মহিউদ্দিন খান মোহন
কৌতূহলবশতই ১৯ সেপ্টেম্বর গিয়েছিলাম নতুন রাজনৈতিক দল তৃণমূল বিএনপির প্রথম জাতীয় সম্মেলনে। সাবেক মন্ত্রী এবং বিএনপির প্রথম স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার সর্বশেষ প্রতিষ্ঠিত দল এটি। বিএনপি থেকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বহিষ্কার হওয়ার পর রাজনীতিতে নিজের অস্তিত্ব ধরে রাখতে কয়েকটি দল ও জোট করেছিলেন তিনি। সর্বশেষ করেন তৃণমূল বিএনপি। দলটি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত। দুঃখজনক হলো নিবন্ধন পাওয়ার তিন দিনের মাথায় প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল হুদা মৃত্যুবরণ করেন। তখন থেকে তাঁর মেয়ে অ্যাডভোকেট অন্তরা সেলিমা হুদা দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। প্রথম কাউন্সিল অধিবেশনে নতুন চেয়ারপারসন নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি থেকে পদত্যাগী ভাইস চেয়ারম্যান শমশের মুবিন চৌধুরী, মহাসচিব হয়েছেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। আর অন্তরা সেলিমা হুদাকে করা হয়েছে দলটির নির্বাহী চেয়ারপারসন। এ ছাড়া ২৭ সদস্যের একটি কেন্দ্রীয় কমিটিও ঘোষণা করা হয়েছে।
শমশের মুবিন চৌধুরী ও তৈমূর আলম খন্দকার আমার পূর্বপরিচিত এবং ঘনিষ্ঠজনও বটে। তা ছাড়া, তৃণমূল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল হুদার সঙ্গে ছিল আমার অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক। তিনি আমাকে খুবই স্নেহ করতেন। ফলে এ দলটির প্রথম জাতীয় সম্মেলন প্রত্যক্ষ করার প্রবল ইচ্ছা নিয়েই সেদিন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে উপস্থিত হয়েছিলাম। সম্মেলন শেষে দেখা এবং কথা হলো শমশের ভাই ও তৈমূর ভাইয়ের সঙ্গে। তাঁরা জিজ্ঞেস করলেন, তাঁদের সিদ্ধান্ত ঠিক আছে কি না। তৈমূর ভাইকে বললাম, বিএনপি আপনার প্রতি যে অবিচার করেছে, তার প্রতিবাদে এমন একটা কিছু করাকে আমি শতভাগ সমর্থন করি। তবে যে পথে আপনি হাঁটতে শুরু করলেন, তা বড়ই দুর্গম। একা এ পথে চলতে পারবেন না। সঙ্গী জোগাড় করতে হবে। যদি আপনারা সমমনাদের নিয়ে বড় একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে পারেন, তাহলে দেশের বর্তমান অস্বস্তিকর রাজনৈতিক পরিবেশে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবেন। তিনি
সমর্থন এবং সহযোগিতা চাইলেন।
সম্মেলনে শুভেচ্ছা বক্তব্য রেখেছেন বহুসংখ্যক রাজনৈতিক দলের নেতারা। বিচিত্র সব নামের ওই রাজনৈতিক দলগুলো নামসর্বস্ব ও অনিবন্ধিত। শুভেচ্ছা জানানো নেতারা প্রায় সবাই তৃণমূল বিএনপির নেতৃত্বে একটি নতুন রাজনৈতিক মোর্চা গড়ে তোলার আহ্বান জানালেন। মনে হলো, আসন্ন নির্বাচনে একটি নিবন্ধিত দলের ছাতার নিচে আশ্রয় নিয়ে মনোবাঞ্ছা পূরণের আশায় তাঁরা ব্যাকুল। তাঁরা কেউ বক্তৃতা শেষ করলেন ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে, কেউ বললেন, ‘বাংলাদেশ চিরজীবী হোক’। তবে একজনও ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগান দেননি।
সম্মেলনে বক্তারা মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম বলেছেন। জাতীয় নেতাদের প্রতি এই শ্রদ্ধা জানানো অবশ্যই অভিনন্দনযোগ্য। কেননা, আমরা যদি আমাদের পূর্বপুরুষদের স্মরণ না করি, তাঁদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন না করি, তাহলে ইতিহাসের সঙ্গে বেইমানি করা হবে, প্রকারান্তরে ইতিহাসকেই অস্বীকার করা হবে। তবে বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, যাঁর প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের নামের সঙ্গে ‘তৃণমূল’ শব্দটি যোগ করে দলটির জন্ম, সেই জিয়াউর রহমানের নাম একজনও উচ্চারণ করেননি, শ্রদ্ধা জানানো তো দূরের কথা। যদিও মুক্তিযুদ্ধে নিজের ভূমিকার কথা বলতে গিয়ে শমশের মুবিন চৌধুরী ১৯৭১-এ পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা অনেক সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে মেজর জিয়ার নামটিও বলেছেন। বিস্মিত আমি ভাবছিলাম, আজ যদি হুদা ভাই বেঁচে থাকতেন, তাহলে কি এমনটি হতো? সম্ভবত না। কেননা, জিয়াউর রহমানের হাত ধরেই অনেকের মতো নাজমুল হুদার রাজনীতিতে আগমন। জীবদ্দশায় হুদা ভাইকে কখনো জিয়ার প্রতি অবজ্ঞা-অশ্রদ্ধা করতে দেখিনি; বরং জিয়ার প্রতি এক গভীর শ্রদ্ধাবোধ ছিল তাঁর। হতে পারে তাঁর প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি নাজমুল হুদা, তৈমূর আলমসহ অনেকের সঙ্গেই সদাচরণ করেনি। সে জন্য জিয়াউর রহমান দোষী হতে পারেন না। তাহলে কেন তৃণমূল বিএনপির সম্মেলনে জিয়ার নাম অনুচ্চারিত থাকল? এটা কি উদ্যোক্তাদের ভুল, নাকি ক্ষমতাসীনদের রোষানল থেকে বাঁচার চেষ্টা? দলটির নীতিনির্ধারকদের স্মরণ রাখতে হবে, বিএনপি নামের মহিরুহ থেকেই চারা গাছ হিসেবে তাঁদের দলের জন্ম। আমার ধারণা, বিএনপির অনেক বঞ্চিত নেতাই এ দলটির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন। অনেকে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় সে রকম ইচ্ছার কথা আমার কাছে ব্যক্তও করেছেন। কিন্তু প্রথম সম্মেলনে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী রাজনীতির প্রবর্তক জিয়াউর রহমানকে অবজ্ঞা করার এ ঘটনা অনেককেই হতাশ করবে নিঃসন্দেহে। তাঁরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলতে পারেন। সবচেয়ে বড় কথা, সম্মেলনে বলা হয়েছে, তৃণমূল বিএনপি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদকে তাঁদের মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে। যদি তা-ই হয়, তাহলে সেই নীতির যিনি উদগাতা, তাঁর প্রতি কেন এই উপেক্ষার মনোভাব? জিয়াউর রহমানকে এক পাশে সরিয়ে রেখে তাঁর অনুসারীদের দলে সম্পৃক্ত করা কতটা সম্ভব হবে? না, আমি এটা বলতে চাইছি না যে, তৃণমূল বিএনপি জিয়াকে তাঁদের আদর্শিক নেতা ঘোষণা করুক। তবে আনুষ্ঠানিকতার ক্ষেত্রে তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে ক্ষতি ছিল না; বরং লাভের পাল্লাই ভারী হতো।
রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, তৃণমূল বিএনপির আল্টিমেট টার্গেট কী? এটা না বললেও বোঝা যায়, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে লক্ষ্য হিসেবে ধরে দলটি তাদের তৎপরতা শুরু করল। দলটির চেয়ারপারসন শমশের মুবিন চৌধুরী ও মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকারের বক্তব্যেও তা অনেকটাই স্পষ্ট। তাঁরা পরিষ্কার করেই বলেছেন, তাঁদের দল অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে। তবে তাঁরা একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। অনেকের ধারণা, সরকারের অনুপ্রেরণায়ই তৃণমূল বিএনপি মাঠে নেমেছে।
বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ না নেয়, তাহলে তৃণমূল বিএনপি হবে নির্বাচনে আগ্রহী বিএনপি নেতাদের প্ল্যাটফর্ম। আর যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়ও, তাহলে দলটির মনোনয়ন বঞ্চিত এবং বিভিন্ন সময়ে অবহেলিত ও বঞ্চনা-লাঞ্ছনার শিকার নেতারা তৃণমূলের শিবিরে আসতে পারেন। অবশ্য এ-সম্পর্কে শেষ কথা বলার সময় এখনো আসেনি। সময়ই সব বলে দেবে।
বিএনপি অবশ্য এর মধ্যে সরকারের ‘খেলাধুলা’ দেখতে পাচ্ছে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু মন্তব্য করেছেন, ‘সরকার যেনতেনভাবে একটা নির্বাচন করতে চায়। সে জন্য তৃণমূল বিএনপি নামে একটা দল বানাইছে, তার নিবন্ধনও দিয়েছে। এখন সেটা নিয়ে নানা ধরনের খেলাধুলা করতে চায়। কিন্তু এগুলো করে তারা অতীতেও সুফল পায়নি, আগামীতেও পাবে না।’ (আজকের পত্রিকা, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩)
এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শমশের মুবিন চৌধুরী ও তৈমূর আলম খন্দকারকে ‘খড়কুটো’র সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, ‘বিএনপি একটি প্রবহমান নদীর মতো। এখানে কত খড়কুটো আসে, কত খড়কুটো ভেসে যায়। কাজেই বিএনপির কিছু যায়-আসে না।’ তৃণমূল বিএনপি সরকারের খেলার অংশ, নাকি বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতার ফসল, আগামী কিছুদিনের মধ্যেই তা স্পষ্ট হবে। তবে এটা বলা নিশ্চয়ই অত্যুক্তি হবে না, বিএনপি নেতৃত্বের আত্মম্ভরিতা ও অপরিণামদর্শী মনোভাবের কারণে দলটি বর্তমান বিপর্যয়কর অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। এখনো যদি তাদের বোধোদয় না হয়, তাহলে তাদের আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।
রাজনীতির মাঠে নতুন দল তৃণমূল বিএনপি কতটা সফল হবে, তা নির্ভর করছে দলটির নেতৃত্বের দূরদর্শিতা ও সাংগঠনিক দক্ষতার
ওপর। নাজমুল হুদার স্নেহধন্য একজন সাবেক কর্মী হিসেবে আমি তাঁর প্রতিষ্ঠিত দলটির সাফল্য কামনা করি।
মহিউদ্দিন খান মোহন, সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
কৌতূহলবশতই ১৯ সেপ্টেম্বর গিয়েছিলাম নতুন রাজনৈতিক দল তৃণমূল বিএনপির প্রথম জাতীয় সম্মেলনে। সাবেক মন্ত্রী এবং বিএনপির প্রথম স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার সর্বশেষ প্রতিষ্ঠিত দল এটি। বিএনপি থেকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বহিষ্কার হওয়ার পর রাজনীতিতে নিজের অস্তিত্ব ধরে রাখতে কয়েকটি দল ও জোট করেছিলেন তিনি। সর্বশেষ করেন তৃণমূল বিএনপি। দলটি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত। দুঃখজনক হলো নিবন্ধন পাওয়ার তিন দিনের মাথায় প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল হুদা মৃত্যুবরণ করেন। তখন থেকে তাঁর মেয়ে অ্যাডভোকেট অন্তরা সেলিমা হুদা দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। প্রথম কাউন্সিল অধিবেশনে নতুন চেয়ারপারসন নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি থেকে পদত্যাগী ভাইস চেয়ারম্যান শমশের মুবিন চৌধুরী, মহাসচিব হয়েছেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। আর অন্তরা সেলিমা হুদাকে করা হয়েছে দলটির নির্বাহী চেয়ারপারসন। এ ছাড়া ২৭ সদস্যের একটি কেন্দ্রীয় কমিটিও ঘোষণা করা হয়েছে।
শমশের মুবিন চৌধুরী ও তৈমূর আলম খন্দকার আমার পূর্বপরিচিত এবং ঘনিষ্ঠজনও বটে। তা ছাড়া, তৃণমূল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল হুদার সঙ্গে ছিল আমার অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক। তিনি আমাকে খুবই স্নেহ করতেন। ফলে এ দলটির প্রথম জাতীয় সম্মেলন প্রত্যক্ষ করার প্রবল ইচ্ছা নিয়েই সেদিন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে উপস্থিত হয়েছিলাম। সম্মেলন শেষে দেখা এবং কথা হলো শমশের ভাই ও তৈমূর ভাইয়ের সঙ্গে। তাঁরা জিজ্ঞেস করলেন, তাঁদের সিদ্ধান্ত ঠিক আছে কি না। তৈমূর ভাইকে বললাম, বিএনপি আপনার প্রতি যে অবিচার করেছে, তার প্রতিবাদে এমন একটা কিছু করাকে আমি শতভাগ সমর্থন করি। তবে যে পথে আপনি হাঁটতে শুরু করলেন, তা বড়ই দুর্গম। একা এ পথে চলতে পারবেন না। সঙ্গী জোগাড় করতে হবে। যদি আপনারা সমমনাদের নিয়ে বড় একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে পারেন, তাহলে দেশের বর্তমান অস্বস্তিকর রাজনৈতিক পরিবেশে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবেন। তিনি
সমর্থন এবং সহযোগিতা চাইলেন।
সম্মেলনে শুভেচ্ছা বক্তব্য রেখেছেন বহুসংখ্যক রাজনৈতিক দলের নেতারা। বিচিত্র সব নামের ওই রাজনৈতিক দলগুলো নামসর্বস্ব ও অনিবন্ধিত। শুভেচ্ছা জানানো নেতারা প্রায় সবাই তৃণমূল বিএনপির নেতৃত্বে একটি নতুন রাজনৈতিক মোর্চা গড়ে তোলার আহ্বান জানালেন। মনে হলো, আসন্ন নির্বাচনে একটি নিবন্ধিত দলের ছাতার নিচে আশ্রয় নিয়ে মনোবাঞ্ছা পূরণের আশায় তাঁরা ব্যাকুল। তাঁরা কেউ বক্তৃতা শেষ করলেন ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে, কেউ বললেন, ‘বাংলাদেশ চিরজীবী হোক’। তবে একজনও ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগান দেননি।
সম্মেলনে বক্তারা মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম বলেছেন। জাতীয় নেতাদের প্রতি এই শ্রদ্ধা জানানো অবশ্যই অভিনন্দনযোগ্য। কেননা, আমরা যদি আমাদের পূর্বপুরুষদের স্মরণ না করি, তাঁদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন না করি, তাহলে ইতিহাসের সঙ্গে বেইমানি করা হবে, প্রকারান্তরে ইতিহাসকেই অস্বীকার করা হবে। তবে বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, যাঁর প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের নামের সঙ্গে ‘তৃণমূল’ শব্দটি যোগ করে দলটির জন্ম, সেই জিয়াউর রহমানের নাম একজনও উচ্চারণ করেননি, শ্রদ্ধা জানানো তো দূরের কথা। যদিও মুক্তিযুদ্ধে নিজের ভূমিকার কথা বলতে গিয়ে শমশের মুবিন চৌধুরী ১৯৭১-এ পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা অনেক সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে মেজর জিয়ার নামটিও বলেছেন। বিস্মিত আমি ভাবছিলাম, আজ যদি হুদা ভাই বেঁচে থাকতেন, তাহলে কি এমনটি হতো? সম্ভবত না। কেননা, জিয়াউর রহমানের হাত ধরেই অনেকের মতো নাজমুল হুদার রাজনীতিতে আগমন। জীবদ্দশায় হুদা ভাইকে কখনো জিয়ার প্রতি অবজ্ঞা-অশ্রদ্ধা করতে দেখিনি; বরং জিয়ার প্রতি এক গভীর শ্রদ্ধাবোধ ছিল তাঁর। হতে পারে তাঁর প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি নাজমুল হুদা, তৈমূর আলমসহ অনেকের সঙ্গেই সদাচরণ করেনি। সে জন্য জিয়াউর রহমান দোষী হতে পারেন না। তাহলে কেন তৃণমূল বিএনপির সম্মেলনে জিয়ার নাম অনুচ্চারিত থাকল? এটা কি উদ্যোক্তাদের ভুল, নাকি ক্ষমতাসীনদের রোষানল থেকে বাঁচার চেষ্টা? দলটির নীতিনির্ধারকদের স্মরণ রাখতে হবে, বিএনপি নামের মহিরুহ থেকেই চারা গাছ হিসেবে তাঁদের দলের জন্ম। আমার ধারণা, বিএনপির অনেক বঞ্চিত নেতাই এ দলটির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন। অনেকে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় সে রকম ইচ্ছার কথা আমার কাছে ব্যক্তও করেছেন। কিন্তু প্রথম সম্মেলনে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী রাজনীতির প্রবর্তক জিয়াউর রহমানকে অবজ্ঞা করার এ ঘটনা অনেককেই হতাশ করবে নিঃসন্দেহে। তাঁরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলতে পারেন। সবচেয়ে বড় কথা, সম্মেলনে বলা হয়েছে, তৃণমূল বিএনপি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদকে তাঁদের মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে। যদি তা-ই হয়, তাহলে সেই নীতির যিনি উদগাতা, তাঁর প্রতি কেন এই উপেক্ষার মনোভাব? জিয়াউর রহমানকে এক পাশে সরিয়ে রেখে তাঁর অনুসারীদের দলে সম্পৃক্ত করা কতটা সম্ভব হবে? না, আমি এটা বলতে চাইছি না যে, তৃণমূল বিএনপি জিয়াকে তাঁদের আদর্শিক নেতা ঘোষণা করুক। তবে আনুষ্ঠানিকতার ক্ষেত্রে তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে ক্ষতি ছিল না; বরং লাভের পাল্লাই ভারী হতো।
রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, তৃণমূল বিএনপির আল্টিমেট টার্গেট কী? এটা না বললেও বোঝা যায়, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে লক্ষ্য হিসেবে ধরে দলটি তাদের তৎপরতা শুরু করল। দলটির চেয়ারপারসন শমশের মুবিন চৌধুরী ও মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকারের বক্তব্যেও তা অনেকটাই স্পষ্ট। তাঁরা পরিষ্কার করেই বলেছেন, তাঁদের দল অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে। তবে তাঁরা একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। অনেকের ধারণা, সরকারের অনুপ্রেরণায়ই তৃণমূল বিএনপি মাঠে নেমেছে।
বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ না নেয়, তাহলে তৃণমূল বিএনপি হবে নির্বাচনে আগ্রহী বিএনপি নেতাদের প্ল্যাটফর্ম। আর যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়ও, তাহলে দলটির মনোনয়ন বঞ্চিত এবং বিভিন্ন সময়ে অবহেলিত ও বঞ্চনা-লাঞ্ছনার শিকার নেতারা তৃণমূলের শিবিরে আসতে পারেন। অবশ্য এ-সম্পর্কে শেষ কথা বলার সময় এখনো আসেনি। সময়ই সব বলে দেবে।
বিএনপি অবশ্য এর মধ্যে সরকারের ‘খেলাধুলা’ দেখতে পাচ্ছে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু মন্তব্য করেছেন, ‘সরকার যেনতেনভাবে একটা নির্বাচন করতে চায়। সে জন্য তৃণমূল বিএনপি নামে একটা দল বানাইছে, তার নিবন্ধনও দিয়েছে। এখন সেটা নিয়ে নানা ধরনের খেলাধুলা করতে চায়। কিন্তু এগুলো করে তারা অতীতেও সুফল পায়নি, আগামীতেও পাবে না।’ (আজকের পত্রিকা, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩)
এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শমশের মুবিন চৌধুরী ও তৈমূর আলম খন্দকারকে ‘খড়কুটো’র সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, ‘বিএনপি একটি প্রবহমান নদীর মতো। এখানে কত খড়কুটো আসে, কত খড়কুটো ভেসে যায়। কাজেই বিএনপির কিছু যায়-আসে না।’ তৃণমূল বিএনপি সরকারের খেলার অংশ, নাকি বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতার ফসল, আগামী কিছুদিনের মধ্যেই তা স্পষ্ট হবে। তবে এটা বলা নিশ্চয়ই অত্যুক্তি হবে না, বিএনপি নেতৃত্বের আত্মম্ভরিতা ও অপরিণামদর্শী মনোভাবের কারণে দলটি বর্তমান বিপর্যয়কর অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। এখনো যদি তাদের বোধোদয় না হয়, তাহলে তাদের আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।
রাজনীতির মাঠে নতুন দল তৃণমূল বিএনপি কতটা সফল হবে, তা নির্ভর করছে দলটির নেতৃত্বের দূরদর্শিতা ও সাংগঠনিক দক্ষতার
ওপর। নাজমুল হুদার স্নেহধন্য একজন সাবেক কর্মী হিসেবে আমি তাঁর প্রতিষ্ঠিত দলটির সাফল্য কামনা করি।
মহিউদ্দিন খান মোহন, সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে