মোনায়েম সরকার
পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে সরে গিয়ে বিশ্বব্যাংক যে ভুল করেছিল, সেটা তারাও নিশ্চয় এখন উপলব্ধি করতে পারছে। মহলবিশেষের প্ররোচনাতেই এটি ঘটেছিল। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরে যাওয়ায় আরও কয়েকটি উন্নয়ন-সহযোগী সংস্থা তাকে অনুসরণ করে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন প্রত্যয়ের সঙ্গে ঘোষণা করেন, নিজেদের অর্থেই আমরা পদ্মা সেতু বানাব। সেই সেতু এখন বাস্তবতা। এতে ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। তাতে করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ও বন্দরনগরীর যোগাযোগ সহজ হয়েছে। খরচ কমছে। সময়ও বেঁচে যাচ্ছে অনেক। এত দিন ধরে অবহেলিত, বিশেষত দক্ষিণের জেলাগুলোতে বিনিয়োগ বাড়তে শুরু করেছে। কাজের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এতে বাড়বে আয়। আঞ্চলিক বৈষম্য কমবে।
মাত্র কদিন আগে আমি ঘনিষ্ঠ কয়েকজনসহ পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর সমাধি কমপ্লেক্সে গিয়েছি। যাতায়াতের এত সুন্দর ব্যবস্থা দেখে আমরা অভিভূত। গর্বিতও হয়েছি এ জন্য যে, এত বাধাবিপত্তির মুখেও পদ্মা সেতু করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। নানা কারণে এতে খরচ হয়তো বেড়েছে; কিন্তু একটি বড় কাজ হয়ে গেছে দেশের মানুষের জন্য। এর সুফল দলমত-নির্বিশেষে সবাই পাবে। সম্প্রতি সংবাদপত্রে খবর দেখলাম, রোজ পদ্মা সেতুতে গড়ে টোল আদায় হচ্ছে ২ কোটি টাকার বেশি। এভাবে টোল আদায় বাড়তে থাকলে এর পেছনে করা খরচ তুলতেও বেশি দিন লাগবে না। সমাজ-অর্থনীতিতে সেতুর প্রভাব পড়বে এর বহুগুণ বেশি।
পদ্মা সেতুর প্রসঙ্গটি নতুন করে মাথায় এল ৩ মের সংবাদপত্রে একটি ছবি দেখে। এতে দেখা যাচ্ছে, ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে এর প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাসের হাতে পদ্মা সেতুর একটি বাঁধাই করা ছবি তুলে দিচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের অংশীদারত্বের ৫০ বছর উদ্যাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী এখন যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। এর আগে তিনি বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু দেশ বলে বিবেচিত জাপান সফর শেষ করেছেন। এর নানা অর্জনের দিকও আলোচিত হচ্ছে। এরপর সর্ববৃহৎ উন্নয়ন-সহযোগী বলে পরিচিত বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক উদ্যাপন অনুষ্ঠানে তাঁর অংশগ্রহণের ঘটনাও স্বভাবতই আলোচিত হবে। সেখানে এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলতে ভোলেননি যে, ‘বাইরের চাপে’ বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরে গিয়েছিল বিশ্বব্যাংক।
অথচ সেই ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের সদস্য। একের পর এক এই সংস্থা থেকে ঋণ পেয়ে তা বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় করছে বাংলাদেশ। সময়মতো ঋণ পরিশোধও করে যাচ্ছে সুদসহ। ওয়াশিংটনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী উচ্চকণ্ঠে বলেছেন, বাংলাদেশ কখনো ঋণের ফাঁদে পড়েনি। ঋণ পরিশোধে কখনো ব্যর্থ হয়নি। উন্নয়ন-সহযোগীদের পক্ষ থেকেও বাংলাদেশের প্রশংসা করে এটা বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের রাজধানীতে এই মুহূর্তে অপর বৃহৎ উন্নয়ন-সহযোগী সংস্থা আইএমএফের একটি মিশন অবস্থান করছে। তারা ইতিমধ্যে বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলারের একটি ঋণ প্রদান শুরু করেছে। এর দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে তারা নানা বিষয় পর্যালোচনা করতে এখানে এসেছে। সরকারের বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করে ওই সব বিষয়ে কিছু পরামর্শের কথাও তারা জানাচ্ছে। কিন্তু এটা কেউ বলছে না যে, বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়া হলে দেশটি তা পরিশোধ করতে পারবে না। বাংলাদেশ বিষয়ে যারা অপপ্রচার চালিয়ে থাকে, তারা কিন্তু প্রচার করেছিল—আইএমএফের ঋণ এই সরকার পাবে না। তা সত্য হয়নি।
আমরা লক্ষ করলাম, বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশের সম্পর্ক উদ্যাপন অনুষ্ঠানে নতুন করে একটি ঋণচুক্তি হলো, যার আওতায় প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকার সহায়তা আমরা পাব। এর সুদের হার, গ্রেস পিরিয়ড ইত্যাদি সম্পর্কে যা জানা গেল, তাতে বলা যায় এটা বাংলাদেশের জন্য লাভজনক। সে জন্যই দুঃখ করে বলতে হয়, পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের মতো সংস্থা তার প্রতিশ্রুতিমতো সম্পৃক্ত থাকলে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা আমাদের জন্য সহজতর হতো। কিন্তু বাংলাদেশ তো দমে যাওয়ার মতো দেশ নয়। বিশেষত বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা যখন সরকারপ্রধান হিসেবে থাকেন, তখন তাকে দমানো কঠিন। বাধা অতিক্রম করতে এই দেশ তখন প্রত্যয়ী। তার প্রমাণ আজকের পদ্মা সেতু। তাতে ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা যুক্ত হওয়ায় দেশজুড়ে রেল যোগাযোগেও বড় অগ্রগতি আসবে। এমন একটি প্রকল্পে যুক্ত থাকতে না পারাটা বিশ্বব্যাংকের ভাবমূর্তির জন্যও ভালো হয়নি। এই প্রকল্পে ‘দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের’ যে অভিযোগ আনা হয়েছিল, দেশে-বিদেশে কোথাও তা প্রমাণ করতে না পেরে চক্রান্তকারীরাও ইতিমধ্যে গা ঢাকা দিয়েছে। তাদের মুখে আর রা নেই। বিশ্বব্যাংকও সম্ভবত অনুতপ্ত।
ওয়াশিংটনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের প্রধান যে বক্তব্য রেখেছেন, তাতে আছে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির প্রশংসা। বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ দেশের অর্জন থেকে অনেকের শেখার আছে বলে মনে করেন তিনি। ‘রেকর্ড সময়ের মধ্যে দারিদ্র্য হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়ন, দেশব্যাপী বিদ্যুতায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উদ্ভাবনী প্রযুক্তির জন্য স্বতন্ত্র’—এমন মন্তব্য করেছেন তিনি। গত ছয়-সাত বছরে দারিদ্র্য হ্রাসে বাংলাদেশ যে অনেক এগিয়েছে, তা বিবিএসের সম্প্রতি প্রকাশিত জরিপের তথ্যে স্পষ্ট। বর্তমান সরকারের আমলে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অগ্রগতিও উল্লেখযোগ্য। এই সুবাদে নারীর ক্ষমতায়ন আরও জোরদার হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে এই সরকারের অর্জন বিরাট। আমরা এখন প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। হয়তো সময়ে-সময়ে কিছু সংকট সৃষ্টি হয় বিভিন্ন কারণে। তবে আশা করা যায়, এই খাতে আমরা দ্রুতই টেকসই অগ্রগতি লাভ করব। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় দেখভাল করছেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। দেশের সর্বস্তরের মানুষের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে তাঁর সরকার বিদ্যুৎ আমদানির মতো সাহসী পদক্ষেপও নিয়েছে। সমালোচনা করা সহজ, কিন্তু বিপুলসংখ্যক মানুষের জরুরি চাহিদা সময়মতো পূরণের ব্যবস্থা করা মোটেও সহজ নয়। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর জন্য রয়েছে দেশের উন্নয়নকামী মানুষের শুভেচ্ছা।
বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের ৫০ বছরের সম্পর্ক উদ্যাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের জোরালো অংশগ্রহণ শুধু দেশের মানুষ নয়, বিশ্ববাসীকেও একটি বার্তা দিচ্ছে। সেটি হলো বঙ্গবন্ধুর সেই উক্তি, ‘বাংলাদেশ এসেছে, বাংলাদেশ থাকবে।’ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘটনায় এই প্রত্যয় আরও জোরালো হয়েছে। সেতুটি নির্মাণ ঘিরে বিশ্বব্যাংকসহ উন্নয়ন-সহযোগীদের সঙ্গে সম্পর্কের যেটুকু অবনতি হয়েছিল, তা-ও বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। সত্যি বলতে, ওই সময় থেকে আমাদের বিভিন্ন প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ভূমিকা আরও বেড়েছে। অন্যান্য উন্নয়ন-সহযোগী সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কের বেলায়ও এ কথা সত্য। এর কারণ এটা নয় যে, তারা মহানুভব। এর কারণ হলো, বাংলাদেশ তাদের ঋণ সহায়তা পাওয়ার যোগ্য। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের মতো সংস্থাকে বাংলাদেশের মতো দেশকে ঋণ দিতে খুব চিন্তা করতে হয় না। ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশকে তেমন ছাড়ও নিতে হয়নি কখনো।
২০২৬ সাল নাগাদ স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের স্তরে উন্নীত হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে উন্নয়ন-সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশের পাশে থাকার অত্যন্ত যৌক্তিক আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের সময় বাংলাদেশ কীভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে এবং পিছিয়ে গেছে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের কারণে, সে ইতিহাসও তিনি তুলে ধরেছেন ওয়াশিংটনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে। ইত্যবসরে এ দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি অবশ্য এতটাই ত্বরান্বিত হয়েছে যে, একটি মর্যাদাপূর্ণ দেশের কাতারে উঠে যাওয়াটা আর কঠিন কিছু নয়। মানবজাতির বড় বিপদ হয়ে আসা করোনা মহামারি মোকাবিলায়ও বাংলাদেশ সাফল্য দেখিয়েছে। এ জন্য পশ্চিমাদেরও প্রশংসা অর্জন করেছে সরকার। অথচ যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু দেশ এটি মোকাবিলা করতে গিয়ে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারের দক্ষ ব্যবস্থাপনায় করোনার মধ্যেও এখানে সবকিছু মোটামুটি সচল রাখার চেষ্টা করা হয়। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তাও জোগানো হয়েছিল। এরপর ইউক্রেন যুদ্ধে সারা দুনিয়ায় যে সংকট দেখা দিয়েছে, সেটাও ঠান্ডা মাথায় মোকাবিলা করা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতিতে অনেক দেশ যখন হিমশিম খাচ্ছে, তখন বাংলাদেশে এটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। তার আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন নেই। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে যাতে বড় কোনো ঘাটতি না হয়, সে জন্যও চেষ্টার বিরাম নেই। প্রবাসী আয় ও রপ্তানি স্বাভাবিক রাখতে চাইছে সরকার। বিনিয়োগ বাড়িয়ে কর্মসংস্থান স্বাভাবিক রাখতে চাইছে। ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের কয়েকটি খাত উল্লেখ করে তাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বানও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা এই আশাও করব, পদ্মা সেতু প্রকল্প ঘিরে সৃষ্ট তিক্ততা পেছনে ফেলে বিশ্বব্যাংকের মতো সংস্থা এই পথযাত্রায় বাংলাদেশের পাশেই থাকবে।
পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে সরে গিয়ে বিশ্বব্যাংক যে ভুল করেছিল, সেটা তারাও নিশ্চয় এখন উপলব্ধি করতে পারছে। মহলবিশেষের প্ররোচনাতেই এটি ঘটেছিল। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরে যাওয়ায় আরও কয়েকটি উন্নয়ন-সহযোগী সংস্থা তাকে অনুসরণ করে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন প্রত্যয়ের সঙ্গে ঘোষণা করেন, নিজেদের অর্থেই আমরা পদ্মা সেতু বানাব। সেই সেতু এখন বাস্তবতা। এতে ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। তাতে করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ও বন্দরনগরীর যোগাযোগ সহজ হয়েছে। খরচ কমছে। সময়ও বেঁচে যাচ্ছে অনেক। এত দিন ধরে অবহেলিত, বিশেষত দক্ষিণের জেলাগুলোতে বিনিয়োগ বাড়তে শুরু করেছে। কাজের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এতে বাড়বে আয়। আঞ্চলিক বৈষম্য কমবে।
মাত্র কদিন আগে আমি ঘনিষ্ঠ কয়েকজনসহ পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর সমাধি কমপ্লেক্সে গিয়েছি। যাতায়াতের এত সুন্দর ব্যবস্থা দেখে আমরা অভিভূত। গর্বিতও হয়েছি এ জন্য যে, এত বাধাবিপত্তির মুখেও পদ্মা সেতু করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। নানা কারণে এতে খরচ হয়তো বেড়েছে; কিন্তু একটি বড় কাজ হয়ে গেছে দেশের মানুষের জন্য। এর সুফল দলমত-নির্বিশেষে সবাই পাবে। সম্প্রতি সংবাদপত্রে খবর দেখলাম, রোজ পদ্মা সেতুতে গড়ে টোল আদায় হচ্ছে ২ কোটি টাকার বেশি। এভাবে টোল আদায় বাড়তে থাকলে এর পেছনে করা খরচ তুলতেও বেশি দিন লাগবে না। সমাজ-অর্থনীতিতে সেতুর প্রভাব পড়বে এর বহুগুণ বেশি।
পদ্মা সেতুর প্রসঙ্গটি নতুন করে মাথায় এল ৩ মের সংবাদপত্রে একটি ছবি দেখে। এতে দেখা যাচ্ছে, ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে এর প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাসের হাতে পদ্মা সেতুর একটি বাঁধাই করা ছবি তুলে দিচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের অংশীদারত্বের ৫০ বছর উদ্যাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী এখন যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। এর আগে তিনি বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু দেশ বলে বিবেচিত জাপান সফর শেষ করেছেন। এর নানা অর্জনের দিকও আলোচিত হচ্ছে। এরপর সর্ববৃহৎ উন্নয়ন-সহযোগী বলে পরিচিত বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক উদ্যাপন অনুষ্ঠানে তাঁর অংশগ্রহণের ঘটনাও স্বভাবতই আলোচিত হবে। সেখানে এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলতে ভোলেননি যে, ‘বাইরের চাপে’ বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরে গিয়েছিল বিশ্বব্যাংক।
অথচ সেই ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের সদস্য। একের পর এক এই সংস্থা থেকে ঋণ পেয়ে তা বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় করছে বাংলাদেশ। সময়মতো ঋণ পরিশোধও করে যাচ্ছে সুদসহ। ওয়াশিংটনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী উচ্চকণ্ঠে বলেছেন, বাংলাদেশ কখনো ঋণের ফাঁদে পড়েনি। ঋণ পরিশোধে কখনো ব্যর্থ হয়নি। উন্নয়ন-সহযোগীদের পক্ষ থেকেও বাংলাদেশের প্রশংসা করে এটা বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের রাজধানীতে এই মুহূর্তে অপর বৃহৎ উন্নয়ন-সহযোগী সংস্থা আইএমএফের একটি মিশন অবস্থান করছে। তারা ইতিমধ্যে বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলারের একটি ঋণ প্রদান শুরু করেছে। এর দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে তারা নানা বিষয় পর্যালোচনা করতে এখানে এসেছে। সরকারের বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করে ওই সব বিষয়ে কিছু পরামর্শের কথাও তারা জানাচ্ছে। কিন্তু এটা কেউ বলছে না যে, বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়া হলে দেশটি তা পরিশোধ করতে পারবে না। বাংলাদেশ বিষয়ে যারা অপপ্রচার চালিয়ে থাকে, তারা কিন্তু প্রচার করেছিল—আইএমএফের ঋণ এই সরকার পাবে না। তা সত্য হয়নি।
আমরা লক্ষ করলাম, বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশের সম্পর্ক উদ্যাপন অনুষ্ঠানে নতুন করে একটি ঋণচুক্তি হলো, যার আওতায় প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকার সহায়তা আমরা পাব। এর সুদের হার, গ্রেস পিরিয়ড ইত্যাদি সম্পর্কে যা জানা গেল, তাতে বলা যায় এটা বাংলাদেশের জন্য লাভজনক। সে জন্যই দুঃখ করে বলতে হয়, পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের মতো সংস্থা তার প্রতিশ্রুতিমতো সম্পৃক্ত থাকলে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা আমাদের জন্য সহজতর হতো। কিন্তু বাংলাদেশ তো দমে যাওয়ার মতো দেশ নয়। বিশেষত বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা যখন সরকারপ্রধান হিসেবে থাকেন, তখন তাকে দমানো কঠিন। বাধা অতিক্রম করতে এই দেশ তখন প্রত্যয়ী। তার প্রমাণ আজকের পদ্মা সেতু। তাতে ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা যুক্ত হওয়ায় দেশজুড়ে রেল যোগাযোগেও বড় অগ্রগতি আসবে। এমন একটি প্রকল্পে যুক্ত থাকতে না পারাটা বিশ্বব্যাংকের ভাবমূর্তির জন্যও ভালো হয়নি। এই প্রকল্পে ‘দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের’ যে অভিযোগ আনা হয়েছিল, দেশে-বিদেশে কোথাও তা প্রমাণ করতে না পেরে চক্রান্তকারীরাও ইতিমধ্যে গা ঢাকা দিয়েছে। তাদের মুখে আর রা নেই। বিশ্বব্যাংকও সম্ভবত অনুতপ্ত।
ওয়াশিংটনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের প্রধান যে বক্তব্য রেখেছেন, তাতে আছে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির প্রশংসা। বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ দেশের অর্জন থেকে অনেকের শেখার আছে বলে মনে করেন তিনি। ‘রেকর্ড সময়ের মধ্যে দারিদ্র্য হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়ন, দেশব্যাপী বিদ্যুতায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উদ্ভাবনী প্রযুক্তির জন্য স্বতন্ত্র’—এমন মন্তব্য করেছেন তিনি। গত ছয়-সাত বছরে দারিদ্র্য হ্রাসে বাংলাদেশ যে অনেক এগিয়েছে, তা বিবিএসের সম্প্রতি প্রকাশিত জরিপের তথ্যে স্পষ্ট। বর্তমান সরকারের আমলে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অগ্রগতিও উল্লেখযোগ্য। এই সুবাদে নারীর ক্ষমতায়ন আরও জোরদার হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে এই সরকারের অর্জন বিরাট। আমরা এখন প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। হয়তো সময়ে-সময়ে কিছু সংকট সৃষ্টি হয় বিভিন্ন কারণে। তবে আশা করা যায়, এই খাতে আমরা দ্রুতই টেকসই অগ্রগতি লাভ করব। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় দেখভাল করছেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। দেশের সর্বস্তরের মানুষের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে তাঁর সরকার বিদ্যুৎ আমদানির মতো সাহসী পদক্ষেপও নিয়েছে। সমালোচনা করা সহজ, কিন্তু বিপুলসংখ্যক মানুষের জরুরি চাহিদা সময়মতো পূরণের ব্যবস্থা করা মোটেও সহজ নয়। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর জন্য রয়েছে দেশের উন্নয়নকামী মানুষের শুভেচ্ছা।
বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের ৫০ বছরের সম্পর্ক উদ্যাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের জোরালো অংশগ্রহণ শুধু দেশের মানুষ নয়, বিশ্ববাসীকেও একটি বার্তা দিচ্ছে। সেটি হলো বঙ্গবন্ধুর সেই উক্তি, ‘বাংলাদেশ এসেছে, বাংলাদেশ থাকবে।’ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘটনায় এই প্রত্যয় আরও জোরালো হয়েছে। সেতুটি নির্মাণ ঘিরে বিশ্বব্যাংকসহ উন্নয়ন-সহযোগীদের সঙ্গে সম্পর্কের যেটুকু অবনতি হয়েছিল, তা-ও বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। সত্যি বলতে, ওই সময় থেকে আমাদের বিভিন্ন প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ভূমিকা আরও বেড়েছে। অন্যান্য উন্নয়ন-সহযোগী সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কের বেলায়ও এ কথা সত্য। এর কারণ এটা নয় যে, তারা মহানুভব। এর কারণ হলো, বাংলাদেশ তাদের ঋণ সহায়তা পাওয়ার যোগ্য। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের মতো সংস্থাকে বাংলাদেশের মতো দেশকে ঋণ দিতে খুব চিন্তা করতে হয় না। ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশকে তেমন ছাড়ও নিতে হয়নি কখনো।
২০২৬ সাল নাগাদ স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের স্তরে উন্নীত হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে উন্নয়ন-সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশের পাশে থাকার অত্যন্ত যৌক্তিক আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের সময় বাংলাদেশ কীভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে এবং পিছিয়ে গেছে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের কারণে, সে ইতিহাসও তিনি তুলে ধরেছেন ওয়াশিংটনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে। ইত্যবসরে এ দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি অবশ্য এতটাই ত্বরান্বিত হয়েছে যে, একটি মর্যাদাপূর্ণ দেশের কাতারে উঠে যাওয়াটা আর কঠিন কিছু নয়। মানবজাতির বড় বিপদ হয়ে আসা করোনা মহামারি মোকাবিলায়ও বাংলাদেশ সাফল্য দেখিয়েছে। এ জন্য পশ্চিমাদেরও প্রশংসা অর্জন করেছে সরকার। অথচ যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু দেশ এটি মোকাবিলা করতে গিয়ে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারের দক্ষ ব্যবস্থাপনায় করোনার মধ্যেও এখানে সবকিছু মোটামুটি সচল রাখার চেষ্টা করা হয়। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তাও জোগানো হয়েছিল। এরপর ইউক্রেন যুদ্ধে সারা দুনিয়ায় যে সংকট দেখা দিয়েছে, সেটাও ঠান্ডা মাথায় মোকাবিলা করা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতিতে অনেক দেশ যখন হিমশিম খাচ্ছে, তখন বাংলাদেশে এটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। তার আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন নেই। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে যাতে বড় কোনো ঘাটতি না হয়, সে জন্যও চেষ্টার বিরাম নেই। প্রবাসী আয় ও রপ্তানি স্বাভাবিক রাখতে চাইছে সরকার। বিনিয়োগ বাড়িয়ে কর্মসংস্থান স্বাভাবিক রাখতে চাইছে। ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের কয়েকটি খাত উল্লেখ করে তাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বানও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা এই আশাও করব, পদ্মা সেতু প্রকল্প ঘিরে সৃষ্ট তিক্ততা পেছনে ফেলে বিশ্বব্যাংকের মতো সংস্থা এই পথযাত্রায় বাংলাদেশের পাশেই থাকবে।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে