পরীক্ষামূলক চিয়া চাষে সফলতার সম্ভাবনা

বাঘা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২২, ০৭: ৪৬
আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২২, ১৬: ১৭

ঔষধি গুণসম্পন্ন ‘চিয়া’ একসময় শুধু মেক্সিকো ও আমেরিকার চাষ হতো। এবারই প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে চিয়া চাষ করা হয়েছে বাঘা উপজেলায়।

উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শে কৃষক আরিফুল ইসলাম এ বছর পরীক্ষামূলকভাবে ৪ শতক জমিতে চিয়া চাষ করে সফলতা পেয়েছেন।

আরিফুল ইসলাম উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের জোতনশি গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এই অঞ্চলের মাটিতে চিয়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। অনেক কৃষক এই চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

চিয়ার বৈজ্ঞানিক নাম সালভিয়া হিসপানিকা। ২০১৭ সালে দিনাজপুর সদর উপজেলার সুন্দরবন গ্রামে চিয়ার প্রথম চাষ শুরু হয়। সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সারা দেশেই অনেকে কমবেশি এর চাষ শুরু করেন।

মরুভূমিতে জন্মানো সালভিয়া হিসপানিকা উদ্ভিদের বীজ হচ্ছে চিয়া সিড বা বীজ। আদি জন্মস্থান সেন্ট্রাল আমেরিকা। সেখানকার প্রাচীন আদিবাসীরা খাদ্যতালিকায় থাকা চিয়া বীজকে সোনার থেকেও মূল্যবান বলে মনে করতেন। অতীতে মায়া সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ খাবার ছিল চিয়া বীজ। প্রাচীন মায়া ভাষায় চিয়া মানে শক্তি। প্রাচীনকালের ইতিহাসে চিয়া বীজ প্রধান খাদ্য হিসেবে জায়গা পেলেও খুব অল্প কিছুদিন হলো চিয়া বীজ আধুনিক কালের সুপার ফুড হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বর্তমানে চিয়া সিড শুধু ওজন কমানোর জন্য বা ডায়েটের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে না, নিরপেক্ষ স্বাদের কারণে চিয়া সিড সব ধরনের খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ার উপযুক্ত।

সব ধরনের আবহাওয়ায় জন্মানো চিয়া বীজ দেখতে সাদা ও কালো রঙের তিলের মতো ছোট হয়ে থাকে। অনেকেই চিয়া সিডকে তোকমা বলে ভুল করে থাকে। দেখতে প্রায় একই রকম হলেও জন্মস্থান ও পুষ্টিগুণের দিক থেকে রয়েছে কিছু পার্থক্য। চিয়া সাধারণত তিন মাসের ফসল। এর আয়ুকাল ৯০ থেকে ১০০ দিন। অক্টোবর মাসে বীজ বপন করতে হয়। ৩৩ শতকের বিঘায় মাত্র তিন শ গ্রাম বীজ লাগে। চাষের পদ্ধতি খুব সহজ। রোগবালাইও কম হয়।

কৃষক আরিফুল ইসলাম বলেন, চিয়া চাষ অত্যন্ত লাভজনক। এটি পতিত জমি ও ছোট বাগানের জমিতে চাষ করা যায়। চিয়া বীজ বিক্রির বাজার পেলে কৃষকেরা লাভবান হবেন। এক হাজার টাকা বাজারদরে উৎপাদিত চিয়া বিঘাপ্রতি ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করা সম্ভব।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউনানি মেডিকেল কর্মকর্তা নওরোজ নাহারীন লিজা জানান, সুপার ফুড চিয়া বীজের উপকারিতা অনেক। দেহের শক্তি ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী, ওজন কমানো, রক্তে সুগার স্বাভাবিক রাখা এবং হাড়ের ক্ষয় রোধ করে চিয়া। প্রচুর পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ চিয়া সিড মলাশয় পরিষ্কার রাখে, ফলে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।

নওরোজ নাহারীন লিজা আরও বলেন, চিয়া সিডে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে। চিয়া বীজ ক্যানসার রোধ করে, শরীরের শর্করার মাত্রা কমিয়ে হজমে সহায়তা করে। এতে থাকা উচ্চমাত্রার ক্যালসিয়াম হাঁটু ও জয়েন্টের ব্যথা দূর করে। এটি ত্বক, চুল ও নখ সুন্দর রাখতে সহায়তা করে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান জানান, দেশের আবহাওয়া ও মাটি চিয়া চাষের জন্য উপযোগী। ঔষধি গুণসম্পন্ন চিয়া একটি লাভজনক আবাদ। ব্যাপকভাবে এই চাষে ঝুঁকে পড়লে কৃষকেরা লাভবান হবেন। অন্যান্য ফসলের ওপর থেকে চাপ কমবে। উপজেলা কৃষি অফিস চিয়া চাষ সম্প্রসারণে ভবিষ্যতে কৃষকদের বিনা মূল্যে বীজ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তায় প্রস্তুত রয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত