জাহীদ রেজা নূর
দুর্নীতিতে যাঁরা শীর্ষ আসন দখল করেছেন, তাঁদের কারও কারও কাণ্ডকীর্তি ফাঁস হওয়ার পর অনেক প্রশ্ন এসে সামনে দাঁড়িয়েছে। হঠাৎ করে ঝাঁকে ঝাঁকে দুর্নীতিবাজ ধরা পড়ছে কেন? এ জন্য কাকে সাধুবাদ দিতে হবে? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, দুদক, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, নাকি আমজনতাকে?
একসঙ্গে এত হাই প্রোফাইল দুর্নীতিবাজের মুখোশ উন্মোচনের পর স্বভাবতই যে কেউ অনুভব করতে পারে, সিস্টেমের মধ্যেই ভূত রয়েছে। এই ভূত তাড়ানোর মতো ওঝার জন্ম হয়নি এখনো। এদিক-ওদিক দু-একজন হয়তো আলটপকা ধরা পড়ে নাস্তানাবুদ হচ্ছেন, কিন্তু গোটা ব্যবস্থায় যে দুর্নীতির বীজ ছড়িয়ে পড়েছে, তা উপড়ে ফেলবে কে?
রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমান হয়তো ভেবে নিয়েছিলেন, কোনো মানুষের সাধ্য নেই তাঁর এই অসৎ জীবনকে চ্যালেঞ্জ করবে। তিনি হয়তো ঠিকই ভেবেছিলেন। মানুষের বুঝি সাধ্য ছিল না তাঁকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করার। যে সিস্টেমের মধ্যে আমাদের বসবাস, সেখানে চাইলেই অপরাধীকে ধরা যায় না। শনাক্ত হয়তো করা যায়, কিন্তু তাকে ধরবে, কার সাধ্য? একটা ছাগল করল সেই অসাধ্যসাধন।কোরবানির ঈদের সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফুটানি দেখাতে গিয়ে মতিউর রহমানের ছেলে বাবার সর্বনাশ করল। এরপর বাপ-ছেলে নিয়ে কত কাহিনির যে জন্ম হলো, তা বলে শেষ করা যাবে না।
দুর্নীতিবাজদের তালিকায় মতিউর একা নন, সে কথা সবাই জানে। যে সিস্টেমের কথা বলা হলো, সেখানে কী ঘটে, তা নিয়ে যাঁদের ঔৎসুক্য আছে, তাঁরা ইতিমধ্যেই হয়তো থলের বিড়ালের সন্ধান পেয়ে গেছেন। চাইলেই কি এই অনাচার দূর করা যাবে?
২. আমার বন্ধুদের মধ্যে নানা মতের নানা মানুষ আছেন। তাঁদের মধ্যে একদল মানুষ বলে থাকেন, এই অনাচার দূর করার জন্য কঠোর হতে হবে। দু-একটা দুর্নীতিবাজকে প্রকাশ্যে সর্বোচ্চ সাজা দিতে হবে এবং যে দুর্নীতি করবে, তাকে শনাক্ত করার সঙ্গে সঙ্গেই সেই শাস্তি কার্যকর করা হবে। তাঁরা আরও বলেন, অপারেশন ক্লিন হার্টের নামে যেভাবে অপরাধীকে সাজা দেওয়া হয়, সেটা সংগত। কারণ, প্রচলিত আইনে এই অপরাধীদের ধরে সাজা দেওয়া খুব কঠিন। তাদের প্রত্যেকের হাত আইনের হাতের চেয়ে লম্বা। একটা অপরাধ করে ফেলার পর নানা দিক থেকে তাকে রক্ষার চেষ্টা করা হয়।
অপরাধ করার পর তৎক্ষণাৎ বিচার ছাড়া সাজা দেওয়া হলে বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীনতাই তাতে ফুটে ওঠে। কিন্তু যদি দেখা যায়, অপরাধীরা নানা ছলে বলে কৌশলে আদালত থেকে বেরিয়ে আসছে এবং সেটাই হয়ে উঠছে রীতি, তাহলে?
বাংলা সিনেমায় পুলিশ অফিসারের কণ্ঠে প্রচলিত একটি সংলাপ ছিল, ‘আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না।’ খুবই দরকারি সংলাপ এটি। কিন্তু আইন যদি তার নিজের পথে না চলে ‘পাড়ার বড় ভাই’দের বানানো পথে চলতে থাকে, তখন মানুষ কোনদিকে যাবে? স্তালিনীয় পথ দেখানো বন্ধুদের ভাবনাকে প্রশ্রয় দিলে তো আইনের শাসন বলে কিছুই থাকবে না। দেশ হয়ে পড়বে পুলিশি রাষ্ট্র। আর তখন যে অরাজকতা শুরু হবে, তার কি শেষ খুঁজে পাওয়া যাবে?
৩. আমরা একটা সিস্টেমের কথা বলেছিলাম। সরকারি চাকরিতে এমন সব খানাখন্দ আছে, যেগুলো বন্ধ করতে না পারলে সিস্টেমের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত ছড়ানো যে দুর্নীতির জাল রয়েছে, তা ছিন্ন করা অসম্ভব। সরকারি কর্মচারী মানে যে জনগণের করের টাকায় লালিত একদল মানুষ, সে কথা এখন আমরা ভুলে গেছি। কিন্তু জনগণের এই সেবকেরাই এখন জনগণকে শাসন করছেন। জনগণও উপায় না দেখে তা মেনে নিয়েছে। কোনো কারণে সরকারি অফিসমুখী হলে কোন খাতে ঘুষ দিতে হবে, সেটাও এখন অনেকেরই নখদর্পণে। কোথায় কোথায় ঘুষ ছাড়া কাজ হবে না, সেটাও অনেকে জানে। কিন্তু প্রতিকারের উপায় নেই বলে ঘুষ দিতে বাধ্য হয় তারা।
এই ঘুষখোরদের বিরুদ্ধে নালিশ করলে যদি সমস্যার সমাধান হতো, তাহলে জনগণের অসহায়ত্ব ঘুচত। কিন্তু ঘুষখোরদের এমনই দাপট যে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে বরং অভিযোগকারীর কাজটিই আটকে যেতে পারে আর ঘুষখোরের নিরাপত্তার তাতে ব্যাঘাত হয় না।
কৌটিল্য বলেছিলেন, দুর্নীতি রোধ করতে হলে অসৎ আমলাকে সরিয়ে ফেলতে হবে। খুবই ভালো একটি সমাধান দিয়েছেন তিনি। কেন সরকারি প্রশাসনে অসৎ আমলা থাকবে? তাকে সরিয়ে দিলেই তো আমলা নামক পাবলিক সার্ভেন্ট বা জনগণের সেবকেরা জনগণের সেবায় নিয়োজিত হতে পারত। অসৎ চিন্তা করার কথা ভাবতে পারত না।
কিন্তু সমস্যা হলো, মানুষের মধ্যে থাকে ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের বাসনা। লোভের কোনো সীমা-পরিসীমা থাকে না। বাধা না পেলে সেই লোভ বাড়তে বাড়তে এমন জায়গায় পৌঁছে যায়, যা জন্ম দেয় জীবন্ত রূপকথার। সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদের সম্পত্তি নিয়ে যে খবরগুলো প্রকাশিত হয়েছে পত্র-পত্রিকায় কিংবা পরিবেশিত হয়েছে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়, তাতে স্পষ্ট হয়, ক্ষমতা খাটিয়ে দেশটাকে ‘বাবার তালুক’ বানানো খুব কঠিন কোনো ব্যাপার নয়। প্রশ্ন হলো, বেনজীর আহমেদের হয়তো লোভের সীমা-পরিসীমা ছিল না, কিন্তু এই পথে কি তিনি একা হেঁটেছেন? মোটেই না। অনেকেই জানেন, এই পেশায় থেকে এই পথে হাঁটা মানুষের সংখ্যা একেবারে হাতে গোনা নয়। একইভাবে সরকারি আমলাদের একটা বড় অংশও ‘রাজা হওয়ার তরিকা’ জানে। তারা জাদুকরের মতো শূন্য রুমালের ভেতর থেকে বের করে আনতে পারে কবুতর।
তাই কৌটিল্যের কথা অনুযায়ী, আমাদের আমলাতন্ত্রে ঘাপটি মেরে পড়ে থাকা অসৎ কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সম্মিলিতভাবে যখন ‘চেইন’ মেনে দুর্নীতি করা শুরু হয়, তখন কাকে ছেড়ে কাকে ধরবেন? সবই তো এক গোয়ালের গরু, তারা তো একে অন্যকে বিকিয়ে দেবে না।
৪. পণ্ডিতেরা বলে থাকেন, মানুষের মাঝে ন্যায়-অন্যায় বোধ আছে, আছে সততা, আছে সমাজের উন্নতি-কল্পে নিজেকে গড়ে নেওয়ার প্রবণতা। এই মানুষদের চিহ্নিত করে রাষ্ট্রের সেবক তৈরি করা দরকার। কথাটা বলা সহজ, করা কঠিন। সরকার যখন জনসম্পৃক্ত হয়, তখন জনগণের ভাবনা প্রতিফলিত হয় তাদের কাজে। কিন্তু আমাদের দেশে ক্ষমতায় আসার আগপর্যন্ত জনগণকে দরকার হয়, এরপর সরকার গঠনপর্ব শেষ হলেই জনগণকে কেউ আর দাম দেয় না।
তাহলে শেষ ভরসা কোথায়? এবারের সিরিজ দুর্নীতিবাজদের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর মনে হচ্ছে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির কিছু পরিবর্তন হয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের সমাজে জনমত গঠন করা জরুরি। এখন মানুষ জানে, প্রশাসনের ওপরের দিকে থাকা মানুষদের অনেকেই তুলসী ধোয়া পাতা নয় (অবশ্য একটাই প্যারাডক্স, চাকরিরত অবস্থায় তারা খুব কম ধরা পড়ে)। একসময় ঘুষখোরদের ঘৃণা করত মানুষ। ঘুষখোর পথ চলত মাথা নিচু করে।
এখন ঘুষখোরের টাকায় প্রমোদে মেতে ওঠে পরিবার, টাকার উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন না তুলেই। পড়শিরাও দুর্নীতিবাজকে সমীহ করে চলে। ইদানীং প্রকাশিত হওয়া খবরগুলোর কারণে আবার দুর্নীতিবাজদের প্রতি তীব্র ঘৃণার সৃষ্টি হলে সম্মিলিতভাবে জনগণ শক্তি ফিরে পাবে।
তখন ঘুষখোরদের দৌরাত্ম্য কমতে পারে। দুর্নীতিবাজদের কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন যদি চিহ্নিত করতে পারে, তাহলে জাতীয়ভাবে তাদের পুরস্কৃত করতে হবে। আমলাতন্ত্রের পদে পদে যে লোভের দুয়ার খুলে রাখা হয়েছে, তা বন্ধ করতে হবে। ‘লিফট কিনতে’ কিংবা ‘সাঁতার শিখতে পঁচিশ সদস্যের টিমের বিদেশ সফর’ ধরনের খবরগুলোও তখন কমে আসবে।
দেশে সৎ মানুষ নেই—এ কথা আমি বিশ্বাস করি না। কিন্তু অসতের দাপটে সমাজের ভিত্তিমূলে সৎ মানুষেরা জায়গা পাচ্ছেন না। এই অবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন। কোন পথে সেই পরিবর্তন আসতে পারে, তা রীতিমতো গবেষণার ব্যাপার। আরেক দিন সে বিষয় নিয়ে আলাপ হবে।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
দুর্নীতিতে যাঁরা শীর্ষ আসন দখল করেছেন, তাঁদের কারও কারও কাণ্ডকীর্তি ফাঁস হওয়ার পর অনেক প্রশ্ন এসে সামনে দাঁড়িয়েছে। হঠাৎ করে ঝাঁকে ঝাঁকে দুর্নীতিবাজ ধরা পড়ছে কেন? এ জন্য কাকে সাধুবাদ দিতে হবে? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, দুদক, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, নাকি আমজনতাকে?
একসঙ্গে এত হাই প্রোফাইল দুর্নীতিবাজের মুখোশ উন্মোচনের পর স্বভাবতই যে কেউ অনুভব করতে পারে, সিস্টেমের মধ্যেই ভূত রয়েছে। এই ভূত তাড়ানোর মতো ওঝার জন্ম হয়নি এখনো। এদিক-ওদিক দু-একজন হয়তো আলটপকা ধরা পড়ে নাস্তানাবুদ হচ্ছেন, কিন্তু গোটা ব্যবস্থায় যে দুর্নীতির বীজ ছড়িয়ে পড়েছে, তা উপড়ে ফেলবে কে?
রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমান হয়তো ভেবে নিয়েছিলেন, কোনো মানুষের সাধ্য নেই তাঁর এই অসৎ জীবনকে চ্যালেঞ্জ করবে। তিনি হয়তো ঠিকই ভেবেছিলেন। মানুষের বুঝি সাধ্য ছিল না তাঁকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করার। যে সিস্টেমের মধ্যে আমাদের বসবাস, সেখানে চাইলেই অপরাধীকে ধরা যায় না। শনাক্ত হয়তো করা যায়, কিন্তু তাকে ধরবে, কার সাধ্য? একটা ছাগল করল সেই অসাধ্যসাধন।কোরবানির ঈদের সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফুটানি দেখাতে গিয়ে মতিউর রহমানের ছেলে বাবার সর্বনাশ করল। এরপর বাপ-ছেলে নিয়ে কত কাহিনির যে জন্ম হলো, তা বলে শেষ করা যাবে না।
দুর্নীতিবাজদের তালিকায় মতিউর একা নন, সে কথা সবাই জানে। যে সিস্টেমের কথা বলা হলো, সেখানে কী ঘটে, তা নিয়ে যাঁদের ঔৎসুক্য আছে, তাঁরা ইতিমধ্যেই হয়তো থলের বিড়ালের সন্ধান পেয়ে গেছেন। চাইলেই কি এই অনাচার দূর করা যাবে?
২. আমার বন্ধুদের মধ্যে নানা মতের নানা মানুষ আছেন। তাঁদের মধ্যে একদল মানুষ বলে থাকেন, এই অনাচার দূর করার জন্য কঠোর হতে হবে। দু-একটা দুর্নীতিবাজকে প্রকাশ্যে সর্বোচ্চ সাজা দিতে হবে এবং যে দুর্নীতি করবে, তাকে শনাক্ত করার সঙ্গে সঙ্গেই সেই শাস্তি কার্যকর করা হবে। তাঁরা আরও বলেন, অপারেশন ক্লিন হার্টের নামে যেভাবে অপরাধীকে সাজা দেওয়া হয়, সেটা সংগত। কারণ, প্রচলিত আইনে এই অপরাধীদের ধরে সাজা দেওয়া খুব কঠিন। তাদের প্রত্যেকের হাত আইনের হাতের চেয়ে লম্বা। একটা অপরাধ করে ফেলার পর নানা দিক থেকে তাকে রক্ষার চেষ্টা করা হয়।
অপরাধ করার পর তৎক্ষণাৎ বিচার ছাড়া সাজা দেওয়া হলে বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীনতাই তাতে ফুটে ওঠে। কিন্তু যদি দেখা যায়, অপরাধীরা নানা ছলে বলে কৌশলে আদালত থেকে বেরিয়ে আসছে এবং সেটাই হয়ে উঠছে রীতি, তাহলে?
বাংলা সিনেমায় পুলিশ অফিসারের কণ্ঠে প্রচলিত একটি সংলাপ ছিল, ‘আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না।’ খুবই দরকারি সংলাপ এটি। কিন্তু আইন যদি তার নিজের পথে না চলে ‘পাড়ার বড় ভাই’দের বানানো পথে চলতে থাকে, তখন মানুষ কোনদিকে যাবে? স্তালিনীয় পথ দেখানো বন্ধুদের ভাবনাকে প্রশ্রয় দিলে তো আইনের শাসন বলে কিছুই থাকবে না। দেশ হয়ে পড়বে পুলিশি রাষ্ট্র। আর তখন যে অরাজকতা শুরু হবে, তার কি শেষ খুঁজে পাওয়া যাবে?
৩. আমরা একটা সিস্টেমের কথা বলেছিলাম। সরকারি চাকরিতে এমন সব খানাখন্দ আছে, যেগুলো বন্ধ করতে না পারলে সিস্টেমের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত ছড়ানো যে দুর্নীতির জাল রয়েছে, তা ছিন্ন করা অসম্ভব। সরকারি কর্মচারী মানে যে জনগণের করের টাকায় লালিত একদল মানুষ, সে কথা এখন আমরা ভুলে গেছি। কিন্তু জনগণের এই সেবকেরাই এখন জনগণকে শাসন করছেন। জনগণও উপায় না দেখে তা মেনে নিয়েছে। কোনো কারণে সরকারি অফিসমুখী হলে কোন খাতে ঘুষ দিতে হবে, সেটাও এখন অনেকেরই নখদর্পণে। কোথায় কোথায় ঘুষ ছাড়া কাজ হবে না, সেটাও অনেকে জানে। কিন্তু প্রতিকারের উপায় নেই বলে ঘুষ দিতে বাধ্য হয় তারা।
এই ঘুষখোরদের বিরুদ্ধে নালিশ করলে যদি সমস্যার সমাধান হতো, তাহলে জনগণের অসহায়ত্ব ঘুচত। কিন্তু ঘুষখোরদের এমনই দাপট যে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে বরং অভিযোগকারীর কাজটিই আটকে যেতে পারে আর ঘুষখোরের নিরাপত্তার তাতে ব্যাঘাত হয় না।
কৌটিল্য বলেছিলেন, দুর্নীতি রোধ করতে হলে অসৎ আমলাকে সরিয়ে ফেলতে হবে। খুবই ভালো একটি সমাধান দিয়েছেন তিনি। কেন সরকারি প্রশাসনে অসৎ আমলা থাকবে? তাকে সরিয়ে দিলেই তো আমলা নামক পাবলিক সার্ভেন্ট বা জনগণের সেবকেরা জনগণের সেবায় নিয়োজিত হতে পারত। অসৎ চিন্তা করার কথা ভাবতে পারত না।
কিন্তু সমস্যা হলো, মানুষের মধ্যে থাকে ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের বাসনা। লোভের কোনো সীমা-পরিসীমা থাকে না। বাধা না পেলে সেই লোভ বাড়তে বাড়তে এমন জায়গায় পৌঁছে যায়, যা জন্ম দেয় জীবন্ত রূপকথার। সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদের সম্পত্তি নিয়ে যে খবরগুলো প্রকাশিত হয়েছে পত্র-পত্রিকায় কিংবা পরিবেশিত হয়েছে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়, তাতে স্পষ্ট হয়, ক্ষমতা খাটিয়ে দেশটাকে ‘বাবার তালুক’ বানানো খুব কঠিন কোনো ব্যাপার নয়। প্রশ্ন হলো, বেনজীর আহমেদের হয়তো লোভের সীমা-পরিসীমা ছিল না, কিন্তু এই পথে কি তিনি একা হেঁটেছেন? মোটেই না। অনেকেই জানেন, এই পেশায় থেকে এই পথে হাঁটা মানুষের সংখ্যা একেবারে হাতে গোনা নয়। একইভাবে সরকারি আমলাদের একটা বড় অংশও ‘রাজা হওয়ার তরিকা’ জানে। তারা জাদুকরের মতো শূন্য রুমালের ভেতর থেকে বের করে আনতে পারে কবুতর।
তাই কৌটিল্যের কথা অনুযায়ী, আমাদের আমলাতন্ত্রে ঘাপটি মেরে পড়ে থাকা অসৎ কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সম্মিলিতভাবে যখন ‘চেইন’ মেনে দুর্নীতি করা শুরু হয়, তখন কাকে ছেড়ে কাকে ধরবেন? সবই তো এক গোয়ালের গরু, তারা তো একে অন্যকে বিকিয়ে দেবে না।
৪. পণ্ডিতেরা বলে থাকেন, মানুষের মাঝে ন্যায়-অন্যায় বোধ আছে, আছে সততা, আছে সমাজের উন্নতি-কল্পে নিজেকে গড়ে নেওয়ার প্রবণতা। এই মানুষদের চিহ্নিত করে রাষ্ট্রের সেবক তৈরি করা দরকার। কথাটা বলা সহজ, করা কঠিন। সরকার যখন জনসম্পৃক্ত হয়, তখন জনগণের ভাবনা প্রতিফলিত হয় তাদের কাজে। কিন্তু আমাদের দেশে ক্ষমতায় আসার আগপর্যন্ত জনগণকে দরকার হয়, এরপর সরকার গঠনপর্ব শেষ হলেই জনগণকে কেউ আর দাম দেয় না।
তাহলে শেষ ভরসা কোথায়? এবারের সিরিজ দুর্নীতিবাজদের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর মনে হচ্ছে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির কিছু পরিবর্তন হয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের সমাজে জনমত গঠন করা জরুরি। এখন মানুষ জানে, প্রশাসনের ওপরের দিকে থাকা মানুষদের অনেকেই তুলসী ধোয়া পাতা নয় (অবশ্য একটাই প্যারাডক্স, চাকরিরত অবস্থায় তারা খুব কম ধরা পড়ে)। একসময় ঘুষখোরদের ঘৃণা করত মানুষ। ঘুষখোর পথ চলত মাথা নিচু করে।
এখন ঘুষখোরের টাকায় প্রমোদে মেতে ওঠে পরিবার, টাকার উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন না তুলেই। পড়শিরাও দুর্নীতিবাজকে সমীহ করে চলে। ইদানীং প্রকাশিত হওয়া খবরগুলোর কারণে আবার দুর্নীতিবাজদের প্রতি তীব্র ঘৃণার সৃষ্টি হলে সম্মিলিতভাবে জনগণ শক্তি ফিরে পাবে।
তখন ঘুষখোরদের দৌরাত্ম্য কমতে পারে। দুর্নীতিবাজদের কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন যদি চিহ্নিত করতে পারে, তাহলে জাতীয়ভাবে তাদের পুরস্কৃত করতে হবে। আমলাতন্ত্রের পদে পদে যে লোভের দুয়ার খুলে রাখা হয়েছে, তা বন্ধ করতে হবে। ‘লিফট কিনতে’ কিংবা ‘সাঁতার শিখতে পঁচিশ সদস্যের টিমের বিদেশ সফর’ ধরনের খবরগুলোও তখন কমে আসবে।
দেশে সৎ মানুষ নেই—এ কথা আমি বিশ্বাস করি না। কিন্তু অসতের দাপটে সমাজের ভিত্তিমূলে সৎ মানুষেরা জায়গা পাচ্ছেন না। এই অবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন। কোন পথে সেই পরিবর্তন আসতে পারে, তা রীতিমতো গবেষণার ব্যাপার। আরেক দিন সে বিষয় নিয়ে আলাপ হবে।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে