মোনায়েম সরকার
কোনো ভূমিকা না করেই এটা বলা যায় যে বিএনপির মাধ্যমেই জামায়াতে ইসলামী নামের দলটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। জামায়াত ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী হয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনে সক্রিয় ও উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেছিল। স্বাধীন বাংলাদেশে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও বঙ্গবন্ধু হত্যা-পরবর্তী সময়ে জামায়াতের সংগঠিত হওয়া, প্রকাশ্যে রাজনীতি করা, পাকিস্তানে পালিয়ে যাওয়া জামায়াত নেতা গোলাম আযমকে দেশে ফিরে আসার সুযোগ দেওয়ার মতো সুদূরপ্রসারী ক্ষতিকর কাজগুলো করেছিলেন ক্ষমতা দখলকারী সেনাশাসক জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সখ্যের বিষয়টি বহুল আলোচিত, এর রাজনৈতিক তাৎপর্য এখন সচেতন কারও অজানা নয়। জিয়াপত্নী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জামায়াতকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতারও অংশীদার করেছিলেন।
তবে সরকারবিরোধী আন্দোলনে তেমন সফল হতে না পেরে বিএনপির মধ্যে দলের রাজনৈতিক কৌশল, জামায়াতের সঙ্গে দহরম-মহরম ইত্যাদি প্রসঙ্গে রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনা শুরু হলে বিএনপি ও জামায়াত কিছু ছলনার আশ্রয় নিয়ে থাকে বলে অনেকে মনে করেন। সে জন্য গত কয়েক বছর ধরে, বিশেষ করে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে জামায়াতের কয়েকজন শীর্ষ নেতার শাস্তি হওয়ার পর জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সঙ্গে বিএনপির জোট বাঁধা নিয়ে নানা সময়ে লুকোচুরি করতে দেখা যায়। বাংলাদেশের স্বাধীনচেতা জনগণ জামায়াতের সঙ্গে জোট বাঁধাকে ভালোভাবে না দেখায় সময়ে সময়ে সেই লুকোচুরির আশ্রয় নিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে বিএনপি।
বারবার লোকদেখানো দূরত্ব বজায় রেখে জনগণকে বিভ্রান্ত করার কৌশল বিএনপি ’৯২ সাল থেকেই নিয়ে আসছে। কিন্তু ২০০১ সালে সেই যুদ্ধাপরাধীদের হাতে, গাড়িতে, বাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা তুলে দিয়ে বাংলার মানুষকে চরম অপমান করা হলো। তখনো দগদগে ঘা ছিল মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া মানুষের শরীরে। সে সময় এই অপমান সহ্য করতে হয়েছে। বিএনপি আর জামায়াতের অ্যাজেন্ডায় যে পার্থক্য নেই, তা তাদের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে। সেটা হলো, বাংলাদেশকে দ্বিতীয় পাকিস্তান বানাতে হবে। জামায়াতের এই অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করে চলেছে বিএনপি। জামায়াত তাদের সঙ্গে দৃশ্যত থাকুক বা না থাকুক।
কৌশল যা-ই হোক না কেন, বাস্তবে সত্য এটাই যে বিএনপি কখনোই জামায়াত ছাড়া স্বস্তি বোধ করে না, আত্মবিশ্বাসী বোধ করে না। দ্বাদশ নির্বাচনের আগে তারা যে আন্দোলনে জামায়াতের সঙ্গে ছিল না, সেটাও একধরনের কেমোফ্লেজ। মানুষকে ভুল বোঝানো। একসঙ্গে না থাকার ভান করে তারা যুগপৎ ধারায় পাশাপাশি একই দিনে একই রকম কর্মসূচি দিচ্ছিল। এ সবই তাদের পরিকল্পনার অংশ। আর এখন যখন আবারও সংগঠিত হওয়ার বিষয়টি সামনে আসছে, তখন আবারও তারা একসঙ্গে চলতে চাইছে। জামায়াতের ইফতার আয়োজনে বিএনপি নেতাদের উপস্থিতি এর প্রমাণ।
পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ঢাকায় ১২ দলীয় জোটের এক ইফতারে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা অংশ নিয়েছেন। জামায়াতের আমিরসহ বিরোধী অন্য দলগুলোর নেতারাও যোগ দেন এই ইফতার অনুষ্ঠানে। ৩০ মার্চ শনিবার রাজনীতিক ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সম্মানে রাজধানীতে এই ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।
এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাসসহ দলটির ১৮ জন নেতা অংশ নেন। জামায়াতের ইফতারে আমন্ত্রিত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছিলেন না।
জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান এই ইফতারে অংশ নিয়ে বক্তব্য দেন। জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে এবং ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাও বক্তব্য দেন। স্বাগত বক্তব্য দেন জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম।
জামায়াতের আমির বলেছেন, ‘বিগত আন্দোলনে নেতা-কর্মীরা মাঠে ছিলেন। একটি “সশস্ত্র সিন্ডিকেট আর সন্ত্রাসের’ বিরুদ্ধে নিরীহ জনগণের প্রতিবাদ এর চেয়ে বেশি আর কী হবে? দেশের জনগণ সঠিকভাবে এর প্রতিবাদ করেছে। এই আন্দোলনে বিরোধী দলের পরাজয় হয়নি। যারা জনগণের ভোট ছিনতাই করেছে, সংসদ ছিনতাই করেছে, পরাজয় তাদের হয়েছে।’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘যেকোনো পরিস্থিতিতেই হোক, ৭ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে যে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি, তা চালিয়ে যেতে হবে। আমরা ৭ জানুয়ারিতে হারিনি। এ দেশের জনগণ আমাদের যে সমর্থন দিয়েছেন, তা বিশ্বের কোথাও হয়েছে কি না, আমার জানা নেই।’
এখন দেখার বিষয়, জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে কোন বিজয় ঘরে তুলতে চায় বিএনপি। প্রসঙ্গত, এ দুই দলের পারস্পরিক সন্দেহ-অবিশ্বাস তৈরির দু-একটা তথ্য মনে করা যেতে পারে। দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় পর গত বছরের ১০ জুন ঢাকায় সমাবেশের জন্য পুলিশের অনুমতি পায় জামায়াত। এরপর থেকে নিয়মিত কর্মসূচি পালন করে আসছে দলটি। এমনকি গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় যুগপৎ আন্দোলনে পুলিশ বিএনপির নয়াপল্টনের মহাসমাবেশ পণ্ড করলেও পাশে আরামবাগ এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করে জামায়াত।
জামায়াত মনে করে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়নের জন্য তাদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটিয়েছে বিএনপি। বাংলাদেশের অর্থনীতি, রাজনীতি ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে ভারতের বেশ প্রভাব রয়েছে। সে ক্ষেত্রে বিএনপি মনে করছে, বাংলাদেশের ক্ষমতার রাজনীতিতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের বিকল্প নেই। ভারতবিরোধী রাজনীতি দিয়ে বিএনপি বারবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলেও তারা এখন ভারতের অনুকম্পা নিয়ে রাজনীতিতে টিকে থাকতে চাইছে। বিগত দেড় দশকে বিএনপি সরকার পতনের মতো আন্দোলনমুখী সংগঠন গড়ে তুলতে পারেনি। বিএনপির সিদ্ধান্তে নেতা-কর্মীরা বারবার হোঁচট খাচ্ছেন। মাঠের বাস্তবতা অস্বীকার করে তারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
বিএনপি সম্ভবত ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের বিষয়টি নিয়ে হতাশায় ভুগছে। ভারত যে বিএনপিকে আস্থায় নিতে পারছে না, এটা বিএনপি নেতৃত্ব বুঝেই আবার ভারতবিরোধী বক্তব্য দিতে শুরু করেছে। এ সময় জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে আনার উদ্যোগও লক্ষণীয়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক একসময় বলেছিলেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে কোনো দূরত্ব নেই বিএনপির, কৌশলগত কারণেই আলাদা মঞ্চে আন্দোলন করে আসছে তারা। ’৭১-এর পর যাদের জন্ম, তারা খাঁটি বাংলাদেশি। তারা তো দেশের বিরুদ্ধে কিছু করছে না। তাদের চাপে রেখে সরকার রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চায়।’
বিএনপির পক্ষ থেকে একসময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামায়াতের সখ্যের কথাও বলা হয়েছিল। জামায়াতের একজন নেতা অবশ্য বলেছিলেন, ‘জামায়াত জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি করে, বিএনপি বিএনপির রাজনীতি করে, আওয়ামী লীগ তাদের রাজনীতি করে।’
প্রতিটি দলেরই নিশ্চয়ই নিজস্ব রাজনীতি আছে। তার পরও কেন তারা মিত্র খোঁজে, জোটবদ্ধ হয়? অবশ্যই বড় কিছু পাওয়ার আশায়। ভারতবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পালে নতুন হাওয়া তৈরির পরিকল্পনা থেকেই বিএনপি আবার নতুন করে জামায়াতমুখী হচ্ছে কি না, তা হয়তো শিগগিরই পরিষ্কার হবে।
লেখক: রাজনীতিবিদ ও লেখক; চেয়ারম্যান, বিএফডিআর
কোনো ভূমিকা না করেই এটা বলা যায় যে বিএনপির মাধ্যমেই জামায়াতে ইসলামী নামের দলটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। জামায়াত ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী হয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনে সক্রিয় ও উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেছিল। স্বাধীন বাংলাদেশে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও বঙ্গবন্ধু হত্যা-পরবর্তী সময়ে জামায়াতের সংগঠিত হওয়া, প্রকাশ্যে রাজনীতি করা, পাকিস্তানে পালিয়ে যাওয়া জামায়াত নেতা গোলাম আযমকে দেশে ফিরে আসার সুযোগ দেওয়ার মতো সুদূরপ্রসারী ক্ষতিকর কাজগুলো করেছিলেন ক্ষমতা দখলকারী সেনাশাসক জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সখ্যের বিষয়টি বহুল আলোচিত, এর রাজনৈতিক তাৎপর্য এখন সচেতন কারও অজানা নয়। জিয়াপত্নী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জামায়াতকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতারও অংশীদার করেছিলেন।
তবে সরকারবিরোধী আন্দোলনে তেমন সফল হতে না পেরে বিএনপির মধ্যে দলের রাজনৈতিক কৌশল, জামায়াতের সঙ্গে দহরম-মহরম ইত্যাদি প্রসঙ্গে রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনা শুরু হলে বিএনপি ও জামায়াত কিছু ছলনার আশ্রয় নিয়ে থাকে বলে অনেকে মনে করেন। সে জন্য গত কয়েক বছর ধরে, বিশেষ করে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে জামায়াতের কয়েকজন শীর্ষ নেতার শাস্তি হওয়ার পর জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সঙ্গে বিএনপির জোট বাঁধা নিয়ে নানা সময়ে লুকোচুরি করতে দেখা যায়। বাংলাদেশের স্বাধীনচেতা জনগণ জামায়াতের সঙ্গে জোট বাঁধাকে ভালোভাবে না দেখায় সময়ে সময়ে সেই লুকোচুরির আশ্রয় নিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে বিএনপি।
বারবার লোকদেখানো দূরত্ব বজায় রেখে জনগণকে বিভ্রান্ত করার কৌশল বিএনপি ’৯২ সাল থেকেই নিয়ে আসছে। কিন্তু ২০০১ সালে সেই যুদ্ধাপরাধীদের হাতে, গাড়িতে, বাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা তুলে দিয়ে বাংলার মানুষকে চরম অপমান করা হলো। তখনো দগদগে ঘা ছিল মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া মানুষের শরীরে। সে সময় এই অপমান সহ্য করতে হয়েছে। বিএনপি আর জামায়াতের অ্যাজেন্ডায় যে পার্থক্য নেই, তা তাদের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে। সেটা হলো, বাংলাদেশকে দ্বিতীয় পাকিস্তান বানাতে হবে। জামায়াতের এই অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করে চলেছে বিএনপি। জামায়াত তাদের সঙ্গে দৃশ্যত থাকুক বা না থাকুক।
কৌশল যা-ই হোক না কেন, বাস্তবে সত্য এটাই যে বিএনপি কখনোই জামায়াত ছাড়া স্বস্তি বোধ করে না, আত্মবিশ্বাসী বোধ করে না। দ্বাদশ নির্বাচনের আগে তারা যে আন্দোলনে জামায়াতের সঙ্গে ছিল না, সেটাও একধরনের কেমোফ্লেজ। মানুষকে ভুল বোঝানো। একসঙ্গে না থাকার ভান করে তারা যুগপৎ ধারায় পাশাপাশি একই দিনে একই রকম কর্মসূচি দিচ্ছিল। এ সবই তাদের পরিকল্পনার অংশ। আর এখন যখন আবারও সংগঠিত হওয়ার বিষয়টি সামনে আসছে, তখন আবারও তারা একসঙ্গে চলতে চাইছে। জামায়াতের ইফতার আয়োজনে বিএনপি নেতাদের উপস্থিতি এর প্রমাণ।
পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ঢাকায় ১২ দলীয় জোটের এক ইফতারে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা অংশ নিয়েছেন। জামায়াতের আমিরসহ বিরোধী অন্য দলগুলোর নেতারাও যোগ দেন এই ইফতার অনুষ্ঠানে। ৩০ মার্চ শনিবার রাজনীতিক ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সম্মানে রাজধানীতে এই ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।
এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাসসহ দলটির ১৮ জন নেতা অংশ নেন। জামায়াতের ইফতারে আমন্ত্রিত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছিলেন না।
জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান এই ইফতারে অংশ নিয়ে বক্তব্য দেন। জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে এবং ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাও বক্তব্য দেন। স্বাগত বক্তব্য দেন জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম।
জামায়াতের আমির বলেছেন, ‘বিগত আন্দোলনে নেতা-কর্মীরা মাঠে ছিলেন। একটি “সশস্ত্র সিন্ডিকেট আর সন্ত্রাসের’ বিরুদ্ধে নিরীহ জনগণের প্রতিবাদ এর চেয়ে বেশি আর কী হবে? দেশের জনগণ সঠিকভাবে এর প্রতিবাদ করেছে। এই আন্দোলনে বিরোধী দলের পরাজয় হয়নি। যারা জনগণের ভোট ছিনতাই করেছে, সংসদ ছিনতাই করেছে, পরাজয় তাদের হয়েছে।’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘যেকোনো পরিস্থিতিতেই হোক, ৭ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে যে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি, তা চালিয়ে যেতে হবে। আমরা ৭ জানুয়ারিতে হারিনি। এ দেশের জনগণ আমাদের যে সমর্থন দিয়েছেন, তা বিশ্বের কোথাও হয়েছে কি না, আমার জানা নেই।’
এখন দেখার বিষয়, জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে কোন বিজয় ঘরে তুলতে চায় বিএনপি। প্রসঙ্গত, এ দুই দলের পারস্পরিক সন্দেহ-অবিশ্বাস তৈরির দু-একটা তথ্য মনে করা যেতে পারে। দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় পর গত বছরের ১০ জুন ঢাকায় সমাবেশের জন্য পুলিশের অনুমতি পায় জামায়াত। এরপর থেকে নিয়মিত কর্মসূচি পালন করে আসছে দলটি। এমনকি গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় যুগপৎ আন্দোলনে পুলিশ বিএনপির নয়াপল্টনের মহাসমাবেশ পণ্ড করলেও পাশে আরামবাগ এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করে জামায়াত।
জামায়াত মনে করে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়নের জন্য তাদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটিয়েছে বিএনপি। বাংলাদেশের অর্থনীতি, রাজনীতি ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে ভারতের বেশ প্রভাব রয়েছে। সে ক্ষেত্রে বিএনপি মনে করছে, বাংলাদেশের ক্ষমতার রাজনীতিতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের বিকল্প নেই। ভারতবিরোধী রাজনীতি দিয়ে বিএনপি বারবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলেও তারা এখন ভারতের অনুকম্পা নিয়ে রাজনীতিতে টিকে থাকতে চাইছে। বিগত দেড় দশকে বিএনপি সরকার পতনের মতো আন্দোলনমুখী সংগঠন গড়ে তুলতে পারেনি। বিএনপির সিদ্ধান্তে নেতা-কর্মীরা বারবার হোঁচট খাচ্ছেন। মাঠের বাস্তবতা অস্বীকার করে তারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
বিএনপি সম্ভবত ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের বিষয়টি নিয়ে হতাশায় ভুগছে। ভারত যে বিএনপিকে আস্থায় নিতে পারছে না, এটা বিএনপি নেতৃত্ব বুঝেই আবার ভারতবিরোধী বক্তব্য দিতে শুরু করেছে। এ সময় জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে আনার উদ্যোগও লক্ষণীয়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক একসময় বলেছিলেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে কোনো দূরত্ব নেই বিএনপির, কৌশলগত কারণেই আলাদা মঞ্চে আন্দোলন করে আসছে তারা। ’৭১-এর পর যাদের জন্ম, তারা খাঁটি বাংলাদেশি। তারা তো দেশের বিরুদ্ধে কিছু করছে না। তাদের চাপে রেখে সরকার রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চায়।’
বিএনপির পক্ষ থেকে একসময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামায়াতের সখ্যের কথাও বলা হয়েছিল। জামায়াতের একজন নেতা অবশ্য বলেছিলেন, ‘জামায়াত জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি করে, বিএনপি বিএনপির রাজনীতি করে, আওয়ামী লীগ তাদের রাজনীতি করে।’
প্রতিটি দলেরই নিশ্চয়ই নিজস্ব রাজনীতি আছে। তার পরও কেন তারা মিত্র খোঁজে, জোটবদ্ধ হয়? অবশ্যই বড় কিছু পাওয়ার আশায়। ভারতবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পালে নতুন হাওয়া তৈরির পরিকল্পনা থেকেই বিএনপি আবার নতুন করে জামায়াতমুখী হচ্ছে কি না, তা হয়তো শিগগিরই পরিষ্কার হবে।
লেখক: রাজনীতিবিদ ও লেখক; চেয়ারম্যান, বিএফডিআর
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
৭ ঘণ্টা আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগে