ভোলা-৩: শাওনকে নিয়ে বিব্রত আওয়ামী লীগ

শিমুল চৌধুরী, লালমোহন  ও তজুমদ্দিন থেকে ফিরে
আপডেট : ১১ মে ২০২৩, ১২: ২৭
Thumbnail image

জেলার লালমোহন ও তজুমদ্দিন—এ দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত ভোলা-৩ আসন। একসময় বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ আসন প্রায় ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে। বর্তমানে এ আসনের এমপি আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন।

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে এ আসনে এরই মধ্যে রাজনৈতিক দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের দৌড়ঝাঁপ বেড়েছে। মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন তাঁরা। প্রচার চালাচ্ছেন জোরেশোরে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের দলীয় বর্তমান এমপিসহ দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের পদচারণে মুখর ভোলার লালমোহন ও তজুমদ্দিন উপজেলা।

জানতে চাইলে লালমোহন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমি এলাকায় উন্নয়নকাজ অব্যাহত রেখেছি।দলকে সুসংগঠিত করেছি। আগামী নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।’

তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশের ভাষ্য, ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিসহ নানা ঘটনায় বিতর্কিত হওয়ায় কিছুটা বেকায়দায় আছেন শাওন। এ ছাড়া এমপি হওয়ার পর আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের গুরুত্ব না দিয়ে হাইব্রিড নেতা-কর্মীদের নিয়ে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। ফলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের তৃণমূলের একটি অংশ তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ।

এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও চরভূতা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. হোসেন হাওলাদার বলেন, নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এমপি হওয়ার পর এলাকায় হাইব্রিড নেতা-কর্মীদের নিয়ে দলীয় কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। আর আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দিচ্ছেন মামলা। তাই এ আসনে বর্তমান এমপি নুরুন্নবী চৌধুরীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগের তিন নেতা দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান তিনি। তাঁরা হলেন সাবেক এমপি মেজর (অব.) জসিম উদ্দিন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বিবিএস কেব্‌লসের চেয়ারম্যান আবু নোমান হাওলাদার (সিআইপি) ও দলের কেন্দ্রীয় নেতা প্রকৌশলী মীর
মোবাশ্বের আলী স্বপন।

মনোনয়ন বিষয়ে সাবেক এমপি মেজর (অব.) জসিম উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নানা কারণে এলাকায় এবং কেন্দ্রে দুই জায়গাতেই শাওন বিতর্কিত। তাই এবার আমি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইব।’

এদিকে বিএনপি থেকে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদের একক প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও দীর্ঘদিনের অনুপস্থিতির কারণে স্থানীয় রাজনীতিতে তাঁর অবস্থান কিছুটা দুর্বল হয়েছে। হেভিওয়েট এই নেতা ২০০৮ সালের নির্বাচনে নিজ দলের একাংশের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে এলাকায় অনেকটাই কোণঠাসা ছিলেন।আগামী দিনেও তাঁকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হতে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয় বিএনপির একটি অংশ।

এ বিষয়ে জানতে হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাঁর মন্তব্য পাওয়া যায়নি।তবে অতীতের ফলাফল বিবেচনায় আগামী নির্বাচনে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি হাফিজ উদ্দিন আহমেদই দলের একক প্রার্থী হিসেবে মনে করছেন লালমোহন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহীন পাটওয়ারী ও তজুমদ্দিন উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ওমর আসাদ রিন্টু। তাঁরা দুজনেই আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের হামলা-মামলার ভয়ে আমাদের দলের নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে নির্বাচনের মাঠে কার্যক্রম চালাতে না পারলেও নীরবে আমাদের কর্মকাণ্ড চলছে। বিএনপির নেতা-কর্মীরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্পূর্ণ প্রস্তুত জানিয়ে ওই দুই নেতা আরও বলেন, ভোলা-৩ আসনে বিএনপি আগের চেয়ে অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ এবং শক্তিশালী। আগে কিছুটা বিরোধ থাকলেও বর্তমানে দলের মধ্যে কোনো কোন্দল নেই বলেও দাবি তাঁদের।

বিএনপি থেকে কেন্দ্রীয় নেতা কামাল হোসেন ও লালমোহন উপজেলা বিএনপির নেতা মার্শাল হিমুও দল থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া এ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে দলের কেন্দ্রীয় নেতা নুরুন্নবী সুমন, লালমোহন উপজেলা জাতীয় পার্টির নেতা মাওলানা মো. কামাল উদ্দিন ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হাফেজ মাওলানা মোসলেউদ্দিনও মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত