অনলাইনে প্রতারণার ফাঁদ

মাগুরা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২১, ০৬: ১৭
আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০২১, ১৩: ৫৯

অনলাইনে বিনিয়োগ করে ঘরে বসে প্রতিদিন হাজার টাকা আয়ের প্রলোভনে মাগুরা জেলায় প্রতারিত হয়েছেন শতাধিক তরুণ-যুবক। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এভাবে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র।

প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীদের থেকে জানা গেছে, মাগুরা জেলায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নিয়মিত বিজ্ঞাপনের শিরোনাম রাখা হয়-‘ঘরে বসে আয় করুন’। মূলত করোনায় ঘরবন্দী থাকার সময়ে এই প্রতারণার কৌশল মাগুরা জেলা জুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বেকার ও শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে অনলাইনে টাকা আয়ের বিভিন্ন সাইট ও নিজস্ব অ্যাপস ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে ভিডিও বিজ্ঞাপন দেখলেই নিজের হিসাবে যোগ হচ্ছে অর্থ।

অনলাইনে প্রতারণার এসব প্ল্যাটফর্মের মধ্যে রয়েছে, গোল্ডরাশ, টু লাইক, ইপিসি। গ্রাহকেরা বলছেন, গত ছয় মাসে এসব প্ল্যাটফর্ম প্রায় ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শতাধিক গ্রাহকদের কাছ থেকে।

এ সবের সঙ্গে নতুন যুক্ত হয়েছে রিং আইডি। এই কোম্পানির পরিচালক সাইফুল ইসলাম পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাছে ২ অক্টোবর ঢাকায় আটক হয়েছেন। এরপর থেকে গ্রাহকেরা তাঁদের আইডি থেকে টাকা ক্যাশ করতে পারছেন না। এমনকি যারা ইলেকট্রনিকস টাকা ক্যাশ করতেন সে সব এজেন্টকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

প্রতারণার শিকার একজন হৃদয় হাসান। পড়াশোনার পাশাপাশি ছোট একটি চাকরি করছেন। তিনি বলেন, ‘এসব প্রতারণার ভয়াবহতা জেলাব্যাপী বিস্তার লাভ করছে। টু লাইক নামের অ্যাপস ব্যবহার করে বিনিয়োগ করেছিলাম ৪০ হাজার টাকা। সেখানে বিজ্ঞাপন দেখে দেড় মাসে আয় হয়েছে মাত্র ৭ হাজার। এরপর এটি বন্ধ করে দিয়েছে প্রতারকচক্র। আমার চেনাজানাই শতাধিক মানুষ টু লাইকে ধরা খেয়েছে।’

রিং আইডির গ্রাহক সাকিব হাসানের বাড়ি মঘী ইউনিয়নে। ১ লাখের বেশি টাকা বিনিয়োগ করার পর তাঁর একটি আইডি চালু হয়। এরপর ইন্টারনেটে সেখানে ভিডিও বিজ্ঞাপন আসে। ঘণ্টাব্যাপী এসব বিজ্ঞাপন দেখার পর ওই হিসাবে ডলার যোগ হয়। এসব ডলার ৭ থেকে ১৪ দিন পর এজেন্ট থেকে টাকার হিসাবে ক্যাশ করা যায়। তবে এই ক্যাশ বিকাশে হয়ে থাকে বলে জানান তিনি।

সাকিব বলেন, ‘রিং আইডির পরিচালক ধরা খাওয়ার পর এই আইডি এখন সচল থাকলেও টাকা যোগ হয় না। এমনকি জমানো টাকা ক্যাশ করার জন্য এজেন্টদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সবাই গা ঢাকা দিয়েছেন। মাগুরার প্রায় ৪ শর বেশি মানুষ রিং আইডিতে যুক্ত। প্রতি গ্রাহক ২২ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। সবাই প্রতারিত হলেও কেউ মুখ খুলছেন না।’

ভুক্তভোগীদের থেকে জানা গেছে, প্রতারিতরা পরিবার ও লোকলজ্জা আর আইনি জটিলতার কারণে পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ নিয়ে যাননি। তবে তাঁরা এই প্রতারকদের ধরে টাকা ফেরত চান।’

এ বিষয়ে মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘অনলাইনে পণ্য কেনাকাটা নিয়ে কিছু প্রতারণার অভিযোগ আসে। আমরা সেগুলোর ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। কিন্তু অনলাইনে টাকা আয় কিংবা ই-কমার্সের প্রতারণার তেমন অভিযোগ কেউ দেয়নি।’

বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার (ডিএসবি) মাগুরার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘অনলাইনে প্রতারণার কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে এই মুহূর্তে নেই। কারও অভিযোগ থাকলে নিকটস্থ থানায় লিখিত দিতে পারেন। এরপর তা নিয়ম অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত