রাজিউল হাসান, ঢাকা
দুই দশক আগেও শীত মৌসুমে দেশের শহর-নগরসহ অনেক এলাকা কুয়াশার চাদরে ঢেকে যেত। কিন্তু এখন শীত মৌসুমে শৈত্যপ্রবাহ শুরুর পরই কেবল শীতের আঁচ পাওয়া যায়। আর শীত শেষ হতেই গরমে নাভিশ্বাস অবস্থা হয়। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন যে এর জন্য দায়ী, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে স্থানীয় পর্যায়ে অপরিকল্পিত নগরায়ণও এর জন্য কম দায়ী নয়। এই উষ্ণায়ন ভৌগোলিকভাবে প্রভাব ফেলার পাশাপাশি স্বাস্থ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
কৃত্রিম উপগ্রহের তোলা ছবি বিশ্লেষণ করে গত দুই দশকে দেশের সাতটি বড় জেলায় নগরায়ণের হার ও তার প্রভাবে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। সুইজারল্যান্ডের বাসেলভিত্তিক বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী এমডিপিআইতে (মাল্টিডিসিপ্লিনারি ডিজিটাল পাবলিশিং ইনস্টিটিউট) ৪ জানুয়ারি গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে। সময়ের সঙ্গে কোনো এলাকায় ভবন, পাকা সড়কসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ও যন্ত্রচালিত যানবাহন বৃদ্ধি এবং নগরকেন্দ্রিক কার্যক্রম বৃদ্ধির হারকে নগরায়ণের হার বলে।
গবেষণাটি করেছেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাবদান একাডেমির একদল গবেষক। গবেষণায় কারিগরি সহযোগিতা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস)।
যে সাতটি জেলা শহরে নগরায়ণ ও তাপমাত্রার গতি-প্রকৃতির ওপর গবেষণাটি করা হয়েছে, সেগুলো হলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, সিলেট ও ময়মনসিংহ। এসব শহরের মধ্যে ২০০০ সাল থেকে বিগত ২০ বছরে ময়মনসিংহে উষ্ণ অঞ্চলে (আরবান হিট আইল্যান্ড) ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। আর এ সময়ে সেখানে পরিবেশের গড় বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৪ ডিগ্রির মতো। এই জেলায় হিট আইল্যান্ডের সংখ্যাও নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। এরপরই রয়েছে চট্টগ্রাম ও বরিশাল। এর মধ্যে চট্টগ্রামে হিট আইল্যান্ডের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বরিশালে বেড়েছে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায়ও বেড়েছে গড় তাপমাত্রা। তবে এই দুই দশকে রাজশাহী ও সিলেটে ভূপৃষ্ঠের গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্থিতিশীল রয়েছে।
বিজ্ঞানীদের মতে, আরবান হিট আইল্যান্ড হলো কোনো নগর বা মেট্রোপলিটন শহরের সেই এলাকা, যেখানে মানবসৃষ্ট কারণে আশপাশের এলাকার তুলনায় উষ্ণতা বেশি। ভবনের ছাদ, পিচঢালাই সড়ক কিংবা ঢালাই করা এলাকা উন্মুক্ত মাটির তুলনায় বেশি তাপ ধরে রাখে। যেসব এলাকায় গাছপালার পরিমাণ অনেক কম, ভবন-সড়কসহ বিভিন্ন অবকাঠামোর কারণে ভূপৃষ্ঠ বেশি আচ্ছাদিত এবং যন্ত্রচালিত যানবাহনের পরিমাণ বেশি, সেসব এলাকায় হিট আইল্যান্ড তৈরি হয়। এসব হিট আইল্যান্ডে দিনের তুলনায় রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য বেশি হয়।
বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, পরিবেশের উষ্ণতা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে স্বাস্থ্যের জন্য তা ঝুঁকি সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত তাপে হিট স্ট্রোক ও পানিশূন্যতা হতে পারে। এমনকি হৃদ্রোগ, শ্বাসতন্ত্রের রোগ ও রক্ত সংবহন তন্ত্রের রোগ হতে পারে। এ ছাড়া শিশু, অন্তঃসত্ত্বা নারী, বয়োবৃদ্ধরাও অতিরিক্ত তাপে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে থাকেন।
গবেষকদের ভাষ্য, ছোট এলাকায় ব্যাপক নগরায়ণ ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে পরিবেশের সবুজ ও উন্মুক্ত এলাকা কমছে। গড়ে উঠছে ভবনসহ বিভিন্ন অবকাঠামো। এ কারণে ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও বরিশালে হিট আইল্যান্ডের সংখ্যা বেড়েছে। সার্বিকভাবে এর প্রভাব পড়ছে পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের ওপর।
গবেষণা নিবন্ধের তথ্যমতে, ২০০০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ে নগরায়ণের হার বরিশালে সবচেয়ে বেশি, ৩৭ শতাংশ। এই সময়ে ময়মনসিংহে নগরায়ণের হার ছিল ১৮ শতাংশ, ঢাকায় ১৭ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১৪ শতাংশ ও রংপুরে ১৩ শতাংশ। তবে সিলেটে নগরায়ণের হার এই দুই দশকে ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ কমেছে। আর রাজশাহীতে নগরায়ণের হার কমেছে ৩ দশমিক ৭২।
এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্সেস ফ্যাকাল্টির ডিন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক আবু রেজা মো. তৌফিক ইসলাম। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে যে শহরে নগরায়ণ ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার যত বেশি, সে শহরের হিট আইল্যান্ড তত বেড়েছে, ভূপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রাও বেড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনা করে উপশহর গড়ে তোলা গেলে মূল শহরের ওপর চাপ কমবে, উষ্ণায়নও কিছুটা প্রতিরোধ করা যাবে।’
গবেষণা নিবন্ধে জানানো হয়, ১ হাজার ৪৯৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ঢাকা জেলায় ২০০০ সালে গাছপালা ও সবুজের ছায়া ছিল ৭৪৫ বর্গকিলোমিটার এলাকায়। নগরাঞ্চল ছিল ৭০৯ বর্গকিলোমিটার এলাকায়। ২০২০ সাল নাগাদ সবুজ এলাকা কমে প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। পুরোটাই গেছে নগরায়ণের পেটে।
৪ হাজার ৩৯৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ময়মনসিংহে ২০০০ সালে নগরাঞ্চলের অবকাঠামো ছিল ১ হাজার ৯৪ বর্গকিলোমিটার এলাকায়। সবুজ ছিল ৩ হাজার ১৩০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে। ২০২০ সালে এসে সবুজের পরিমাণ কমে ২ হাজার ১৮১ বর্গকিলোমিটার হয়েছে। আর নগরাঞ্চল বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ২০ বর্গকিলোমিটার এলাকায়। বরিশাল জেলায়ও এই দুই দশকে সবুজ কমে অর্ধেক হয়েছে, প্রায় ২০ গুণ বেড়েছে নগরাঞ্চল। চট্টগ্রামেও দুই দশকে নগরাঞ্চলের আয়তন প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
এই গবেষণার বিষয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত আজকের পত্রিকাকে বলেন, এ গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল নিয়ে তিনি মোটেই বিস্মিত নন। এ ধরনের গবেষণা অনেক দিন ধরেই হচ্ছে। এখন সমাধান বের করতে হবে।
নগরাঞ্চলে উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হিট আইল্যান্ড তৈরি হয় আমাদের অবিবেচনাপ্রসূত কর্মকাণ্ডের জন্যই। যেমন শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি, ইমারত নির্মাণের আইনকানুন না মানার কারণে হিট আইল্যান্ডগুলো তৈরি হচ্ছে। কাজেই হিট আইল্যান্ডের জন্য জনঘনত্ব সরাসরি দায়ী নয়, জনমানুষের আচরণ দায়ী।’ তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে কৃষিজমি ধ্বংস না করে ভারসাম্য বজায় রেখে বসতি গড়তে হবে। ভবন বা বাড়ি নির্মাণের সময় প্রচুর আলো-বাতাসের ব্যবস্থা রেখে, জায়গা উন্মুক্ত রেখে বহুতল ভবন নির্মাণ করতে হবে। যত কম জায়গা ব্যবহার করে যত বেশি বসতির ব্যবস্থা করা যায়, ততই মঙ্গল। তাহলে হিট আইল্যান্ড তৈরি হওয়ার সুযোগ থাকবে না।’
আরও পড়ুন:
দুই দশক আগেও শীত মৌসুমে দেশের শহর-নগরসহ অনেক এলাকা কুয়াশার চাদরে ঢেকে যেত। কিন্তু এখন শীত মৌসুমে শৈত্যপ্রবাহ শুরুর পরই কেবল শীতের আঁচ পাওয়া যায়। আর শীত শেষ হতেই গরমে নাভিশ্বাস অবস্থা হয়। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন যে এর জন্য দায়ী, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে স্থানীয় পর্যায়ে অপরিকল্পিত নগরায়ণও এর জন্য কম দায়ী নয়। এই উষ্ণায়ন ভৌগোলিকভাবে প্রভাব ফেলার পাশাপাশি স্বাস্থ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
কৃত্রিম উপগ্রহের তোলা ছবি বিশ্লেষণ করে গত দুই দশকে দেশের সাতটি বড় জেলায় নগরায়ণের হার ও তার প্রভাবে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। সুইজারল্যান্ডের বাসেলভিত্তিক বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী এমডিপিআইতে (মাল্টিডিসিপ্লিনারি ডিজিটাল পাবলিশিং ইনস্টিটিউট) ৪ জানুয়ারি গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে। সময়ের সঙ্গে কোনো এলাকায় ভবন, পাকা সড়কসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ও যন্ত্রচালিত যানবাহন বৃদ্ধি এবং নগরকেন্দ্রিক কার্যক্রম বৃদ্ধির হারকে নগরায়ণের হার বলে।
গবেষণাটি করেছেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাবদান একাডেমির একদল গবেষক। গবেষণায় কারিগরি সহযোগিতা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস)।
যে সাতটি জেলা শহরে নগরায়ণ ও তাপমাত্রার গতি-প্রকৃতির ওপর গবেষণাটি করা হয়েছে, সেগুলো হলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, সিলেট ও ময়মনসিংহ। এসব শহরের মধ্যে ২০০০ সাল থেকে বিগত ২০ বছরে ময়মনসিংহে উষ্ণ অঞ্চলে (আরবান হিট আইল্যান্ড) ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। আর এ সময়ে সেখানে পরিবেশের গড় বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৪ ডিগ্রির মতো। এই জেলায় হিট আইল্যান্ডের সংখ্যাও নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। এরপরই রয়েছে চট্টগ্রাম ও বরিশাল। এর মধ্যে চট্টগ্রামে হিট আইল্যান্ডের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বরিশালে বেড়েছে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায়ও বেড়েছে গড় তাপমাত্রা। তবে এই দুই দশকে রাজশাহী ও সিলেটে ভূপৃষ্ঠের গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্থিতিশীল রয়েছে।
বিজ্ঞানীদের মতে, আরবান হিট আইল্যান্ড হলো কোনো নগর বা মেট্রোপলিটন শহরের সেই এলাকা, যেখানে মানবসৃষ্ট কারণে আশপাশের এলাকার তুলনায় উষ্ণতা বেশি। ভবনের ছাদ, পিচঢালাই সড়ক কিংবা ঢালাই করা এলাকা উন্মুক্ত মাটির তুলনায় বেশি তাপ ধরে রাখে। যেসব এলাকায় গাছপালার পরিমাণ অনেক কম, ভবন-সড়কসহ বিভিন্ন অবকাঠামোর কারণে ভূপৃষ্ঠ বেশি আচ্ছাদিত এবং যন্ত্রচালিত যানবাহনের পরিমাণ বেশি, সেসব এলাকায় হিট আইল্যান্ড তৈরি হয়। এসব হিট আইল্যান্ডে দিনের তুলনায় রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য বেশি হয়।
বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, পরিবেশের উষ্ণতা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে স্বাস্থ্যের জন্য তা ঝুঁকি সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত তাপে হিট স্ট্রোক ও পানিশূন্যতা হতে পারে। এমনকি হৃদ্রোগ, শ্বাসতন্ত্রের রোগ ও রক্ত সংবহন তন্ত্রের রোগ হতে পারে। এ ছাড়া শিশু, অন্তঃসত্ত্বা নারী, বয়োবৃদ্ধরাও অতিরিক্ত তাপে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে থাকেন।
গবেষকদের ভাষ্য, ছোট এলাকায় ব্যাপক নগরায়ণ ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে পরিবেশের সবুজ ও উন্মুক্ত এলাকা কমছে। গড়ে উঠছে ভবনসহ বিভিন্ন অবকাঠামো। এ কারণে ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও বরিশালে হিট আইল্যান্ডের সংখ্যা বেড়েছে। সার্বিকভাবে এর প্রভাব পড়ছে পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের ওপর।
গবেষণা নিবন্ধের তথ্যমতে, ২০০০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ে নগরায়ণের হার বরিশালে সবচেয়ে বেশি, ৩৭ শতাংশ। এই সময়ে ময়মনসিংহে নগরায়ণের হার ছিল ১৮ শতাংশ, ঢাকায় ১৭ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১৪ শতাংশ ও রংপুরে ১৩ শতাংশ। তবে সিলেটে নগরায়ণের হার এই দুই দশকে ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ কমেছে। আর রাজশাহীতে নগরায়ণের হার কমেছে ৩ দশমিক ৭২।
এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্সেস ফ্যাকাল্টির ডিন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক আবু রেজা মো. তৌফিক ইসলাম। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে যে শহরে নগরায়ণ ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার যত বেশি, সে শহরের হিট আইল্যান্ড তত বেড়েছে, ভূপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রাও বেড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনা করে উপশহর গড়ে তোলা গেলে মূল শহরের ওপর চাপ কমবে, উষ্ণায়নও কিছুটা প্রতিরোধ করা যাবে।’
গবেষণা নিবন্ধে জানানো হয়, ১ হাজার ৪৯৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ঢাকা জেলায় ২০০০ সালে গাছপালা ও সবুজের ছায়া ছিল ৭৪৫ বর্গকিলোমিটার এলাকায়। নগরাঞ্চল ছিল ৭০৯ বর্গকিলোমিটার এলাকায়। ২০২০ সাল নাগাদ সবুজ এলাকা কমে প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। পুরোটাই গেছে নগরায়ণের পেটে।
৪ হাজার ৩৯৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ময়মনসিংহে ২০০০ সালে নগরাঞ্চলের অবকাঠামো ছিল ১ হাজার ৯৪ বর্গকিলোমিটার এলাকায়। সবুজ ছিল ৩ হাজার ১৩০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে। ২০২০ সালে এসে সবুজের পরিমাণ কমে ২ হাজার ১৮১ বর্গকিলোমিটার হয়েছে। আর নগরাঞ্চল বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ২০ বর্গকিলোমিটার এলাকায়। বরিশাল জেলায়ও এই দুই দশকে সবুজ কমে অর্ধেক হয়েছে, প্রায় ২০ গুণ বেড়েছে নগরাঞ্চল। চট্টগ্রামেও দুই দশকে নগরাঞ্চলের আয়তন প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
এই গবেষণার বিষয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত আজকের পত্রিকাকে বলেন, এ গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল নিয়ে তিনি মোটেই বিস্মিত নন। এ ধরনের গবেষণা অনেক দিন ধরেই হচ্ছে। এখন সমাধান বের করতে হবে।
নগরাঞ্চলে উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হিট আইল্যান্ড তৈরি হয় আমাদের অবিবেচনাপ্রসূত কর্মকাণ্ডের জন্যই। যেমন শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি, ইমারত নির্মাণের আইনকানুন না মানার কারণে হিট আইল্যান্ডগুলো তৈরি হচ্ছে। কাজেই হিট আইল্যান্ডের জন্য জনঘনত্ব সরাসরি দায়ী নয়, জনমানুষের আচরণ দায়ী।’ তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে কৃষিজমি ধ্বংস না করে ভারসাম্য বজায় রেখে বসতি গড়তে হবে। ভবন বা বাড়ি নির্মাণের সময় প্রচুর আলো-বাতাসের ব্যবস্থা রেখে, জায়গা উন্মুক্ত রেখে বহুতল ভবন নির্মাণ করতে হবে। যত কম জায়গা ব্যবহার করে যত বেশি বসতির ব্যবস্থা করা যায়, ততই মঙ্গল। তাহলে হিট আইল্যান্ড তৈরি হওয়ার সুযোগ থাকবে না।’
আরও পড়ুন:
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৬ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৬ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৬ দিন আগে