নৌকায় ভোট না দিলে অঘটন

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি 
প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২১, ০৭: ৩৪
আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২১, ১৬: ০২

নৌকা প্রতীকের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের সাবেক সাংসদ রেজাউল হক চৌধুরী। যিনি সাংসদ হিসেবে স্বতন্ত্র প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। একই ধরনের বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ তাঁর একাধিক স্বজনের বিরুদ্ধে। আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ভোটে নৌকায় প্রকাশ্যে সিল মারতে বলেছেন তিনি। এভাবে যারা ভোট দেবেন না তাদের ভোটকেন্দ্র না আসার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে আড়িয়া ইউনিয়নে একটি সভার তিনি এমন বক্তব্য দেন।

শুধু রেজাউল হক চৌধুরীই নন বরং দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা শরীফ উদ্দিন রিমন ও তাঁর ছেলে ইমরান চৌধুরী কলিন্সও স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তাদের ভোটারদের হুঁশিয়ারি ও হুমকি দিয়েছেন।

উপজেলার রিফায়েতপুর ইউনিয়নে ১৮ নভেম্বর শরীফ উদ্দিন রিমনের ছেলে ইমরান চৌধুরী (কলিন্স) বক্তৃতায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘রক্তের খেলা বন্ধ হবে না। ভোট সেন্টারে যেতেও পারবেন না।’ একইভাবে ২১ নভেম্বর রাতে একটি সভায় সাংবাদিকেরা যেন তাদের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধাচরণ না করে সে উদ্দেশ্যে নেতিবাচক ও ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য দেন তিনি।

আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর প্রচারে আড়িয়ার সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক সাংসদ রেজাউল হক চৌধুরী বলেন, ‘২৮ তারিখে ভোট হবে। সেই ভোটের দিনে মেম্বার ভাইয়েরা আছেন, তাঁদের আমি অনুরোধ করব, আপনারা প্রকাশ্যে নৌকায় ভোট মারবেন। তারপর আপনারা আপনার মেম্বারের ভোট গোপনে ব্যালট পেপারে মারবেন। যারা মারবেন না, তাঁরা কেন্দ্রে যাবেন না।’

এ সময় সেখানে দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শরীফ উদ্দিন রিমন, কুষ্টিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, আড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী সাঈদ আনসারী বিপ্লবসহ দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

রেজাউল হক চৌধুরী ১৩ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের সেই বক্তব্য স্থানীয় অনেকই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার করেন। এই বক্তব্যের কপি আজকের পত্রিকার হাতে রয়েছে। বক্তব্যে রেজাউল হক চৌধুরী উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে প্রকাশ্যে নৌকায় ভোট দেওয়ার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নৌকার বাইরে কোথাও ভোট দিলে নেতা–কর্মীরা অঘটন ঘটাবে বলেও হুমকি দেন তিনি।

একই সভায় দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরীফ উদ্দিন রিমন বলেন, ‘ভোট নৌকার বাইরে যাবে না। যদি কেউ নৌকার বাইরে ভোট দিতে চান, সেন্টারে যাবেন না। আর সেন্টারে গেলে প্রকাশ্যে টেবিলে নৌকায় ভোট দিতে হবে। এর বিকল্প কিছু আছে? নাই।’

এদিকে তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে আড়িয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে নির্বাচন করছেন সাঈদ আনসারী বিপ্লব। দলের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মোটরসাইকেল প্রতীকে আছেন হেলাল উদ্দীন।

হেলাল উদ্দীন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতারা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে নির্বাচন নিয়ে ভয় ও শঙ্কায় আছি। ভোটাররাও ভয় পাচ্ছেন।’

আসন্ন ইউপি নির্বাচন ঘিরে উপজেলা আওয়ামী লীগের আলোচ্য তিন ব্যক্তির প্রকাশ্যে হুমকি, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন, গণতান্ত্রিক চর্চায় হুমকি দিয়ে পার পেয়ে যাওয়ার অভিযোগ করছেন বিদ্রোহী প্রার্থীসহ এলাকার সাধারণ ভোটাররা। এমন ঘটনায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।

এদিকে, গত এক সপ্তাহের মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই দু-একটি নির্বাচনী সহিংসতার খবর এলেও বুধবার সকাল পর্যন্ত দৌলতপুর থানায় এ সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা ৬টি। ৬ মামলায় গ্রেপ্তার ও আটক হয়েছেন ৩ জন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত