থামছে না নির্বাচনী সহিংসতা

দৌলতপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২১, ১০: ২১
আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২১, ১৬: ২৪

তৃতীয় ধাপে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

গতকাল শনিবার, গত শুক্রবার, বুধবার ও মঙ্গলবার যথাক্রমে মথুরাপুর, মরিচা, আদাবাড়িয়া ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নে নির্বাচনী তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের মধ্যে ইতিমধ্যেই সৃষ্টি হয়েছে সহিংসতার নজির। ঘটেছে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার। চরম উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন এলাকাবাসী। চাইছেন দৌলতপুর পুলিশের সার্বিক সহযোগিতা।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শনিবার সকালে মথুরাপুর ইউনিয়নের হোসেনাবাদ বাজারে সংঘর্ষে জড়ান নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী সর্দার হাসেম উদ্দিন হাসুর সমর্থকেরা ও ঢোল প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের সমর্থকেরা। পরে তা নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের দুজন আহত হয়েছেন। আহতরা দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানা গেছে।

এ দিকে গত শুক্রবার রাতে উপজেলার মরিচা ইউনিয়নেও ঘটে নির্বাচনী সহিংসতা। মরিচা ইউপির নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহ আলমগীর ও চশমা প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী জোয়াদুর রহমান জজের কর্মী-সমর্থকদের মাঝে সংঘর্ষ হয়।

গত বুধবার রাতে আদাবাড়িয়া ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মকবুল হোসেনের ছেলেসহ ৫ থেকে ৭ জনের ওপর অতর্কিত হামলার অভিযোগ ওঠে। মকবুল হোসেন বলেন, ‘প্রতিপক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল বাকীর লোকজন নৌকা প্রতীকের পোস্টার ছিঁড়েন। ওই ঘটনায় আমার লোকজন তাঁদের ধাওয়া করেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে আনারসের লোকজন আমার ছেলেসহ আমার কর্মী-সমর্থকদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালান। কয়েক রাউন্ড ফায়ার করা হয়েছিল।’

এদিকে আব্দুল বাকীসহ তাঁর কর্মী সমর্থকদের দাবি, সেখানে একটি নাটক সাজানো হয়েছে। আব্দুল বাকী ও তাঁর কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

গত মঙ্গলবার রামকৃষ্ণপুর ইউপির জাসদের মশাল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল আজিজের ও আওয়ামী লীগের নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী সিরাজ মণ্ডলের কর্ম-সমর্থকদের মধ্যে তিন দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই দিন রাতে উপজেলার রামকৃষ্ণপুরে ভাগজোত বাজার এলাকায় আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। একই দিনে পদ্মার চরে একবার এবং ভাগজত বাজার এলাকায় দুবার সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে আজিজ এবং সিরাজ সমর্থকদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ পাওয়া যায়।

এলাকাবাসী জানান, মঙ্গলবার বিকেল থেকে নেওয়া মুখোমুখি অবস্থান রাতে গিয়ে চরম সহিংসতায় রূপ নেয়। সেখানে পুলিশের উপস্থিতিতে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়। তবে কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন সে বিষয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। এলাকাবাসীর দাবি, সিরাজ ও আজিজের কর্মী-সমর্থকেরাই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছেন। এ দিনের ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন অন্তত ৪ জন।

এ বিষয়ে আব্দুল আজিজ বলেন, ‘সিরাজ মণ্ডলের উপস্থিতিতে তাঁর লোকজন পিস্তল ও বোমা নিয়ে হামলা চালান জাসদের নির্বাচনী কার্যালয়ে।

অপরদিকে এ বিষয়ে তিন দিন ধরে নৌকার প্রার্থী সিরাজ মণ্ডলের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।

পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত মঙ্গলবার রাতে রামকৃষ্ণপুরের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সেখান থেকে কোনো ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়নি এমনকি ব্যবহারও হয়নি।

দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আদাবাড়িয়ার ঘটনাস্থল থেকে পিস্তলের গুলি এবং হাতে বানানো বোমা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।

ভেড়ামারা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইয়াছির আরাফাত বলেন, ‘কয়েক জায়গায় সংঘর্ষ হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। এসব সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হলে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত