ফারুক মেহেদী, ঢাকা
দুয়ারে নতুন বাজেট। আয়ের চেয়ে বেশি খরচের চলতি বাজেট যখন নানা সংকটে বাস্তবায়নে পিছিয়ে, তখনই ধারকর্জের আরেকটি বড় ঘাটতি বাজেট প্রায় চূড়ান্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী। সীমিত আয়ের চ্যালেঞ্জেও বেশি খরচের বাজেট নিয়ে যখন চারপাশে সমালোচনা ও বিতর্ক, তখনই অর্থনীতির গলা চেপে ধরছে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের লাগামহীন দাম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ বাজেট সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ফলে সরকার রাজনীতির স্বার্থে পপুলার বা জনপ্রিয় বাজেট করবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে গোটা অর্থনীতি চাপের মধ্যে। ফলে এবারে সরকারকে অনেক অজনপ্রিয় ও কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে সস্তা জনপ্রিয়তার রাস্তায় না গিয়ে সরকার ইচ্ছা করলে বিশেষ বাজেট দিতে পারে।
তাই আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটটি চূড়ান্ত করার আগ-মুহূর্তে ওই সব বিষয়ও সরকারের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলায় অর্থ মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে ত্বরিত পদক্ষেপ নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে ডলার যখন বাণিজ্য ঘাটতির পাল্লা ভারী করে চলছে, তখনই এর ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের অংশ হিসেবে নানা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে আগামী বাজেটের আগে স্বল্প মেয়াদে অনেক বিষয়েই তেমন কিছু করার নেই। এমন পরিস্থিতিতে নতুন বাজেটকে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তাই আগামী বাজেটটি যাতে গতানুগতিক না হয়ে একটি বিশেষ বাজেট হয়, এমন পরামর্শই দিচ্ছেন বিশ্লেষকেরা।
জানা যায়, আগামী বাজেটের আকার হতে যাচ্ছে প্রায় ৬ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি বাজেট থেকে অন্তত ৭৭ হাজার কোটি টাকা বেশি। অথচ চলতি বাজেটও বাস্তবায়নে পিছিয়ে রয়েছে। দুর্বল রাজস্ব আয়, উন্নয়ন বাজেটে ধীরগতি, অনিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর ক্ষেত্রেও চলতি বাজেটের সাফল্য সীমিত। নিজেদের আয়ের খাতায় সাফল্য কম হলেও ঠিকই ধারকর্জের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। আগামী বাজেটেও ধারকর্জের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আরও অন্তত ২৮ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সেটা টাকার অঙ্কে হতে পারে ২ লাখ ৪৩ হাজার কোটি টাকার মতো। আয়ের লক্ষ্য ঠিক করা হলেও বাস্তবে কাঙ্ক্ষিত আয় হয়নি সরকারের। চলতি অর্থবছরে আয় ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এর পুরো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বরং বড় অঙ্কের ঘাটতি থাকবে শেষ পর্যন্ত। অথচ আগামী অর্থবছরে আয়ের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন বাজেটে আয়ের লক্ষ্য বাড়ছে ৪৪ হাজার কোটি টাকা।
এর বাইরে অর্থনীতির মূল সূচকগুলো স্থিতিশীল থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ধারণা, নতুন অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৭ শতাংশ অর্জন আর মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৫ শতাংশে ধরে রাখা যাবে। বিদ্যমান বৈশ্বিক অর্থনীতির যে গতিপ্রকৃতি, এর প্রভাবে বাংলাদেশে নিত্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্যবাজারে দামের উত্তাপ যেভাবে বাড়ছে, তাতে বাজেটের ওই সব পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকবে–এ নিয়ে সন্দিহান বিশ্লেষকেরা।
এ ব্যাপারে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম রায়হান বলেন, কোভিডের সময়ের চাপ শেষ হতে না-হতেই বর্তমান সময়ের যেসব উপসর্গ দেখা যাচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে অর্থনীতিতে বেশ চাপ তৈরি করছে। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বে খাদ্যসহ সব ধরনের পণ্য সরবরাহে অস্বাভাবিক বাধা তৈরি করেছে। তা ছাড়া ডলারের ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি হয়েছে। এটা গত ১০ বছরেও এমন পর্যায়ে যায়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক চেষ্টা করেও এটাকে ধরে রাখতে পারছে না।
সেলিম রায়হান বলেন, ‘আমি মনে করি, মুদ্রার অবমূল্যায়ন অবধারিত। এটা না করলে আগামীতে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর বড় ধরনের চাপ আসবে। এদিক থেকে বিবেচনা করলে, নিত্যপণ্যসহ আগামী বাজেটে এসব চ্যালেঞ্জ অবশ্যই মোকাবিলা করার কৌশল নিতে হবে। যদিও অর্থ মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশেষ করে এলসি মার্জিন বাড়ানো, কম দরকারি আমদানি নিরুৎসাহিত করা, প্রয়োজনে কিছু কিছু পণ্যের আমদানিতে অনেক বেশি হারে শুল্ক আরোপ করতে হবে। আমার ধারণা, যে হারে আমদানি হয়েছে, এর মাধ্যমে মুদ্রা পাচার হয়ে থাকতে পারে। কারণ, প্রায় ৪০-৪৫ শতাংশ হারে শিল্পে যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানি হয়েছে, এর প্রভাব কিন্তু বিনিয়োগে দেখছি না। এগুলো ঠেকানোর পথ বের করতে হবে। যেকোনো মূল্যে ডলারের ওপর চাপ কমাতে হবে।’
সরকার আগামী অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) চূড়ান্ত করেছে। এটি বর্তমানের মূল এডিপির চেয়ে ২১ হাজার কোটি টাকা বেশি। এমনিতেই সরকার নতুন অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ১৮ হাজার কোটি টাকা, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) আমদানি মূল্য পরিশোধ ও প্রণোদনা প্যাকেজের সুদ ভর্তুকি বাবদ ১৭ হাজার ৩০০ কোটি, খাদ্য ভর্তুকি ৬ হাজার ৭৪৫ কোটি এবং কৃষি প্রণোদনা বাবদ ১৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির পরিকল্পনা করে রেখেছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম যে হারে বাড়ছে, শেষ পর্যন্ত এ খাতে ভর্তুকি কোথায় গিয়ে ঠেকবে—তা এখনই বলা যাচ্ছে না। যদিও সরকার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। কিন্তু নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মানুষ যেভাবে চাপের মধ্যে আছে, সেখানে নতুন করে সরকার এ অজনপ্রিয় পথে কতটা নিরাপদে হাঁটতে পারবে, সেটাও ভাবনার বিষয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জানা যায়, যেকোনো অনাহূত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টায় সরকার আগামী অর্থবছরের জন্য ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকার ভর্তুকি প্যাকেজ প্রস্তুত করেছে, যা চলতি অর্থবছরের ৬৬ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার ভর্তুকির চেয়ে ২১ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। বিশ্লেষকেরা বলছেন, বর্তমানে অর্থনীতিতে যে চাপ, অন্তত এক যুগেও এমন হয়নি। আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ে ঘাটতির কারণে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, চলতি বাজেট বাস্তবায়নে বিপুল হারে বিদেশি ঋণ নেওয়া হয়েছে। আবারও যে বাজেট দেওয়া হচ্ছে, সেটিও নির্বাচনের আগে শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। তাই এটিও গতানুগতিক উচ্চাভিলাষী বাজেটই হবে। করোনাকে মোকাবিলা করার জন্য চলতি বাজেট যথেষ্ট ছিল না। শুধু ব্যয়ের বাজেট বানানো হয়েছে। অথচ রাজস্ব আয় ঠিকমতো হয়নি। সুতরাং বাজেট ঘাটতি বেড়েছে। এ জন্য ঋণও বেড়েছে। তিনি বলেন, যদি ঋণ করেও মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানো যেত, তা হলে বাজেটের সফলতা দেখা যেত। সেটা হয়নি। উল্টো বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে বেশির ভাগ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা নেই, অন্যদিকে কিছু লোকের অতিরিক্ত টাকা হয়েছে। তেলের বাজারে তেলেসমাতি করে একশ্রেণির ব্যবসায়ীর মুনাফা বাড়ানো হয়েছে। এসব কারণে চলতি বাজেটটি সত্যিকার অর্থে ব্যর্থ বাজেটে পরিণত হয়েছে। তাই আগামী বাজেট গতানুগতিক না করে একটি বিশেষ বাজেট করা যায়, যেখানে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তরণসহ সামগ্রিক বিষয়ের পদক্ষেপ থাকবে।
দুয়ারে নতুন বাজেট। আয়ের চেয়ে বেশি খরচের চলতি বাজেট যখন নানা সংকটে বাস্তবায়নে পিছিয়ে, তখনই ধারকর্জের আরেকটি বড় ঘাটতি বাজেট প্রায় চূড়ান্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী। সীমিত আয়ের চ্যালেঞ্জেও বেশি খরচের বাজেট নিয়ে যখন চারপাশে সমালোচনা ও বিতর্ক, তখনই অর্থনীতির গলা চেপে ধরছে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের লাগামহীন দাম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ বাজেট সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ফলে সরকার রাজনীতির স্বার্থে পপুলার বা জনপ্রিয় বাজেট করবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে গোটা অর্থনীতি চাপের মধ্যে। ফলে এবারে সরকারকে অনেক অজনপ্রিয় ও কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে সস্তা জনপ্রিয়তার রাস্তায় না গিয়ে সরকার ইচ্ছা করলে বিশেষ বাজেট দিতে পারে।
তাই আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটটি চূড়ান্ত করার আগ-মুহূর্তে ওই সব বিষয়ও সরকারের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলায় অর্থ মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে ত্বরিত পদক্ষেপ নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে ডলার যখন বাণিজ্য ঘাটতির পাল্লা ভারী করে চলছে, তখনই এর ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের অংশ হিসেবে নানা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে আগামী বাজেটের আগে স্বল্প মেয়াদে অনেক বিষয়েই তেমন কিছু করার নেই। এমন পরিস্থিতিতে নতুন বাজেটকে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তাই আগামী বাজেটটি যাতে গতানুগতিক না হয়ে একটি বিশেষ বাজেট হয়, এমন পরামর্শই দিচ্ছেন বিশ্লেষকেরা।
জানা যায়, আগামী বাজেটের আকার হতে যাচ্ছে প্রায় ৬ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি বাজেট থেকে অন্তত ৭৭ হাজার কোটি টাকা বেশি। অথচ চলতি বাজেটও বাস্তবায়নে পিছিয়ে রয়েছে। দুর্বল রাজস্ব আয়, উন্নয়ন বাজেটে ধীরগতি, অনিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর ক্ষেত্রেও চলতি বাজেটের সাফল্য সীমিত। নিজেদের আয়ের খাতায় সাফল্য কম হলেও ঠিকই ধারকর্জের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। আগামী বাজেটেও ধারকর্জের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আরও অন্তত ২৮ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সেটা টাকার অঙ্কে হতে পারে ২ লাখ ৪৩ হাজার কোটি টাকার মতো। আয়ের লক্ষ্য ঠিক করা হলেও বাস্তবে কাঙ্ক্ষিত আয় হয়নি সরকারের। চলতি অর্থবছরে আয় ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এর পুরো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বরং বড় অঙ্কের ঘাটতি থাকবে শেষ পর্যন্ত। অথচ আগামী অর্থবছরে আয়ের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন বাজেটে আয়ের লক্ষ্য বাড়ছে ৪৪ হাজার কোটি টাকা।
এর বাইরে অর্থনীতির মূল সূচকগুলো স্থিতিশীল থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ধারণা, নতুন অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৭ শতাংশ অর্জন আর মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৫ শতাংশে ধরে রাখা যাবে। বিদ্যমান বৈশ্বিক অর্থনীতির যে গতিপ্রকৃতি, এর প্রভাবে বাংলাদেশে নিত্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্যবাজারে দামের উত্তাপ যেভাবে বাড়ছে, তাতে বাজেটের ওই সব পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকবে–এ নিয়ে সন্দিহান বিশ্লেষকেরা।
এ ব্যাপারে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম রায়হান বলেন, কোভিডের সময়ের চাপ শেষ হতে না-হতেই বর্তমান সময়ের যেসব উপসর্গ দেখা যাচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে অর্থনীতিতে বেশ চাপ তৈরি করছে। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বে খাদ্যসহ সব ধরনের পণ্য সরবরাহে অস্বাভাবিক বাধা তৈরি করেছে। তা ছাড়া ডলারের ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি হয়েছে। এটা গত ১০ বছরেও এমন পর্যায়ে যায়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক চেষ্টা করেও এটাকে ধরে রাখতে পারছে না।
সেলিম রায়হান বলেন, ‘আমি মনে করি, মুদ্রার অবমূল্যায়ন অবধারিত। এটা না করলে আগামীতে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর বড় ধরনের চাপ আসবে। এদিক থেকে বিবেচনা করলে, নিত্যপণ্যসহ আগামী বাজেটে এসব চ্যালেঞ্জ অবশ্যই মোকাবিলা করার কৌশল নিতে হবে। যদিও অর্থ মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশেষ করে এলসি মার্জিন বাড়ানো, কম দরকারি আমদানি নিরুৎসাহিত করা, প্রয়োজনে কিছু কিছু পণ্যের আমদানিতে অনেক বেশি হারে শুল্ক আরোপ করতে হবে। আমার ধারণা, যে হারে আমদানি হয়েছে, এর মাধ্যমে মুদ্রা পাচার হয়ে থাকতে পারে। কারণ, প্রায় ৪০-৪৫ শতাংশ হারে শিল্পে যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানি হয়েছে, এর প্রভাব কিন্তু বিনিয়োগে দেখছি না। এগুলো ঠেকানোর পথ বের করতে হবে। যেকোনো মূল্যে ডলারের ওপর চাপ কমাতে হবে।’
সরকার আগামী অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) চূড়ান্ত করেছে। এটি বর্তমানের মূল এডিপির চেয়ে ২১ হাজার কোটি টাকা বেশি। এমনিতেই সরকার নতুন অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ১৮ হাজার কোটি টাকা, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) আমদানি মূল্য পরিশোধ ও প্রণোদনা প্যাকেজের সুদ ভর্তুকি বাবদ ১৭ হাজার ৩০০ কোটি, খাদ্য ভর্তুকি ৬ হাজার ৭৪৫ কোটি এবং কৃষি প্রণোদনা বাবদ ১৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির পরিকল্পনা করে রেখেছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম যে হারে বাড়ছে, শেষ পর্যন্ত এ খাতে ভর্তুকি কোথায় গিয়ে ঠেকবে—তা এখনই বলা যাচ্ছে না। যদিও সরকার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। কিন্তু নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মানুষ যেভাবে চাপের মধ্যে আছে, সেখানে নতুন করে সরকার এ অজনপ্রিয় পথে কতটা নিরাপদে হাঁটতে পারবে, সেটাও ভাবনার বিষয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জানা যায়, যেকোনো অনাহূত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টায় সরকার আগামী অর্থবছরের জন্য ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকার ভর্তুকি প্যাকেজ প্রস্তুত করেছে, যা চলতি অর্থবছরের ৬৬ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার ভর্তুকির চেয়ে ২১ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। বিশ্লেষকেরা বলছেন, বর্তমানে অর্থনীতিতে যে চাপ, অন্তত এক যুগেও এমন হয়নি। আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ে ঘাটতির কারণে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, চলতি বাজেট বাস্তবায়নে বিপুল হারে বিদেশি ঋণ নেওয়া হয়েছে। আবারও যে বাজেট দেওয়া হচ্ছে, সেটিও নির্বাচনের আগে শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। তাই এটিও গতানুগতিক উচ্চাভিলাষী বাজেটই হবে। করোনাকে মোকাবিলা করার জন্য চলতি বাজেট যথেষ্ট ছিল না। শুধু ব্যয়ের বাজেট বানানো হয়েছে। অথচ রাজস্ব আয় ঠিকমতো হয়নি। সুতরাং বাজেট ঘাটতি বেড়েছে। এ জন্য ঋণও বেড়েছে। তিনি বলেন, যদি ঋণ করেও মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানো যেত, তা হলে বাজেটের সফলতা দেখা যেত। সেটা হয়নি। উল্টো বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে বেশির ভাগ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা নেই, অন্যদিকে কিছু লোকের অতিরিক্ত টাকা হয়েছে। তেলের বাজারে তেলেসমাতি করে একশ্রেণির ব্যবসায়ীর মুনাফা বাড়ানো হয়েছে। এসব কারণে চলতি বাজেটটি সত্যিকার অর্থে ব্যর্থ বাজেটে পরিণত হয়েছে। তাই আগামী বাজেট গতানুগতিক না করে একটি বিশেষ বাজেট করা যায়, যেখানে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তরণসহ সামগ্রিক বিষয়ের পদক্ষেপ থাকবে।
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৬ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৬ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৬ দিন আগে