ভাগাভাগির দ্বন্দ্বে ভবনে তালা

আয়নাল হোসেন, ঢাকা
প্রকাশ : ০৫ জানুয়ারি ২০২৩, ১১: ৪৮

পুরান ঢাকার আজিমপুর সরকারি কলোনিতে আট হাজারের বেশি বাসিন্দা রয়েছেন। তাঁদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে কলোনিতে ছয়তলাবিশিষ্ট একটি কমন ফ্যাসিলিটিস বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু দুই বছর ধরে ভবনটি অব্যবহৃতই পড়ে আছে। এতে একদিকে নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নাগরিকেরা। অন্যদিকে প্রতি মাসে কয়েক হাজার টাকার রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। শুধু আজিমপুরের নয়, রাজধানীর মিরপুর শিয়ালবাড়িতে একইভাবে আরেকটি ভবনও অব্যবহৃত পড়ে আছে বলে আবাসন পরিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।

পুরান ঢাকার আজিমপুর সরকারি কলোনির ‘বি’ জোনে ২০ তলাবিশিষ্ট ২৩টি বহুতল আবাসিক ভবন রয়েছে। ডি-২ ও ডি-১ টাইপের এসব ভবনে ১ হাজার ৭৪৮টি ফ্ল্যাট রয়েছে।

ছয়তলা কমন ফ্যাসিলিটিস ভবনটির ফ্লোর স্পেস নয় হাজার থেকে ১২ হাজার স্কয়ার ফুট। ভবনটির নিচতলায় একটি মডেল ফার্মেসি ও একটি সুপারশপ রাখার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া ভবনটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় কমিউনিটি সেন্টার, চতুর্থ তলায় ব্যায়ামাগার, পঞ্চম তলায় ডে কেয়ার সেন্টার ও ষষ্ঠ তলায় একটি আদর্শ লাইব্রেরির পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু গণপূর্ত অধিদপ্তরের খেয়ালিপনায় দীর্ঘদিন ধরে ভবনটি অব্যবহৃতই পড়ে রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আবাসন পরিদপ্তরের কাছেও হস্তান্তর করা হয়নি ভবনটি। যে কারণে ভাড়া দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না।

আবাসন পরিদপ্তরের পরিচালক শহীদুল ইসলাম ভূঞা আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন, রাজধানীর শিয়ালবাড়ি আবাসন জোনে একটি, আজিমপুর কলোনির ‘বি’ জোনে একটি ও আজিমপুরে নির্মাণাধীন আরও দুটিসহ মোট চারটি কমন ফ্যাসিলিটিস ভবন রয়েছে। আবাসিক এলাকায় এই ধরনের ভবন আগে ছিল না। ফলে এসব ভবন ভাড়া দেওয়ার পদ্ধতি, ভাড়া কে দেবে, কীভাবে দেবে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে। এদিকে ভবনটি এখনো আবাসন পরিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি।

এদিকে আবাসন পরিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ভবনটির দখল চেয়ে পরিদপ্তর থেকে কয়েক দফা চিঠিও দেওয়া হয়েছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে। কিন্তু সেখান থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

ফলে ভবনটি অব্যবহৃতই পড়ে রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, কমন ফ্যাসিলিটিস ভবনের আয় পূর্ত কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে নেওয়ার জন্য গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠায় গণপূর্ত অধিদপ্তর।

কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাবের বিষয়ে সিদ্ধান্ত না দেওয়ায় পুনরায় বিবেচনার জন্য মন্ত্রণালয়ে আবারও পাঠানো হয়। আর এভাবেই পার হচ্ছে সময়। ভবনটির আয় কারা নেবে সেই সিদ্ধান্তও হয়নি।

আজিমপুর কলোনির বাসিন্দারা জানান, সরকার সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন আবাসিক ভবন নির্মাণ করেছে ঠিকই। কিন্তু কমন ফ্যাসিলিটিস ভবনটি চালু না হওয়ায় তাঁরা নানা ধরনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এলাকায় কমিউনিটি সেন্টার না থাকায় বিয়ে, গায়ে হলুদ, বউভাত, খতনাসহ নানা ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান আশপাশের সেন্টারে চড়া মূল্যে করা হচ্ছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতার আজকের পত্রিকাকে বলেন, আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক প্লটের ভাড়ার পরিমাণ কেমন হবে, সেটি গণপূর্ত মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করবে। সেখান থেকে ভাড়ার দর পাওয়া গেলে দরপত্র আহ্বান করা হবে। খুব শিগগিরই বিষয়টি সমাধান হতে পারে।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াসি উদ্দিন বলেছেন, কমন ফ্যাসিলিটিজ ভবনটি গণপূর্ত কল্যাণ সমিতির অধীনে নেওয়ার জন্য একটি আবেদন করা হয়েছিল। তা নিয়ে একটি সভাও হয়; তবে আবেদনটি যথাযথ ছিল না। সংশোধন করে আবেদনটি আবার করতে বলা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত