চাল এসেছে, বিতরণ হয়নি

আনোয়ার হোসেন, মনিরামপুর
প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২২, ০৭: ৩২
আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২২, ১০: ৫৯

মনিরামপুরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (১০ টাকার) মার্চ মাসের চাল পাননি হরিদাসকাটি ইউনিয়নের উপকারভোগীরা। তালিকা সংশোধনের নামে ১ হাজার ৬৫ জনের চাল পরিবেশকদের (ডিলার) গুদামে আটকে রাখা হয়েছে। কবে এ চাল বিতরণ করা হবে, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে পারেননি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অনুমতি নিয়ে গত বুধবার ওই ইউনিয়নের দুজন পরিবেশক চাল বিতরণ করতে গিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ও চেয়ারম্যানের বাধার মুখে পড়ে বিতরণ বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর গত রোববার একই অবস্থার মুখে পড়েন অপর এক পরিবেশক। ফলে চাল নিতে এসে ফিরে গেছেন ৫-৬ শ উপকারভোগী। চাল না পেয়ে বিপাকে আছেন জলাবদ্ধ এ ইউনিয়নের বাসিন্দারা।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, হরিদাসকাটি ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১ হাজার ৩৩৬ জন উপকারভোগী রয়েছেন। যারা ২০১৬ সাল থেকে ৩০০ টাকা মূল্যে মার্চ, এপ্রিল, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে বছরে ৫ বার ৩০ কেজি করে চাল পেয়ে আসছেন। গত বছর খাদ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় ও খাদ্য নিয়ন্ত্রকের পরামর্শে সাবেক চেয়ারম্যান বিপদ ভঞ্জন পাড়ে ৫৮টি কার্ড বাতিল করে নতুনদের তালিকায় যুক্ত করেন। নতুন তালিকাভুক্তরা গত বছরের অক্টোবর ও নভেম্বরের চাল পেয়েছেন।

এদিকে নভেম্বরের নির্বাচনে ওই ইউপিতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আলমগীর কবির লিটন। চলতি মাসে তিনি ৪৪৫ জনকে বাদ দিয়ে নতুন নাম প্রস্তাব করেছেন। সে তালিকা যাচাই–বাছাই করে কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত চাল বিতরণ বন্ধ থাকবে বলে জানা গেছে।

স্থানীয়রা বলছেন, হরিদাসকাটি ইউনিয়নটি জলাবদ্ধ এলাকা। ভবদহের জলাবদ্ধতার কারণে এখানকার মাঠঘাটে পানি জমে থাকায় অধিকাংশ গ্রামে ধান চাষ হয় না। ১০ টাকার চাল এ অঞ্চলের মানুষের অনেক উপকারে আসছিল। তালিকা সংশোধনের নামে এতসংখ্যক মানুষের চাল আটকে রাখা ঠিক হয়নি। যাদের নাম বাদ দিয়ে নতুন ৪৪৫ জনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে, সেগুলো বাদ রেখে বাকি লোকের চাল দেওয়ার দাবি তাঁদের।

হরিদাসকাটি ইউপির কুচলিয়া গ্রামের উপকারভোগী করুনা বিশ্বাস বলেন, ‘এ মাসের চাল দেয়নি। পানিতে তলিয়ে থাকায় আমাদের গ্রামে ধান চাষ হয় না। খুব কষ্টে আছি আমরা।’

নেবুগাতী গ্রামের ভদ্রকান্ত বলেন, ‘জমি চাষ তো আর করা যায় না! চা বেচে ৫ জনের সংসার চলে। ১০ টাকার চালের কার্ডে ভালোই উপকার হচ্ছিল। কিন্তু এ মাসের চাল দেলে না।’

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির পরিবেশক সবুজ হোসেন বলেন, ‘গত রোববারে চাল দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। ২০০-২৫০ জন লোক এসেছিল। খাদ্য কর্মকর্তা জানতে পেরে বিতরণ বন্ধ রাখতে বলেছেন।’

পরিবেশক শাহিন হোসেন বলেন, ‘ইউএনওর অনুমতি নিয়ে গত বুধবার চাল দিচ্ছিলাম। ১৪ জনকে দেওয়ার পর এক ইউপি সদস্য এসে বললেন, বিতরণ বন্ধ রাখতে। পরে লোকজন ফিরে গেছে।’

পরিবেশক মানিক হোসেন বলেন, ‘গত মঙ্গলবার রাতে খাদ্য নিয়ন্ত্রক ফোন করে চাল বিতরণের জন্য বলেছেন। লোকজন খবর দিয়ে বুধবারে চাল বিক্রি করছিলাম। ৫৭ জনকে দেওয়ার পর চেয়ারম্যান বললেন, বন্ধ রাখতে। তালিকা সংশোধন না করা পর্যন্ত বিতরণ বন্ধ রাখতে বলেছে।’

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইন্দ্রোজিৎ সাহা বলেন, ‘হরিদাসকাটির বর্তমান চেয়ারম্যান এক সপ্তাহ আগে ৪৪৫টি কার্ড সংশোধনের জন্য তালিকা জমা দিয়েছে, যা তদন্ত করে চূড়ান্ত করা হবে।’

ইন্দ্রোজিৎ সাহা বলেন, ‘চাল আটকে গরিব মানুষগুলোকে কষ্ট দিয়ে লাভ কি। এ জন্য ইউএনও মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলে আমি চাল দিতে পরিবেশকদের বলে দিয়েছি। তখন চেয়ারম্যান এসে বিতরণ বন্ধ রাখতে বলেন।’

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আরও বলেন, ‘চেয়ারম্যান বাধা দেওয়ার পর ইউএনও আমাকে বলেছেন, চাল দেওয়া বন্ধ রাখতে। সব কার্ড সংগ্রহ করে তালিকা বাছাই না করা পর্যন্ত চাল বিতরণ বন্ধ রাখা থাকবে।’

হরিদাসকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর কবির লিটন বলেন, ‘পরিবেশকেরা নতুন কার্ড করার নামে গরিব অসহায় মানুষদের কাছ থেকে টাকা খেয়েছেন। তা ছাড়া অনেকে এ চাল নিয়ে ঘেরে মাছেরে খাওয়ান, যাদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের থেকে গরিব লোক দেখে নতুন নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে একাধিকবার ইউএনও সৈয়দ জাকির হাসানের নম্বরে কল করা হয়েছে। তিনি ফোন ধরেননি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত