সীমান্ত হত্যা বন্ধ হোক

সম্পাদকীয়
Thumbnail image

শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে কিছুটা অস্বস্তি তৈরি হয়েছে, তা অস্বীকার করা যাবে না। ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা এখন ভারতে আছেন। মানুষ হত্যার অভিযোগে দেশের মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা হচ্ছে। বিচারের মুখোমুখি করার জন্য ভারত তাঁকে ফিরিয়ে না দিলে দুই দেশের সম্পর্ক কেমন দাঁড়াবে তা নিয়ে সব মহলেই আলোচনা আছে। তবে এখন সীমান্ত হত্যার বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। যদিও সীমান্ত হত্যার বিষয়টি নতুন নয়। শেখ হাসিনার আমলে যখন দুই দেশের সম্পর্ক খুব ভালো ছিল বলে দাবি করা হয়, তখনো বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে মানুষ হত্যা বন্ধ ছিল না। বিএসএফের গুলিতে মানুষ হত্যার ঘটনায় তখনো বাংলাদেশ উদ্বেগ জানিয়েছে, কিন্তু প্রতিকার হয়নি।  

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সীমান্ত হত্যা নিয়ে যথেষ্ট সোচ্চার বাংলাদেশ। প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে একাধিক উপদেষ্টা এবং ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরাও সীমান্ত হত্যা নিয়ে পৃথকভাবে উদ্বেগ জানিয়ে ভারতের নিন্দা ও সমালোচনা করছেন।  

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে অল্প সময়ের ব্যবধানে দুই বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ১ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় ১৪ বছর বয়সী বাংলাদেশি কিশোরী স্বর্ণা দাস বিএসএফের গুলিতে নিহতের ঘটনায় ভারত সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে কড়া প্রতিবাদ ও নিন্দা জানায় বাংলাদেশ। দুঃখজনক যে এই ঘটনার কয়েক দিন পর ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় ১৫ বছর বয়সী জয়ন্ত কুমার সিংহ (জাম্বু) নামের এক কিশোর। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও দুজন। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে দুটি সীমান্ত হত্যার ঘটনা ভারতের প্রতি অনেকের মনেই বিরূপতা তৈরি করেছে।  

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যা বন্ধে সংশ্লিষ্টদের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ভবিষ্যতে যাতে সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যার ঘটনা আর না ঘটে; সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। এর আগেও তিনি বলেছিলেন, ‘ফেলানীর মতো হত্যাকাণ্ড আর দেখতে চাই না।’ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের উদ্দেশ করে তিনি বলেছেন, ‘সীমান্তে পিঠ প্রদর্শন করবেন না। নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করুন।’ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনও বলেছেন, সীমান্ত হত্যা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের পথে অন্তরায়। সীমান্তে হত্যা গ্রহণযোগ্য নয়। 

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সীমান্তে যাঁরা (বিএসএফের গুলিতে) হত্যার শিকার হন, তাঁরা কেউই ভারতের ভূমি দখল করতে যান না, তাঁরা বাহকমাত্র। সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশিদের হত্যার বিষয়টিকে ‘নিষ্ঠুরতা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন তিনি।

সম্প্রীতি ও সৌহার্দের স্বার্থেই ভারতকে এই নিষ্ঠুরতা বন্ধ করতে হবে। কেউ যদি চোরাচালান বা অন্য কোনো অবৈধ কাজে জড়িত থাকে, তাহলে তার বা তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার পরিবর্তে গুলি করা সমর্থনযোগ্য নয়। এ ধরনের হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের প্রতি ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাবের প্রতিফলন ঘটায় না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত