নিজের বিয়ে ঠেকিয়ে সংবর্ধিত

ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১০ অক্টোবর ২০২১, ১৫: ১২
আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২১, ১৭: ৪৮

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে করোনাকালীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ছাত্রীদের বাল্যবিবাহের হিড়িক পড়ে। ওই সময় মোছা মোনালিসা আক্তার নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থী নিজের বিয়ে ঠেকিয়ে সংবর্ধিত হয়েছে।

জানা যায়, ফুলবাড়ীর বড়লই উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী মোনালিসার বিয়ের আয়োজন করে পরিবার। চলতি বছরের ২২ সেপ্টেম্বর স্কুল থেকে বাড়িতে গিয়ে মোনালিসা দেখতে পায় তার বাড়িতে দুজন অপরিচিত অতিথি এসেছেন। সেদিন সে বুঝতে পারেনি। তাকে বিয়ের জন্য বর পক্ষের লোক দেখতে এসেছেন। পরে বুঝতে পারে। মা-বাবা গোপনে তার বিয়ের জন্য বর পক্ষের লোকজনের সঙ্গে পাকা কথা দিয়ে বিয়ের আয়োজন করছে। এ নিয়ে মোনালিসা আপত্তি জানায়। মা বাবাকে বুঝিয়ে বলে অল্প বয়সে বিয়ে করে স্বামীর পরিবারের বোঝা হয়ে পড়াশোনার ক্ষতি করতে পারবে না। উল্টো মা-বাবা তাকে বলেন, দেখ আমরা গরিব মানুষ। ভালো বর পাওয়া গেছে। তুমি বিয়েতে রাজি হও। যদি আমাদের মৃত্যু হয়। তাহলে তোকে কে দেখবে। তখন সে মা-বাবাকে জানিয়ে দেয় বিয়ে করবেন না। তার বিয়ের বয়স হয়নি। পড়াশোনা করে নিজে প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে করবে না।

পরে বাল্যবিয়ে থেকে কীভাবে রক্ষা পাওয়া যায় এ নিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে পরামর্শ করে মোনালিসা। পরে মা-বাবাকে বাল্যবিয়ের কুফল ও পরিণতি বোঝান তার শিক্ষকেরা। মা-বাবা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে তাঁর বিয়ে ভেঙে দেন।

মোনালিসা অজপাড়া গাঁয়ের মেয়ে হয়েও নিজের বাল্যবিয়ে ঠেকিয়ে সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তার এই সাহসিকতার খবর উপজেলা প্রশাসনের কাছে পৌঁছালে প্রশাসন তাকে সংবর্ধনা দেয়।

গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টায় ফুলবাড়ী উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ের সভাকক্ষে উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে তার হাতে ক্রেস্ট ও সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমন দাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী সরকার।

এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতাউর রহমান শেখ, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সোহেলী পারভীন, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হাই, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাজীব কুমার রায়, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মজিবর রহমান, শিক্ষক আবেদ আলী খন্দকার, আনিসুজ্জামান সোবহানী, ভাঙ্গামোড় দাখিল মাদ্রাসার সুপার ইসমাইল হোসেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যের একপর্যায়ে মোনালিসার পড়াশোনার খরচের জন্য উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী সরকার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত