সামাদের মাথায় জীবনের বোঝা

আয়নাল হোসেন, ঢাকা
Thumbnail image

এক গামলা পাঁপড়ের ওজন আর কতটুকু হবে? খুব বেশি হলে তিন-চার কেজি। কিন্তু বয়স যদি আপনার নব্বইয়ের কোঠা পার হয়, তখন তো পায়ের ভারেই পা উঠতে চাইবে না। মাথার ওপর এই গামলাই তখন অনেক বড় বোঝা।

বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে আসা আবদুস সামাদের মাথায় এমন ভারী বোঝাই তুলে দিয়েছে জীবন। নির্মম এই জীবন তাঁকে দিয়েছে দারিদ্র্য।

গত বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর আজিমপুর বি-জোনে দেখা হয় আবদুস সামাদের সঙ্গে। আকাশে তখন তপ্ত রোদ। ছাতা ছাড়া রাস্তায় বের হওয়াই কঠিন। এমন রোদের ভেতরে মাথায় গামলাভর্তি পাঁপড় নিয়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে পথে নেমেছেন আবদুস সামাদ। বয়সের ভারে তাঁর পিঠ কুঁজো হয়ে গেছে।

আবদুস সামাদের দাবি, তাঁর বয়স ৯৬ বছর। জানালেন, গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার নাওডোবা গ্রামে। তিনি ১৫ বছর ধরে আজিমপুর এলাকায় পাঁপড় বিক্রি করছেন। মেয়ের সঙ্গে থাকেন রাজধানীর লালবাগ থানার শহীদনগরের একটি ভাড়া বাসায়। দুই কক্ষের ওই বাসায় মোট ছয়জন থাকেন। মেয়ের সঙ্গে থাকলেও প্রতি মাসে আবদুস সামাদকে বাসা ভাড়া বাবদ গুনতে হয় ৪০০ টাকা। খাওয়া ও অন্যান্য খরচ সবই তুলে দিতে হয় মেয়ের হাতে।

আবদুস সামাদের চার মেয়ে ও এক ছেলে। জীবিকার তাগিদে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন বেশ কয়েক বছর আগে। ঢাকায় ছেলে-মেয়েদের বিয়েও দিয়েছেন। তবে তাঁদের কেউ সচ্ছল নয়। দিনমজুর ও অন্যের বাসায় কাজ করে চলে তাঁদের সংসার। এর মধ্যে বৃদ্ধ বাবার থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করার সামর্থ্য তাঁদের নেই। এ কারণে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এখনো জীবিকার জন্য ছুটে চলতে হচ্ছে সামাদকে।

আবদুস সামাদ জানান, রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থেকে প্রতিদিন দিনে ৭০০-৮০০ টাকার পাঁপড় কেনেন। সেখান থেকে রিকশায় করে আজিমপুর এলাকায় এসে বিক্রি করেন। এসব পাঁপড় বিক্রি করে দিনে ২৫০-৩০০ টাকা আয় হয় তাঁর। এ দিয়েই কোনোমতে জীবন চালাচ্ছেন তিনি। সরকারের কাছ থেকে বয়স্ক ভাতা পেলেও স্বল্পমূল্যের চাল, ডাল, আটা, তেল কেনার কোনো কার্ড পাননি। সরকারের কাছে এখন তাঁর কোনো চাওয়া-পাওয়ার নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত