চবির নিরাপত্তাপ্রহরীরাই ভুগছেন নিরাপত্তাহীনতায়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২২, ১০: ০১
Thumbnail image

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাপ্রহরীরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ না থাকা, শারীরিক ফিটনেসের অভাবের পাশাপাশি অস্ত্র ছাড়া দায়িত্ব পালন করায় তাঁদের নিরাপত্তাহীন করে তুলেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, দায়িত্ব পালনকালে মাঝেমধ্যে নিরাপত্তাপ্রহরীদের মারধরের শিকার হতে হয়। গত বছরের জুলাইয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নম্বর ফটক বন্ধ রাখায় কর্তব্যরত নিরাপত্তাপ্রহরীকে মারধর করেন ছাত্রলীগের এক নেতা। জুনে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ভবন নির্মাণ, মেরামত ও সংস্কারকাজে দুর্বৃত্তরা দফায় দফায় হামলা চালায়। তাতে বাধা দিতে গেলে নিরাপত্তাপ্রহরী ও আনসার সদস্যদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে তাঁদের হেনস্তা করা হয়।

নিরাপত্তাপ্রহরীরা জানান, এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে।

অভিযোগ আছে, নিরাপত্তাপ্রহরী নিয়োগে শারীরিক ফিটনেসসহ প্রয়োজনীয় যোগ্যতার চেয়ে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। তাঁরা এলাকার প্রভাব খাটিয়ে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন না।

নিরাপত্তা দপ্তর সূত্র জানায়, ২ হাজার ১০০ একরের সুবিশাল ক্যাম্পাসের নিরাপত্তায় স্থায়ী প্রহরী রয়েছেন মাত্র ১৩৪ জন। অস্ত্রের প্রশিক্ষণ আছে মাত্র ১০ জনের। এ ছাড়া ৭০ জন আনসার ও ৭৪ জন জি-ফোর গ্রুপের কর্মী ক্যাম্পাসের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছেন। এ দুই সংস্থার সদস্যদের প্রশিক্ষণ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাপ্রহরীদের কোনো প্রশিক্ষণ নেই। অন্যদিকে নিরাপত্তা দপ্তরের অস্ত্রাগারে পর্যাপ্ত অস্ত্র মজুত থাকা সত্ত্বেও ব্যবহার করা হচ্ছে না। যে কারণে বেশ কিছু অস্ত্র ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গত বছর এসব অস্ত্র জেলা প্রশাসনে জমা দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শেখ মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘অস্ত্রাগারে পর্যাপ্ত অস্ত্র থাকলেও মাত্র ১০ জনের মতো অস্ত্রধারী প্রহরী আছেন। শিগগিরই আমরা আরও ২০-২৫ জনকে প্রশিক্ষণ দেব। আগে প্রশিক্ষণ দেওয়া না হলেও আমরা আবার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর নিরাপত্তা দপ্তরকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনার চেষ্টা করেছি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়তনের তুলনায় আমাদের প্রহরীর সংখ্যা অপ্রতুল।’

ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও দুর্গম জায়গা ঘুরে দেখা গেছে, প্রহরীরা দায়িত্বে থাকা অবস্থায় মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকছেন। কেউবা ইউটিউব দেখছেন, কেউ গেমস খেলছেন। আবার কাউকে কাউকে দায়িত্ব চলাকালীন পর্দা টানিয়ে ঘুমাতেও দেখা গেছে। এ ছাড়া অনেকে চাকরির পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবসা বা অন্য কাজে জড়িয়ে পড়ায় দায়িত্বে ফাঁকি দেন।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্বরত কয়েকজন নিরাপত্তাপ্রহরীর সঙ্গে কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বয়সের ভারে নুয়ে পড়া একজন জানান, ৪০ বছর ধরে তিনি নিরাপত্তাপ্রহরীর দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি এ সময়ে কোনো প্রশিক্ষণ পাননি।

আরেক প্রহরী জানান, ক্যাম্পাসের সব জায়গায় অস্ত্রের ব্যবহারের প্রয়োজন না হলেও সেগুনবাগান, পাহাড়ি এলাকাসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় অস্ত্রের প্রয়োজন আছে। দুর্গম জায়গাগুলোতে অস্ত্রধারী প্রহরী থাকলে অপরাধীরা ভয়ে থাকবে।

এ বিষয়ে প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তা দপ্তরকে ঢেলে সাজানোর চিন্তা করছি। নিরাপত্তাপ্রহরীদের প্রশিক্ষিত করে যুগোপযোগী একটি চৌকস বাহিনীতে পরিণত করার পরিকল্পনা রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত