ছাদে খামার, গরু ওঠে ‘লিফটে’

কামরুজ্জামান রাজু, কেশবপুর (যশোর)
Thumbnail image

তিনতলা পাকা বাড়ির সামনের অংশে লোহা আর স্টিলের অবকাঠামো। দেখতে অনেকটা লিফটের মতো। শিকল টানলে ভেতরে থাকা কাঠের পাটাতন ভূমি থেকে ভবনের ছাদে ওঠানামা করে। কিন্তু এটি ব্যবহার করে বাড়ির কোনো বাসিন্দা ছাদে যাতায়াত করেন না। কাঠামোটি বানানো হয়েছে গরুর ওঠানামার জন্য।

যশোরের কেশবপুরের ভোগতী মাঠপাড়া এলাকায় বাড়ির ছাদে গরুর খামার করেছেন নজরুল ইসলাম (৪৮)। সে খামারে গরু নিতেই তিনি লিফটসদৃশ কাঠামোটি বানিয়েছেন। স্থানীয়ভাবে এটি পরিচিতি পেয়েছে গরুর লিফট নামে। নজরুলের ভাষ্য, এলাকায় প্রায়ই গরু চুরির ঘটনা ঘটে। সে আতঙ্ক থেকে তিনি ছাদে খামার করেছেন। সেখানে গরু নেওয়ার কাজ সহজ করতে বানিয়েছেন এই ‘লিফট’।

স্থানীয় বাসিন্দা ও স্বজনেরা জানান, অভিনব এই উপায়ের মতো খামারি হিসেবেও সফল হয়েছেন নজরুল। প্রথম পর্যায়ে খামারের ১২টি গরু বিক্রি করে চার লাখ টাকা লাভ করেছেন। স্বাস্থ্যসম্মত এমন ব্যতিক্রমী খামার জেলায় প্রথম বলেও জানিয়েছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর। যেটি দেখতে নজরুলের বাড়িতে আসে আশপাশের এলাকার মানুষ।

ভোগতী মাঠপাড়া গ্রামে ছয় শতক জমির ওপর নজরুলের বাড়ি। কথা বলে জানা যায়, আগে থেকেই তাঁর গরু পালনের শখ ছিল। শহর এলাকায় জমির দাম বেশি। তাই বাড়িতেই ২০২২ সালে ছাদে খামার করার পরিকল্পনা করেন। ১ হাজার ৫০০ বর্গফুট ছাদের চার পাশে দেন লোহার রেলিং। অর্ধেক দেয়াল করে নেট দিয়ে ঘিরে রেখেছেন। ওপরে টিনের ছাউনি। ১২টি গরু পালনের জন্য রয়েছে পৃথক খাবারের পাত্র। তাপমাত্রা সহনশীল রাখতে আছে বৈদ্যুতিক পাখা।

বসতবাড়ির ছাদে গরু লালন-পালন করছেন নজরুল ইসলাম। সম্প্রতি যশোরের কেশবপুর পৌরসভার ভোগতী মাঠপাড়ায়নজরুল ইসলাম বলেন, শুরুতে ১২টি দেশি প্রজাতির গরু নিয়ে খামার তৈরি করেন। ধান, ভুট্টা, ভুসি, খৈল—একসঙ্গে মিশিয়ে এবং বিচালি, কাঁচা ঘাস ও কলার খোসা গরুকে দিনে তিনবার খাওয়ানো হয়। গরু দেখাশোনার জন্য একজন কর্মচারীও রাখেন। ছয় মাস লালনপালনের পর ১২টি গরু বিক্রি করলে চার লাখ টাকা লাভ হয়। বর্তমানে খামারে ১১টি দেশি ও ১টি ভারতের শাহীওয়াল জাতের গরু আছে। আগামী কোরবানির ঈদে দ্বিতীয় পর্যায়ে এসব গরু বিক্রি করবেন।
বসতবাড়ির ছাদে কেন গরুর খামার জানতে চাইলে নজরুল বলেন, নিরাপত্তার কথা ভেবে এমনটি করেছেন। চোরের উপদ্রব আগে থেকেই ছিল। সম্প্রতি পাশের একটি বাড়ি থেকেও সাতটি গরু চুরি হয়েছে। এখন মনে হয়, ছাদই বেশি নিরাপদ।

সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে পার্শ্ববর্তী চালুয়াহাটি গ্রামে বাবার নামে থাকা সাত বিঘা জমিতে খামার করার ইচ্ছা আছে নজরুলের। এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা অলোকেশ কুমার সরকার বলেন, নজরুল ইসলামকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। এ ছাড়া অন্যরাও ছাদে গরুর খামার করতে আগ্রহী হলে পরামর্শ দেবে প্রাণিসম্পদ দপ্তর।

উপজেলার উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কার্ত্তিক চন্দ্র রায় বলেন, বর্তমানে কেশবপুরের ৮০৫টি খামারে ৯৪ হাজার পশু লালনপালন করা হচ্ছে। নজরুলের খামারটিই শুধু ছাদে। এমন খামারে কোনো অসুবিধা হয় না। নিরাপত্তার দিকটাও নিশ্চিত হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত