বিভুরঞ্জন সরকার
মোহাম্মদ ফরহাদের জন্মদিন ৫ জুলাই। ১৯৩৮ সালের আজকের দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আজকের প্রজন্ম মোহাম্মদ ফরহাদ সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানে বলে মনে হয় না। জীবিতকালে যিনি দেশের রাজনীতিতে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছিলেন, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল কয়েকটি রাজনৈতিক দলের কোনো কোনো নেতার নেতায় পরিণত হয়েছিলেন, অথচ মৃত্যুর পর এই তিন দশকের একটু বেশি সময়ের মধ্যেই তিনি রাজনীতিকদের কাছেও যেন এক অপরিচিত নাম। এই বিস্মৃতিপ্রবণতা কি আমাদের রাজনীতির দুর্দশার একটি বড় কারণ নয়?
মোহাম্মদ ফরহাদ ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক। কমিউনিস্ট হয়েও একজন জাতীয় নেতা হয়ে উঠেছিলেন তিনি। গত শতকের ষাটের দশকে পাকিস্তানের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী সামরিক শাসক আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলনের ‘মস্তিষ্ক’ বলে পরিচিত মোহাম্মদ ফরহাদ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যেমন সংগঠকের ভূমিকা পালন করেছেন, তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশে সমাজ প্রগতি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামেও পালন করেছেন অগ্রসৈনিকের ভূমিকা।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পরেই কেবল তিনি আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে আসেন। কমিউনিস্ট পার্টিও বৈধ দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত কমিউনিস্ট পার্টির দ্বিতীয় কংগ্রেসে তিনি দলটির সাধারণ সম্পাদক পদে বৃত হন এবং আমৃত্যু তিনি এই পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৭ সালের ৯ অক্টোবর মস্কোয় হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মোহাম্মদ ফরহাদের জীবনাবসান ঘটে।
এক সংগ্রামমুখর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ছিলেন মোহাম্মদ ফরহাদ। কমিউনিস্ট আন্দোলনে তিনি ছিলেন দুই প্রজন্মের—চল্লিশ দশকের পথিকৃৎ কমিউনিস্ট বিপ্লবী মণি সিংহ, বারীণ দত্ত, খোকা রায়, অনিল মুখার্জি ও জ্ঞান চক্রবর্তীদের প্রজন্ম এবং সত্তর ও আশির দশকের তরুণ কমিউনিস্ট প্রজন্মের মধ্যে সেতুবন্ধস্বরূপ। দুই প্রজন্মের মধ্যেই তিনি ছিলেন সমানভাবে সমাদৃত। আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ হলেও ধ্যানে, জ্ঞানে, জীবনযাত্রায় তিনি ছিলেন বাংলাদেশের চিরায়ত ঘরানার কমিউনিস্টদের সার্থক নেতা ও বিপ্লবী। এ দেশে একটি শোষণ-বঞ্চনা-ভেদবৈষম্যহীন সাম্যের সমাজ নির্মাণের স্বপ্ন দেখতেন তিনি। স্বপ্ন রূপায়ণের জন্য প্রয়োজন বিপ্লবের। তাঁর ছিল আকণ্ঠ বিপ্লবপিপাসা।
১৯৮৬ সালে তিনি পঞ্চগড়-২ আসন, অর্থাৎ বোদা-দেবীগঞ্জ এলাকা থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু স্বল্পায়ু তৃতীয় জাতীয় সংসদে (১৯৮৬-৮৭) তাঁর ব্যতিক্রমী ভূমিকা, যুক্তিপূর্ণ ও বুদ্ধিদীপ্ত বাগ্মিতা নিয়ে একজন প্রতিশ্রুতিশীল পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবেও তিনি সবার দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হন।
জাতীয় রাজনীতি, ছাত্র, শ্রমিক, নারী আন্দোলন, যুব, খেতমজুর, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নানা কর্মকাণ্ড এবং সিভিল সোসাইটির তৎপরতার পেছনেও ছিল মোহাম্মদ ফরহাদের অবদান। ঐক্যবদ্ধ জাতীয় ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার আন্দোলনে এবং সংগঠন গড়ে তোলার পেছনেও তিনি অনুঘটকের নেপথ্য ভূমিকা পালন করেছেন।
তিনি রাজনৈতিক বিষয়ে লেখালেখি করেছেন প্রচুর। মোহাম্মদ ফরহাদ ষাটের দশকে কিছু সময়ের জন্য দৈনিক সংবাদের সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মাত্র ৪৯ বছর বয়সে তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে দেশের রাজনীতি সচেতন মহলে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছিল। তাঁর জানাজায় বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করেছিল যে তিনি মানুষের কাছে কত প্রিয় ও শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন।
ব্যক্তির ভূমিকা গৌণ করে দেখাই রীতি। কোনো একক ব্যক্তি নয়, সম্মিলিত ও ঐক্যবদ্ধ মানুষের শক্তিই ইতিহাসের স্রষ্টা। কিন্তু সত্যিই কি ইতিহাস নির্মাণে ব্যক্তির কোনো ভূমিকা নেই? বিশেষ কোনো ব্যক্তির উপস্থিতি কিংবা অনুপস্থিতি কি ইতিহাসের গতিধারার অদলবদল ঘটায় না? ঐক্যবদ্ধ মানুষের সম্মিলন ঘটাতেও কি ব্যক্তিবিশেষের ভূমিকা প্রভাব বিস্তার করে না?
যে লাল বিন্দুকে তিনি বৃত্ত বানাতে সচেষ্ট ছিলেন, তাঁর চলে যাওয়ায় তা আবার বিন্দুতেই পরিণত হতে বসেছে। বিন্দুতে সিন্ধুর গর্জন আর শোনা যাবে কি!
জন্মদিনে মোহাম্মদ ফরহাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।
বিভুরঞ্জন সরকার, জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
মোহাম্মদ ফরহাদের জন্মদিন ৫ জুলাই। ১৯৩৮ সালের আজকের দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আজকের প্রজন্ম মোহাম্মদ ফরহাদ সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানে বলে মনে হয় না। জীবিতকালে যিনি দেশের রাজনীতিতে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছিলেন, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল কয়েকটি রাজনৈতিক দলের কোনো কোনো নেতার নেতায় পরিণত হয়েছিলেন, অথচ মৃত্যুর পর এই তিন দশকের একটু বেশি সময়ের মধ্যেই তিনি রাজনীতিকদের কাছেও যেন এক অপরিচিত নাম। এই বিস্মৃতিপ্রবণতা কি আমাদের রাজনীতির দুর্দশার একটি বড় কারণ নয়?
মোহাম্মদ ফরহাদ ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক। কমিউনিস্ট হয়েও একজন জাতীয় নেতা হয়ে উঠেছিলেন তিনি। গত শতকের ষাটের দশকে পাকিস্তানের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী সামরিক শাসক আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলনের ‘মস্তিষ্ক’ বলে পরিচিত মোহাম্মদ ফরহাদ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যেমন সংগঠকের ভূমিকা পালন করেছেন, তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশে সমাজ প্রগতি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামেও পালন করেছেন অগ্রসৈনিকের ভূমিকা।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পরেই কেবল তিনি আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে আসেন। কমিউনিস্ট পার্টিও বৈধ দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত কমিউনিস্ট পার্টির দ্বিতীয় কংগ্রেসে তিনি দলটির সাধারণ সম্পাদক পদে বৃত হন এবং আমৃত্যু তিনি এই পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৭ সালের ৯ অক্টোবর মস্কোয় হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মোহাম্মদ ফরহাদের জীবনাবসান ঘটে।
এক সংগ্রামমুখর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ছিলেন মোহাম্মদ ফরহাদ। কমিউনিস্ট আন্দোলনে তিনি ছিলেন দুই প্রজন্মের—চল্লিশ দশকের পথিকৃৎ কমিউনিস্ট বিপ্লবী মণি সিংহ, বারীণ দত্ত, খোকা রায়, অনিল মুখার্জি ও জ্ঞান চক্রবর্তীদের প্রজন্ম এবং সত্তর ও আশির দশকের তরুণ কমিউনিস্ট প্রজন্মের মধ্যে সেতুবন্ধস্বরূপ। দুই প্রজন্মের মধ্যেই তিনি ছিলেন সমানভাবে সমাদৃত। আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ হলেও ধ্যানে, জ্ঞানে, জীবনযাত্রায় তিনি ছিলেন বাংলাদেশের চিরায়ত ঘরানার কমিউনিস্টদের সার্থক নেতা ও বিপ্লবী। এ দেশে একটি শোষণ-বঞ্চনা-ভেদবৈষম্যহীন সাম্যের সমাজ নির্মাণের স্বপ্ন দেখতেন তিনি। স্বপ্ন রূপায়ণের জন্য প্রয়োজন বিপ্লবের। তাঁর ছিল আকণ্ঠ বিপ্লবপিপাসা।
১৯৮৬ সালে তিনি পঞ্চগড়-২ আসন, অর্থাৎ বোদা-দেবীগঞ্জ এলাকা থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু স্বল্পায়ু তৃতীয় জাতীয় সংসদে (১৯৮৬-৮৭) তাঁর ব্যতিক্রমী ভূমিকা, যুক্তিপূর্ণ ও বুদ্ধিদীপ্ত বাগ্মিতা নিয়ে একজন প্রতিশ্রুতিশীল পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবেও তিনি সবার দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হন।
জাতীয় রাজনীতি, ছাত্র, শ্রমিক, নারী আন্দোলন, যুব, খেতমজুর, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নানা কর্মকাণ্ড এবং সিভিল সোসাইটির তৎপরতার পেছনেও ছিল মোহাম্মদ ফরহাদের অবদান। ঐক্যবদ্ধ জাতীয় ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার আন্দোলনে এবং সংগঠন গড়ে তোলার পেছনেও তিনি অনুঘটকের নেপথ্য ভূমিকা পালন করেছেন।
তিনি রাজনৈতিক বিষয়ে লেখালেখি করেছেন প্রচুর। মোহাম্মদ ফরহাদ ষাটের দশকে কিছু সময়ের জন্য দৈনিক সংবাদের সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মাত্র ৪৯ বছর বয়সে তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে দেশের রাজনীতি সচেতন মহলে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছিল। তাঁর জানাজায় বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করেছিল যে তিনি মানুষের কাছে কত প্রিয় ও শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন।
ব্যক্তির ভূমিকা গৌণ করে দেখাই রীতি। কোনো একক ব্যক্তি নয়, সম্মিলিত ও ঐক্যবদ্ধ মানুষের শক্তিই ইতিহাসের স্রষ্টা। কিন্তু সত্যিই কি ইতিহাস নির্মাণে ব্যক্তির কোনো ভূমিকা নেই? বিশেষ কোনো ব্যক্তির উপস্থিতি কিংবা অনুপস্থিতি কি ইতিহাসের গতিধারার অদলবদল ঘটায় না? ঐক্যবদ্ধ মানুষের সম্মিলন ঘটাতেও কি ব্যক্তিবিশেষের ভূমিকা প্রভাব বিস্তার করে না?
যে লাল বিন্দুকে তিনি বৃত্ত বানাতে সচেষ্ট ছিলেন, তাঁর চলে যাওয়ায় তা আবার বিন্দুতেই পরিণত হতে বসেছে। বিন্দুতে সিন্ধুর গর্জন আর শোনা যাবে কি!
জন্মদিনে মোহাম্মদ ফরহাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।
বিভুরঞ্জন সরকার, জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪