স্বাস্থ্যকেন্দ্র ভুতুড়ে বাড়ি

এস এস শোহান, বাগেরহাট
আপডেট : ০৪ জুন ২০২২, ১৪: ০৫
Thumbnail image

বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার হুড়কা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রটি যেন ভুতুড়ে বাড়ি। ভাঙাচোরা ভবন ও চিকিৎসক-কর্মচারীশূন্য এই প্রতিষ্ঠানটি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। অন্তত ১০ বছর ধরে সংস্কারের অভাবে ভবনটি এখন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তাসহ চারটি পদই শূন্য এই কেন্দ্রে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ইউনিয়নবাসী। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ বলছে, অনুমোদন হয়েছে, শিগগির এই ভবন পুনর্নির্মাণ করা হবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হুড়কা গ্রামের লোকালয় থেকে আধা কিলোমিটার দূরে মাঠের মধ্যে ফাঁকা স্থানে একটি দুই তলা ভবন। দূর থেকে দেখলে মনে হবে পরিত্যক্ত কোনো বাড়ি, অন্তত এক যুগ ধরে এই বাড়িতে কেউ থাকেন না। মাঠের মধ্য দিয়ে যাওয়া মাটির রাস্তা দিয়ে ভবনের সামনে পৌঁছে দরজার ফাঁকা দিয়ে ভেতরে উঁকি দিলে বোঝা যাবে এটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্র।

ভেতরে থাকা চেয়ার-টেবিল ও বিভিন্ন যন্ত্রাংশে ধুলা পড়েছে, পলেস্তারা খসে ছাদের রড বের হয়ে গেছে, জানালার শিকে জং ধরে ভেঙে পড়েছে। শেষ কবে এই কেন্দ্র খোলা হয়েছে তা জানেন না স্থানীয়রা। ভবনের সামনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রের অনেক জমি ঘেরের মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা (স্যাকমো), একজন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক (এসডব্লিউভি), একজন আয়া ও একজন নিরাপত্তা প্রহরীর পদ রয়েছে। এ কেন্দ্রে সব ক’টি পদই এখন শূন্য। সর্বশেষ যে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা ছিলেন, তিনিও মাস দু-এক আগে অবসরে গেছেন।

রাজনগর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রের এসডব্লিউভি নাইমা আক্তারের সপ্তাহে একদিন হুড়কা কেন্দ্রে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের নির্দেশ থাকলেও তিনি কখনো আসেন না বলে দাবি স্থানীয়দের।

স্থানীয় পরিতোষ মণ্ডল বলেন, ১০-১৫ বছর ধরেই এই হাসপাতালের একই অবস্থা। আগে একজন চিকিৎসক ছিলেন, তিনি অবসর নেওয়ার পর আর কেউ আসেননি। 
প্রভাস মণ্ডল নামের এক বৃদ্ধ বলেন, ‘যখনই যাই, তখন বন্ধ পাই। এই হাসপাতাল থাকার চেয়ে না থাকা ভালো।’

জিৎ মণ্ডল নামের এক যুবক বলেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবন যেমন দিন দিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, তেমনি এলাকার কোনো মানুষ এখান থেকে সেবা পাচ্ছেন না। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনের জমিও ঘেরের মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। যত দ্রুত সম্ভব স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি সংস্কার করে এখানে সেবা দেওয়ার দাবি জানান এই যুবক।

শংকর মণ্ডল নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘আমাদের এলাকার কোনো রাস্তাঘাট ঠিক নেই। হঠাৎ কেউ অসুস্থ হলে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আগে আসেন। এখানে এসে চিকিৎসক না পেয়ে বিপদে পড়েন। যদি আমাদের সেবা না দেবে, তাহলে এই হাসপাতাল বন্ধ করে দিক। ঘোষণা দিয়ে দিক যে, এখানে কোনো হাসপাতাল নেই।’ 
তাপসী রানী মণ্ডল নামের এক গৃহবধূ বলেন, ‘অন্যান্য এলাকায় শুনেছি, বাড়ির পাশে হাসপাতালে গেলে স্যালাইনসহ নারীদের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পথ্য ও পরামর্শ পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের তো হাসপাতাল থেকেও নেই।’

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, বাগেরহাটের উপপরিচালক বিকাশ কুমার দাস বলেন, রামপাল উপজেলার হুড়কা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রের ভবনের অবস্থা খুবই নাজুক; যা সংস্কার করে কাজ করা সম্ভব নয়। এ জন্য তাঁরা সরকারের কাছে পুনর্নির্মাণের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। সরকার প্রস্তাব পাস করেছে। ইতিমধ্যে ভবন নির্মাণের জন্য তাঁরা চিঠি পেয়েছেন। ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এই ভবন নির্মাণ হবে। শিগগির এখানে কাজ শুরু হবে।

জনবলের বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, হুড়কা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই। এসডব্লিউভি প্রশিক্ষণ চলছে। প্রশিক্ষণ শেষ হলে জেলায় এসডব্লিউভি বরাদ্দ পাওয়া যাবে, সেখান থেকে হুড়কায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পদায়ন করা হবে। অধিদপ্তরে স্যাকমো নিয়োগেরও প্রক্রিয়া চলছে, নিয়োগ সম্পন্ন হলে হুড়কায় দেওয়া হবে। দ্রুত হুড়কাসহ সব ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রের সংকট কেটে যাবে বলে আশা করেন তিনি। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত