বাধা সত্ত্বেও একই মানের ইট

মো. শামীম হোসেন, পাংশা (রাজবাড়ী)
প্রকাশ : ১১ জুন ২০২২, ১২: ৪৬
আপডেট : ১১ জুন ২০২২, ১২: ৪৮

রাজবাড়ীর পাংশায় উপজেলা প্রকৌশলীকে না জানিয়ে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সড়কের নির্মাণকাজ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বারবার বাধা দিলেও নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রাখতে নিজস্ব অর্থায়নে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ভাই যশাই ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিকুর রহমান।

জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন তহবিল থেকে উপজেলার কলিমহর ইউনিয়নের বসাকুষ্ঠিয়া বাজার থেকে সুকুমারের বাড়িমুখী সড়ক ইটের সলিং করার জন্য ১০ লাখ ৮৯ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়।

গত বুধবার সরেজমিনে গেলে স্থানীরা লোকজন জানান, সম্পূর্ণ পুরোনো ও নিম্নমানের ইট দিয়ে চলছে নির্মাণকাজ। তাঁরা নির্মাণকাজে বাধা দিলেও কাজ বন্ধ হয়নি। ৪-৫ দিন ধরে সড়কটির নির্মাণকাজ চলছে। নির্মাণকাজ তদারকির জন্য এখন পর্যন্ত সেখানে কোনো কর্মকর্তা আসেননি।

স্থানীয় বাসিন্দা ইসলাম শেখের স্ত্রী ফিরোজা খাতুন বলেন, পুরোনো নষ্ট ইট এনে সড়কের কাজ করা হচ্ছে। তাঁরা অনেকবার নিষেধ করেছেন, তারপরও কাজ করেই যাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

আরেক স্থানীয় বাসিন্দা মহন বলেন, তাঁদের অনেক আশা ছিল এই সড়ক পাকা হবে, কিন্তু কাজের অবস্থা দেখে তাঁরা হতবাক।

আহম্মেদ সরদার বলেন, দুই নম্বর ইট দিলেও ভালো হতো। যে ইট দিয়ে সড়ক বানাচ্ছে, এগুলো নম্বরছাড়া ইট। ইটের নিচে বালু দেওয়ার কথা থাকলেও বালু দিচ্ছে না। এই কয়েক দিনে যেটুকু সড়কের কাজ করা হয়েছে সেটুকুও পাশ থেকে ভেঙে যাচ্ছে। তাঁরা এ ব্যাপারে প্রতিবাদ জানালে শ্রমিকেরা বলেন, ‘আমাদের কাছে বলে কোনো লাভ নাই। আমাদের কাজে বাধা দিলে আমরা কাজ বন্ধ করে চলে যাব।’

এলাকার আরেক বাসিন্দা রুবেল বলেন, ইটের নিচে বালু দেয়নি, শুধু আগের সড়কটা কোনোমতে কোদাল দিয়ে সমান করে ইট বিছিয়ে চলে যাচ্ছে। এই সড়ক দিয়ে চার গ্রামের মানুষ কৃষিপণ্য নিয়ে যাতায়াত করে। এই সড়ক এক মাসও টিকবে না।

সড়কের নির্মাণকাজে নিয়োজিত শ্রমিক মাহাতাব বলেন, ‘ইট মনে হচ্ছে পুরোনো, তবে এসব আমরা জানি না। আমাদের কাজ দরকার, আমরা কাজ করছি।’ 
নির্মাণকাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের নেতা চুন্নু বলেন, ‘এর চেয়ে কুমা (নিম্নমানের) কোনো ইট নাই। সিদ্দিক চেয়ারম্যান কাজ করাচ্ছেন, আমরা কাজ করছি। আপনি সিদ্দিক চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেন।’

নির্মাণাধীন সড়কটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শাহজুঁই এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ও যশাই ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘সড়কটি আমার ভাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফরিদ হাসান ওদুদের নির্বাচনী এলাকায়। আমার ভাইয়ের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রাখতে নিজের টাকায় সড়কটিতে ইটের সলিং করা হচ্ছে। যদি কোনো বরাদ্দ পাই, পেলাম, না পেলে না পেলাম।’

এ বিষয়ে জানার জন্য উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফরিদ হাসান ওদুদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

উপজেলা প্রকৌশলী মো. জাকির হাসান বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন তহবিল থেকে উপজেলার কলিমহর ইউনিয়নের বসাকুষ্ঠিয়া বাজার থেকে সুকুমারের বাড়িমুখী সড়ক ১০ লাখ ৮৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ইটের সলিং দিয়ে উন্নয়নকাজের বরাদ্দ হয়েছে। উপজেলা প্রকৌশল অফিসকে না জানিয়ে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজটি শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বিষয়টি জানার পর নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দেওয়া হবে। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত