অরুণ কর্মকার
সুনীল অর্থনীতি (ব্লু ইকোনমি) পৃথিবীব্যাপী একটি প্রতিষ্ঠিত বিষয়। বর্তমান পৃথিবীর ৮৮ ট্রিলিয়ন ডলারের যে অর্থনীতি, এর মধ্যে ২৪ ট্রিলিয়ন হচ্ছে সমুদ্র অঞ্চলভিত্তিক এই সুনীল অর্থনীতির অবদান। যদিও আমাদের জাতীয় অর্থনীতির ক্ষেত্রে এর অবদান উল্লেখ করার মতো নয়। আমরা এ ক্ষেত্রে এখনো তেমন অগ্রসর হতে পারিনি।
সুনীল অর্থনীতির হাতছানিতে আমরা যখন নিজেদের সমুদ্র অঞ্চলের দিকে তাকালাম, তখন দেখা গেল, দুই নিকট প্রতিবেশী আমাদের বেশ খানিকটা কোণঠাসা করে রেখেছে। ফলে আমাদের সুনীল অর্থনীতির ক্ষেত্র যথেষ্ট সংকুচিত এবং সেখানে আমাদের কার্যক্ষেত্রের সম্প্রসারণ করা বেশ জটিল। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সালিসি আদালতের দ্বারস্থ হয়ে আমাদের সেই প্রতিবন্ধকতা দূর করা গেছে। ২০১২ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে এবং ২০১৪ সালের ৭ জুলাই (এখন থেকে ঠিক ১০ বছর আগে) ভারতের সঙ্গে আমাদের সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধের মীমাংসা হয়েছিল।
ফলে তখন আমাদের সামনে খুলে গেল এক নতুন উন্মুক্ত দিগন্ত। ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র অঞ্চলে আমাদের সার্বভৌমত্বের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জিত হলো। তটরেখা থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন এবং ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত কন্টিনেন্টাল শেলফ হিসেবে আমাদের বিচরণক্ষেত্র সম্প্রসারিত হলো। কিন্তু এক দশকে আমরা তেমন আর কিছুই করতে পারিনি। যেটুকু পারা যেত, তা-ও আমরা করিনি।
অনেকের ধারণা, সুনীল অর্থনীতি মানে সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও আহরণ। কিন্তু আসলে তা নয়। ২০১৯ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে সুনীল অর্থনীতির অন্তর্ভুক্ত হিসেবে ২৫টি ক্ষেত্র উল্লেখ করা হয়েছে। তেল-গ্যাস আহরণ অবশ্যই এর অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র।
এ ছাড়া রয়েছে মৎস্য ও খনিজ সম্পদ আহরণ, সমুদ্রভিত্তিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ, পর্যটন, সমুদ্রের সংরক্ষিত এলাকা (মেরিন প্রোটেক্টেড এরিয়া) রক্ষণাবেক্ষণ, ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সংরক্ষণ, সমুদ্রের ইকোসিস্টেম সংরক্ষণ ও দূষণ রোধ, সমুদ্র এবং উপকূলীয় এলাকার ইকোসিস্টেমের টেকসই ব্যবস্থাপনা, সমুদ্র সম্পদের ওপর উপকূলীয় জনগণের নির্ভরতা প্রভৃতি। এর কোনো একটি ক্ষেত্রেও এখন পর্যন্ত আমরা দৃশ্যমান কিছু করে উঠতে পারিনি। অথচ বঙ্গোপসাগরকে বলা হয় প্রাকৃতিক সম্পদের বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ও সমৃদ্ধ ভান্ডার।
যদি তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কথা ধরি, ১০ বছরে আমাদের সমুদ্রসীমার সন্নিহিত এলাকায় মিয়ানমার ও ভারত উভয় দেশই বড় আকারের গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে। বিশেষজ্ঞ ভূতত্ত্ববিদদের অভিমত, এই গ্যাসক্ষেত্রগুলোর ভূগর্ভস্থ স্ট্রাকচার বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় সম্প্রসারিত। কাজেই ওই সব অঞ্চলে অনুসন্ধান করলে বাংলাদেশও বিপুল পরিমাণ গ্যাসের আধার পেতে পারে। এ ছাড়া বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ সমুদ্র অঞ্চলজুড়ে আরও অনেক গ্যাস ক্ষেত্র পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত আমাদের সমুদ্র অঞ্চলে ২৬টি ব্লক চিহ্নিত করা ছাড়া তেল-গ্যাস অনুসন্ধান বলতে গেলে শুরুই করতে পারিনি। অবশ্য পেট্রোবাংলা এ ক্ষেত্রে বিদেশি কোম্পানি এবং তাদের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য নতুন উৎপাদন অংশীদারি চুক্তিপত্র (পিএসসি) প্রণয়ন করে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছে। আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই দরপত্রে অংশগ্রহণের সময় রয়েছে।
এরপর তা যাচাই-বাছাই শেষে যদি এ বছরের মধ্যে কোনো এক বা একাধিক কোম্পানির সঙ্গে পিএসসি সই করা সম্ভবও হয়, তাহলেও তার ফল পাওয়া শুরু হতে অন্তত পাঁচ বছর সময় লাগবে; অর্থাৎ ২০৩০ সালের আগে এ খাতে কোনো কিছু অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে সমুদ্রের বায়ু ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ বায়ুবিদ্যুৎ এবং বিশাল সমুদ্রতট ব্যবহার করে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন অল্প সময়ের মধ্যেই করা সম্ভব।
এরপর বলা যায়, মৎস্য সম্পদের কথা। আমাদের সমুদ্র অঞ্চলে আমরা খুবই সীমিত পরিমাণে মৎস্য আহরণ করতে পারছি। কারণ, সক্ষমতার অভাব। বিশেষজ্ঞদের মতে, বঙ্গোপসাগরে মাছ আছে প্রায় ৫০০ প্রজাতির। এ ছাড়া রয়েছে শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া, শেলফিশ, হাঙর, অক্টোপাস প্রভৃতি। বিস্তীর্ণ সমুদ্র অঞ্চলজুড়ে এই মৎস্য সম্পদের বিচরণ। এখান থেকে বছরে ৮ মিলিয়ন বা ৮০ লাখ টন মাছ আহরণ করা সম্ভব। কিন্তু আমরা আহরণ করছি ৭ লাখ টন। কারণ গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণের জন্য প্রয়োজনীয় জাহাজ এবং অন্যান্য সরঞ্জাম আমাদের নেই। থাকলে এই মৎস্য সম্পদই জাতীয় অর্থনীতিতে অনেক বড় অবদান রাখতে পারত।
বালুকাবেলাসহ আমাদের সমুদ্র অঞ্চলে রয়েছে নানা সম্পদ এবং প্রতিনিয়ত পলির সঙ্গে এসে জমা হচ্ছে ১৩ ধরনের মূল্যবান ভারী খনিজ (হেভি মিনারেল)। এর মধ্যে রয়েছে ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম, ইলমেনাইট, গার্নেট, জিরকন, রেটাইল, ম্যাগনেটাইল প্রভৃতি। এসব খনিজ স্বর্ণের চেয়েও দামি। অথচ আমরা এগুলো আহরণ করতে পারছি না। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এসব খনিজ আহরণের বিষয়ে বিদেশি অনেক প্রতিষ্ঠানও আগ্রহী। আমরা সেই সুযোগও কাজে লাগাচ্ছি না।
আমাদের আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য সমুদ্রপথেই পরিচালিত হয়। সমুদ্রপথ ব্যবহার করে নিজেদের ও আঞ্চলিক বাণিজ্যের বড় ধরনের সম্প্রসারণ ঘটানো সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া চোখের সামনে উজ্জ্বল উদাহরণ। অবশ্য আমাদের বন্দরের সীমাবদ্ধতা এ ক্ষেত্রে প্রধান বাধা। এই বাধা অতিক্রম করার জন্য কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে যে গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সে কাজেও অগ্রগতি নগণ্য। বঙ্গোপসাগরে আমাদের সমুদ্র অঞ্চলে রয়েছে ছোট-বড় ৭৫টি দ্বীপ। এই দ্বীপগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে পারে সমুদ্রকেন্দ্রিক পর্যটন। খুব দ্রুতই যে এটা করা সম্ভব তা নয়। তবে উদ্যোগ নেওয়া দরকার, যার অভাব রয়েছে।
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানিও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠন করা হয়েছিল ‘ব্লু ইকোনমি সেল’। কিন্তু এখন পর্যন্ত এটি একেবারেই একটি নামমাত্র সংস্থা। এর কোনো কাজ এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান নয়; বরং পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের উদ্যোগ এ ক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। এ ছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট’ সম্প্রতি প্রকাশ করেছে ‘ব্লু ইকোনমি ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্ক প্ল্যান’। তাতে মোট ৫৬টি অ্যাকশন পয়েন্ট সন্নিবেশিত হয়েছে। আমরা আশা করব, এই পরিকল্পনা অনুযায়ী সুনীল অর্থনীতির কর্মকাণ্ড বিকশিত হবে।
আর শেষ কথা হলো, ২০৪১ সালে যদি বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হতে হয়, তাহলে সুনীল অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য দরকার প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা অর্জন করা এবং লাগসই প্রযুক্তির ব্যবহার। তবে সরকারের একার পক্ষে বা শুধু সরকারের উদ্যোগে এটা সম্ভব হবে না। কারণ এ কাজে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ দরকার। তাই যুক্ত করতে হবে বেসরকারি খাতকে। বেসরকারি খাতের জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও আইনি কাঠামো তৈরি করা দরকার হবে।
বিনিয়োগের ব্যাপারেও এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ লক্ষ করা যায় না। অবশ্য ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রোস্পারিটি প্ল্যান ২০২২-৪১’-এ ‘ব্লু বন্ড’ ইস্যু করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ‘গ্রিন বন্ড পলিসি’ নামে একটি নীতিমালা প্রকাশ করেছে। কিন্তু এসবের ভিত্তিতে কী পরিমাণ অর্থ সুনীল অর্থনীতির বিকাশে বরাদ্দ বা ব্যয় করা হচ্ছে, তার একটি ঠিকঠাক হিসাব প্রকাশ করা জরুরি।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
সুনীল অর্থনীতি (ব্লু ইকোনমি) পৃথিবীব্যাপী একটি প্রতিষ্ঠিত বিষয়। বর্তমান পৃথিবীর ৮৮ ট্রিলিয়ন ডলারের যে অর্থনীতি, এর মধ্যে ২৪ ট্রিলিয়ন হচ্ছে সমুদ্র অঞ্চলভিত্তিক এই সুনীল অর্থনীতির অবদান। যদিও আমাদের জাতীয় অর্থনীতির ক্ষেত্রে এর অবদান উল্লেখ করার মতো নয়। আমরা এ ক্ষেত্রে এখনো তেমন অগ্রসর হতে পারিনি।
সুনীল অর্থনীতির হাতছানিতে আমরা যখন নিজেদের সমুদ্র অঞ্চলের দিকে তাকালাম, তখন দেখা গেল, দুই নিকট প্রতিবেশী আমাদের বেশ খানিকটা কোণঠাসা করে রেখেছে। ফলে আমাদের সুনীল অর্থনীতির ক্ষেত্র যথেষ্ট সংকুচিত এবং সেখানে আমাদের কার্যক্ষেত্রের সম্প্রসারণ করা বেশ জটিল। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সালিসি আদালতের দ্বারস্থ হয়ে আমাদের সেই প্রতিবন্ধকতা দূর করা গেছে। ২০১২ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে এবং ২০১৪ সালের ৭ জুলাই (এখন থেকে ঠিক ১০ বছর আগে) ভারতের সঙ্গে আমাদের সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধের মীমাংসা হয়েছিল।
ফলে তখন আমাদের সামনে খুলে গেল এক নতুন উন্মুক্ত দিগন্ত। ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র অঞ্চলে আমাদের সার্বভৌমত্বের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জিত হলো। তটরেখা থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন এবং ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত কন্টিনেন্টাল শেলফ হিসেবে আমাদের বিচরণক্ষেত্র সম্প্রসারিত হলো। কিন্তু এক দশকে আমরা তেমন আর কিছুই করতে পারিনি। যেটুকু পারা যেত, তা-ও আমরা করিনি।
অনেকের ধারণা, সুনীল অর্থনীতি মানে সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও আহরণ। কিন্তু আসলে তা নয়। ২০১৯ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে সুনীল অর্থনীতির অন্তর্ভুক্ত হিসেবে ২৫টি ক্ষেত্র উল্লেখ করা হয়েছে। তেল-গ্যাস আহরণ অবশ্যই এর অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র।
এ ছাড়া রয়েছে মৎস্য ও খনিজ সম্পদ আহরণ, সমুদ্রভিত্তিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ, পর্যটন, সমুদ্রের সংরক্ষিত এলাকা (মেরিন প্রোটেক্টেড এরিয়া) রক্ষণাবেক্ষণ, ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সংরক্ষণ, সমুদ্রের ইকোসিস্টেম সংরক্ষণ ও দূষণ রোধ, সমুদ্র এবং উপকূলীয় এলাকার ইকোসিস্টেমের টেকসই ব্যবস্থাপনা, সমুদ্র সম্পদের ওপর উপকূলীয় জনগণের নির্ভরতা প্রভৃতি। এর কোনো একটি ক্ষেত্রেও এখন পর্যন্ত আমরা দৃশ্যমান কিছু করে উঠতে পারিনি। অথচ বঙ্গোপসাগরকে বলা হয় প্রাকৃতিক সম্পদের বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ও সমৃদ্ধ ভান্ডার।
যদি তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কথা ধরি, ১০ বছরে আমাদের সমুদ্রসীমার সন্নিহিত এলাকায় মিয়ানমার ও ভারত উভয় দেশই বড় আকারের গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে। বিশেষজ্ঞ ভূতত্ত্ববিদদের অভিমত, এই গ্যাসক্ষেত্রগুলোর ভূগর্ভস্থ স্ট্রাকচার বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় সম্প্রসারিত। কাজেই ওই সব অঞ্চলে অনুসন্ধান করলে বাংলাদেশও বিপুল পরিমাণ গ্যাসের আধার পেতে পারে। এ ছাড়া বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ সমুদ্র অঞ্চলজুড়ে আরও অনেক গ্যাস ক্ষেত্র পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত আমাদের সমুদ্র অঞ্চলে ২৬টি ব্লক চিহ্নিত করা ছাড়া তেল-গ্যাস অনুসন্ধান বলতে গেলে শুরুই করতে পারিনি। অবশ্য পেট্রোবাংলা এ ক্ষেত্রে বিদেশি কোম্পানি এবং তাদের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য নতুন উৎপাদন অংশীদারি চুক্তিপত্র (পিএসসি) প্রণয়ন করে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছে। আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই দরপত্রে অংশগ্রহণের সময় রয়েছে।
এরপর তা যাচাই-বাছাই শেষে যদি এ বছরের মধ্যে কোনো এক বা একাধিক কোম্পানির সঙ্গে পিএসসি সই করা সম্ভবও হয়, তাহলেও তার ফল পাওয়া শুরু হতে অন্তত পাঁচ বছর সময় লাগবে; অর্থাৎ ২০৩০ সালের আগে এ খাতে কোনো কিছু অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে সমুদ্রের বায়ু ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ বায়ুবিদ্যুৎ এবং বিশাল সমুদ্রতট ব্যবহার করে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন অল্প সময়ের মধ্যেই করা সম্ভব।
এরপর বলা যায়, মৎস্য সম্পদের কথা। আমাদের সমুদ্র অঞ্চলে আমরা খুবই সীমিত পরিমাণে মৎস্য আহরণ করতে পারছি। কারণ, সক্ষমতার অভাব। বিশেষজ্ঞদের মতে, বঙ্গোপসাগরে মাছ আছে প্রায় ৫০০ প্রজাতির। এ ছাড়া রয়েছে শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া, শেলফিশ, হাঙর, অক্টোপাস প্রভৃতি। বিস্তীর্ণ সমুদ্র অঞ্চলজুড়ে এই মৎস্য সম্পদের বিচরণ। এখান থেকে বছরে ৮ মিলিয়ন বা ৮০ লাখ টন মাছ আহরণ করা সম্ভব। কিন্তু আমরা আহরণ করছি ৭ লাখ টন। কারণ গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণের জন্য প্রয়োজনীয় জাহাজ এবং অন্যান্য সরঞ্জাম আমাদের নেই। থাকলে এই মৎস্য সম্পদই জাতীয় অর্থনীতিতে অনেক বড় অবদান রাখতে পারত।
বালুকাবেলাসহ আমাদের সমুদ্র অঞ্চলে রয়েছে নানা সম্পদ এবং প্রতিনিয়ত পলির সঙ্গে এসে জমা হচ্ছে ১৩ ধরনের মূল্যবান ভারী খনিজ (হেভি মিনারেল)। এর মধ্যে রয়েছে ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম, ইলমেনাইট, গার্নেট, জিরকন, রেটাইল, ম্যাগনেটাইল প্রভৃতি। এসব খনিজ স্বর্ণের চেয়েও দামি। অথচ আমরা এগুলো আহরণ করতে পারছি না। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এসব খনিজ আহরণের বিষয়ে বিদেশি অনেক প্রতিষ্ঠানও আগ্রহী। আমরা সেই সুযোগও কাজে লাগাচ্ছি না।
আমাদের আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য সমুদ্রপথেই পরিচালিত হয়। সমুদ্রপথ ব্যবহার করে নিজেদের ও আঞ্চলিক বাণিজ্যের বড় ধরনের সম্প্রসারণ ঘটানো সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া চোখের সামনে উজ্জ্বল উদাহরণ। অবশ্য আমাদের বন্দরের সীমাবদ্ধতা এ ক্ষেত্রে প্রধান বাধা। এই বাধা অতিক্রম করার জন্য কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে যে গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সে কাজেও অগ্রগতি নগণ্য। বঙ্গোপসাগরে আমাদের সমুদ্র অঞ্চলে রয়েছে ছোট-বড় ৭৫টি দ্বীপ। এই দ্বীপগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে পারে সমুদ্রকেন্দ্রিক পর্যটন। খুব দ্রুতই যে এটা করা সম্ভব তা নয়। তবে উদ্যোগ নেওয়া দরকার, যার অভাব রয়েছে।
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানিও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠন করা হয়েছিল ‘ব্লু ইকোনমি সেল’। কিন্তু এখন পর্যন্ত এটি একেবারেই একটি নামমাত্র সংস্থা। এর কোনো কাজ এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান নয়; বরং পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের উদ্যোগ এ ক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। এ ছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট’ সম্প্রতি প্রকাশ করেছে ‘ব্লু ইকোনমি ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্ক প্ল্যান’। তাতে মোট ৫৬টি অ্যাকশন পয়েন্ট সন্নিবেশিত হয়েছে। আমরা আশা করব, এই পরিকল্পনা অনুযায়ী সুনীল অর্থনীতির কর্মকাণ্ড বিকশিত হবে।
আর শেষ কথা হলো, ২০৪১ সালে যদি বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হতে হয়, তাহলে সুনীল অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য দরকার প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা অর্জন করা এবং লাগসই প্রযুক্তির ব্যবহার। তবে সরকারের একার পক্ষে বা শুধু সরকারের উদ্যোগে এটা সম্ভব হবে না। কারণ এ কাজে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ দরকার। তাই যুক্ত করতে হবে বেসরকারি খাতকে। বেসরকারি খাতের জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও আইনি কাঠামো তৈরি করা দরকার হবে।
বিনিয়োগের ব্যাপারেও এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ লক্ষ করা যায় না। অবশ্য ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রোস্পারিটি প্ল্যান ২০২২-৪১’-এ ‘ব্লু বন্ড’ ইস্যু করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ‘গ্রিন বন্ড পলিসি’ নামে একটি নীতিমালা প্রকাশ করেছে। কিন্তু এসবের ভিত্তিতে কী পরিমাণ অর্থ সুনীল অর্থনীতির বিকাশে বরাদ্দ বা ব্যয় করা হচ্ছে, তার একটি ঠিকঠাক হিসাব প্রকাশ করা জরুরি।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে