রায়পুরে এক বছরে পানিতে ডুবে ৫২ শিশুর মৃত্যু

রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০২২, ০৭: ১২
আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২২, ১৫: ৩০

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে পানিতে ডুবে গত বছর ৫২ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে পানিতে পড়েছে ১৭৫ জন শিশু। এদের বেশির ভাগেরই বয়স এক বছর থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জেলা সদর হাসপাতাল সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে

অভিভাবকদের সচেতনতার অভাব এবং অসতর্কতার কারণেই এমনটি ঘটেছে বলে মনে করেন চিকিৎসকেরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২১ সালে পুকুরে ডুবে আহত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১২৩ জন শিশু। এরা চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। চিকিৎসার জন্য জরুরি বিভাগে আনার আগেই মারা গেছে ৫২ জন শিশু। সব মিলিয়ে গত বছর পানিতে পড়েছে ১৭৫ জন।

এর আগের বছর ২০২০ সালে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয় ১১১ জন শিশু। ওই বছর মারা যায় ৪৫ জন।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শিশুদের পানিতে পড়া ও মৃত্যুর হার দিন দিন বাড়ছে। একটি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত উপজেলায় এক বছরে পানিতে পড়ার এ সংখ্যাটি উদ্বেগজনক বলছেন চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

২০২১ সালের আলোচিত মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে ৩০ অক্টোবর ও ২৬ জুন। পৌরসভার দেনায়েতপুর এলাকায় নানার বাড়িতে বেড়াতে এসে দুই খালাতো ভাই শিহাব (১৮ মাস) ও আবদুল্লাহ (২) পানিতে ডুবে মারা যায়। চরআবাবিল ইউনিয়নের হায়দরগঞ্জের সাইয়্যেদ মঞ্জিলের ভেতরে পুকুরে ডুবে মৃত্যু ঘটে আরিয়া (৬) ও ফাইয়াজ হোসেনের (৭)। সাঁতার না জানার কারণেই তারা পুকুরে ডুবে মারা যায়।

জাতীয় শিশু কিশোর সংগঠন খেলাঘরের কেন্দ্রীয় সদস্য এবং রায়পুরের মানবাধিকার ও সংস্কৃতি কর্মী এম এ রহিম বলেন, স্বাভাবিক জীবন ও মৃত্যুর অধিকার মৌলিক মানবাধিকার। পানিতে পড়ে মৃত্যুকে নীরব দুর্যোগ বলা যায়। অভিভাবকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা ও সচেতনতাই এ থেকে মুক্তির একমাত্র উপায়।

রায়পুর এলএম পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান বলেন, অনেক অভিভাবকের উদাসীনতার কারণে শিশুরা পুকুরে ডুবে মারা যায়। শিশুমৃত্যু কমাতে বাড়িসংলগ্ন পুকুর ও ডোবায় নিরাপত্তা বেষ্টনী দেওয়ার পাশাপাশি সবাইকে সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। সন্তানকে সাঁতার শেখাতে ব্যক্তি উদ্যোগ না বাড়ায় অনেক বড় ছেলেমেয়েও পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে।

রায়পুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) সৈয়দ মোহাম্মদ আরশাদ আলী বলেন, পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যাটি বেশ উদ্বেগজনক। অভিভাবকদের উচিত, শিশু বয়স থেকেই তাদের সাঁতার শেখানো, সতর্ক দৃষ্টি রাখা ও যথেষ্ট সচেতন থাকা। বাড়িসংলগ্ন ডোবা, পুকুর ও ড্রেনগুলোতেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো প্রয়োজন।

রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. বাহারুল আলম বলেন, অভিভাবকদের সচেতনতা ও সতর্কতার অভাবেই ফুটফুটে শিশুগুলোর করুণ মৃত্যু হচ্ছে। কেউ কেউ চিকিৎসায় ভালো হয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরেছে। আবার কেউ কেউ হাসপাতালে আনার পথে মারা গেছে। এ ধরনের মৃত্যু বেদনাদায়ক। সম্মিলিতভাবে সচেতনতা বাড়ানো গেলে এ অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত