ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের প্রচারে মাইকের উচ্চশব্দে অতিষ্ঠ শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মাইকে চলছে নির্বাচনী প্রচার। আচরণবিধি বিধি লঙ্ঘন করে ইচ্ছে মতো সময়ে প্রচার চালাচ্ছেন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকেরা।

গভীর রাতেও মাইকে চাওয়া হচ্ছে ভোট। এতে চরমভাবে অতিষ্ঠ চলতি এসএসসি পরীক্ষার্থী ও আগামী ২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা।

তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে আইন ভঙ্গ করে কেউ প্রচার চালালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ইসলামপুর উপজেলার ৬টি ইউপিতে নির্বাচন ২৮ নভেম্বর। ৬টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ২৯ জন প্রার্থী। সাধারণ সদস্য (মেম্বার) পদে ১৯০ জন পুরুষ ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৫৩ জন।

নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, বেলা ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ভোটের প্রচারের নিয়ম থাকলেও, তা চলছে সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত। এতে অতিষ্ঠ চলমান এসএসসি ও আগামী ২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং তাঁদের অভিভাবকেরা।

ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, প্রার্থী আর তাঁদের সমর্থকেরা নির্বাচনী প্রচারে ততই বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করছেন না নির্বাচনী প্রচার কাজে। বিশেষ করে হাট-বাজার এলাকাগুলোয় প্রচার মাইকের শব্দ আর শব্দ। ফলে সন্তানদের ভালো পরীক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা।

গাইবান্ধা ইউনিয়নের নাপিতেরচর সরকারপাড়া গ্রামে বাসিন্দা অ্যাডভোকেট জিয়াউর রহমান জুয়েল বলেন, সকাল থেকেই ভোটের মাইকে তাঁরা বিরক্ত। শব্দে বাড়িতে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে। পরীক্ষার্থীরা ভালোভাবে পড়াশোনা করতে পারছে না।

পরীক্ষার্থী রাজন, বেলাল, সুজন, শারমিন, আবিদা, সায়লা বলেন, গভীর রাত পর্যন্ত চলে প্রচার। নির্বাচনী প্রচার মাইকের শব্দে পড়াশোনা করা মুশকিল হয়ে পড়ছে।

গোয়ালেরচর ইউনিয়নের মামারা গ্রামের আকবর আলী বলেন, তাঁর ছেলে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। ছেলের পড়াশোনায় সমস্যা হচ্ছে। এমনকি নামাজের সময়ও প্রচার মাইক বন্ধ করা হয় না।

চরপুটিমারী ইউনিয়নের ডিগ্রিচর গ্রামের এক এইচএসসি পরীক্ষার্থীর অভিভাবক আবুল কালাম বলেন, দিনরাত উচ্চ শব্দে মাইক বাজিয়ে মিছিল করা হচ্ছে। এতে পরীক্ষার্থীদের খুবই ক্ষতি হচ্ছে।

গাইবান্ধা ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আফছার আলী সরদার বলেন, নির্বাচন অফিস থেকে প্রচারের বিষয়ে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা মেনেই প্রচার চালাচ্ছি। কিন্তু যারা সরকার দলীয় প্রার্থী তাঁদের লোকজন প্রচারণায় নিয়ম মানছে না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দুপুর ১২টা থেকেই অধিকাংশ প্রার্থীর পক্ষে মাইকে ভোটের প্রচার চালানো হয়। রাত ৮টার পরও মাইক বাজানো হয়। উপজেলার সদর, পলবান্ধা, গাইবান্ধা, গোয়ালেরচর, চরগোয়ালিনী, চরপুটিমারী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামর একযোগে একাধিক মাইকে চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চাওয়া হচ্ছে।

মাইকের বিকট শব্দে এক অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যায় তারা পড়াশোনা করতে পারছে না। মাইকে শব্দ দূষণ নিয়ে ব্যবসায়ী ও এলাকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোছা. হোসনে আরা বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। যদি কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদুর রহমান বলেন, নির্ধারিত সময়ের বাইরে কেউ যেন ভোটের প্রচার চালাতে না পারেন, সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আইন ভঙ্গ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।