হাসান আলী
প্রবীণ, শিশু ও অসুস্থ মানুষের পক্ষে শব্দ ও বায়ুদূষণ মোকাবিলা করা খুবই দুরূহ ব্যাপার। আমাদের মধ্যে শীর্ষে ওঠার প্রবণতা চোখে পড়ার মতো। যিনি চাকরিতে থাকেন, তিনি সর্বোচ্চ পদে ওঠার প্রতিযোগিতায় আগ্রহী থাকেন। উঁচু পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার বাসনা থাকা দোষের কিছু নয়। যিনি যোগ্য, দক্ষ, অভিজ্ঞ তিনি সর্বোচ্চ পদে আসীন হবেন, সেটাই স্বাভাবিক। যিনি ব্যবসা-বাণিজ্য করেন, তিনিও শীর্ষ ব্যবসায়ী হওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। যাঁরা সংগঠন করেন, রাজনীতি করেন, তাঁরাও শীর্ষ পদে যেতে কমবেশি চেষ্টা-তদবির করেন।
শীর্ষ পদে ওঠার ক্ষেত্রে নীতিমালার অভাবে ব্যক্তিগত উদ্যোগ তীব্রভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। শীর্ষে উঠতে গিয়ে আমরা পরিবেশ ও প্রতিবেশকে বিবেচনায় নিতে চাই না। ক্ষতিকর পরিবেশ জীবন ও জগৎকে কতটা হুমকির মুখে ফেলছে, তা গভীরভাবে চিন্তা করার লোকজন কমতে শুরু করেছে। দেশের মানুষের কী হবে? এই চিন্তা করার চেয়ে আমার কী হবে, সেই ভাবনার তাড়না বেশি করে আচ্ছন্ন করে রাখে। যত যোগ্যতা আর ধনসম্পদ থাকুক না কেন একা একা জীবন উপভোগ করা খুবই কঠিন কাজ। সবাই মিলে ভালো থাকার ভাবনা দুর্বল হলে অশান্তির সৃষ্টি হবে। মানুষ সামাজিক জীব, সমাজের ক্ষতি করে কেউ টিকে থাকতে পারবে না।
আমরা প্রতিনিয়তই শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, মাটিদূষণ, নদীদূষণে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করছি। বায়ুদূষণের পর শব্দদূষণেও বিশ্বের শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। ঢাকায় এই দূষণের মাত্রা অন্য যেকোনো শহরে চেয়ে বেশি। ইউএনইপির প্রতিবেদনে ঢাকার বাণিজ্যিক এলাকায় গড় শব্দের মাত্রা ১১৯ ডেসিবল এবং রাজশাহীতে বাণিজ্যিক এলাকায় ১০৩ ডেসিবল, যা একজন মানুষের কানে শোনার ক্ষমতার চেয়ে বেশি। একজন মানুষ সর্বোচ্চ ৭০ ডেসিবল শব্দ পর্যন্ত সহ্য করতে পারে। মানুষ পরিবার-পরিজনের সঙ্গে কথা বলার সময় শব্দের মাত্রা থাকে ৪০ ডেসিবল পর্যন্ত। কানের ভেতরে রিসেপ্টার প্রথমে শব্দ তরঙ্গকে ধারণ করে, তারপর ককলিয়ার নার্ভের মাধ্যমে মস্তিষ্কে পাঠায়। দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত শব্দ এই রিসেপ্টারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ক্রমাগত তীব্র শব্দের মধ্যে থাকলে আস্তে আস্তে বধিরতা চলে আসে।
শব্দদূষণ করে গাড়ির হর্ন, নির্মাণকাজ, গ্রিল বানানো, টাইলস কাটার মেশিন, ইট ভাঙার মেশিন, কলকারখানার শব্দ, সাউন্ড বক্স, মাইক, জেনারেটর, ওয়েলডিং মেশিন, নির্বাচন, বড় ধরনের সভা-সমাবেশ ইত্যাদির মাধ্যমে।
জনজীবনের মারাত্মক এই সংকটকে বিবেচনায় নিয়ে সরকার বাংলাদেশে শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ নামে একটি আইন পাস করে।
এতে ভোর ছয়টা থেকে রাত নয়টা এবং রাত নয়টা থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত শব্দের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতালের ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। নীরব এলাকায় দিনে ৫০ ডেসিবল এবং রাতে ৪০, মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০, রাতে ৫০, আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫, রাতে ৪৫, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০, রাতে ৬০, শিল্পকারখানায় দিনে ৭৫, রাতে ৭০ ডেসিবল পর্যন্ত শব্দমাত্রা থাকবে।
অমান্যকারীদের জন্য দণ্ড হলো এক মাস জেল, পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। একই কাজ একই ব্যক্তি পুনরায় করলে ছয় মাস জেল, ১০ হাজার টাকা জরিমানা।
যদি কোনো কারণবশত শব্দের মাত্রা অতিক্রম করার প্রয়োজন দেখা দেয়, তবে আবেদন করে অনুমতিপত্র নিতে হবে। অনুমতি দান কর্তৃপক্ষ হলো গ্রাম-পৌর এলাকা, উপজেলায় ইউএনও, জেলা সদরে জেলা প্রশাসক, সিটি করপোরেশন ও মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশ কমিশনার। তবে আইনের আওতার বাইরে থাকবে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। ঈদের জামাত, নামকীর্তন, ওয়াজ মাহফিল, জানাজা, শবযাত্রাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান। আকাশযান, রেলগাড়ি, ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স, পুলিশের গাড়ি, মৃত্যুসংবাদ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকাণ্ড এই আইনের আওতায় রাখা হয়নি।
স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি, পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন করার সময় শব্দের মাত্রা অতিক্রম হলে আইনের আওতায় আসবে না। আইনে বলা হয়েছে, বিধিতে (৭-এ) যাহা কিছুই থাকুক না কেন কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নীরব এলাকা ব্যতীত অন্যান্য এলাকায় বিবাহ, সামাজিক অনুষ্ঠান, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, কনসার্ট, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মেলা, যাত্রা-পালাগান, হাটবাজার ও বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান করতে পারবে।
শব্দদূষণের ফলাফল আমাদের বিবেচনায় নেওয়ার সময় এসেছে। কানের সহ্যক্ষমতার মাত্রা অতিক্রম করার ফলে অতিদ্রুত আমরা বিপুলসংখ্যক মানুষকে বধির করে ফেলব।
এই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে প্রবীণ জনগোষ্ঠী। বধির হওয়া এখন পর্যন্ত সামাজিকভাবে অসম্মানের বিষয়। নেতিবাচক সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে মানুষ কানে শোনার যন্ত্র বা হিয়ারিং এইড নিতে চায় না। সমাজ নানা রকমের উপহাস করে বধির ব্যক্তিকে বিব্রত করে। সিনেমা, নাটক, গল্প, উপন্যাসে বধির ব্যক্তিকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করতে দেখা যায়। বধিরতা হাসির বিষয় বলে বহু কৌতুক রঙ্গ তৈরি করা হয়েছে।
এসব ভীতিকর পরিস্থিতিতে অনেকেই সঠিক সময়ে চিকিৎসাসেবা নিতে আসে না। সময় শেষ করে যখন কেউ আসে, তখন আর চিকিৎসার সুযোগ থাকে না। কেউ কেউ শুরুতে চিকিৎসার আওতায় এলেও সামাজিক লোকলজ্জার ভয়ে হিয়ারিং এইড বা কানে শোনার যন্ত্র ব্যবহার করতে চায় না।
চশমা চোখে রাখতে পারে, কিন্তু কানে হিয়ারিং এইড রাখে না। কেউ কেউ খুলে পকেটে রেখে দেয়। বধির ব্যক্তিরা সামাজিক যোগাযোগ করতে অপারগ হয়ে পড়ে। সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন প্রবীণেরা ক্রমেই নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করতে শুরু করেন। ভাবের আদান-প্রদানে ইশারা ভাষা ব্যবহার করার ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা এই প্রবীণদের একাকিত্ব অনেক কষ্টের। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বধিরতার কারণে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। এক-তৃতীয়াংশ বয়স্ক মানুষ কানের সমস্যায় ভোগেন। এর মধ্যে একটি অংশ বধিরতায় ভুগছে। অনেক প্রবীণ চোখের সমস্যায় ভোগেন। তখন পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে। প্রয়োজন হয় সার্বক্ষণিক সেবাযত্ন দেখাশোনার। এমনিতেই দেশে প্রবীণদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এর ওপর যদি শারীরিক ও মানসিকভাবে অক্ষম প্রবীণের সংখ্যা বাড়ে, তবে দেশের অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। সেটা সামলানো বেশি কঠিন হয়ে যাবে।
উচ্চমাত্রার শব্দের ব্যবহার চলতে থাকলে মানুষের শরীরে অ্যাড্রেনালিন হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। বেশি অ্যাড্রেনালিনে মানুষের রক্তচাপ ও হৃৎস্পন্দন অতিদ্রুত বেড়ে যায়। অনেকেই অসময়ে মৃত্যুবরণ করে। পশুপাখি পর্যন্ত শব্দদূষণের কারণে মৃত্যুবরণ করে।
কয়েক দিন আগে ইংরেজি নববর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে যে ধরনের শব্দদূষণ হয়েছে, তা ঢাকাবাসী শুনেছে। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ মোট ৩৬৫ কল রেকর্ড করা হয়েছে।
ভয়ানক শব্দদূষণের হাত থেকে বাঁচতে হলে ঐক্যবদ্ধভাবে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে ছাত্র-শিক্ষক, ধর্মীয় নেতা, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসতে হবে।
লেখক: সভাপতি, এজিং সাপোর্ট ফোরাম
প্রবীণ, শিশু ও অসুস্থ মানুষের পক্ষে শব্দ ও বায়ুদূষণ মোকাবিলা করা খুবই দুরূহ ব্যাপার। আমাদের মধ্যে শীর্ষে ওঠার প্রবণতা চোখে পড়ার মতো। যিনি চাকরিতে থাকেন, তিনি সর্বোচ্চ পদে ওঠার প্রতিযোগিতায় আগ্রহী থাকেন। উঁচু পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার বাসনা থাকা দোষের কিছু নয়। যিনি যোগ্য, দক্ষ, অভিজ্ঞ তিনি সর্বোচ্চ পদে আসীন হবেন, সেটাই স্বাভাবিক। যিনি ব্যবসা-বাণিজ্য করেন, তিনিও শীর্ষ ব্যবসায়ী হওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। যাঁরা সংগঠন করেন, রাজনীতি করেন, তাঁরাও শীর্ষ পদে যেতে কমবেশি চেষ্টা-তদবির করেন।
শীর্ষ পদে ওঠার ক্ষেত্রে নীতিমালার অভাবে ব্যক্তিগত উদ্যোগ তীব্রভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। শীর্ষে উঠতে গিয়ে আমরা পরিবেশ ও প্রতিবেশকে বিবেচনায় নিতে চাই না। ক্ষতিকর পরিবেশ জীবন ও জগৎকে কতটা হুমকির মুখে ফেলছে, তা গভীরভাবে চিন্তা করার লোকজন কমতে শুরু করেছে। দেশের মানুষের কী হবে? এই চিন্তা করার চেয়ে আমার কী হবে, সেই ভাবনার তাড়না বেশি করে আচ্ছন্ন করে রাখে। যত যোগ্যতা আর ধনসম্পদ থাকুক না কেন একা একা জীবন উপভোগ করা খুবই কঠিন কাজ। সবাই মিলে ভালো থাকার ভাবনা দুর্বল হলে অশান্তির সৃষ্টি হবে। মানুষ সামাজিক জীব, সমাজের ক্ষতি করে কেউ টিকে থাকতে পারবে না।
আমরা প্রতিনিয়তই শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, মাটিদূষণ, নদীদূষণে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করছি। বায়ুদূষণের পর শব্দদূষণেও বিশ্বের শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। ঢাকায় এই দূষণের মাত্রা অন্য যেকোনো শহরে চেয়ে বেশি। ইউএনইপির প্রতিবেদনে ঢাকার বাণিজ্যিক এলাকায় গড় শব্দের মাত্রা ১১৯ ডেসিবল এবং রাজশাহীতে বাণিজ্যিক এলাকায় ১০৩ ডেসিবল, যা একজন মানুষের কানে শোনার ক্ষমতার চেয়ে বেশি। একজন মানুষ সর্বোচ্চ ৭০ ডেসিবল শব্দ পর্যন্ত সহ্য করতে পারে। মানুষ পরিবার-পরিজনের সঙ্গে কথা বলার সময় শব্দের মাত্রা থাকে ৪০ ডেসিবল পর্যন্ত। কানের ভেতরে রিসেপ্টার প্রথমে শব্দ তরঙ্গকে ধারণ করে, তারপর ককলিয়ার নার্ভের মাধ্যমে মস্তিষ্কে পাঠায়। দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত শব্দ এই রিসেপ্টারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ক্রমাগত তীব্র শব্দের মধ্যে থাকলে আস্তে আস্তে বধিরতা চলে আসে।
শব্দদূষণ করে গাড়ির হর্ন, নির্মাণকাজ, গ্রিল বানানো, টাইলস কাটার মেশিন, ইট ভাঙার মেশিন, কলকারখানার শব্দ, সাউন্ড বক্স, মাইক, জেনারেটর, ওয়েলডিং মেশিন, নির্বাচন, বড় ধরনের সভা-সমাবেশ ইত্যাদির মাধ্যমে।
জনজীবনের মারাত্মক এই সংকটকে বিবেচনায় নিয়ে সরকার বাংলাদেশে শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ নামে একটি আইন পাস করে।
এতে ভোর ছয়টা থেকে রাত নয়টা এবং রাত নয়টা থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত শব্দের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতালের ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। নীরব এলাকায় দিনে ৫০ ডেসিবল এবং রাতে ৪০, মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০, রাতে ৫০, আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫, রাতে ৪৫, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০, রাতে ৬০, শিল্পকারখানায় দিনে ৭৫, রাতে ৭০ ডেসিবল পর্যন্ত শব্দমাত্রা থাকবে।
অমান্যকারীদের জন্য দণ্ড হলো এক মাস জেল, পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। একই কাজ একই ব্যক্তি পুনরায় করলে ছয় মাস জেল, ১০ হাজার টাকা জরিমানা।
যদি কোনো কারণবশত শব্দের মাত্রা অতিক্রম করার প্রয়োজন দেখা দেয়, তবে আবেদন করে অনুমতিপত্র নিতে হবে। অনুমতি দান কর্তৃপক্ষ হলো গ্রাম-পৌর এলাকা, উপজেলায় ইউএনও, জেলা সদরে জেলা প্রশাসক, সিটি করপোরেশন ও মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশ কমিশনার। তবে আইনের আওতার বাইরে থাকবে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। ঈদের জামাত, নামকীর্তন, ওয়াজ মাহফিল, জানাজা, শবযাত্রাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান। আকাশযান, রেলগাড়ি, ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স, পুলিশের গাড়ি, মৃত্যুসংবাদ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকাণ্ড এই আইনের আওতায় রাখা হয়নি।
স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি, পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন করার সময় শব্দের মাত্রা অতিক্রম হলে আইনের আওতায় আসবে না। আইনে বলা হয়েছে, বিধিতে (৭-এ) যাহা কিছুই থাকুক না কেন কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নীরব এলাকা ব্যতীত অন্যান্য এলাকায় বিবাহ, সামাজিক অনুষ্ঠান, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, কনসার্ট, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মেলা, যাত্রা-পালাগান, হাটবাজার ও বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান করতে পারবে।
শব্দদূষণের ফলাফল আমাদের বিবেচনায় নেওয়ার সময় এসেছে। কানের সহ্যক্ষমতার মাত্রা অতিক্রম করার ফলে অতিদ্রুত আমরা বিপুলসংখ্যক মানুষকে বধির করে ফেলব।
এই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে প্রবীণ জনগোষ্ঠী। বধির হওয়া এখন পর্যন্ত সামাজিকভাবে অসম্মানের বিষয়। নেতিবাচক সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে মানুষ কানে শোনার যন্ত্র বা হিয়ারিং এইড নিতে চায় না। সমাজ নানা রকমের উপহাস করে বধির ব্যক্তিকে বিব্রত করে। সিনেমা, নাটক, গল্প, উপন্যাসে বধির ব্যক্তিকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করতে দেখা যায়। বধিরতা হাসির বিষয় বলে বহু কৌতুক রঙ্গ তৈরি করা হয়েছে।
এসব ভীতিকর পরিস্থিতিতে অনেকেই সঠিক সময়ে চিকিৎসাসেবা নিতে আসে না। সময় শেষ করে যখন কেউ আসে, তখন আর চিকিৎসার সুযোগ থাকে না। কেউ কেউ শুরুতে চিকিৎসার আওতায় এলেও সামাজিক লোকলজ্জার ভয়ে হিয়ারিং এইড বা কানে শোনার যন্ত্র ব্যবহার করতে চায় না।
চশমা চোখে রাখতে পারে, কিন্তু কানে হিয়ারিং এইড রাখে না। কেউ কেউ খুলে পকেটে রেখে দেয়। বধির ব্যক্তিরা সামাজিক যোগাযোগ করতে অপারগ হয়ে পড়ে। সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন প্রবীণেরা ক্রমেই নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করতে শুরু করেন। ভাবের আদান-প্রদানে ইশারা ভাষা ব্যবহার করার ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা এই প্রবীণদের একাকিত্ব অনেক কষ্টের। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বধিরতার কারণে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। এক-তৃতীয়াংশ বয়স্ক মানুষ কানের সমস্যায় ভোগেন। এর মধ্যে একটি অংশ বধিরতায় ভুগছে। অনেক প্রবীণ চোখের সমস্যায় ভোগেন। তখন পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে। প্রয়োজন হয় সার্বক্ষণিক সেবাযত্ন দেখাশোনার। এমনিতেই দেশে প্রবীণদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এর ওপর যদি শারীরিক ও মানসিকভাবে অক্ষম প্রবীণের সংখ্যা বাড়ে, তবে দেশের অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। সেটা সামলানো বেশি কঠিন হয়ে যাবে।
উচ্চমাত্রার শব্দের ব্যবহার চলতে থাকলে মানুষের শরীরে অ্যাড্রেনালিন হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। বেশি অ্যাড্রেনালিনে মানুষের রক্তচাপ ও হৃৎস্পন্দন অতিদ্রুত বেড়ে যায়। অনেকেই অসময়ে মৃত্যুবরণ করে। পশুপাখি পর্যন্ত শব্দদূষণের কারণে মৃত্যুবরণ করে।
কয়েক দিন আগে ইংরেজি নববর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে যে ধরনের শব্দদূষণ হয়েছে, তা ঢাকাবাসী শুনেছে। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ মোট ৩৬৫ কল রেকর্ড করা হয়েছে।
ভয়ানক শব্দদূষণের হাত থেকে বাঁচতে হলে ঐক্যবদ্ধভাবে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে ছাত্র-শিক্ষক, ধর্মীয় নেতা, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসতে হবে।
লেখক: সভাপতি, এজিং সাপোর্ট ফোরাম
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১০ ঘণ্টা আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগে