প্রশিক্ষণ। এ বিষয়ে সরকারের সহযোগিতা থাকলে বহু দূর পর্যন্ত যাওয়া যাবে।’
তবে আশার কথা হলো, রঙিন মাছের বাজার বাড়ছে। দেশের চাহিদা যেমন বাড়ছে, একই হারে বাড়ছে উদ্যোক্তা। মকবুল মোল্লার রঙিন মাছের প্রকল্পের সঙ্গে বাজার বিপণনের দায়িত্ব পালন করেন রেদোয়ান উল্লাহ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি। তরুণ এক ছেলে। কথা বলে বুঝলাম, রঙিন মাছের বাজার নিয়ে তাঁর ধারণা যেমন স্বচ্ছ, তেমনি তাঁর স্বপ্নও বিশাল।
‘এই মুহূর্তে দেশের অ্যাকুরিয়াম মাছের বাজার ২০০ কোটি টাকার।’ জানালেন রেদোয়ান উল্লাহ। বললেন, ‘আমরা চাষের মাছগুলোকে তিনটা ক্যাটাগরিতে ভাগ করি। এ, বি ও সি ক্যাটাগরিতে। এ ক্যাটাগরির মাছগুলো ব্রুডিংয়ের জন্য রাখি। আর বি ও সি ক্যাটাগরির মাছগুলো বিক্রি করে দিই। আমাদের দেশের মোট চাহিদার একটা অংশ মেটাচ্ছি আমরা, এখনো থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, চীন থেকে রঙিন মাছ আমদানি হচ্ছে। কোয়ালিটি বাড়াতে পারলে আমরা রপ্তানি বাজার ধরতে পারব।’ আত্মবিশ্বাসের ধ্বনি পাওয়া গেল রেদোয়ানের কণ্ঠে।
নব্বইয়ের দশকে দেশে মাছ চাষে এক বিপ্লব ঘটে গেছে। বহু উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছেন। সে সময়ের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় আজ মাছ উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। এই মাছকে আমরা শুধু প্রাণিজ আমিষের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ক্ষেত্র ভেবেছি, কিন্তু এই রঙিন মাছ এখন সৌন্দর্য ও রুচির বাহক হিসেবে কাজ করছে। শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষের কাছেই রঙিন মাছের আবেদন রয়েছে। রকমারি ও বাহারি মাছের বিচরণ চিত্তের সুখের জন্য রাখতে পারে বড় অবদান। মাছের এই চাঞ্চল্যের প্রভাব ঘটে মানুষের মধ্যেও। দিনে দিনে এই মাছের বাজার বড় হচ্ছে, দেশের বাজারের পাশাপাশি বড় হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারও। রঙিন মাছের বৃহৎ রপ্তানি বাজার ধরার জন্য আমাদের প্রস্তুতি নেওয়ার এখনই সময়।
শাইখ সিরাজ, পরিচালক ও বার্তাপ্রধান চ্যানেল আই
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে