মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্তিতে মোটা টাকার লেনদেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২২, ১৩: ৩০

খুলনার তেরখাদা উপজেলায় মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় স্থান পাচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধকালে বিতর্কিত ব্যক্তিরা। যাচাই-বাছাই কমিটির বিরুদ্ধে এই কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠছে। গতকাল বুধবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে দ্বিতীয় দফায় এই অভিযোগ করেছেন উপজেলার বারাসাত এলাকার বাসিন্দা ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট (অব.) বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল জালিল শেখ।

লিখিত বক্তব্যে আব্দুল জালিল শেখ বলেন, ‘তেরখাদা উপজেলায় আমার অধীনে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন মাত্র ৯১ জন। এই উপজেলার কিছু লোক অন্য এলাকায় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলেও তার তালিকা জানা নেই। যুদ্ধের পর কর্নেল ওসমানী স্বাক্ষরিত মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট পান অনেকে।’

আব্দুল জালিল শেখ বলেন, ‘পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বাড়তে থাকে। এর মধ্যে তেরখাদার বাসিন্দা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার খান মোহাম্মাদ আলী ও তেরখাদা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার চৌধুরী আবুল খায়ের রয়েছেন। বর্তমানে নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা অন্তর্ভুক্তির জন্য যাচাই-বাছাই চলছে। যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি খান মোহাম্মাদ আলী ও সদস্য রয়েছেন চৌধুরী আবুল খায়ের।’
সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল জালিল শেখ বলেন, ‘খান মোহাম্মাদ আলী ও চৌধুরী আবুল খায়েরের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের এবং হাইকোর্ট বিভাগে রিট করি। হাইকোর্ট ২০১৭ সালের ১ মার্চ আদেশে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই স্থগিত করেন।’

এই বীর মুক্তিযোদ্ধা আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই নির্দেশিকা-২০১৬-এর আলোকে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল গত ২৪ ফেব্রুয়ারি তিন সদস্যের কমিটি গঠনের কথা বলে। তা ছাড়া মামলা চললেও যাচাই-বাছাই কাজ করা যাবে বলে নির্দেশনা দেয়। গত ১৫ মার্চ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে আবার খান মোহাম্মাদ আলীকে সভাপতি ও চৌধুরী আবুল খায়েরকে সদস্য করে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়।

জালিল শেখ অভিযোগ করেন, তেরখাদায় নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে ৬০০ জন আবেদন করেন। যাচাই-বাছাই কাজে নিয়োজিত কমিটির সভাপতি খান মোহাম্মাদ আলী ও সদস্য চৌধুরী আবুল খায়ের অমুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাপরাধীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য বাণিজ্যে লিপ্ত হন। মুক্তিযোদ্ধা আবেদনকারীদের কাছ থেকে ৫ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত চুক্তি করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অমুক্তিযোদ্ধাদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে গত ১৮ সেপ্টেম্বর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার, খুলনা জেলা প্রশাসক ও তেরখাদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। পরে ২২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। এ ছাড়া গত ৪ অক্টোবর খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। তাতেও কোনো ফল না পেয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান রক্ষার্থে আবারও জাতির সামনে তিনি তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেন।

এ বিষয়ে তেরখাদা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি খান মোহাম্মাদ আলী বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে টাকা নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আমরা গত ২৫ অক্টোবর থেকে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী যাচাই-বাছাই শুরু করে ৩০ অক্টোবর শেষ করেছি। তবে এখনো আমরা কাউকে নির্বাচন করিনি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত