মিনুর রঙিন মাছ বিদেশেও

রোবেল মাহমুদ, গফরগাঁও
প্রকাশ : ০৫ এপ্রিল ২০২২, ০৭: ০১
আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২২, ১৪: ৫০

গফরগাঁওয়ের বারবারিয়া ইউনিয়নের নিভৃত গ্রাম উত্তর নওয়াপাড়ায় বাহারি রঙের বিদেশি মাছ চাষ করছেন সাইফুল ইসলাম মিনু। মাত্র ছয়টি মাছ দিয়ে পুকুরে চাষ শুরু করে ১৫ বছরে বাণিজ্যিক উৎপাদনে গেছেন তিনি। উৎপাদিত রঙিন মাছ বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে। সেই সঙ্গে যাচ্ছে বিদেশেও। সফল এ উদ্যোক্তার দেখাদেখি এলাকার অনেকেই এখন রঙিন মাছ চাষে উৎসাহিত হয়েছেন।

উপজেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে সাইফুল ইসলাম মিনুর আল-আমিন এসোরটেড হ্যাচারি অ্যান্ড ফিশারিজ নামের রঙিন মাছের খামারে গিয়ে দেখা যায়, ছোট বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পুকুর ও চৌবাচ্চায় ব্যস্ত শ্রমিকেরা। প্রতিদিন দর্শনার্থীরাও ভিড় করেন খামারে।

সাইফুল ইসলাম মিনু জানান, বিদেশি মাছ চাষাবাদ করায় শুরুতে এলাকার লোকজন বিদ্রূপ করত। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে অ্যাকোয়ারিয়াম মাছের ক্রেতা মূলত শৌখিন মানুষ, দামও বেশি। সাহস নিয়ে শুরু করেছিলাম। দেশি মাছের চেয়ে মুনাফাও বেশি।’

সাইফুল ইসলাম মিনু আরও বলেন, ‘নব্বইয়ের দশকে গফরগাঁও এলাকার রেণু পোনার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পরিচয় হয়। প্রথমে জায়গা ভাড়া নিয়ে ও পরে জমি কিনে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ শুরু করি।

এই খামারি জানান, ২০০৭ সালে অ্যাকুয়ারিয়ামের মাছ চাষ শুরু করেন। ওই সময় ক্রেতা কম থাকলেও ভালো দাম পাওয়া যেত। এমন চিন্তা থেকে জাপান থেকে ছয়টি কই কার্প মাছের পোনা সংগ্রহ করে রেণু উৎপাদনের মাধ্যমে পোনার সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। পরে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও চীন থেকে প্রায় ২৪ প্রজাতির মাছ এনে ব্যবসার কলেবর বাড়িয়েছেন তিনি। অ্যাকোরিয়াম ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন রিসোর্ট এসব মাছের ক্রেতা। দুবাইয়েও রপ্তানি হয়েছে এই মাছ।

রঙিন মাছ বিপণন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছেন সাইফুল ইসলামের বড় ছেলে মাশরিকুল ইসলাম তুনানও। তিনি জানান, দেশ-বিদেশের ব্যবসায়ীরা অনলাইনে যোগাযোগ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় রঙিন মাছ কিনে নিয়ে যান।

জানা গেছে, জাপানি কই কার্প ছোট আকারের প্রতিটি ১০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। আর বড় আকারের গুলো ২ হাজার টাকা থেকে শুরু করে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এখন তিন থেকে সাড়ে তিন কেজি ওজনের রঙিন কই কার্প রয়েছে দুই শতাধিক।

সাইফুল ইসলাম মিনু বলেন, ‘রঙিন মাছ চাষ অভিনব হওয়ায় কঠোর পরিশ্রম আর ধৈর্য নিয়ে এগোতে হয়েছে। এখন ৪০ বিঘা জমিতে ২৫টি পুকুরে মাছ চাষ করছি। এর মধ্যে রয়েছে ভিয়েতনামের শোলের পোনা, জাপানিজ কই কার্প, ক্যান্ডি প্ল্যাটি, ফান টেইল মিল্কি, বেনি-গই, জেব্রা মেল, গোল্ড ফিশ, কই কার্প, কোহাকো জাপানিজ কই, আলবেনিও শার্ক ১৫ থেকে ২০ প্রজাতির মাছ। প্রতিদিন ২০ জন শ্রমিক এখানে কাজ করছেন।’

একই সঙ্গে চাষ করছেন ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ বা কালো মাছির লার্ভা। পোলট্রি ও মৎস্য খামারে বিকল্প খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এটি। এই লার্ভা মাছ ও হাঁস-মুরগির প্রিয় খাবার। এ জন্য পাশে শুরু করেছেন মুরগির খামারও। তাঁর খামার বাড়িতে রয়েছে অন্তত বিশ প্রজাতির ফলদ গাছ এবং শাকসবজি।

উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মালিক তানভীর আহম্মেদ বলেন, ‘রঙিন মাছ চাষ প্রথম দিকে শৌখিনভাবে হলেও এখন বাণিজ্যিক সম্ভাবনা বেড়েছে। তাই অনেকেই রঙিন মাছ চাষের দিকে ঝুঁকছেন। এসব মাছ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবিদুর রহমান বলেন, ‘রঙিন মাছের খামারি সাইফুল ইসলাম মিনুর উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। শৌখিনতার গণ্ডি পেরিয়ে রঙিন মাছ চাষ এখন অন্যতম আয়ের উৎস হতে পারে। সেই সঙ্গে রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ সুগম হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত