বাংলাদেশ স্মার্টফোন বানায়

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮: ২৯
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২১, ১১: ৪১

নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিপ্লব আনে মোবাইল ফোন প্রযুক্তি। পরবর্তী সময়ে ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে মোবাইল ফোন হয়ে ওঠে নিত্যসঙ্গী। বাজারে চলে আসে নানা রকমের স্মার্টফোন। ২০১৭ সালে ওয়ালটন মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদন শুরু করার আগপর্যন্ত দেশের ফোনের বাজার ছিল শতভাগ আমদানিনির্ভর। বিজয়ের ৫০ বছরে এসে সেই চিত্র অনেকখানি বদলে গেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, মোবাইল ফোনশিল্পে বিস্ময়কর উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। শাওমিসহ বর্তমানে অন্তত ১৩টি স্থানীয় ও বৈশ্বিক কোম্পানি বাংলাদেশে স্মার্টফোন উৎপাদন করছে।

১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাসে চালু হয় মোবাইল ফোন। আশির দশকের শেষে চালু ছিল পেজার যন্ত্র, যা কোমরের বেল্টে বেঁধে অনেকেই ঘুরতেন। ওই সময়েই ওয়াকিটকি ধরনের একটি মোবাইল ফোনও চালু হয়েছিল বাংলাদেশে। শুরুর দিকে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক শুধু ঢাকা শহরেই ছিল। এর কিছুদিন পর নেটওয়ার্ক সম্প্রসারিত হয় চট্টগ্রামেও। তবে গ্রাহকসংখ্যা ছিল অপেক্ষাকৃত কম। কারণ ফোন কোম্পানির যন্ত্রপাতির ধারণক্ষমতাও ছিল বেশ কম।

বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর সাড়ে ৩ কোটি লোক ফোনসেট বিক্রি হয়। সেখানে স্মার্টফোন বিক্রি হচ্ছে ১ কোটি। এখনো বাজারে প্রায় আড়াই কোটি বারফোন ব্যবহার হচ্ছে। বাংলাদেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর মধ্যে স্মার্টফোনের অংশীদারত্ব ৪০ শতাংশ। এখনো ৬০ শতাংশ বারফোনের দখলে। রিপ্লেসমেন্ট বাজারও বড় হয়ে গেছে। কারণ, গত পাঁচ বছর যাঁরা স্মার্টফোন কিনেছেন, তাঁরাও রিপ্লেসমেন্ট বাজারে আসছেন। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ বিরাট বাজার।

জানা যায়, ২০২০ সালে সারা দেশে প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ ইউনিট ফোন বিক্রি হয়েছিল, যার মধ্যে ৯০ লাখই ছিল স্মার্টফোন।

বাংলাদেশ মোবাইল ফোন আমদানিকারক সমিতির (বিএমপিআই) মাধ্যমে জানা যায়, ২০২১ সালের মাঝামাঝি প্রায় ৭৫ লাখ সেলফোন বিক্রি হয়, যার মধ্যে ২০ লাখ স্মার্টফোন ছিল। বিশেষজ্ঞরা এই বছর ১ কোটি ২০ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রির লক্ষ্য নিয়ে সর্বমোট ৩ কোটি ২০ লাখ সেলফোন বিক্রির আভাস দিয়েছেন।

ডিজিটালাইজেশন যাত্রায় পেরিয়ে আসা গত দশকটি ছিল বাংলাদেশের মানুষের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই দশকের একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে বাংলাদেশ স্মার্ট ডিভাইস তৈরির কাজে হাত দেয়। কয়েকজন উদ্যোক্তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এ কাজের সাফল্য চলে আসে।

এ ব্যাপারে ট্রানশান বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজওয়ানুল হক বলেন, ‘আমরা ম্যানুয়াল থেকে ডিজিটালে যাচ্ছি। আমরা একসময় যেটা পেপারলেস চিন্তা করতে পারতাম না, সেটা এখন পেপারলেস হচ্ছে। এই যে ডিজিটালি ট্রান্সফরমেশন হচ্ছে, তার জন্য পুরো ইকো সিস্টেমটাই আমাদের তৈরি হচ্ছে। আমাদের এখানে ডিভাইস তৈরি হচ্ছে। তেমনি সাপোর্ট দেওয়ার জন্য সেই এপ্লিকেশন, সেই সার্ভিসগুলো সমানতালে এগোচ্ছে।’

গত এক দশকে মোবাইল শিল্পের অগ্রগতি নিয়ে রেজওয়ানুল হক বলেন, ‘একসময় আমাদের সবচেয়ে বড় বাধা ছিল আমরা উৎপাদনের চিন্তাই করতে পারতাম না। বর্তমানে সেই অবস্থার উন্নতি হয়েছে। সেই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে। এখন যখনই কোনো পণ্য দেখি, আমরা প্রথমেই চিন্তা করি এটা বাংলাদেশে বানানো সম্ভব কি না। পাঁচ বছর আগেও আমরা একটি মোবাইল ফোনসেটও বানানোর চিন্তা করতে পারছিলাম না, সেখানে বাংলাদেশে যে স্মার্টফোন বিক্রি হয়, তার ৮০ শতাংশ উৎপাদন হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, মাদারবোর্ড পর্যন্ত উৎপাদন হচ্ছে। সবমিলিয়ে আমি মনে করি এই ক্ষেত্রে দেশের একটি বড় উন্নতি হয়েছে।’

সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য কতটা সহজলভ্যভাবে ডিজিটাল ডিভাইস মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে যদি কম দামে মোবাইল ফোন তৈরি করা যায়, তাহলে সামগ্রিকভাবে আমি মনে করি এটা ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা, তার সঙ্গে খুবই সংগতিপূর্ণ। এটা আরও ব্যাপক পরিসরে হওয়া উচিত। এর সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগও রয়েছে। কর্মসংস্থানের একটা সুযোগ আছে।’

বিশ্লেষকদের মতে, স্মার্টফোন পরিচালনার জন্য অন্যতম উপাদান হলো মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন বা মোবাইল অ্যাপ। ফোন, ট্যাবলেট ব্যবহার করার জন্য অ্যাপ খুবই প্রয়োজনীয়। এটি একধরনের কম্পিউটার প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন। অ্যাপের সাহায্যেই কল করা, ছবি তোলা, যোগাযোগ কিংবা ক্যালেন্ডার দেখতে পারি। এ ছাড়া অ্যাপ ব্যবহার করে বর্তমানে বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ লোক মোবাইল গেম খেলে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত