মাসুদ রানা
আজকের পত্রিকা: আমরা কথায় কথায় ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’র কথা বলি। দেশ কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় চলছে?
মফিদুল হক: দেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় চলছে কি না, সেটা এক বড় প্রশ্ন এবং এই প্রশ্নের মধ্যে নিহিত রয়েছে আরও অনেক প্রশ্ন। প্রথমত, বলতে হয় ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ নিয়ে। এই অভিধা নানাভাবে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা যায়, করা দরকারও, তবে সারসত্য সন্ধানে আমাদের ইতিহাস থেকে শিক্ষা ও দীক্ষা নিতে হবে। ধর্মের নিরিখে সাম্প্রদায়িক বিভাজন ঘটিয়ে যে সংঘাত, হানাহানি বিশ শতকের প্রথমার্ধে উপমহাদেশের সমাজ ও জীবন সমস্যাকীর্ণ এবং রক্তাক্ত করে তুলেছিল, সেই সংকট থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার নামে দ্বিজাতি-তত্ত্বের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল পাকিস্তান। ইসলাম ধর্মের আওতায় নানা দেশের নানা জাতি, বর্ণ ও ভাষাভাষী গোষ্ঠী রয়েছে। ধর্ম তাদের ভাষা ভুলিয়ে দেয় না, জাতি-পরিচয়ও মুছে ফেলে না। এখানেই ধর্মের সৌন্দর্য, যা মানুষে মানুষে মিলনের ক্ষেত্র তৈরি করে, স্রষ্টার প্রতি নিবেদিত মানুষের আত্মার পরিশুদ্ধি ঘটায়। কিন্তু রাজনীতিকে যখন গ্রাস করে ধর্ম, রাজনৈতিক মতাদর্শ চাপিয়ে দেওয়া হয় ধর্মের ওপর, ধর্মকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য অর্জনে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তখনই ঘটে বিভ্রম, বিকৃতি, বিবাদ ও বিনাশ। মুসলমানের আবাসভূমির নামে, মুসলমানরা ‘এক জাতি’ এমন রাজনৈতিক ঘোষণার ভিত্তিতে, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৭ সালে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পাকিস্তানের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হয় পশ্চিমে এবং সেখান থেকে শাসিত ও শোষিত হতে থাকে হাজার মাইল দূরের পূর্ব বাংলার বাঙালিরা। এই ঔপনিবেশিক শাসন পোক্ত করতে ধর্মকে করা হয় হাতিয়ার, অস্বীকার করা হয় বাঙালির জাতিসত্তা, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির অধিকার। এর বিপরীতে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক তথা জাতীয় অধিকারের আন্দোলন পরিণতি পায় মুক্তিযুদ্ধে, বাঙালি প্রতিষ্ঠা করে তার নিজস্ব রাষ্ট্র—বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তাই ইতিহাসে প্রোথিত, ইতিহাস দ্বারা নির্মিত, যা বাংলাদেশ আন্দোলনের ভিত্তি এবং যা প্রতিফলিত হয়েছে ১৯৭২ সালের সংবিধানে চার রাষ্ট্রাদর্শে।
রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা আমরা করেছি বিপুল আত্মদানের বিনিময়ে, অন্যদিকে রাষ্ট্রাদর্শ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম তো চলমান। এই লড়াইয়ে মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল বঙ্গবন্ধু-হত্যা এবং চার জাতীয় নীতি সংবিধান থেকে মুছে ফেলার মধ্য দিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রামের পর বাংলাদেশ আবার সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ঘটিয়েছে, কিন্তু বাস্তব জীবনে তার রূপায়ণ তো নিরন্তর লড়াই। আর তাই বলা যায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ চলছে এবং চলছে না। উভয় ক্ষেত্রে সজাগ ও সতর্ক থেকে পথরেখা নির্মাণ অতীব জরুরি।
আজকের পত্রিকা: শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিতে বন্ধ্যাদশা নেমে আসার কারণ কী?
মফিদুল হক: শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিতে বন্ধ্যাদশা নেমে এসেছে, এমন উক্তির সঙ্গে আমি সহমত নই। পরিস্থিতি পাল্টে গেছে বিপুলভাবে, প্রযুক্তির নব-নব উদ্ভাবন মানুষে মানুষে সংযোগের মাত্রা নতুন স্তরে নিয়ে গেছে। তথ্যের সমুদ্রে আমরা ভাসছি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বহুজনের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছি, কেউ আর বিচ্ছিন্ন দূর দ্বীপবাসী নয়। তবে সংযোগের অভূতপূর্ব ও অভাবিত সব সুযোগ হাতের মুঠোয় পেয়েও সংযোগহীনতা দ্বারা আমরা আক্রান্ত হচ্ছি, মানুষের সঙ্গে মানুষের সজীব প্রাণবন্ত যোগাযোগ ও মিলন ক্রমেই ক্ষীয়মাণ হচ্ছে, জন্ম নিচ্ছে মানবতার সংকট, সভ্যতার সংকট। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, উৎপাদনশীলতা, অর্থনৈতিক সামর্থ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে যে অর্জন আমাদের কাঙ্ক্ষিত ছিল তা লাভ করা সত্ত্বেও মানবতার বিকাশ ঘটেনি। সমাজে প্রতিযোগিতা, সংঘাত, হানাহানি, বিদ্বেষ, উগ্রতা বেড়ে চলেছে, পৃথিবীজুড়ে যুদ্ধ ও বাস্তুচ্যুত দুর্ভাগা মানুষের সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। এমনি সমূহ বিপর্যয় থেকে মানবতার উদ্ধারের জন্য যে প্রজ্ঞা, সংবেদনশীলতা ও চিন্তাদর্শন প্রয়োজন তা জোগাতে পারে সংস্কৃতি। ফলে নতুনভাবে জীবন ও সংস্কৃতির পাঠগ্রহণ ও বিকাশসাধন জরুরি হয়ে পড়েছে। সেখানটায় ঘাটতি সংস্কৃতির জন্য, মানবতার জন্য সংকট তৈরি করছে। আমাদের নিজস্ব বাস্তবতার নিরিখে প্রতিরোধের সংস্কৃতির পাশাপাশি নির্মাণের সংস্কৃতির দিকে মনোযোগী হওয়া দরকার। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির দৈন্য মোচনে ব্যাপক যে সামাজিক উদ্যোগ দরকার তার কিছু স্ফুরণও নজরে আসে, সেখানেই উপ্ত রয়েছে আশাবাদিতার উপাদান। পাকিস্তানি সাম্প্রদায়িক মতাদর্শে সমাজ আবারও আচ্ছন্ন হচ্ছে ধর্মকে গোষ্ঠীস্বার্থে ব্যবহার দ্বারা। সেখান থেকে মুক্তি পেতে কর্মে ও মানসে মুক্তি বড় প্রশ্ন। সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের মানবিক আদর্শ জোরদার করা এবং উদার অসাম্প্রদায়িক বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ নির্মাণ সাধনায় নিরন্তর প্রয়াস আমাদের চালাতে হবে। সে জন্যই বলা হয়, ইটারনাল ভিজিল্যান্স ইজ দ্য প্রাইস অব ফ্রিডম।
আজকের পত্রিকা: আদর্শের চেয়ে সুবিধাবাদী চর্চা রাজনীতিতে প্রাধান্য পেল কেন?
মফিদুল হক: রাজনৈতিক দল ঘিরে আমরা সরলভাবে অনেক ক্ষেত্রে বিবেচনা করি, কারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে এবং কারা বিপক্ষে। এই বিচারের ভিত্তি রয়েছে বটে, তবে সেই সঙ্গে পরখ করে দেখতে হবে আচরণে এবং জীবনদৃষ্টি ও কর্মে কে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, কে বিপক্ষে। মুখে বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, হাতে মুক্তিযুদ্ধের ব্যানার, কিন্তু সুবিধাবাদ ও স্বার্থপরতা মনের গভীরে প্রোথিত, সাম্প্রদায়িক ধর্মান্ধতা দ্বারা আচ্ছন্ন, দুর্নীতিতে নিমজ্জিত, এমন মানুষদের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত। এই কাজ করা হয় না বলেই আদর্শবাদ দুর্বল হচ্ছে, সুবিধাবাদ প্রাধান্য পাচ্ছে।
আজকের পত্রিকা: জামায়াত তথা ধর্মতন্ত্রী রাজনীতির উত্থান রোধে কিছু কি করণীয় নেই?
মফিদুল হক: জামায়াতে ইসলামী চিহ্নিত ধর্মতন্ত্রী দল, ইতিহাসের ঘৃণ্যতম কর্মকাণ্ডের উদগাতা। গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে জড়িত রাজনৈতিক গোষ্ঠী হিসেবে তারা আদালতে অভিযুক্ত। আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারে আইনের ধারায় ব্যক্তি অভিযুক্ত হলেও এর পেছনে পরিকল্পক ও ইন্ধনদাতা হিসেবে নৃশংস অপরাধ সংঘটনে জড়িত যে দল, সেই বিচারে জামায়াতে ইসলামী চিহ্নিত অপরাধী। গণহত্যার বর্বরতার জন্য দায়ী ব্যক্তির অপরাধের বিচার আমরা করেছি, তবে অভিযুক্ত দলের বিচার এখনো করে উঠতে পারিনি, সেটা করার জন্য ইতিহাসের কাছে আমরা দায়বদ্ধ। হলোকাস্টের শিকার ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক আইনের আলোকে জাতীয় আইনে ও আদালতে ফ্যাসিস্ট দল গঠন নিষিদ্ধ হয়েছে।
এই ইউনিভার্সেল জুরিসডিকশন আমাদেরও অনুসরণ করা উচিত। প্রচলিত আইন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রায় ও পর্যবেক্ষণের সঙ্গে যদি আমরা বিশ্বজনীন আইন বা ইউনিভার্সেল জুরিকডিকসন মিলিয়ে নিই, তবে গণহত্যার জন্য দায়ী দলকেও আমরা বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারি। আদালতে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষার দরকার পড়ে না, মানবতা তথা গোটা মানবসভ্যতার বিরুদ্ধে যারা চরম ঘৃণিত অপরাধ করেছে, তাদের
ওপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করেই এখন বিচার শুরু হতে পারে। প্রয়োজনে বিশ্বজনীন স্বীকৃত রীতি ও আইনের অনুসরণে আমাদের প্রচলিত আইনেও সংশোধনী আনা যেতে পারে। এ কাজ করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আজকের পত্রিকা: আমরা কথায় কথায় ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’র কথা বলি। দেশ কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় চলছে?
মফিদুল হক: দেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় চলছে কি না, সেটা এক বড় প্রশ্ন এবং এই প্রশ্নের মধ্যে নিহিত রয়েছে আরও অনেক প্রশ্ন। প্রথমত, বলতে হয় ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ নিয়ে। এই অভিধা নানাভাবে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা যায়, করা দরকারও, তবে সারসত্য সন্ধানে আমাদের ইতিহাস থেকে শিক্ষা ও দীক্ষা নিতে হবে। ধর্মের নিরিখে সাম্প্রদায়িক বিভাজন ঘটিয়ে যে সংঘাত, হানাহানি বিশ শতকের প্রথমার্ধে উপমহাদেশের সমাজ ও জীবন সমস্যাকীর্ণ এবং রক্তাক্ত করে তুলেছিল, সেই সংকট থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার নামে দ্বিজাতি-তত্ত্বের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল পাকিস্তান। ইসলাম ধর্মের আওতায় নানা দেশের নানা জাতি, বর্ণ ও ভাষাভাষী গোষ্ঠী রয়েছে। ধর্ম তাদের ভাষা ভুলিয়ে দেয় না, জাতি-পরিচয়ও মুছে ফেলে না। এখানেই ধর্মের সৌন্দর্য, যা মানুষে মানুষে মিলনের ক্ষেত্র তৈরি করে, স্রষ্টার প্রতি নিবেদিত মানুষের আত্মার পরিশুদ্ধি ঘটায়। কিন্তু রাজনীতিকে যখন গ্রাস করে ধর্ম, রাজনৈতিক মতাদর্শ চাপিয়ে দেওয়া হয় ধর্মের ওপর, ধর্মকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য অর্জনে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তখনই ঘটে বিভ্রম, বিকৃতি, বিবাদ ও বিনাশ। মুসলমানের আবাসভূমির নামে, মুসলমানরা ‘এক জাতি’ এমন রাজনৈতিক ঘোষণার ভিত্তিতে, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৭ সালে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পাকিস্তানের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হয় পশ্চিমে এবং সেখান থেকে শাসিত ও শোষিত হতে থাকে হাজার মাইল দূরের পূর্ব বাংলার বাঙালিরা। এই ঔপনিবেশিক শাসন পোক্ত করতে ধর্মকে করা হয় হাতিয়ার, অস্বীকার করা হয় বাঙালির জাতিসত্তা, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির অধিকার। এর বিপরীতে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক তথা জাতীয় অধিকারের আন্দোলন পরিণতি পায় মুক্তিযুদ্ধে, বাঙালি প্রতিষ্ঠা করে তার নিজস্ব রাষ্ট্র—বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তাই ইতিহাসে প্রোথিত, ইতিহাস দ্বারা নির্মিত, যা বাংলাদেশ আন্দোলনের ভিত্তি এবং যা প্রতিফলিত হয়েছে ১৯৭২ সালের সংবিধানে চার রাষ্ট্রাদর্শে।
রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা আমরা করেছি বিপুল আত্মদানের বিনিময়ে, অন্যদিকে রাষ্ট্রাদর্শ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম তো চলমান। এই লড়াইয়ে মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল বঙ্গবন্ধু-হত্যা এবং চার জাতীয় নীতি সংবিধান থেকে মুছে ফেলার মধ্য দিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রামের পর বাংলাদেশ আবার সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ঘটিয়েছে, কিন্তু বাস্তব জীবনে তার রূপায়ণ তো নিরন্তর লড়াই। আর তাই বলা যায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ চলছে এবং চলছে না। উভয় ক্ষেত্রে সজাগ ও সতর্ক থেকে পথরেখা নির্মাণ অতীব জরুরি।
আজকের পত্রিকা: শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিতে বন্ধ্যাদশা নেমে আসার কারণ কী?
মফিদুল হক: শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিতে বন্ধ্যাদশা নেমে এসেছে, এমন উক্তির সঙ্গে আমি সহমত নই। পরিস্থিতি পাল্টে গেছে বিপুলভাবে, প্রযুক্তির নব-নব উদ্ভাবন মানুষে মানুষে সংযোগের মাত্রা নতুন স্তরে নিয়ে গেছে। তথ্যের সমুদ্রে আমরা ভাসছি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বহুজনের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছি, কেউ আর বিচ্ছিন্ন দূর দ্বীপবাসী নয়। তবে সংযোগের অভূতপূর্ব ও অভাবিত সব সুযোগ হাতের মুঠোয় পেয়েও সংযোগহীনতা দ্বারা আমরা আক্রান্ত হচ্ছি, মানুষের সঙ্গে মানুষের সজীব প্রাণবন্ত যোগাযোগ ও মিলন ক্রমেই ক্ষীয়মাণ হচ্ছে, জন্ম নিচ্ছে মানবতার সংকট, সভ্যতার সংকট। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, উৎপাদনশীলতা, অর্থনৈতিক সামর্থ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে যে অর্জন আমাদের কাঙ্ক্ষিত ছিল তা লাভ করা সত্ত্বেও মানবতার বিকাশ ঘটেনি। সমাজে প্রতিযোগিতা, সংঘাত, হানাহানি, বিদ্বেষ, উগ্রতা বেড়ে চলেছে, পৃথিবীজুড়ে যুদ্ধ ও বাস্তুচ্যুত দুর্ভাগা মানুষের সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। এমনি সমূহ বিপর্যয় থেকে মানবতার উদ্ধারের জন্য যে প্রজ্ঞা, সংবেদনশীলতা ও চিন্তাদর্শন প্রয়োজন তা জোগাতে পারে সংস্কৃতি। ফলে নতুনভাবে জীবন ও সংস্কৃতির পাঠগ্রহণ ও বিকাশসাধন জরুরি হয়ে পড়েছে। সেখানটায় ঘাটতি সংস্কৃতির জন্য, মানবতার জন্য সংকট তৈরি করছে। আমাদের নিজস্ব বাস্তবতার নিরিখে প্রতিরোধের সংস্কৃতির পাশাপাশি নির্মাণের সংস্কৃতির দিকে মনোযোগী হওয়া দরকার। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির দৈন্য মোচনে ব্যাপক যে সামাজিক উদ্যোগ দরকার তার কিছু স্ফুরণও নজরে আসে, সেখানেই উপ্ত রয়েছে আশাবাদিতার উপাদান। পাকিস্তানি সাম্প্রদায়িক মতাদর্শে সমাজ আবারও আচ্ছন্ন হচ্ছে ধর্মকে গোষ্ঠীস্বার্থে ব্যবহার দ্বারা। সেখান থেকে মুক্তি পেতে কর্মে ও মানসে মুক্তি বড় প্রশ্ন। সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের মানবিক আদর্শ জোরদার করা এবং উদার অসাম্প্রদায়িক বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ নির্মাণ সাধনায় নিরন্তর প্রয়াস আমাদের চালাতে হবে। সে জন্যই বলা হয়, ইটারনাল ভিজিল্যান্স ইজ দ্য প্রাইস অব ফ্রিডম।
আজকের পত্রিকা: আদর্শের চেয়ে সুবিধাবাদী চর্চা রাজনীতিতে প্রাধান্য পেল কেন?
মফিদুল হক: রাজনৈতিক দল ঘিরে আমরা সরলভাবে অনেক ক্ষেত্রে বিবেচনা করি, কারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে এবং কারা বিপক্ষে। এই বিচারের ভিত্তি রয়েছে বটে, তবে সেই সঙ্গে পরখ করে দেখতে হবে আচরণে এবং জীবনদৃষ্টি ও কর্মে কে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, কে বিপক্ষে। মুখে বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, হাতে মুক্তিযুদ্ধের ব্যানার, কিন্তু সুবিধাবাদ ও স্বার্থপরতা মনের গভীরে প্রোথিত, সাম্প্রদায়িক ধর্মান্ধতা দ্বারা আচ্ছন্ন, দুর্নীতিতে নিমজ্জিত, এমন মানুষদের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত। এই কাজ করা হয় না বলেই আদর্শবাদ দুর্বল হচ্ছে, সুবিধাবাদ প্রাধান্য পাচ্ছে।
আজকের পত্রিকা: জামায়াত তথা ধর্মতন্ত্রী রাজনীতির উত্থান রোধে কিছু কি করণীয় নেই?
মফিদুল হক: জামায়াতে ইসলামী চিহ্নিত ধর্মতন্ত্রী দল, ইতিহাসের ঘৃণ্যতম কর্মকাণ্ডের উদগাতা। গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে জড়িত রাজনৈতিক গোষ্ঠী হিসেবে তারা আদালতে অভিযুক্ত। আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারে আইনের ধারায় ব্যক্তি অভিযুক্ত হলেও এর পেছনে পরিকল্পক ও ইন্ধনদাতা হিসেবে নৃশংস অপরাধ সংঘটনে জড়িত যে দল, সেই বিচারে জামায়াতে ইসলামী চিহ্নিত অপরাধী। গণহত্যার বর্বরতার জন্য দায়ী ব্যক্তির অপরাধের বিচার আমরা করেছি, তবে অভিযুক্ত দলের বিচার এখনো করে উঠতে পারিনি, সেটা করার জন্য ইতিহাসের কাছে আমরা দায়বদ্ধ। হলোকাস্টের শিকার ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক আইনের আলোকে জাতীয় আইনে ও আদালতে ফ্যাসিস্ট দল গঠন নিষিদ্ধ হয়েছে।
এই ইউনিভার্সেল জুরিসডিকশন আমাদেরও অনুসরণ করা উচিত। প্রচলিত আইন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রায় ও পর্যবেক্ষণের সঙ্গে যদি আমরা বিশ্বজনীন আইন বা ইউনিভার্সেল জুরিকডিকসন মিলিয়ে নিই, তবে গণহত্যার জন্য দায়ী দলকেও আমরা বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারি। আদালতে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষার দরকার পড়ে না, মানবতা তথা গোটা মানবসভ্যতার বিরুদ্ধে যারা চরম ঘৃণিত অপরাধ করেছে, তাদের
ওপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করেই এখন বিচার শুরু হতে পারে। প্রয়োজনে বিশ্বজনীন স্বীকৃত রীতি ও আইনের অনুসরণে আমাদের প্রচলিত আইনেও সংশোধনী আনা যেতে পারে। এ কাজ করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে