ঢাকায় দিন দিন যানজট না কমে বরং বাড়ছে—সমস্যাটা কোথায়?
আমরা অতীতে প্রকল্পভিত্তিক সমাধানের পথে হেঁটেছি, সমস্যাভিত্তিক সমাধানের পথে হাঁটিনি। একটা উদাহরণ দিয়ে বলি, যানজট একটা জায়গায় প্রকট আকার ধারণ করলে যানজট নিরসনের চেষ্টা করা হয়েছে অবকাঠামো নির্মাণ করে। যানজট যেখানে সৃষ্টি হচ্ছে, সেখানে কাজ করা হয়নি। অবকাঠামো তৈরি করে যানবাহনকে আরও উৎসাহিত করা হয়েছে। বিআরটিএর তথ্য দেখলে বোঝা যায়, বিগত এক যুগে অবকাঠামো নির্মাণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে। শুধু অবকাঠামো নির্মাণ করে যানজট নিরসন সম্ভব না।
অবকাঠামোর পাশাপাশি আমাদের পলিসির পরিবর্তন দরকার। যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করাটা প্রকল্পভিত্তিক সমাধান না। সেটা হলো সমস্যাভিত্তিক সমাধান। যানবাহন নিয়ন্ত্রণ না করে অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। অবাধে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে যানবাহন চলাচলের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রকল্প করে বিশাল অর্থের বিনিয়োগ করেছি। তাতে যানজট নিয়ন্ত্রণ তো হয়নি, বরং সেই অবকাঠামো আরও যানবাহন নামাতে উৎসাহ দিয়েছে। ফ্লাইওভার করে ছোট ছোট যানবাহন চলাচলে উৎসাহিত করা হয়েছে।
ঢাকার মতো মেগাসিটিকে নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা করা দরকার। সড়কের সক্ষমতা ও ধারণক্ষমতা অনুযায়ী কী পরিমাণ যানবাহন থাকা দরকার—এটা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো কাজ হয়নি।
আপনারা এক সুপারিশে বলেছেন, সব পরিবহনকে এক কোম্পানির আওতায় আনলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
কিন্তু পরিবহন সেক্টরে মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য আছে। তাহলে সমাধান কীভাবে হবে?
এই শহরে আড়াই থেকে তিন কোটি লোকের বাস। একটি আদর্শ শহরে মোট শহরের তুলনায় ২৫ শতাংশ সড়ক থাকতে হয়। কিন্তু আমাদের আছে মাত্র ৭ শতাংশ। এই ৭ শতাংশও ব্যবহার করতে পারি না মূলত রাজনৈতিক কারণে। সড়কে পার্কিং, ফুটপাত দখল এবং গণপরিবহনকে নিয়ন্ত্রণ না করা হলো রাজনৈতিক কারণ। রাজনৈতিক দৌরাত্ম্যের ব্যাপারটা পরিবহন সেক্টরের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। এটা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করতে হবে।
আমাদের প্রস্তাবগুলো দর্শনগতভাবে আলাদা। সব রুটের বাস একটা কোম্পানির আওতায় আনতে হবে। আমাদের প্রস্তাব হলো, সরকার হবে সব পরিবহনের প্রধান। সরকারের মাধ্যমে ঢাকা শহরের বাসগুলো পরিচালিত হবে। বাসের মালিকেরা হবেন এর অংশীজন, তাঁদের হাতে কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। প্রয়োজনবোধে বাসের মালিক হিসেবে তাঁরা ক্ষতিপূরণ নিয়ে চলে যাবেন।
সরকারের হাতে মালিকানা এবং নিয়ন্ত্রণ না গেলে মালিকদের দৌরাত্ম্য বা সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব হবে না। যদি এ সেক্টরে কোনো লোকসান হয়, তাহলে সরকার ভর্তুকি দেবে। পৃথিবীর সব উন্নত দেশে গণপরিবহনে ভর্তুকি দেওয়া হয়। কারণ বছরে যানজটের ফলে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়, তার সামান্য যদি ভর্তুকি দেওয়া হয়, সেটা ওই ক্ষতির তুলনায় সাশ্রয়ী হবে। যে কারণে আমরা সরকারনিয়ন্ত্রিত গণপরিবহনের কথা বলছি। এই চিন্তা বা দর্শনটা বাস্তবায়ন করা অসম্ভব নয়। এটা করা হলে পরিবহন সেক্টরে মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য থাকবে না।
গণপরিবহনের মাধ্যমে যদি শহরের ৭০ শতাংশ মানুষকে সুবিধা দেওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে ঢাকার এই সমস্যার সমাধান কখনো হবে না।
আনফিট এবং প্রাইভেট গাড়িকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে?
গণপরিবহনের নিয়ন্ত্রণটা পুরোপুরি মালিকদের হাতে থাকায় আনফিট গাড়ি বন্ধ করা যাচ্ছে না। সরকার যদি নিয়ন্ত্রণ নেয় কোম্পানির আন্ডারে, তখন এমনিতেই আনফিট গাড়ি বাতিল হয়ে যাবে। সরকার তখন ঝুঁকিটা নেবে। কিন্তু এখন যারা চালাচ্ছে, তারা এই ঝুঁকি নিচ্ছে না, কারণ তারা এটাকে দেখছে ব্যবসায়ীর দৃষ্টিতে, সেবার দৃষ্টিতে নয়। বিভিন্নজনকে ম্যানেজ করে আনফিট গাড়ি চালানো হয়। এ জন্য তারা ভালো গাড়ির জন্য বিনিয়োগ করতে রাজি নয়।
প্রকৃত অর্থে যেটাকে গণপরিবহন বলে, সেটা এখানে নেই। মডেল গণপরিবহনে কোন বাসস্টপেজে কখন গাড়ি থামবে এবং কত সময় পর আসবে, সেটা নির্দিষ্ট করা থাকে। যেটা মেট্রোরেল মেনে চলে। এ জন্য গণপরিবহনভিত্তিক পরিবহন ব্যবস্থাপনা তৈরি করতে হবে।
২০২৬ সালের মধ্যে তিনটি মেট্রোরেলের জন্য সরকারের প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার কথা। গণপরিবহনের জন্য ৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হলে মেট্রোরেলের কোচের মানের বাস নামিয়ে মেট্রোরেল যে পরিমাণ যাত্রী পরিবহন করবে, তার চেয়ে সাত গুণ বেশি পরিমাণ যাত্রী বাসে পরিবহন করা সম্ভব। তখন ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার নিরুৎসাহিত হবে। এর জন্য দরকার কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত। সেন্ট্রাল লন্ডনে পিক আওয়ারে কেউ ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করলে তাঁকে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা জরিমানা দিতে হয়। সেখানে পার্কিং কস্ট ব্যয়বহুল। একটা গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য দৈনিক এক হাজার টাকা দিতে হয়। সে হিসাবে কেউ যদি অফিসে গাড়ি নিয়ে যান, তাহলে তাঁর দুই থেকে তিন হাজার টাকা ব্যয় হবে। এর উদ্দেশ্য হলো, ভালো গণপরিবহন থাকা সত্ত্বেও কেউ ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করলে বাড়তি খরচ করতে হবে।
ভালো মানের গণপরিবহনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কিছু নীতিগত সিদ্ধান্তও পালন করতে হবে। পলিসি লাগবে। সড়ক থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি সরানো গেলে একটা চমৎকার গণপরিবহনের সেবা দেওয়া সম্ভব।
কেউ কেউ যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য ঢাকা শহরকে বিকেন্দ্রীকরণের কথা বলেন। আপনার বক্তব্য কী?
একমত। ঢাকার ওপর অনেক অত্যাচার হয়েছে। একটা বাসযোগ্য শহরের নির্দিষ্ট ধারণক্ষমতা থাকে। ঢাকা শহরের আয়তন ৩০৪ বর্গকিলোমিটার। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে এখন ৪০ থেকে ৫০ হাজার লোক বাস করে। এটা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে বেমানান। উন্নত বিশ্বের শহরে প্রতি বর্গকিলোমিটারে সর্বোচ্চ ৪ থেকে ৫ হাজার লোকের বাস। আমাদের এখানে সে তুলনায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে দশ গুণ লোক বাস করছে। প্রতিদিন কর্মসংস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ নানা কারণে প্রায় দুই হাজার লোক স্থায়ীভাবে ঢাকায় প্রবেশ করছে। এ জন্য যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য বিকেন্দ্রীকরণ হতে পারে একটা ভালো উপায়। যেমন পাকিস্তান ও মালয়েশিয়া তাদের রাজধানী অন্য জায়গায় নিয়ে গেছে। ভারতও তাদের রাজধানী দুইবার স্থানান্তর করেছে। রাজধানী সরিয়ে নিলে অথবা ঢাকা বিকেন্দ্রীকরণ করলে এর ওপর চাপ কমবে। আমাদের যাঁরা নীতিনির্ধারক আছেন, তাঁরা এ বিষয়টা নিয়ে ভাবছেন বলে আমার মনে হয় না। পুরোপুরি বিকেন্দ্রীকরণ করা সম্ভব না হলেও অন্তত প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ করা যায় কি না, সেটা ভাবা উচিত। ঢাকা শহরে অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, যেগুলো এ শহরে থাকার কোনো যৌক্তিকতা আমি দেখি না। অনেক গবেষণা ইনস্টিটিউট ঢাকার মধ্যে আছে, তাদের আসলে এখানে কোনো কাজ নেই। পুরো রাজধানী বিকেন্দ্রীকরণ করা সম্ভব না হলে, প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ করা দরকার। তাতে ঢাকার ওপর কিছুটা চাপ কমবে।
সবাই ঢাকায় থাকতে চায়। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ শুরু হলে সেটা মেনে নিতে হবে। অন্যজন ঢাকার বাইরে যাবে, শুধু আমি যাব না—এই মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। জনগণ বিকেন্দ্রীকরণের পক্ষে না বিপক্ষে, তা নিয়ে সরকার একটা গণভোটের আয়োজন করতে পারে।
সম্প্রতি আপনারা প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। আপনারা কতটা আশাবাদী?
আমরা বিজ্ঞানভিত্তিক সুপারিশ দিয়েছি। পরিবহন সেক্টর হলো পুরোপুরি বিজ্ঞান। আমি আশাবাদী যে স্বল্প সময়ে সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা হলে গত দেড় মাসে যে যানজট দেখেছি, সেটা কেটে যাবে। তবে ট্রাফিককে তাদের পূর্ণ সক্ষমতা নিয়ে নামাতে হবে। মধ্য থেকে দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশে আমরা পুরো ঢাকার নেটওয়ার্কের কথা বলেছি।
প্রধান উপদেষ্টা আমাদের সুপারিশগুলো ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং সাধুবাদ জানিয়েছেন। যাঁরা এটা বাস্তবায়ন করবেন তাঁদের তিনি তৎক্ষণাৎ নির্দেশ দিয়েছেন কয়েকটি জায়গায় পরীক্ষামূলকভাবে কাজ শুরু করতে।
ঢাকায় দিন দিন যানজট না কমে বরং বাড়ছে—সমস্যাটা কোথায়?
আমরা অতীতে প্রকল্পভিত্তিক সমাধানের পথে হেঁটেছি, সমস্যাভিত্তিক সমাধানের পথে হাঁটিনি। একটা উদাহরণ দিয়ে বলি, যানজট একটা জায়গায় প্রকট আকার ধারণ করলে যানজট নিরসনের চেষ্টা করা হয়েছে অবকাঠামো নির্মাণ করে। যানজট যেখানে সৃষ্টি হচ্ছে, সেখানে কাজ করা হয়নি। অবকাঠামো তৈরি করে যানবাহনকে আরও উৎসাহিত করা হয়েছে। বিআরটিএর তথ্য দেখলে বোঝা যায়, বিগত এক যুগে অবকাঠামো নির্মাণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে। শুধু অবকাঠামো নির্মাণ করে যানজট নিরসন সম্ভব না।
অবকাঠামোর পাশাপাশি আমাদের পলিসির পরিবর্তন দরকার। যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করাটা প্রকল্পভিত্তিক সমাধান না। সেটা হলো সমস্যাভিত্তিক সমাধান। যানবাহন নিয়ন্ত্রণ না করে অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। অবাধে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে যানবাহন চলাচলের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রকল্প করে বিশাল অর্থের বিনিয়োগ করেছি। তাতে যানজট নিয়ন্ত্রণ তো হয়নি, বরং সেই অবকাঠামো আরও যানবাহন নামাতে উৎসাহ দিয়েছে। ফ্লাইওভার করে ছোট ছোট যানবাহন চলাচলে উৎসাহিত করা হয়েছে।
ঢাকার মতো মেগাসিটিকে নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা করা দরকার। সড়কের সক্ষমতা ও ধারণক্ষমতা অনুযায়ী কী পরিমাণ যানবাহন থাকা দরকার—এটা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো কাজ হয়নি।
আপনারা এক সুপারিশে বলেছেন, সব পরিবহনকে এক কোম্পানির আওতায় আনলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
কিন্তু পরিবহন সেক্টরে মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য আছে। তাহলে সমাধান কীভাবে হবে?
এই শহরে আড়াই থেকে তিন কোটি লোকের বাস। একটি আদর্শ শহরে মোট শহরের তুলনায় ২৫ শতাংশ সড়ক থাকতে হয়। কিন্তু আমাদের আছে মাত্র ৭ শতাংশ। এই ৭ শতাংশও ব্যবহার করতে পারি না মূলত রাজনৈতিক কারণে। সড়কে পার্কিং, ফুটপাত দখল এবং গণপরিবহনকে নিয়ন্ত্রণ না করা হলো রাজনৈতিক কারণ। রাজনৈতিক দৌরাত্ম্যের ব্যাপারটা পরিবহন সেক্টরের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। এটা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করতে হবে।
আমাদের প্রস্তাবগুলো দর্শনগতভাবে আলাদা। সব রুটের বাস একটা কোম্পানির আওতায় আনতে হবে। আমাদের প্রস্তাব হলো, সরকার হবে সব পরিবহনের প্রধান। সরকারের মাধ্যমে ঢাকা শহরের বাসগুলো পরিচালিত হবে। বাসের মালিকেরা হবেন এর অংশীজন, তাঁদের হাতে কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। প্রয়োজনবোধে বাসের মালিক হিসেবে তাঁরা ক্ষতিপূরণ নিয়ে চলে যাবেন।
সরকারের হাতে মালিকানা এবং নিয়ন্ত্রণ না গেলে মালিকদের দৌরাত্ম্য বা সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব হবে না। যদি এ সেক্টরে কোনো লোকসান হয়, তাহলে সরকার ভর্তুকি দেবে। পৃথিবীর সব উন্নত দেশে গণপরিবহনে ভর্তুকি দেওয়া হয়। কারণ বছরে যানজটের ফলে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়, তার সামান্য যদি ভর্তুকি দেওয়া হয়, সেটা ওই ক্ষতির তুলনায় সাশ্রয়ী হবে। যে কারণে আমরা সরকারনিয়ন্ত্রিত গণপরিবহনের কথা বলছি। এই চিন্তা বা দর্শনটা বাস্তবায়ন করা অসম্ভব নয়। এটা করা হলে পরিবহন সেক্টরে মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য থাকবে না।
গণপরিবহনের মাধ্যমে যদি শহরের ৭০ শতাংশ মানুষকে সুবিধা দেওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে ঢাকার এই সমস্যার সমাধান কখনো হবে না।
আনফিট এবং প্রাইভেট গাড়িকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে?
গণপরিবহনের নিয়ন্ত্রণটা পুরোপুরি মালিকদের হাতে থাকায় আনফিট গাড়ি বন্ধ করা যাচ্ছে না। সরকার যদি নিয়ন্ত্রণ নেয় কোম্পানির আন্ডারে, তখন এমনিতেই আনফিট গাড়ি বাতিল হয়ে যাবে। সরকার তখন ঝুঁকিটা নেবে। কিন্তু এখন যারা চালাচ্ছে, তারা এই ঝুঁকি নিচ্ছে না, কারণ তারা এটাকে দেখছে ব্যবসায়ীর দৃষ্টিতে, সেবার দৃষ্টিতে নয়। বিভিন্নজনকে ম্যানেজ করে আনফিট গাড়ি চালানো হয়। এ জন্য তারা ভালো গাড়ির জন্য বিনিয়োগ করতে রাজি নয়।
প্রকৃত অর্থে যেটাকে গণপরিবহন বলে, সেটা এখানে নেই। মডেল গণপরিবহনে কোন বাসস্টপেজে কখন গাড়ি থামবে এবং কত সময় পর আসবে, সেটা নির্দিষ্ট করা থাকে। যেটা মেট্রোরেল মেনে চলে। এ জন্য গণপরিবহনভিত্তিক পরিবহন ব্যবস্থাপনা তৈরি করতে হবে।
২০২৬ সালের মধ্যে তিনটি মেট্রোরেলের জন্য সরকারের প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার কথা। গণপরিবহনের জন্য ৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হলে মেট্রোরেলের কোচের মানের বাস নামিয়ে মেট্রোরেল যে পরিমাণ যাত্রী পরিবহন করবে, তার চেয়ে সাত গুণ বেশি পরিমাণ যাত্রী বাসে পরিবহন করা সম্ভব। তখন ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার নিরুৎসাহিত হবে। এর জন্য দরকার কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত। সেন্ট্রাল লন্ডনে পিক আওয়ারে কেউ ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করলে তাঁকে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা জরিমানা দিতে হয়। সেখানে পার্কিং কস্ট ব্যয়বহুল। একটা গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য দৈনিক এক হাজার টাকা দিতে হয়। সে হিসাবে কেউ যদি অফিসে গাড়ি নিয়ে যান, তাহলে তাঁর দুই থেকে তিন হাজার টাকা ব্যয় হবে। এর উদ্দেশ্য হলো, ভালো গণপরিবহন থাকা সত্ত্বেও কেউ ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করলে বাড়তি খরচ করতে হবে।
ভালো মানের গণপরিবহনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কিছু নীতিগত সিদ্ধান্তও পালন করতে হবে। পলিসি লাগবে। সড়ক থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি সরানো গেলে একটা চমৎকার গণপরিবহনের সেবা দেওয়া সম্ভব।
কেউ কেউ যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য ঢাকা শহরকে বিকেন্দ্রীকরণের কথা বলেন। আপনার বক্তব্য কী?
একমত। ঢাকার ওপর অনেক অত্যাচার হয়েছে। একটা বাসযোগ্য শহরের নির্দিষ্ট ধারণক্ষমতা থাকে। ঢাকা শহরের আয়তন ৩০৪ বর্গকিলোমিটার। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে এখন ৪০ থেকে ৫০ হাজার লোক বাস করে। এটা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে বেমানান। উন্নত বিশ্বের শহরে প্রতি বর্গকিলোমিটারে সর্বোচ্চ ৪ থেকে ৫ হাজার লোকের বাস। আমাদের এখানে সে তুলনায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে দশ গুণ লোক বাস করছে। প্রতিদিন কর্মসংস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ নানা কারণে প্রায় দুই হাজার লোক স্থায়ীভাবে ঢাকায় প্রবেশ করছে। এ জন্য যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য বিকেন্দ্রীকরণ হতে পারে একটা ভালো উপায়। যেমন পাকিস্তান ও মালয়েশিয়া তাদের রাজধানী অন্য জায়গায় নিয়ে গেছে। ভারতও তাদের রাজধানী দুইবার স্থানান্তর করেছে। রাজধানী সরিয়ে নিলে অথবা ঢাকা বিকেন্দ্রীকরণ করলে এর ওপর চাপ কমবে। আমাদের যাঁরা নীতিনির্ধারক আছেন, তাঁরা এ বিষয়টা নিয়ে ভাবছেন বলে আমার মনে হয় না। পুরোপুরি বিকেন্দ্রীকরণ করা সম্ভব না হলেও অন্তত প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ করা যায় কি না, সেটা ভাবা উচিত। ঢাকা শহরে অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, যেগুলো এ শহরে থাকার কোনো যৌক্তিকতা আমি দেখি না। অনেক গবেষণা ইনস্টিটিউট ঢাকার মধ্যে আছে, তাদের আসলে এখানে কোনো কাজ নেই। পুরো রাজধানী বিকেন্দ্রীকরণ করা সম্ভব না হলে, প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ করা দরকার। তাতে ঢাকার ওপর কিছুটা চাপ কমবে।
সবাই ঢাকায় থাকতে চায়। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ শুরু হলে সেটা মেনে নিতে হবে। অন্যজন ঢাকার বাইরে যাবে, শুধু আমি যাব না—এই মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। জনগণ বিকেন্দ্রীকরণের পক্ষে না বিপক্ষে, তা নিয়ে সরকার একটা গণভোটের আয়োজন করতে পারে।
সম্প্রতি আপনারা প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। আপনারা কতটা আশাবাদী?
আমরা বিজ্ঞানভিত্তিক সুপারিশ দিয়েছি। পরিবহন সেক্টর হলো পুরোপুরি বিজ্ঞান। আমি আশাবাদী যে স্বল্প সময়ে সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা হলে গত দেড় মাসে যে যানজট দেখেছি, সেটা কেটে যাবে। তবে ট্রাফিককে তাদের পূর্ণ সক্ষমতা নিয়ে নামাতে হবে। মধ্য থেকে দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশে আমরা পুরো ঢাকার নেটওয়ার্কের কথা বলেছি।
প্রধান উপদেষ্টা আমাদের সুপারিশগুলো ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং সাধুবাদ জানিয়েছেন। যাঁরা এটা বাস্তবায়ন করবেন তাঁদের তিনি তৎক্ষণাৎ নির্দেশ দিয়েছেন কয়েকটি জায়গায় পরীক্ষামূলকভাবে কাজ শুরু করতে।
বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৫ দিন আগেগাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪দেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২০ নভেম্বর ২০২৪