সেতুর অভাবে ভোগান্তি

মাহবুব আলম আরিফ, মুরাদনগর
প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২২, ০৭: ১১
আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২২, ১৪: ০০

ওপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ফরদাবাদ বাজার, এপারে একই জেলার নবীনগর উপজেলা ও কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার শতাধিক গ্রাম। মাঝখানে তিতাস নদী। প্রতিদিন অন্তত ছয় হাজার মানুষকে এই নদী পাড়ি দিয়ে চলাচল করতে হয়। ব্যস্ততম এই স্থানটিতে সেতু নেই। যুগের পর যুগ খেয়া নৌকায় করে নদী পারাপার হতে হচ্ছে। দুই উপজেলার গ্রামবাসীরা দীর্ঘদিন সেতুর দাবি জানিয়ে এলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ২৯টি নৌকার মাধ্যমে মুরাদনগর ও নবীনগর উপজেলার মানুষ তিতাস নদী পাড়ি দিয়ে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ফরদাবাদ বাজারে যাতায়াত করছে। অপরদিকে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার লোকজনও খেয়াঘাট দিয়ে মুরাদনগর উপজেলার পিপড়িয়াকান্দা বাজার ও নবীনগর উপজেলার দুবাচাইল, বাজিবিসারা আসছে। চলাচলকারী লোকজনের মধ্যে স্কুল-কলেজের অন্তত এক হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে।

মুরাদনগর উপজেলার শ্রীকাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইকবাল বাহার বলেন, এই একটি সেতুর জন্য তিনটি উপজেলার মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। কয়েক বছর আগে এই নদীতে সেতু হয়েছে তবে সেটি বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ভেতরেই। তাতে এই দুই উপজেলার তেমন কোনো কাজে আসেনি। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, এখানে সেতুটি খুব জরুরি।

বাঞ্ছারামপুর উপজেলার রতনপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য দবির আহম্মেদ বলেন, ‘আশপাশে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় দুই উপজেলার প্রায় ৯টি গ্রামের বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ফরদাবাদই একমাত্র ভরসা। কারণ এপারে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা কোনটাই নেই।’

মুরাদনগর উপজেলার শ্রীকাইল উপজেলার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আহম্মেদ বলেন, ‘একটি সেতুর জন্য ভুক্তভোগী মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই মানববন্ধন, সমাবেশসহ নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছেন। কিন্তু সেতু নির্মাণে কার্যকর কোনো উদ্যোগই চোখে পড়ছে না। এ অবস্থায় তিনটি উপজেলার অন্তত ৫০ হাজার মানুষ সেতুর অভাবে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। দাবি জানাতে-জানাতে এখন সাধারণ মানুষ হতাশ হয়ে পড়েছেন।’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাতে কেউ অসুস্থ হলে তাকে আট কিলোমিটার ঘুরে হাসপাতালে নিতে হয়। কারণ তখন খেয়াঘাটে নৌকা থাকে না। এমনও হয়েছে খেয়া ভাড়া দেওয়ার অভাবে অনেক বাচ্চা স্কুলে নিয়মিত যায় না।

নবীনগর উপজেলা ও মুরাদনগর উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অর্ধশতাধিক মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফরদাবাদ বাজার আশপাশের শতাধিক গ্রাম মুরাদনগর ও নবীনগর উপজেলার অন্তর্ভুক্ত হলেও, এসব গ্রাম তাদের উপজেলা সদর থেকে অন্তত ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তাই এসব গ্রামের মানুষ নদীর ওপারে অবস্থিত বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ফরদাবাদ বাজারেই কেনাবেচা থেকে শুরু করে শিক্ষা-চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকে। এসব মানুষের অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে ফরদাবাদ বাজারে। এ দুই উপজেলার মানুষকে প্রতিদিনই ব্যবসা-চিকিৎসা-শিক্ষাসহ নানা কাজে ও আত্মীয়তার সূত্রে ফরদাবাদ বাজারে আসতে হয়। এ অবস্থায় একটি সেতুর অভাবে তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

ভংগানগর গ্রামের বাসিন্দা কামাল মিয়া বলেন, ‘এই জীবনে সেতু দেখতাম পারমু কি না, সন্দেহ!’ দুবাচাইল গ্রামের গৃহিণী মোমেনা বেগম (৬০) জানান, নারী ও শিশুদের খেয়া পারাপার হতে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়।

মুরাদনগর উপজেলা প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর কবির সেতুটি নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘এ সেতু নির্মাণ হলে তিনটি উপজেলার সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন হবে। তবে নদীর অধিকাংশ স্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর ও নবীনগর উপজেলার। একমাত্র তারাই পারে এখানে সেতুর ব্যবস্থা করতে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত