হিশাম সাফিয়েদ্দিন
কয়েক দিন ধরে লেবাননে ইসরায়েলের ধারাবাহিক নির্বিচার হামলা হিজবুল্লাহর ওপর বড় ধরনের আঘাত। এর মধ্যে ছিল যোগাযোগের যন্ত্র পেজার উড়িয়ে দেওয়া এবং বৈরুতের উপকণ্ঠ দাহিয়েহতে বিমান হামলা। এসব হামলায় বহু বেসামরিক মানুষের পাশাপাশি অভিজাত রাদওয়ান ইউনিটের শীর্ষ কমান্ডারসহ কয়েক ডজন হিজবুল্লাহ যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। গত সোমবার দক্ষিণ লেবানন এবং বেকা উপত্যকায় ব্যাপক বোমা হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ১ হাজারের বেশি বেসামরিক মানুষ হতাহত হয়।
হিজবুল্লাহর যোগাযোগ নেটওয়ার্কে ঢুকতে পারার এবং শীর্ষস্থানীয় সামরিক নেতাদের খতম করার ব্যাপারে ইসরায়েলের ক্ষমতা লেবাননের সশস্ত্র প্রতিরোধ গোষ্ঠীটির যুদ্ধক্ষেত্রে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার সক্ষমতা নিয়ে গুরুতর সন্দেহ তুলে ধরেছে। আসলে এই গোয়েন্দা ব্যর্থতা যুদ্ধের সামগ্রিক পরিচালনার জন্য মাঠের ক্ষতির চেয়ে মারাত্মক হতে পারে। গত মে মাসে বিমান দুর্ঘটনায় ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির রহস্যজনক মৃত্যুর পর থেকে এসব ঘটনা বেড়েই চলেছে।
এই যুদ্ধক্ষেত্রে দ্রুত বিকাশমান উন্নত প্রযুক্তির অস্ত্রের অনুপ্রবেশের উৎস ও পরিমাণ সম্পর্কে একধরনের অনিশ্চয়তা জল্পনা-কল্পনার আগুনে ঘি ঢালছে। তবে ইসরায়েলের এসব হামলায় এত বিরাট ধাক্কা খাওয়ার পর এবং যেভাবে ঘটনাটাকে নেওয়ার প্রয়োজন ছিল তার তুলনায় হিজবুল্লাহর তাৎক্ষণিক সামরিক প্রতিক্রিয়া ছিল অতি সাদামাটা, যা সাধারণ মানুষ ও প্রতিরোধ বাহিনীর কাছে প্রত্যাশিত ছিল না। ইসরায়েলের রক্তাক্ত হামলার ফলে অভ্যন্তরীণভাবে হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং জনসাধারণ তাদের প্রতি বিপুল সহানুভূতি ও সমর্থন জানিয়েছে। রক্ত দেওয়ার কার্যক্রম এবং চিকিৎসকেরা নিজেদের থেকে এগিয়ে এসে এই উদ্ধার ও চিকিৎসা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।
হিজবুল্লাহর সঙ্গে উত্তেজনা সত্ত্বেও লেবাননের সরকারি কর্তাব্যক্তিরা এবং রাজনৈতিক দলগুলো, যেমন ফ্রি প্যাট্রিয়টিক মুভমেন্ট ও ড্রুজ নেতা ওয়ালিদ জুম্বল্যাটের প্রগ্রেসিভ সোশ্যালিস্ট পার্টি নিজেদের মতো মিছিল-সমাবেশ করেছে। তাদের এই অবস্থান, এমনকি প্রতীকী হলেও, হিজবুল্লাহর চিরাচরিত বিরোধীদের নিয়ে যে সন্দেহ ছিল তা কেটে গেছে। এই সমালোচকদের মধ্যে ফালাঙ্গেস ও কাতায়েব পার্টির মতো ডানপন্থী গোষ্ঠী যেমন আছে, তেমনি আছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় বামপন্থীরা। এদের বেশির ভাগই ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থানের কথা বলে।
সামরিক ফ্রন্টে হিজবুল্লাহ ১০ হাজার স্বল্প ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে, যা ইসরায়েলের হাইফার দক্ষিণে বেশ কয়েকটি নগরের কেন্দ্রে আঘাত হানে। লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে ছিল সামরিক স্থাপনা, যেমন একটি ইলেকট্রনিক ম্যানুফ্যাকচারিং কমপ্লেক্স এবং ইসরায়েলের অন্যতম প্রধান বিমানঘাঁটি রামাত ডেভিড। আরও তাৎপর্যপূর্ণ—প্রতিরোধ অভিযানের পাল্টা হামলা বৃদ্ধি ইসরায়েলের ঘোষিত উদ্দেশ্যগুলোকে এ পর্যন্ত ব্যর্থ করেছে, যা তার অভিযানের সাফল্য বা ব্যর্থতার চূড়ান্ত পরীক্ষা।
ইহুদিবাদী রাষ্ট্রের দুটি প্রাথমিক কৌশলগত লক্ষ্য হলো গাজা থেকে উত্তর ফ্রন্টকে বিচ্ছিন্ন করা এবং কয়েক হাজার বাস্তুচ্যুত ইহুদি বসতি স্থাপনকারীকে অধিকৃত উত্তর ফিলিস্তিনে তাদের বসতিতে ফিরিয়ে দেওয়া। কিন্তু কোনোটিই এখন হবে বলে মনে হচ্ছে না। সপ্তাহান্তে হিজবুল্লাহর ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল নাইম কাসিম ঘোষণা করেছিলেন যে যুদ্ধ উন্মুক্ত ক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে এবং এটা আরও বহু মানুষকে বাস্তুচ্যুত করবে।
হিজবুল্লাহ একসঙ্গে অনেক রকেট হামলা চালানোয় ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি শহরে কয়েক হাজার বাসিন্দাকে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে বের হতে হয়েছে। স্কুলগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালগুলোকে চিকিৎসাধীন আহতদের ভূগর্ভস্থ আস্তানায় পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
ইসরায়েলি সামরিক স্থাপনাগুলোর ক্ষতির পরিমাণ স্পষ্ট নয়। কারণ তেল আবিব হামলার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রচারের ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কিন্তু সত্য যে এই সাইটগুলো হিজবুল্লাহর রকেটের সীমার মধ্যে রয়েছে এবং ইসরায়েলের বহুল পরিচিত আয়রন ডোমও রকেট-প্রুফ নয়। হিজবুল্লাহর দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সীমান্ত থেকে অনেক দূরে ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারে নিয়ে রাখা আছে। লিতানি নদীর দক্ষিণে লেবাননের ভূখণ্ডে ইসরায়েলের স্থল অভিযানে খুব সুবিধা হবে বলে মনে হয় না।
এই ধরনের বেপরোয়া আগ্রাসন ইসরায়েলি সেনাদের হিজবুল্লাহ বাহিনীর হামলার মাঝে রাখবে এবং উত্তরাঞ্চলীয় বসতিগুলোকে রকেট হামলা থেকে রক্ষা করবে না। হিজবুল্লাহর মিত্রদের সংহতি এবং সমর্থনমূলক সামরিক পদক্ষেপ ফিলিস্তিন, ইয়েমেন ও ইরাকে একীভূত হয়েছে, যা বর্তমান যুদ্ধকে একটি সংহত ফ্রন্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই পরিস্থিতি নির্দেশ করে যে একটি অঞ্চলের সংঘাত অন্য অঞ্চলের স্বার্থকে প্রভাবিত করে এবং এর ফলে একটি সমন্বিত প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে উঠছে। হিজবুল্লাহ বারবার বলেছে, ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের উত্তরের বসতিতে ফিরিয়ে দেওয়ার সর্বোত্তম উপায় হলো গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ শেষ করা।
একইভাবে হামাস যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ৩১ মে ঘোষিত যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে যাতে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, অবৈধ ইসরায়েলি দখলদারত্বের সমাপ্তি ও ভূখণ্ডের অবরোধের অবসান এবং বন্দী বিনিময়ের প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ইসরায়েল বর্তমানে ন্যায়সংগত সমাধানে আগ্রহী নয় এবং তারা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। ইসরায়েলের গাজা ও লেবাননে সামরিক কার্যক্রম, বিশেষ করে ফিলিস্তিনিদের প্রতি তাদের নৃশংস আচরণ নিয়ে অনেক আন্তর্জাতিক বিতর্ক রয়েছে। এটির প্রভাব অঞ্চলের স্থিতিশীলতার ওপর গুরুতর হতে পারে।
আরও পূর্বে, ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনী অধিকৃত পশ্চিম তীরের শরণার্থী শিবির, শহর ও গ্রামগুলোর বিরুদ্ধে সহিংস অভিযান পরিচালনা করছে, যখন বসতি স্থাপনকারী জনতা ফিলিস্তিনি ভূমি ও লোকজনের বিরুদ্ধে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্রদের সমর্থন ছাড়া ইসরায়েলের সামরিক ও কূটনৈতিক অবস্থান বজায় রাখা কঠিন হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ইসরায়েলের সামরিক ক্ষমতা এবং আন্তর্জাতিক স্তরে তাদের কূটনৈতিক কার্যকলাপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জাতিসংঘের নখদন্তহীন নিন্দা, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ও রাশিয়ার ভীরু ও অকার্যকর প্রতিবাদ এবং আরব রাষ্ট্র ও সরকার, বিশেষ করে জর্ডান ও মিসরের মতো ফিলিস্তিনের সীমান্তবর্তী দেশগুলোর জটিলতায় ইসরায়েল আরও উৎসাহিত হয়েছে।
ফিলিস্তিন, লেবানন ও ইয়েমেনের অ-রাষ্ট্রীয় (নন স্টেট) বাহিনী একত্র হয়ে একটি পরাশক্তিসমর্থিত ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই যুদ্ধগুলো বিপুল চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধকতার মধ্যে হলেও তারা স্বাধীনতার জন্য তাদের লড়াইকে জোরালোভাবে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে, যা ঔপনিবেশ-বিরোধী যুদ্ধে একটি ঐতিহাসিক অর্জন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এই জনগণের বাহিনী কত দিন টিকে থাকতে পারে সে বিষয়ে বলার সময় আসেনি। তারপরও প্রতিহত করার একটি দৃঢ় ইচ্ছা এবং ইসরায়েলও যে বিপত্তি ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের সম্মুখীন হচ্ছে তার মধ্যে অনেক নেতিবাচক বিষয় থেকে গেছে।
(মিডলইস্ট আইয়ে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)
হিশাম সাফিয়েদ্দিন, সহযোগী অধ্যাপক, ইতিহাস, ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়; কানাডা রিসার্চ চেয়ার, আধুনিক মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক ইতিহাস
কয়েক দিন ধরে লেবাননে ইসরায়েলের ধারাবাহিক নির্বিচার হামলা হিজবুল্লাহর ওপর বড় ধরনের আঘাত। এর মধ্যে ছিল যোগাযোগের যন্ত্র পেজার উড়িয়ে দেওয়া এবং বৈরুতের উপকণ্ঠ দাহিয়েহতে বিমান হামলা। এসব হামলায় বহু বেসামরিক মানুষের পাশাপাশি অভিজাত রাদওয়ান ইউনিটের শীর্ষ কমান্ডারসহ কয়েক ডজন হিজবুল্লাহ যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। গত সোমবার দক্ষিণ লেবানন এবং বেকা উপত্যকায় ব্যাপক বোমা হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ১ হাজারের বেশি বেসামরিক মানুষ হতাহত হয়।
হিজবুল্লাহর যোগাযোগ নেটওয়ার্কে ঢুকতে পারার এবং শীর্ষস্থানীয় সামরিক নেতাদের খতম করার ব্যাপারে ইসরায়েলের ক্ষমতা লেবাননের সশস্ত্র প্রতিরোধ গোষ্ঠীটির যুদ্ধক্ষেত্রে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার সক্ষমতা নিয়ে গুরুতর সন্দেহ তুলে ধরেছে। আসলে এই গোয়েন্দা ব্যর্থতা যুদ্ধের সামগ্রিক পরিচালনার জন্য মাঠের ক্ষতির চেয়ে মারাত্মক হতে পারে। গত মে মাসে বিমান দুর্ঘটনায় ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির রহস্যজনক মৃত্যুর পর থেকে এসব ঘটনা বেড়েই চলেছে।
এই যুদ্ধক্ষেত্রে দ্রুত বিকাশমান উন্নত প্রযুক্তির অস্ত্রের অনুপ্রবেশের উৎস ও পরিমাণ সম্পর্কে একধরনের অনিশ্চয়তা জল্পনা-কল্পনার আগুনে ঘি ঢালছে। তবে ইসরায়েলের এসব হামলায় এত বিরাট ধাক্কা খাওয়ার পর এবং যেভাবে ঘটনাটাকে নেওয়ার প্রয়োজন ছিল তার তুলনায় হিজবুল্লাহর তাৎক্ষণিক সামরিক প্রতিক্রিয়া ছিল অতি সাদামাটা, যা সাধারণ মানুষ ও প্রতিরোধ বাহিনীর কাছে প্রত্যাশিত ছিল না। ইসরায়েলের রক্তাক্ত হামলার ফলে অভ্যন্তরীণভাবে হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং জনসাধারণ তাদের প্রতি বিপুল সহানুভূতি ও সমর্থন জানিয়েছে। রক্ত দেওয়ার কার্যক্রম এবং চিকিৎসকেরা নিজেদের থেকে এগিয়ে এসে এই উদ্ধার ও চিকিৎসা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।
হিজবুল্লাহর সঙ্গে উত্তেজনা সত্ত্বেও লেবাননের সরকারি কর্তাব্যক্তিরা এবং রাজনৈতিক দলগুলো, যেমন ফ্রি প্যাট্রিয়টিক মুভমেন্ট ও ড্রুজ নেতা ওয়ালিদ জুম্বল্যাটের প্রগ্রেসিভ সোশ্যালিস্ট পার্টি নিজেদের মতো মিছিল-সমাবেশ করেছে। তাদের এই অবস্থান, এমনকি প্রতীকী হলেও, হিজবুল্লাহর চিরাচরিত বিরোধীদের নিয়ে যে সন্দেহ ছিল তা কেটে গেছে। এই সমালোচকদের মধ্যে ফালাঙ্গেস ও কাতায়েব পার্টির মতো ডানপন্থী গোষ্ঠী যেমন আছে, তেমনি আছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় বামপন্থীরা। এদের বেশির ভাগই ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থানের কথা বলে।
সামরিক ফ্রন্টে হিজবুল্লাহ ১০ হাজার স্বল্প ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে, যা ইসরায়েলের হাইফার দক্ষিণে বেশ কয়েকটি নগরের কেন্দ্রে আঘাত হানে। লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে ছিল সামরিক স্থাপনা, যেমন একটি ইলেকট্রনিক ম্যানুফ্যাকচারিং কমপ্লেক্স এবং ইসরায়েলের অন্যতম প্রধান বিমানঘাঁটি রামাত ডেভিড। আরও তাৎপর্যপূর্ণ—প্রতিরোধ অভিযানের পাল্টা হামলা বৃদ্ধি ইসরায়েলের ঘোষিত উদ্দেশ্যগুলোকে এ পর্যন্ত ব্যর্থ করেছে, যা তার অভিযানের সাফল্য বা ব্যর্থতার চূড়ান্ত পরীক্ষা।
ইহুদিবাদী রাষ্ট্রের দুটি প্রাথমিক কৌশলগত লক্ষ্য হলো গাজা থেকে উত্তর ফ্রন্টকে বিচ্ছিন্ন করা এবং কয়েক হাজার বাস্তুচ্যুত ইহুদি বসতি স্থাপনকারীকে অধিকৃত উত্তর ফিলিস্তিনে তাদের বসতিতে ফিরিয়ে দেওয়া। কিন্তু কোনোটিই এখন হবে বলে মনে হচ্ছে না। সপ্তাহান্তে হিজবুল্লাহর ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল নাইম কাসিম ঘোষণা করেছিলেন যে যুদ্ধ উন্মুক্ত ক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে এবং এটা আরও বহু মানুষকে বাস্তুচ্যুত করবে।
হিজবুল্লাহ একসঙ্গে অনেক রকেট হামলা চালানোয় ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি শহরে কয়েক হাজার বাসিন্দাকে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে বের হতে হয়েছে। স্কুলগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালগুলোকে চিকিৎসাধীন আহতদের ভূগর্ভস্থ আস্তানায় পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
ইসরায়েলি সামরিক স্থাপনাগুলোর ক্ষতির পরিমাণ স্পষ্ট নয়। কারণ তেল আবিব হামলার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রচারের ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কিন্তু সত্য যে এই সাইটগুলো হিজবুল্লাহর রকেটের সীমার মধ্যে রয়েছে এবং ইসরায়েলের বহুল পরিচিত আয়রন ডোমও রকেট-প্রুফ নয়। হিজবুল্লাহর দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সীমান্ত থেকে অনেক দূরে ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারে নিয়ে রাখা আছে। লিতানি নদীর দক্ষিণে লেবাননের ভূখণ্ডে ইসরায়েলের স্থল অভিযানে খুব সুবিধা হবে বলে মনে হয় না।
এই ধরনের বেপরোয়া আগ্রাসন ইসরায়েলি সেনাদের হিজবুল্লাহ বাহিনীর হামলার মাঝে রাখবে এবং উত্তরাঞ্চলীয় বসতিগুলোকে রকেট হামলা থেকে রক্ষা করবে না। হিজবুল্লাহর মিত্রদের সংহতি এবং সমর্থনমূলক সামরিক পদক্ষেপ ফিলিস্তিন, ইয়েমেন ও ইরাকে একীভূত হয়েছে, যা বর্তমান যুদ্ধকে একটি সংহত ফ্রন্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই পরিস্থিতি নির্দেশ করে যে একটি অঞ্চলের সংঘাত অন্য অঞ্চলের স্বার্থকে প্রভাবিত করে এবং এর ফলে একটি সমন্বিত প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে উঠছে। হিজবুল্লাহ বারবার বলেছে, ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের উত্তরের বসতিতে ফিরিয়ে দেওয়ার সর্বোত্তম উপায় হলো গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ শেষ করা।
একইভাবে হামাস যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ৩১ মে ঘোষিত যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে যাতে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, অবৈধ ইসরায়েলি দখলদারত্বের সমাপ্তি ও ভূখণ্ডের অবরোধের অবসান এবং বন্দী বিনিময়ের প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ইসরায়েল বর্তমানে ন্যায়সংগত সমাধানে আগ্রহী নয় এবং তারা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। ইসরায়েলের গাজা ও লেবাননে সামরিক কার্যক্রম, বিশেষ করে ফিলিস্তিনিদের প্রতি তাদের নৃশংস আচরণ নিয়ে অনেক আন্তর্জাতিক বিতর্ক রয়েছে। এটির প্রভাব অঞ্চলের স্থিতিশীলতার ওপর গুরুতর হতে পারে।
আরও পূর্বে, ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনী অধিকৃত পশ্চিম তীরের শরণার্থী শিবির, শহর ও গ্রামগুলোর বিরুদ্ধে সহিংস অভিযান পরিচালনা করছে, যখন বসতি স্থাপনকারী জনতা ফিলিস্তিনি ভূমি ও লোকজনের বিরুদ্ধে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্রদের সমর্থন ছাড়া ইসরায়েলের সামরিক ও কূটনৈতিক অবস্থান বজায় রাখা কঠিন হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ইসরায়েলের সামরিক ক্ষমতা এবং আন্তর্জাতিক স্তরে তাদের কূটনৈতিক কার্যকলাপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জাতিসংঘের নখদন্তহীন নিন্দা, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ও রাশিয়ার ভীরু ও অকার্যকর প্রতিবাদ এবং আরব রাষ্ট্র ও সরকার, বিশেষ করে জর্ডান ও মিসরের মতো ফিলিস্তিনের সীমান্তবর্তী দেশগুলোর জটিলতায় ইসরায়েল আরও উৎসাহিত হয়েছে।
ফিলিস্তিন, লেবানন ও ইয়েমেনের অ-রাষ্ট্রীয় (নন স্টেট) বাহিনী একত্র হয়ে একটি পরাশক্তিসমর্থিত ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই যুদ্ধগুলো বিপুল চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধকতার মধ্যে হলেও তারা স্বাধীনতার জন্য তাদের লড়াইকে জোরালোভাবে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে, যা ঔপনিবেশ-বিরোধী যুদ্ধে একটি ঐতিহাসিক অর্জন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এই জনগণের বাহিনী কত দিন টিকে থাকতে পারে সে বিষয়ে বলার সময় আসেনি। তারপরও প্রতিহত করার একটি দৃঢ় ইচ্ছা এবং ইসরায়েলও যে বিপত্তি ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের সম্মুখীন হচ্ছে তার মধ্যে অনেক নেতিবাচক বিষয় থেকে গেছে।
(মিডলইস্ট আইয়ে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)
হিশাম সাফিয়েদ্দিন, সহযোগী অধ্যাপক, ইতিহাস, ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়; কানাডা রিসার্চ চেয়ার, আধুনিক মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক ইতিহাস
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে