Ajker Patrika

কাজ আছে, বেতন নেই

রাজশাহী প্রতিনিধি
আপডেট : ০১ জুন ২০২২, ১৪: ০৫
কাজ আছে, বেতন নেই

করোনায় যখন টালমাটাল ছিল রাজশাহী, তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নমুনা সংগ্রহে এগিয়ে এসেছিলেন ছয় তরুণ। একটা চুক্তির ভিত্তিতে সামান্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তাঁরা কাজ করেছেন। করোনাকালের শুরু থেকে পরে ডেল্টা এবং অমিক্রনের সময়ও তাঁরা নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এ কাজ করতে গিয়ে কেউ কেউ একাধিবার সংক্রমিত হয়েছেন।

এখন করোনার সংক্রমণ নেই। কিন্তু ক্রান্তিকালে কাজ করা এই মানুষগুলো এখন চরম বিপাকে পড়েছেন। গত কয়েক মাস তাঁরা আর কোনো বেতন পাচ্ছেন না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তাঁদের কাজের মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে কোনো চিঠি দেয়নি। ‘আর কাজ করা লাগবে না’—এ রকম কোনো চিঠিও দেওয়া হয়নি। তাই তাঁরা জানেন না, তাঁদের চাকরি আছে নাকি নেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনাকালে নমুনা সংগ্রহের জন্য সারা দেশে চুক্তিভিত্তিক ১৩৪ জন ল্যাব সহকারী নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) ভাইরোলজি বিভাগের আরটি-পিসিআর ল্যাবে নিয়োগ পান ছয়জন। ২০২০ সালের ৮ জুলাই তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগের প্রথমে তাঁদের মেয়াদ ছিল ৩ মাস ২৮ দিন। এরপর দুবার মেয়াদ বাড়ানো হয়। সবশেষ চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরের ২৮ অক্টোবর। এরপর আর চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়নি। দেওয়া হয়নি কোনো বেতনও। ইতিমধ্যে দুজন কাজে আসা বন্ধ করলেও অন্য চারজন আশায় আশায় থাকছেন ল্যাবেই। বেতন না পাওয়ায় গ্রাম থেকে টাকা এনে পরিবার নিয়ে থাকতে হচ্ছে তাঁদের।

রামেকের ল্যাবে কাজ করেন ঝিনাইদহের আব্দুলাহ আল নোমান। নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে একাধিকবার সংক্রমিত হন তিনি। সাত মাস বেতন পান না। নোমান বলেন, ‘প্রথমবার চুক্তির পর কয়েকবার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু গত অক্টোবরের পর আর মেয়াদ বাড়ানো হয়নি। আমরা কাজে আসব কি না, সেটাও বলা হয়নি। তাই জানি না, চাকরি আছে কি নেই। এ কারণে কাজে আসতেই হচ্ছে। গ্রাম থেকে টাকা এনে শহরে সংসার চালাচ্ছি।’

নোমান আরও বলেন, ‘একটা সময় ছিল যে প্রত্যেকেই করোনাকে ভয় পেতেন। প্রচুর মানুষ মারাও যাচ্ছিলেন। তাও আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে আসি। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়েছে। যাঁরা জানতেন আমি নমুনা সংগ্রহ করি, তাঁরা আমার সঙ্গে মিশতেন না। দূরে দূরে থাকতেন। নিজে সাতবার করোনায় আক্রান্ত হয়েছি। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি। এখন আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের বিষয়টা দেখবেন। আমরা এই মুহূর্তে সত্যিই খুব বেকায়দায় আছি।’

নোমানের মতো বেকায়দায় পড়েছেন রামেকের আরেক ল্যাব সহকারী হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, ‘আশায় আশায় বসে আছি। এখন টুকটাক যে কাজ হচ্ছে সেগুলো করছি। হয়তো আবার চুক্তি হবে, হয়তো বেতন আসবে, এই চিন্তা প্রতিদিন করে মনকে সান্ত্বনা দিচ্ছি। কিন্তু দেখতে দেখতে সাতটা মাস কেটে গেল। কিছুই হলো না। চাকরি আছে কি না তাই জানি না।’

এই ল্যাব সহকারীদের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী বলেন, ‘আমরা এঁদের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে লিখেছি। কিন্তু কোনো নির্দেশনা আসেনি। ফলে আমরাও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না।’

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার বলেন, ‘এই কার্যক্রমটা চলেছিল দাতা সংস্থার মাধ্যমে। এখন তো করোনা নেই। যেহেতু চুক্তির মেয়াদ শেষ, সেহেতু ধরে নেওয়া যায় যে চাকরিও শেষ। বকেয়া বেতন থাকলে তাঁরা সেটা পাবেন। এটা সাধারণ কথা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা ছাড়া আমি আসলে কিছু বলতে পারছি না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত