ডিসেম্বরের শীত উপেক্ষা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ সেজেছে বর্ণিল সাজে। নবীন-প্রবীণ শিল্পীদের চিত্রকর্ম বিক্রি হচ্ছে খুব অল্প দামে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিজেদের শিল্পকর্মের পসরা নিয়ে এখানে এসেছেন ২৭ জন লোকশিল্পী। সেই সঙ্গে এসেছেন বায়স্কোপওয়ালা। ভবনের বারান্দা, বকুলতলাসহ বিভিন্ন জায়গায় মানুষের ভিড়। বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পকলার পথিকৃৎ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ১০৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে চারুকলা অনুষদে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী জয়নুল মেলা।

গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। উদ্বোধনের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন স্তরের দর্শনার্থীরা ঘুরে ঘুরে দেখেন মূল আয়োজন।

জয়নুল উৎসবে সন্তান নিয়ে ঘুরতে আসেন উত্তরার বাসিন্দা ফাতেমা কলি। ফাতেমা বলেন, ‘জয়নুল উৎসবে ঘুরে ঘুরে প্রদর্শনী দেখলাম। আমার খুব ভালো লেগেছে। সন্তানদের বিষয়গুলোর সঙ্গে পরিচয় করানোর চেষ্টা করছি। আমার সন্তান যেন শিল্প-সংস্কৃতিকে ভালোবাসে এবং সেগুলোর সংস্পর্শে থাকে সেভাবে তাকে গড়ে তুলছি।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘শিল্পীরা তাঁদের শিল্পকর্মের মাধ্যমে শুধু সৌন্দর্যই সৃষ্টি করেন না। বরং জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। আমাদের সব আন্দোলন-সংগ্রামে শিল্পীদের অনবদ্য অবদান রয়েছে।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিল্পচর্চার এই প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, শোষণহীন ও সংস্কৃতিমনা সমাজ বিনির্মাণে শিল্পাচার্য যে অনন্য অবদান রেখে গেছেন, তা নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা জোগাবে বলে আশা প্রকাশ করেন ডা. দীপু মনি।

সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছেন। তাঁর হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ অনেক খ্যাতনামা শিল্পীর জন্ম দিয়েছে এবং দেশের শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলছে। শিল্পচর্চার মাধ্যমে বাঙালি সংস্কৃতি ও জাতিসত্তার স্বতন্ত্র পরিচয় ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় তাঁর অনন্য অবদান মানুষ সব সময় শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিল্পকলায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের অধ্যাপক এমদাদুল হক মো. মতলুব আলী এবং শিল্পী শহিদ কবীরকে ‘জয়নুল সম্মাননা-২০২২’ দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিশ্বভারতীর কলাভবনের অধ্যাপক রমন শিবকুমার সম্মাননা গ্রহণ করেছেন।

অন্যদিকে জয়নুল গ্যালারিতে চলছে বিশ্বভারতীর ছাত্রদের সংগঠন এসএসবিএডি শিল্পীদের প্রদর্শনী। তিন দিনব্যাপী জয়নুল উৎসব প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে সবার জন্য।

উৎসব উদ্বোধনের আগে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান শিল্পাচার্যের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক এস এম রেজাউল করিম, চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন এবং শিল্পাচার্য-পুত্র প্রকৌশলী ময়নুল আবেদিন বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।