দুস্থদের চাল ও গণপ্রতিরোধ

প্রকাশ : ২২ জুন ২০২৩, ০৯: ৫০
আপডেট : ২২ জুন ২০২৩, ০৯: ৫০

গরিব-দুস্থদের চাল পাচার করেছেন চেয়ারম্যান; কিন্তু স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা পাচার করা চাল জব্দ করে বঞ্চিত-দুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করেছে। ঘটনাটি আমাদের মধ্যে আশার সঞ্চার করতে পারে। মানুষ যখন বারবার বঞ্চিত হতে থাকে, তখন একসময় ঠিকই দাঁড়িয়ে যায় ক্ষমতার অপব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নে। এই ঈদে সরকারের দেওয়া বিশেষ বরাদ্দের ভিজিএফের ৬০০ কেজি চাল গরিব, দুস্থ ও নিরন্ন মানুষের জন্য বরাদ্দ পেয়েছিল ওই ইউনিয়ন পরিষদ। তিন দিন ধরে ওই ইউনিয়ন পরিষদে ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হচ্ছিল। এতে অনেক প্রকৃত দুস্থ মানুষ স্লিপ না পাওয়ায় তাঁরা তাঁদের জন্য বরাদ্দ করা চাল পাননি। চেয়ারম্যান-মেম্বারের বাড়িসহ পরিষদ চত্বরে এসে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধরনা দিয়েও খালি হাতে বাড়ি ফিরেছেন অসহায় অনেক নারী ও বৃদ্ধ।

স্থানীয়রা জানতে পারেন যে প্রকৃত দরিদ্রদের বঞ্চিত করে দলীয় লোক, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি, চেয়ারম্যান-মেম্বারদের আত্মীয়স্বজন ও কর্মীদের এ চাল দেওয়া হয়েছে। আর সেই চাল তাঁরা পাইকারের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। পাইকাররা সেই সব স্লিপের চাল কিনে নিয়ে গোপনে পাচার করছিলেন। বিক্ষুব্ধ জনতা টের পেয়ে চালগুলো জব্দ করেন। 

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বাররা জনসাধারণের ভোটে নির্বাচিত হন। তাই তাঁদের প্রথমত জবাবদিহি থাকার কথা স্থানীয় ইউনিয়নের জনসাধারণের কাছে। কিন্তু আমাদের দেশে জবাবদিহির বিষয়টি ক্ষয় হতে হতে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। আবার আমাদের দেশে যে নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, সেই ব্যবস্থায় ভোটারদের ভোটের দরকার পড়ে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকারি দলের লোকেরা মনোনয়ন পেলে, তাঁদের জয় ঠেকানোর কোনো উপায় থাকে না। এ কারণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহির বিষয়টি দুর্বল অবস্থায় দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।

ওই ইউনিয়নের বিক্ষুব্ধ জনতা এ ঘটনায় প্রশাসনকে অবহিত করার পরেও এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। স্থানীয় প্রশাসনের গাফিলতি এ ঘটনায় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আর এসবের অবহেলার কারণে অনিয়ম, দুর্নীতির সীমা লঙ্ঘিত হচ্ছে। যদিও অভিযুক্ত চেয়ারম্যান এ ঘটনা অস্বীকার করে অভিযোগ করেছেন, বিরোধী গ্রুপ তাঁকে ফাঁসানোর জন্য এ ঘটনা ঘটিয়েছে। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা কী—তা জানতে হলে তো তদন্ত করতে হবে। তাহলেই প্রকৃত ঘটনা উদ্‌ঘাটন হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধে জরুরি হলো জবাবদিহি নিশ্চিত করা। কিন্তু তা না করার কারণে এসব ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাঝখান থেকে যাঁদের জন্য সরকারি চাল বরাদ্দ করা হয়, তাঁরা তা না পেয়ে বঞ্চিতই থাকেন। এ জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। এ ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এ ঘটনায় জনতার প্রতিরোধের ব্যাপারটি আশান্বিত করতে পারে। সব জায়গায় যদি এ রকম ঘটনা ঘটে, তাহলে দুর্নীতিবাজ জনপ্রতিনিধিরা আর দুস্থ মানুষের চাল আত্মসাৎ করার সাহস পাবেন না। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা জরুরি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত