ট্রাকচাপায় মা-বাবার স্বপ্ন চূর্ণ

মুজাহিদুল ইসলাম সোহেল, সুবর্ণচর (নোয়াখালী)
প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২১, ০৭: ১৫
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪: ৫০

প্রতিদিনের নিরবপল্লীতে আজ চলছে মাতম। বিষাদের সূরে চেয়ে গেছে বাতাস। গ্রামের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ বিস্মিত, সবার প্রিয় ছেলেটি আজ শেষবিদায় নিচ্ছেন! আর থেমে থেমে কানে ভেসে আসছে, ‘অজয় তুই বলেছিলি, মা আমি আজ ইউনিভার্সিটি থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে আসব।’ কিন্তু তুই তো এলি না। সকালে সময়ের স্বল্পতার কারণে একটি রুটি খেয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি হলে বাড়িতে এসে পেটভরে ভাত খাবে।’ নিহত অজয়ের মা পাপিয়া রাণী মজুমদারের বুকফাটা আর্তনাদ।

পরিবারের দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড় অজয়কে নিয়ে মা-বাবার স্বপ্ন ছিল আকাশ ছোঁয়া।

প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার সকাল পৌনে আটটায় চরবাটা খাসেরহাট রাস্তার মাথা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে করে ক্যাম্পাসে যান অজয়। ক্লাস শেষ করে আবার একই গাড়িতে বিকেলে বাড়িতে ফেরার কথা। অবশেষে বাড়ি ফিরলেন, তবে লাশ হয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের পরিবর্তে এলেন কফিনবন্দী হয়ে অ্যাম্বুলেন্স করে।

ময়নাতদন্ত শেষে শিক্ষার্থী অজয়ের লাশবাহী গাড়িটি রাত পৌনে নয়টার দিকে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরবাটা ইউনিয়নের কাজল মার্কেট নিজ বাড়িতে এসে পৌঁছায়। মা, বোন আর স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে এ জনপদ।

নিজের স্বপ্ন ও মা বাবার স্বপ্ন পূরণ করার প্রত্যয় নিয়ে ২০১৪ সালে চরবাটা খাসের হাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ- ৫, সৈকত সরকারি কলেজ থেকে ২০১৬ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করেন অজয়। তিনি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

‘আমি কেন ঘুমিয়ে ছিলাম? যদি ভোরে ঘুম ভেঙে যেতো! তাহলে একবার তো তাকে দেখতে পেতাম। সে আমাকে স্বপ্ন দেখিয়ে কেন চলে গেল? আমাকে একা রেখে তুমি তো এভাবে যেতে পার না কলিজা!’ বুক চাপড়িয়ে আর লোনা জলে চোখ ভাসিয়ে মাতম করছিলেন ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারানো অজয়ের ভাই বিজয়।

এলাকার সহপাঠী কামরুল ইসলাম টুটুল বলেন, ছোট বেলা থেকে অজয়ের সঙ্গে চলাফেরা করতেন। অত্যন্ত মেধাবী ও ভদ্র ছিল সে। নিয়মিত সহপাঠীদের সঙ্গে খেলাধুলা করত।

অজয়ের মা পাপিয়া মজুমদার বলেন, পড়ালেখা শেষ করে ছেলে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করে মায়ের পাশে থাকার কথা বলতেন সব সময়।

চরজব্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউল হক জানান, সোনাপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অজয়ের লাশ সৎকারের বিষয়টি সরেজমিনে তদারকি করেন এবং শোকাহত পরিবারকে সান্ত্বনা দেন।

সুবর্ণচর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো.আরিফুর রহমান বলেন, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অজয়ের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়। এই সময় শোকাহত পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত