হাসান মামুন
অর্থনীতিকে আমরা রপ্তানিমুখী করতে চাইলেও এটা এখনো অনেকখানি আমদানিনির্ভর। আমাদের প্রধান যে রপ্তানিপণ্য গার্মেন্টস, তাতে যে বিপুল আয় হয় বলে শ্লাঘা অনুভব করি, তারও একটা বড় অংশ কিন্তু আমদানি ব্যয়। এর কাঁচামাল, মেশিনারিজ তো আমদানি করতে হয়। দেশে এসবের উৎপাদন বাড়ানো গেলে এবং রপ্তানিপণ্য উৎপাদনে তা ব্যবহার করতে পারলে, সেটা হতো কাজের কাজ। তাহলে রপ্তানিপণ্যে মূল্য সংযোজন বাড়ত। প্রকৃত রপ্তানি আয় বেড়ে উঠত। সেটা যে হচ্ছে না, তা নয়। দেশে বস্ত্র উৎপাদন খাত চাঙা হচ্ছে। পোশাকশিল্পে ব্যবহার বাড়ছে এর। কিন্তু আমরা তুলা উৎপাদন করি না বললেই চলে। এর প্রায় পুরোটাই করতে হয় আমদানি। সুতরাং তুলা আমদানি সক্ষমতা কতটা রয়েছে; এর আমদানি নির্বিঘ্নে করতে পারছি কি না, সেটা এক বড় প্রশ্ন। তবে এই মুহূর্তে আরও বড় প্রশ্ন, পোশাকশিল্পে কাঁচামাল ও মেশিনারিজ আমদানির কী অবস্থা? সামগ্রিকভাবে শিল্প খাতে আমদানি পরিস্থিতি ভালো নয়। তাতে শিল্পোৎপাদন কমে যাওয়ার খবর মিলছে। শিল্পোৎপাদন কমে যাচ্ছে দেশে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট তীব্র হয়ে ওঠার কারণেও। এর দাম দফায় দফায় বাড়ানোর কথা আপাতত না হয় ঊহ্য থাকল। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়লে শিল্পের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে। সে প্রসঙ্গও পাশে রেখে প্রশ্ন তুলতে হয়, আমাদের প্রধান শিল্প খাত পোশাক বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করে সুনাম ধরে রাখতে পারবে তো?
নিবন্ধটি লেখার আগের দিন খবর মিলল, যুক্তরাষ্ট্রের পোশাকপণ্য আমদানি কমে গেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। এতে বাংলাদেশসহ যারা ওই বাজারে পণ্য সরবরাহ করে, তাদের রপ্তানি কমেছে। যুক্তরাষ্ট্র তো আমাদের পোশাকপণ্যের প্রধান গন্তব্য। তবে এ বাজারে প্রতিযোগীদের তুলনায় বাংলাদেশের রপ্তানি কমেছে কম। এর নিশ্চয় কারণ রয়েছে। তবে কারণ যা-ই হোক, তুলনায় কম রপ্তানি হ্রাসের খবর কিছুটা হলেও স্বস্তির। এ অবস্থায় আবার প্রশ্ন উঠছে, সামনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্রয়াদেশ বেড়ে গেলে আমরা সেটা ধরতে পারব তো? দেশে বিশেষ করে ডলারের যে দুষ্প্রাপ্যতা চলছে, তা অব্যাহত থাকলে পোশাক খাতের জন্য জরুরি পণ্যসামগ্রী আমদানি কি বাড়ানো যাবে? যুক্তরাষ্ট্রসহ আমদানিকারক দেশগুলোয় গার্মেন্টসের মতো পণ্যসামগ্রীর কতটা কী আমদানি হবে, সেটা নির্ভর করে তাদের চাহিদার ওপর। ওই সব দেশে বেড়ে যাওয়া মূল্যস্ফীতি ক্রমে কমে আসার খবর মিলছে। তাতে জরুরি পণ্যের বাইরে তাদের ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে ওঠার কথা। প্রশ্ন হলো, সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে আমরা যেন তার সুযোগ নিতে পারি। আমদানিকারক দেশগুলোর বাজারে চাহিদা হ্রাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলাম; আবার চাহিদা বৃদ্ধির সময়ও বাজার ধরতে পারলাম না, সেটি ঘটলে আমরা সামগ্রিকভাবে পরাস্ত হব। এ অবস্থায় পোশাক খাতের জন্য জরুরি পণ্যসামগ্রী আমদানি নির্বিঘ্ন রাখতে হবে।
এখন আন্তর্জাতিক বাজারে এগুলোর দাম কমে আসার যে খবর রয়েছে, তা কিছুটা স্বস্তির। জ্বালানি তেলের দামও কমে আসার প্রবণতা স্পষ্ট। তাতে পণ্য পরিবহনকারী জাহাজ ও বিমানের ভাড়া কমে আসার কথা। কিন্তু এ অবস্থায়ও যদি দেশে ডলারের বাজারে অস্থিরতা চলতে থাকে, তাহলে ফায়দা হবে না। এ অবস্থায় আলাদা করে হলেও রপ্তানিকারকদের, বিশেষত পোশাক খাতের জরুরি আমদানি নির্বিঘ্ন রাখতে সচেষ্ট হতে হবে। প্রধানত এ খাতের সহায়তায় বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ থেকে যে তহবিল করা হয়েছিল, তার সদ্ব্যবহারেও দ্বিধা করা যাবে না। রপ্তানি খাতে বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠীর দাবির মধ্যে সমন্বয় সাধন করেই পথ চলতে হবে জাতীয় স্বার্থের দিকে তাকিয়ে। পোশাক খাতে সংকট বেড়ে গেলে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানে। একে ঘিরে বেড়ে ওঠা অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্যেও কম প্রভাব পড়বে না। দেশের প্রধান শিল্প খাতের আমদানি ব্যাহত অবস্থায় থাকলে ওখান থেকে সরকারের প্রত্যাশিত রাজস্বও আসবে না। সরকার তো রাজস্ব সংকটেও আছে।
গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার বিষয়টি এ আলোচনায় একটুখানি এসেছিল। এর সঙ্গে কেবল পূর্ণ ক্ষমতায় শিল্পকারখানা চালিয়ে রাখার প্রশ্ন জড়িত নয়; এর গভীরে আছে আমদানি সক্ষমতার বিষয়টি। আমাদের বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতও গভীরভাবে আমদানিনির্ভর। সমস্যাটা ওখানে তীব্র হয়ে উঠেছে যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জরুরি জ্বালানি আমরা সহজে আমদানি করতে পারছি না হাতে ডলারের যথেষ্ট মজুত নেই বলে। একটা সময়ে বিশ্ববাজারে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপকরণ—যেমন এলএনজি, কয়লা, ফার্নেস অয়েল প্রভৃতির দাম খুব বেড়ে গেলেও এখন তা নিম্নমুখী। কোনো কোনো জ্বালানিপণ্যের দাম অর্ধেক হয়ে গেছে, প্রধানত এর চাহিদা কমেছে বলে। একসময় তো আমরা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি আমদানি বন্ধই করে দিয়েছিলাম। এর দামও এখন অনেক কম। তারপরও আমরা এগুলো সহজে আমদানি করতে পারছি না। কয়লা-সংকটে বড় দু-তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন হয় বন্ধ থাকছে; না হয় অর্ধেক চালু। এ খাতে ফার্নেস অয়েলের মজুতও ফুরিয়ে আসার খবর রয়েছে। এলএনজি আমদানির উদ্যোগেও নেই ক্ষিপ্রগতি। এগুলো বাকিতে এনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা রয়েছে বলেও খবর মিলছে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স যে খবর দিয়েছে, তা বাংলাদেশের ভাবমূর্তির জন্য ভালো হয়নি। তবে এটা তো সত্য, বকেয়া বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে না বলে কয়েকটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান কয়লাসহ বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপকরণ দিচ্ছে না (বা দিতে দ্বিধা করছে) বাংলাদেশকে। এরই মধ্যে কিছু জ্বালানিপণ্য আমদানির প্রয়াস নেই, তা অবশ্য নয়। কিন্তু সরকারের অর্থসংকট, বিশেষ করে ডলারসংকট না কাটলে এবং এ জায়গাটায় স্বস্তি না এলে বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক করে আনা সম্ভব বলে মনে হচ্ছে না।
বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার কথা সরকারের দিক থেকে সময়ে-সময়ে বলা হয়। কিন্তু গার্মেন্টসসহ শিল্প-বাণিজ্যে কম বিদ্যুৎ ব্যবহারের তো সুযোগ নেই। সরবরাহকৃত বিদ্যুৎ না পেলে বা ঘন ঘন লোডশেডিং হলে তাদের উৎপাদনই কেবল ব্যাহত হয় না; যন্ত্রপাতিরও ক্ষতি হয়। নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবহারের ব্যবস্থা তখন করতে হয় তাদের। এতে বাড়ে উৎপাদন ব্যয়। দেশীয় বাজারে পণ্যসামগ্রী সরবরাহকারীদের বেলায়ও এ কথা প্রযোজ্য। গ্যাস-বিদ্যুৎসংকটে চিনি পরিশোধনকারী কারখানাগুলোও ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না। বাজারে তো চিনির ঘাটতি রয়েছে। ভোজ্যতেল পরিশোধনেও একই কারণে সংকট দেখা দেওয়ার কথা। জরুরি ওষুধ খাতেও জ্বালানিসংকটের অভিঘাত পড়ছে। এখানে উল্লেখ্য, বিপুল ব্যয়ে উৎপাদনক্ষমতা অনেকখানি বাড়ানোর পরও আমরা প্রয়োজনমতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছি না। এ ক্ষেত্রে সরকারের নীতিগত ব্যর্থতার দিকটিও আলোচিত হচ্ছে। এটা আরও বাড়বে সামনে বিদ্যুৎসংকট আরও বেড়ে উঠলে। এ ক্ষেত্রে শুধু প্রকৃতির কৃপার ওপর নির্ভর করে থাকলে তো চলে না। আবহাওয়াও বিচিত্র আচরণ করছে। দফায় দফায় তাপপ্রবাহটা এ অঞ্চলে বাড়বে বলেই পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে। তাতে খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিবেশ প্রতিকূল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়ে ওঠার কথা। এ অবস্থায় উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে বাড়াতে হবে এর উপকরণ আমদানি নির্বিঘ্ন রাখার সক্ষমতা।
এ লক্ষ্যে দেশে রপ্তানি আয়ের সঙ্গে প্রবাসী আয়ের ধারা জোরদার করার কোনো বিকল্প নেই। প্রবাসী আয় ব্যাংকের মাধ্যমে না এলে তো রিজার্ভ শক্তিশালী হবে না। যেরূপেই হোক যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় আসা বেড়েছে, এটা সুখবর। সৌদি আরবসহ আমাদের বড় শ্রমবাজারগুলো থেকেও অফিশিয়াল চ্যানেলে প্রবাসী আয় আসা যে করে হোক, বাড়াতে হবে। দেশে বিদেশি বিনিয়োগ দ্রুত বাড়বে না। বিদেশি ঋণ প্রাপ্তিও সহজ নয়। আমাদের অর্থনীতির স্বাস্থ্য বিষয়ে আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা মুডিসের মূল্যায়নের পর এটা আরও কঠিন হওয়ার শঙ্কা; বরং চেষ্টা থাকতে হবে বিদেশি ঋণ পরিশোধের সময় যত পেছানো যায় এবং অনুদান যত বেশি মেলে।
আইএমএফসহ এ ধরনের সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কও স্বাভাবিক রাখতে হবে। তাহলে ফরেন রিজার্ভ পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হওয়ার আশা। শিল্পের কাঁচামালসহ কোনো জরুরি পণ্যের আমদানিই যেন এ কারণে বিঘ্নিত না হয়। অপ্রয়োজনীয় আমদানিসহ সম্ভাব্য সব ক্ষেত্রে ডলার অপচয় কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা চাই। আমাদের তো বেশ কিছু নিত্যপণ্যও বিপুলভাবে আমদানি করতে হয়। সম্প্রতি পেঁয়াজের মতো পণ্যও আমদানি করতে হচ্ছে। সামনে কোরবানির ঈদে দাম আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায়। সত্যি বলতে, একটা শঙ্কার মধ্যে ঢুকে পড়েছি আমরা। আমদানি সক্ষমতা কমে যাওয়ার কিছু দৃশ্যমান ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যেও ইস্যুটি এখন আলোচিত হচ্ছে।
লেখক: সাংবাদিক, বিশ্লেষক
অর্থনীতিকে আমরা রপ্তানিমুখী করতে চাইলেও এটা এখনো অনেকখানি আমদানিনির্ভর। আমাদের প্রধান যে রপ্তানিপণ্য গার্মেন্টস, তাতে যে বিপুল আয় হয় বলে শ্লাঘা অনুভব করি, তারও একটা বড় অংশ কিন্তু আমদানি ব্যয়। এর কাঁচামাল, মেশিনারিজ তো আমদানি করতে হয়। দেশে এসবের উৎপাদন বাড়ানো গেলে এবং রপ্তানিপণ্য উৎপাদনে তা ব্যবহার করতে পারলে, সেটা হতো কাজের কাজ। তাহলে রপ্তানিপণ্যে মূল্য সংযোজন বাড়ত। প্রকৃত রপ্তানি আয় বেড়ে উঠত। সেটা যে হচ্ছে না, তা নয়। দেশে বস্ত্র উৎপাদন খাত চাঙা হচ্ছে। পোশাকশিল্পে ব্যবহার বাড়ছে এর। কিন্তু আমরা তুলা উৎপাদন করি না বললেই চলে। এর প্রায় পুরোটাই করতে হয় আমদানি। সুতরাং তুলা আমদানি সক্ষমতা কতটা রয়েছে; এর আমদানি নির্বিঘ্নে করতে পারছি কি না, সেটা এক বড় প্রশ্ন। তবে এই মুহূর্তে আরও বড় প্রশ্ন, পোশাকশিল্পে কাঁচামাল ও মেশিনারিজ আমদানির কী অবস্থা? সামগ্রিকভাবে শিল্প খাতে আমদানি পরিস্থিতি ভালো নয়। তাতে শিল্পোৎপাদন কমে যাওয়ার খবর মিলছে। শিল্পোৎপাদন কমে যাচ্ছে দেশে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট তীব্র হয়ে ওঠার কারণেও। এর দাম দফায় দফায় বাড়ানোর কথা আপাতত না হয় ঊহ্য থাকল। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়লে শিল্পের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে। সে প্রসঙ্গও পাশে রেখে প্রশ্ন তুলতে হয়, আমাদের প্রধান শিল্প খাত পোশাক বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করে সুনাম ধরে রাখতে পারবে তো?
নিবন্ধটি লেখার আগের দিন খবর মিলল, যুক্তরাষ্ট্রের পোশাকপণ্য আমদানি কমে গেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। এতে বাংলাদেশসহ যারা ওই বাজারে পণ্য সরবরাহ করে, তাদের রপ্তানি কমেছে। যুক্তরাষ্ট্র তো আমাদের পোশাকপণ্যের প্রধান গন্তব্য। তবে এ বাজারে প্রতিযোগীদের তুলনায় বাংলাদেশের রপ্তানি কমেছে কম। এর নিশ্চয় কারণ রয়েছে। তবে কারণ যা-ই হোক, তুলনায় কম রপ্তানি হ্রাসের খবর কিছুটা হলেও স্বস্তির। এ অবস্থায় আবার প্রশ্ন উঠছে, সামনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্রয়াদেশ বেড়ে গেলে আমরা সেটা ধরতে পারব তো? দেশে বিশেষ করে ডলারের যে দুষ্প্রাপ্যতা চলছে, তা অব্যাহত থাকলে পোশাক খাতের জন্য জরুরি পণ্যসামগ্রী আমদানি কি বাড়ানো যাবে? যুক্তরাষ্ট্রসহ আমদানিকারক দেশগুলোয় গার্মেন্টসের মতো পণ্যসামগ্রীর কতটা কী আমদানি হবে, সেটা নির্ভর করে তাদের চাহিদার ওপর। ওই সব দেশে বেড়ে যাওয়া মূল্যস্ফীতি ক্রমে কমে আসার খবর মিলছে। তাতে জরুরি পণ্যের বাইরে তাদের ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে ওঠার কথা। প্রশ্ন হলো, সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে আমরা যেন তার সুযোগ নিতে পারি। আমদানিকারক দেশগুলোর বাজারে চাহিদা হ্রাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলাম; আবার চাহিদা বৃদ্ধির সময়ও বাজার ধরতে পারলাম না, সেটি ঘটলে আমরা সামগ্রিকভাবে পরাস্ত হব। এ অবস্থায় পোশাক খাতের জন্য জরুরি পণ্যসামগ্রী আমদানি নির্বিঘ্ন রাখতে হবে।
এখন আন্তর্জাতিক বাজারে এগুলোর দাম কমে আসার যে খবর রয়েছে, তা কিছুটা স্বস্তির। জ্বালানি তেলের দামও কমে আসার প্রবণতা স্পষ্ট। তাতে পণ্য পরিবহনকারী জাহাজ ও বিমানের ভাড়া কমে আসার কথা। কিন্তু এ অবস্থায়ও যদি দেশে ডলারের বাজারে অস্থিরতা চলতে থাকে, তাহলে ফায়দা হবে না। এ অবস্থায় আলাদা করে হলেও রপ্তানিকারকদের, বিশেষত পোশাক খাতের জরুরি আমদানি নির্বিঘ্ন রাখতে সচেষ্ট হতে হবে। প্রধানত এ খাতের সহায়তায় বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ থেকে যে তহবিল করা হয়েছিল, তার সদ্ব্যবহারেও দ্বিধা করা যাবে না। রপ্তানি খাতে বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠীর দাবির মধ্যে সমন্বয় সাধন করেই পথ চলতে হবে জাতীয় স্বার্থের দিকে তাকিয়ে। পোশাক খাতে সংকট বেড়ে গেলে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানে। একে ঘিরে বেড়ে ওঠা অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্যেও কম প্রভাব পড়বে না। দেশের প্রধান শিল্প খাতের আমদানি ব্যাহত অবস্থায় থাকলে ওখান থেকে সরকারের প্রত্যাশিত রাজস্বও আসবে না। সরকার তো রাজস্ব সংকটেও আছে।
গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার বিষয়টি এ আলোচনায় একটুখানি এসেছিল। এর সঙ্গে কেবল পূর্ণ ক্ষমতায় শিল্পকারখানা চালিয়ে রাখার প্রশ্ন জড়িত নয়; এর গভীরে আছে আমদানি সক্ষমতার বিষয়টি। আমাদের বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতও গভীরভাবে আমদানিনির্ভর। সমস্যাটা ওখানে তীব্র হয়ে উঠেছে যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জরুরি জ্বালানি আমরা সহজে আমদানি করতে পারছি না হাতে ডলারের যথেষ্ট মজুত নেই বলে। একটা সময়ে বিশ্ববাজারে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপকরণ—যেমন এলএনজি, কয়লা, ফার্নেস অয়েল প্রভৃতির দাম খুব বেড়ে গেলেও এখন তা নিম্নমুখী। কোনো কোনো জ্বালানিপণ্যের দাম অর্ধেক হয়ে গেছে, প্রধানত এর চাহিদা কমেছে বলে। একসময় তো আমরা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি আমদানি বন্ধই করে দিয়েছিলাম। এর দামও এখন অনেক কম। তারপরও আমরা এগুলো সহজে আমদানি করতে পারছি না। কয়লা-সংকটে বড় দু-তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন হয় বন্ধ থাকছে; না হয় অর্ধেক চালু। এ খাতে ফার্নেস অয়েলের মজুতও ফুরিয়ে আসার খবর রয়েছে। এলএনজি আমদানির উদ্যোগেও নেই ক্ষিপ্রগতি। এগুলো বাকিতে এনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা রয়েছে বলেও খবর মিলছে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স যে খবর দিয়েছে, তা বাংলাদেশের ভাবমূর্তির জন্য ভালো হয়নি। তবে এটা তো সত্য, বকেয়া বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে না বলে কয়েকটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান কয়লাসহ বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপকরণ দিচ্ছে না (বা দিতে দ্বিধা করছে) বাংলাদেশকে। এরই মধ্যে কিছু জ্বালানিপণ্য আমদানির প্রয়াস নেই, তা অবশ্য নয়। কিন্তু সরকারের অর্থসংকট, বিশেষ করে ডলারসংকট না কাটলে এবং এ জায়গাটায় স্বস্তি না এলে বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক করে আনা সম্ভব বলে মনে হচ্ছে না।
বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার কথা সরকারের দিক থেকে সময়ে-সময়ে বলা হয়। কিন্তু গার্মেন্টসসহ শিল্প-বাণিজ্যে কম বিদ্যুৎ ব্যবহারের তো সুযোগ নেই। সরবরাহকৃত বিদ্যুৎ না পেলে বা ঘন ঘন লোডশেডিং হলে তাদের উৎপাদনই কেবল ব্যাহত হয় না; যন্ত্রপাতিরও ক্ষতি হয়। নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবহারের ব্যবস্থা তখন করতে হয় তাদের। এতে বাড়ে উৎপাদন ব্যয়। দেশীয় বাজারে পণ্যসামগ্রী সরবরাহকারীদের বেলায়ও এ কথা প্রযোজ্য। গ্যাস-বিদ্যুৎসংকটে চিনি পরিশোধনকারী কারখানাগুলোও ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না। বাজারে তো চিনির ঘাটতি রয়েছে। ভোজ্যতেল পরিশোধনেও একই কারণে সংকট দেখা দেওয়ার কথা। জরুরি ওষুধ খাতেও জ্বালানিসংকটের অভিঘাত পড়ছে। এখানে উল্লেখ্য, বিপুল ব্যয়ে উৎপাদনক্ষমতা অনেকখানি বাড়ানোর পরও আমরা প্রয়োজনমতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছি না। এ ক্ষেত্রে সরকারের নীতিগত ব্যর্থতার দিকটিও আলোচিত হচ্ছে। এটা আরও বাড়বে সামনে বিদ্যুৎসংকট আরও বেড়ে উঠলে। এ ক্ষেত্রে শুধু প্রকৃতির কৃপার ওপর নির্ভর করে থাকলে তো চলে না। আবহাওয়াও বিচিত্র আচরণ করছে। দফায় দফায় তাপপ্রবাহটা এ অঞ্চলে বাড়বে বলেই পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে। তাতে খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিবেশ প্রতিকূল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়ে ওঠার কথা। এ অবস্থায় উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে বাড়াতে হবে এর উপকরণ আমদানি নির্বিঘ্ন রাখার সক্ষমতা।
এ লক্ষ্যে দেশে রপ্তানি আয়ের সঙ্গে প্রবাসী আয়ের ধারা জোরদার করার কোনো বিকল্প নেই। প্রবাসী আয় ব্যাংকের মাধ্যমে না এলে তো রিজার্ভ শক্তিশালী হবে না। যেরূপেই হোক যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় আসা বেড়েছে, এটা সুখবর। সৌদি আরবসহ আমাদের বড় শ্রমবাজারগুলো থেকেও অফিশিয়াল চ্যানেলে প্রবাসী আয় আসা যে করে হোক, বাড়াতে হবে। দেশে বিদেশি বিনিয়োগ দ্রুত বাড়বে না। বিদেশি ঋণ প্রাপ্তিও সহজ নয়। আমাদের অর্থনীতির স্বাস্থ্য বিষয়ে আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা মুডিসের মূল্যায়নের পর এটা আরও কঠিন হওয়ার শঙ্কা; বরং চেষ্টা থাকতে হবে বিদেশি ঋণ পরিশোধের সময় যত পেছানো যায় এবং অনুদান যত বেশি মেলে।
আইএমএফসহ এ ধরনের সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কও স্বাভাবিক রাখতে হবে। তাহলে ফরেন রিজার্ভ পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হওয়ার আশা। শিল্পের কাঁচামালসহ কোনো জরুরি পণ্যের আমদানিই যেন এ কারণে বিঘ্নিত না হয়। অপ্রয়োজনীয় আমদানিসহ সম্ভাব্য সব ক্ষেত্রে ডলার অপচয় কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা চাই। আমাদের তো বেশ কিছু নিত্যপণ্যও বিপুলভাবে আমদানি করতে হয়। সম্প্রতি পেঁয়াজের মতো পণ্যও আমদানি করতে হচ্ছে। সামনে কোরবানির ঈদে দাম আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায়। সত্যি বলতে, একটা শঙ্কার মধ্যে ঢুকে পড়েছি আমরা। আমদানি সক্ষমতা কমে যাওয়ার কিছু দৃশ্যমান ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যেও ইস্যুটি এখন আলোচিত হচ্ছে।
লেখক: সাংবাদিক, বিশ্লেষক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে