‘আমি এবার প্রথম ভোটার হয়েছি। জীবনের প্রথম ভোটটি সৎ, যোগ্য ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তিকে দেব। পত্রিকার অনেক খবরে দেখেছি, মেম্বার-চেয়ারম্যান হলে সাধারণ মানুষের হক মেরে খায়। আমার চাওয়া, আমাদের পবিত্র ভোটে যাঁরা নির্বাচিত হবে, তাঁরা যেন দয়া করে গরিব-দুঃখীদের হক মেরে না খায়।’

কথাগুলো বলছিলেন গঙ্গাচড়ার গজঘণ্টা ইউনিয়নের জয়দেব গ্রামের তরুণী মাহামুদা আক্তার লতা। তিনি আগামীকাল রোববার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ভোট দেবেন।

চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচনে আগামীকাল গঙ্গাচড়ার ৯ এবং বদরগঞ্জের ১০ ইউনিয়নে ভোট হবে। গতকাল শুক্রবার শেষ দিনের মতো প্রচার চালিয়েছেন প্রার্থীরা।

গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নয়জন করে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সাত, জাসদের এক এবং স্বতন্ত্র ২৪ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়া সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১২২ ও সাধারণ সদস্য পদে ৩৬৬ প্রার্থী আছেন।

গতকাল উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা ভোট দেবেন যোগ্য প্রার্থীকে। যিনি ইউনিয়নের উন্নয়ন করবেন, সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করবেন, তাঁদের ভোট দেওয়া হবে।

কোলকোন্দ ইউনিয়নের রুহুল ইসলাম রয়েল বলেন, ‘এমন প্রার্থীকে ভোট দেব যিনি সব সময় এলাকার মানুষের খোঁজখবর রাখবেন, গরিব মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখার বিষয়ে উৎসাহ দেবেন।’

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আইনুল হক (চলতি দায়িত্ব) বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমাদের নির্বাচনী সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। উপজেলায় ১০৭টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। আমরা আগামীকাল (আজ) শনিবার নির্বাচনী সরঞ্জাম সব কেন্দ্রে পাঠাব।’

গঙ্গাচড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার সরকার বলেন, ‘ভোটকেন্দ্র এলাকাসহ সর্বত্র পুলিশি টহল জোরদার করেছি। সব মিলিয়ে উপজেলায় শান্তিপূর্ণ ভোট হবে বলে আমরা এক শ ভাগ আশাবাদী।’

এদিকে বদরগঞ্জে চেয়ারম্যান পদে ৫১, সংরক্ষিত সদস্য পদে ১৪১ ও সাধারণ সদস্য পদে ৩৩৭ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

উপজেলায় ১ লাখ ৩ হাজার ৩৬০ জন পুরুষ এবং ১ লাখ ১ হাজার ৫৮০ জন নারী ভোটার আছেন। তাঁরা ৯৩টি ভোটকেন্দ্রে আগামীকাল সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট দেবেন।

গতকাল শেষ দিনের প্রচারে মুখর ছিল হাটবাজার। সবখানে প্রার্থীদের নিয়ে চলছিল জটলা। ছিল চা-নাশতা খাওয়ানোর ধুম। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

উপজেলার পাঠানের হাটে কথা হয় ওই গ্রামের রমজান আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আজ থাকি ভোটের খাওয়া দাওয়া শেষ। আইজ রাইত যাবে, পরের রাইত পোহাইলে ভোট। এখন ভোটের অপেক্ষায় আছি।’

রাধানগর গ্রামের সোহেল ইসলাম বলেন, ‘যতক্ষণ ভোট দেই নাই ততোক্ষণ হামার দাম আছে। প্রার্থীরা বাড়ি যাওছে, বাজারোত চা খাওয়াওছে। হামরা কারও মন ভাঙিবার চাইনা। যায় যেটা কওছে, তারে কথাত সায় দেউছি।’

মৌলভীপাড়া গ্রামের তরুণ ভোটার আনারুল ইসলাম জানান, যোগ্য ব্যক্তিকে প্রথম ভোটটি দেওয়ার ইচ্ছে আছে তাঁর।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আজিজার রহমান বসুনীয়া বলেন, ১০ ইউনিয়নে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সব রকম প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। শনিবার থেকে পুলিশ, আনসারসহ ভোটের সরঞ্জাম পাঠানো হবে।

নির্বাচনী নিরাপত্তা সম্পর্কে জানতে চাইলে বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘ভোটের আগে ও পরে যাতে কোনো সহিসংতা না ঘটে সে জন্য আমরা নিরাপত্তা জোরদার করেছি। ইতিমধ্যে কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের যাতায়াত চলমান আছে। এলাকায় টহল বাড়ানো হয়েছে।’